‘গন্তব্য’

‘আজ আর হবে না। তোরাই খেল। মায়ের শরীরটা ভালো নেই কয়দিন। থেমে থেমে জ্বর উঠছে। দেখি, সালমা বাসায় কিভাবে কী করছে। ফেরার পথে ডাক্তারের সাথে কথা বলে যাওয়ার চেষ্টা করবো। উপর তলার রফিক সাহেবের মেয়ের জামাই ডাক্তার, ইংল্যান্ডে চাকরি করেন। বেড়াতে এসেছেন সেদিন। রফিক সাহেবকে বলে এসেছি। দেখি আজ নিয়ে যেতে পারি কিনা।’

সাব্বির উঠে পড়ে। না উঠে উপায় কী! পরপর নয় দান ফসকে গেছে। এই দানে হরতনের ৮ আর ৯ এসেছিল। সাথে যেকোনো রংয়ের ৭ বা ১০ এলেই হতো, কিংবা নিদেন পক্ষে জোড়া বানানোর জন্য আরেকটা ৮ বা ৯। কিন্তু এসেছে রুইতনের ৩। শেষমেষ ইস্কাপনের কিং দিয়ে ছয় হাজার ৮শ টাকার দান নিয়ে গেলো মোস্তফা। অগত্যা প্রায় ১৯ হাজার টাকা হেরে সাব্বিরের উঠে পড়তে হলো। আজকের মূলধন শেষ। ধার নেওয়ার নিয়ম নেই। খেলা চালিয়ে যেতে হলে বাসা থেকে টাকা এনে বসতে হবে আবার। তিন তাসের উপর খিস্তি ঝেড়ে মায়ের শরীর খারাপের অজুহাত দিয়ে উঠে পড়া ছাড়া আর বিকল্প নেই।

পিয়ারি বেগমের শরীরটা আসলেই বেশ কিছুদিন যাবৎ খারাপ যাচ্ছে। সাব্বির মাঝে মাঝে ভাবে, এই শরীরে শরীর খারাপের আর কী আছে! সাতাশি বছরের শেষ চার বছর ধরে বিছানায় শোয়া। স্ট্রোক করেছিল। সেই যাত্রা বেঁচে গেলেও বিছানা ছেড়ে আর ওঠা হয়নি। হাসপাতালে ছিলেন প্রায় দুই মাস। টাকার শ্রাদ্ধ হয়েছে। কিন্তু অবশ হয়ে যাওয়া হাত পায়ের কোনো উন্নতি হয়নি। ডাক্তাররা বলে দিয়েছেন, হাসপাতালে রেখে আর লাভ নেই। বাসায় নিয়ে যান। ভালোমন্দ যা খেতে চায় খাওয়ান আর আল্লাহকে ডাকুন। নিউরোলজিস্টের সাথে কথা বলে একজন জুনিয়র ডাক্তার ইঙ্গিত দিয়েছিল, ‘বড়জোর আর কয়েক মাস’। কিন্তু পিয়ারি বেগম দিব্যি চার বছর পার করে দিলেন। অবস্থার উন্নতি নেই, অবনতিও নেই। সারাদিন বিছানায় শুয়ে কোঁকান, শরীরের বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে অভিযোগ করেন। সাব্বির আর সালমা কখনও জবাব দেয়, কখনও না শোনার ভান করে যে যার কাজে ব্যস্ত থাকে। আসাদ আর শিউলি ওদের স্কুল আর কলেজ নিয়ে ব্যস্ত। মাঝে মধ্যে এসে দাদীকে দু-একটা প্রশ্ন করে বা দু-একটা কথার উত্তর দিয়ে চলে যায় যে যার জগতে। বলে যায়, ‘দাদী, তোমার জন্য দোয়া করছি’। পিয়ারি বেগম কখন সেসব কথা শোনেন, আবার কখনও তন্দ্রাচ্ছন্ন থাকেন। তিনি প্রাকৃতিক কাজকর্ম বিছানায়ই সারেন। যখন স্থায়ী কাজের মেয়ে ছিল তখন সে-ই বেডপ্যান নিয়ে আসতো। কাজ সারতে সাহায্য করতো। কিন্তু এই কাজ কুলসুমের ভালো লাগেনি বেশিদিন। সালমাকে বলেছে, ‘আপা, খালাম্মাকে দেখাশোনার জন্য আরেকজন লোক রাখেন। আমি এইসব কাম পারুম না’। সালমা যে বিষয়টি সাব্বিরের কানে তোলেনি তেমনটা নয়। কিন্তু সাড়া মেলেনি। মেয়ের বিয়ের নাম দিয়ে কুলসুম সেই যে বাড়ি গেছে, আর ফেরেনি। সালমার তাই এখন ঠিকা কাজের মেয়েই ভরসা। সকালে তাহেরা, বিকেলে ফাতেমা। দু’জনের জব ডেসক্রিপশনেই পিয়ারি বেগমের দেখভালের কথা বলা আছে। কিন্তু এই বেডপ্যানের ব্যাপারটি তাদের কারোরই পছন্দ নয়। হওয়ারও কথা নয়। বেডপ্যান বিড়ম্বনার কারণেই বারবার ঠিকা কাজের মেয়েও বদলাতে হয়। এই কয়মাসে যে কতো জোড়া বদল হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই।

বেডপ্যানের বিষয়টি ছাড়া শাশুড়ির অন্যসব দেখভাল সালমাই করে। ডাক্তার বলেছেন কয়েক ঘণ্টা পরপর তাকে পাশ ফিরিয়ে দিতে হবে। একপাশে বেশিক্ষণ শুয়ে থাকলে ক্ষত হবে, ইনফেকশন হবে, নিউমোনিয়া হবে ইত্যাদি। সেই সাথে একটু পরপর ওষুধ খাওয়ানো, সময় করে তিন বেলা আহার পরিবেশন করা, এমনকি লোকমা তুলে খাইয়ে দেওয়াও। সাব্বিররা বংশপরম্পরায় সবাই হয় সুঠামদেহী না হয় স্থুলকায়। পিয়ারি বেগমও ব্যতিক্রম নন। তাকে এপাশ-ওপাশ করানো কঠিন বৈকি। কিন্তু কিছুই করার নেই। তাছাড়া দেখবেটা কে! সাব্বির ব্যবসা সামলাতে বেরিয়ে যায় সকালে। সন্ধ্যার একটু আগে ফিরলেও তাসের আড্ডায় হাজিরা দেওয়া প্রাত্যহিক বিষয়। ফিরতে ফিরতে রাত গভীর। পিয়ারি বেগম তখন ওষুধের প্রভাবে গভীর ঘুমে। সাব্বিরের সাথে দেখা হয় না। তবে কোনো কোনো দিন সকালে বেরিয়ে যাওয়ার আগে সাব্বির মায়ের রুমে গিয়ে দু’চারটে কথা বলে আসে। খোঁজ খবর নেয়। সালমা মাঝে মধ্যে শাশুড়ির দেখভাল করা নিয়ে ক্লান্তি প্রকাশ করলেও সাব্বির বলে, ‘সারাদিনতো বাসায়ই থাকো, এইটুকু কাজও করতে পারো না?’। সালমা মনে মনে বলে, ‘বুড়ি মরে না কেন’! কিন্তু মুখে কিছু বলে না। চেহারায় বিরক্তি ফুটিয়ে আগের মতোই সব কাজ করে যায়। একবার বলেছিল, ‘তোমার বোনদের ডাকলেই পারো মায়ের সেবা করতে’। সাব্বিরের চোখ রাঙানি দেখে চুপসে যেতে হয়েছে। আর কথা বাড়ায়নি, আর কোনদিন এই প্রসঙ্গ তোলেওনি। কেবল মনে মনে ভাবে ‘বুড়ি মরে না কেন’!

সাব্বিরের দুই বোন নাহার আর নাসরিন মাস দুই মাসে সারা দিনের জন্য আসে। নাহার থাকে রামপুরায়, নাসরিন রাজাবাজার। ঘর সংসার সামলে মাসে একবারের বেশি উত্তরা আসার সুযোগ হয় না তাদের। অন্তত তারা তেমনটিই বলে। তারা যেদিন আসে সেদিন অবশ্য সালমার একটু অবকাশ মেলে। দুই বোন মায়ের সাথে সারাদিন কাটায়, পাশ ফিরিয়ে দেয়। খাইয়ে দেয়। যাওয়ার সময় একগাদা উপদেশ দিয়ে যায়। ‘ভাবি, তোমার অনেক সৌভাগ্য। তুমি শাশুড়ির সেবা করার সুযোগ পাচ্ছো। অনেক সোয়াব হবে তোমার। আমাদের সেই ভাগ্য নেই। ঘর সংসার সামলে মায়েরও সেবা করতে পারি না’। অথচ, বাচ্চাদের স্কুল ছুটির সময়েও এসে কয়েকদিন থেকে মায়ের সেবা করবে একথা ওদের মাথায় কখনই আসে না।

সালমা একটা পার্টটাইম চাকরি করতো উত্তরার এক ট্র্যাভেল এজেন্সিতে। ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স করা মেয়ে। ঘরে বসে থাকতে ইচ্ছে করে না। কাজ খুবই হাল্কা। দিনে পাঁচ ঘণ্টা। তাও সপ্তাহে চার দিন। যা আসে তাতে নিজের হাত খরচ চলে যায়, বাচ্চাদের এটা ওটা কিনে দিতে পারে। মাঝেমাঝে সাব্বিরের জন্যও উপহার কিনে আনে। কিন্তু পিয়ারি বেগমের স্ট্রোকের পর সেই চাকরি ছাড়তে হয়েছে। সাব্বির বলেছিল, তুমি আর কতোইবা রোজগার করো! তোমার হাতখরচ আমিই দেবো। তুমি বাইরে গেলে মায়ের দেখাশুনা কে করবে?’ সালমার মৃদু আপত্তি ধোপে টেকেনি। সেই থেকে সে বিশুদ্ধ গৃহবধু। শুধু তাই নয়, সার্বক্ষণিক নার্সও বটে। সেই সাথে বাড়তি বোনাস – সোয়াব কামাই।

সালমা শুনেছে, গাজীপুরে নাকি বেশকিছু বৃদ্ধাশ্রম হয়েছে। সেখানে মূলত পরিবারের কাছে অবহেলিত কিংবা পরিবার পরিত্যক্ত বৃদ্ধ-বৃদ্ধারাই আশ্রয় নেন। কিন্তু পিয়ারি বেগমের অবস্থা তেমনটা নয়। তিনি তো অবহেলিত কিংবা পরিত্যক্ত নন। তার জন্য কি তেমন বৃদ্ধাশ্রম প্রযোজ্য হবে? তাছাড়া বৃদ্ধাশ্রমে নিশ্চয়ই এমন শয্যাশায়ী রোগীর থাকার ব্যবস্থা নেই। এসব কথা সাব্বিরের সাথে আলাপ করার সাহস হবে কি তার? এই নিয়ে বাল্যবান্ধবী আয়েশার সাথে কথা হয় তার। সে জানালো উত্তরায় একটা নার্সিংহোম হয়েছে। ঠিক বৃদ্ধাশ্রম নয়। সেখানে অতিশয় বৃদ্ধ শয্যাশায়ী রোগীদের স্থায়ীভাবে রাখা হয়। আয়েশার ননদের শ্বশুর পক্ষাঘাতের রোগী। তিনি সেই নার্সিংহোমে থাকেন। ছেলেমেয়েরা কেউ চট্টগ্রামে, কেউ টরন্টোতে কেউবা মাসকাটে। চট্টগ্রাম থেকে ওর ননদ আর নন্দাই এসে মাসে মাসে দেখে যায়। সালমা ভাবে, তার শাশুড়িকেও তেমনভাবে রাখা গেলে মন্দ হতো না। বাসার কাছেই নার্সিংহোম। তারা প্রায় প্রতিদিনই দেখতে যেতে পারবে। আর সেখানে রাখার খরচ বহন করার সামর্থতো ওদের আছেই। নাহার আর নাসরিনও নিশ্চয়ই তাদের সাধ্যমতো সহায়তা করবে। এমনটা হলে ভালোই হতো। মনে হতো, থাকুন না আরও কয়টা বছর বেঁচে। মাথার উপর একটা ছায়া বলে কথা! অথচ এখন তার সেবা শুশ্রুষা করতে গিয়ে কাহিল অবস্থা। কাজের মেয়ে অনেক সময়ই ফাঁকি দেয়। নানা অজুহাতে কাজ কামাই করে। তখনতো বেডপ্যান নিয়েও দৌড়াতে হয়। না হয় বিছানা নষ্ট। সাব্বির তো হুকুম দিয়েই খালাস। বলে, এটা তো মেয়েদের কাজ। তাইতো! ছেলে তো আর মায়ের প্রক্ষালন করিয়ে দিতে পারে না। নিজের গর্ভধারিণী মায়েরই এমন অবস্থায় সেবা করা যথেষ্ট কষ্ট, দূরে থাক অন্য কারও মায়ের সেবা। হোক না তা নিজের স্বামীর মা। সালমা বাহ্যিকভাবে সেবা যত্নের কোন ত্রুটি করে না। সে নিজেকে কখনও শাশুড়ির প্রতিপক্ষ ভাবেনি। বরং সবসময় তার মন যুগিয়েই চলার চেষ্টা করেছে। হয়তো অন্যকোনো প্রণোদনার চেয়ে সাব্বিরের মন পাওয়ার প্রণোদনাই মূখ্য ছিল এই প্রচেষ্টায়। অথচ আজ ভাবে, ‘চাই না আমার সোয়াব। স্বামীর মন যোগানোর চেষ্টা করেও সফল হয়েছি কি? আর এরকম নির্জীবভাবে বেঁচে থেকে পিয়ারি বেগমেরইবা লাভ কী! নিজেও জীবনকে উপভোগ করতে পারছেন না, অন্যদের জীবনও ভারাক্রান্ত করে তুলেছেন। তার চেয়ে মৃত্যুই ভালো নয় কি? মরে গিয়ে তিনি নিজেও বেঁচে যাবেন, আমাদেরও বাঁচাবেন। সত্যিই তো! বুড়ি মরে না কেন?

বিষণ্ন মুখে সাব্বির ফেরে রাত নয়টায়। সাথে উপরতলার রফিক সাহেবের লন্ডনপ্রবাসী জামাতা ডা. সেলিম। সাব্বিরের বিষণ্নতা কী মায়ের অসুস্থতার জন্য নাকি তিনতাসের খেলায় উনিশ হাজার টাকা হারার জন্য তা বোঝা মুশকিল। ডা. সেলিম অনেকক্ষণ ধরে পিয়ারি বেগমকে দেখেন। পিঠের ক্ষতগুলো উল্টেপাল্টে পরীক্ষা করেন। ড্রেসিং চেক করেন। ভদ্রমহিলা ‘হু, হ্যাঁ, আর না’ করেন, ইশারায় বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। ডা. সেলিম ওষুধপত্র দেখেন, বিভিন্ন রিপোর্টের কাগজপত্র দেখেন। শেষে ড্রয়িংরুমে বসে কথা হয় সাব্বির আর সালমার সাথে। ‘পরশুদিনের প্রস্রাবের রিপোর্ট দেখে মনে হচ্ছে ইউরিন ইনফেকশন। পিঠের ক্ষতেও সামান্য ইনফেকশন আছে। তার ডাক্তারের দেওয়া ব্রডস্পেক্ট্রাম এন্টিবায়োটিক ঠিকই আছে। ইনফেকশন সারতে একটু সময় লাগবে।’ আসাদ আর সালমা দু’জনই পিয়ারি বেগমের শ্বাসনালী, ফুসফুস আর ইউরিনে ঘনঘন ইনফেকশন হওয়ার কথা তুললো; তার প্রতিকারের কথা জানতে চাইলো। ডা. সেলিম বললেন, স্থায়ী কোনো প্রতিকার নেই। এ ধরনের স্থায়ীভাবে শয্যাশায়ী রোগীদের এমন সমস্যা হতেই থাকবে। যখন যে সমস্যা হয় তখন তার চিকিৎসা লাগবে। এমন রোগীদের সামগ্রিক পরিচর্যা সম্পর্কে তিনি বিশদ আলাপ করলেন। বললেন, এ ধরনের রোগীদের বাসায় পরিচর্যা করা কঠিন। আবার কোনো হাসপাতালেও তাদের সারাজীবন রাখবে না। এখন তো ঢাকায় অনেক নার্সিংহোম হয়েছে। কখনও কি উনাকে নার্সিংহোমে দেওয়ার কথা ভেবেছেন?

মুহূর্তে ড্রয়িংরুমের পরিবেশ পালটে গেলো। সাব্বিরের চোখে মুখে ক্রোধ, বিরক্তি আর তিরস্কারের এক মিশ্র প্রতিবিম্ব। সালমা অপ্রস্তুত হয়ে ‘যাই, চা নিয়ে আসি’ বলে রান্নাঘরে ঢুকে যায়। কয়েক মিনিটের নীরবতা ভাঙলো সাব্বিরের ঝাঁঝালো স্বর-

‘আপনি এটা কেমন কথা বলছেন ডাক্তার সাহেব? আমি কি এমনই কুপুত্র হয়েছি যে নিজের মা’কে নার্সিংহোমে রেখে আসবো? ভদ্র পরিবারের কেউ এমন করে কখনও? আমাদের সমাজ নেই? মুখ দেখাতে পারবো ভেবেছেন? এটাতো আপনাদের ইংল্যান্ড-আমেরিকা না। এখানে ওসব হবে না। অন্য কোনো পরামর্শ থাকলে বলুন। কীভাবে যত্ন করলে মায়ের কষ্ট কম হবে, ঘনঘন ইনফেকশন হবে না সেটা বরং আমার ওয়াইফকে বলে যান। আর এই এন্টিবায়োটিকে কাজ না হলে কোন স্পেশালিস্টকে দেখাবো সেটা বলুন। অথবা, আপনি নিজেই এন্টিবায়োটিক বদলে দিয়ে যান।’

ঘটনার আকস্মিকতায় ডা. সেলিম প্রথমে চুপসে গেলেন। পরে অবশ্য নিজেকে সামলে নিলেন।

‘এতে খারাপের কী দেখছেন সাব্বির সাহেব? তার যা অবস্থা তাতে তো সত্যিই বাসায় রেখে সেবা যত্ন করা মুশকিল। আপনি সারাদিন ব্যস্ত থাকেন। ভাবির উপর অনেকটাই প্রেসার পড়ে। তা ছাড়া তাকে আমি যতোই পরামর্শ দেই, উনি তো আর নার্স নন। নার্সিংহোমে আপনার মা যতটুকু সেবা যত্ন পাবেন। বাসায় আসলেই সেটা সম্ভব নয়।’

‘আপনার ভাবির উপর প্রেসার পড়ছে কী পড়ছে না সেটা আমি দেখবো।’

সালমা চা নিয়ে ঢোকে। বলে, ‘না না, কী যে বলেন! এটা এমন কী কষ্ট’! তবে তার চেহারায় স্বাচ্ছন্দ্য ফুটে ওঠে না।

ডা. সেলিমের চায়ের তৃষ্ণা যদিও ছিল সেই তৃষ্ণা আগেই পালিয়েছে। দুই চুমুক দিয়েই তিনি ‘খোদা হাফেজ’ বলে দরজার দিকে পা বাড়ান।

পরদিন সকালে রফিক সাহবের ফ্ল্যাটে হাজির হয় সাব্বির।

ডাক্তার সাহেব, বলুনতো আপনাকে এই নার্সিংহোমের আইডিয়াটা কে দিয়েছে? সালমা?

‘আমাকে কেন কেউ আইডিয়া দেবে? আমি একজন ডাক্তার হিসাবে যেটা সঠিক ভেবেছি সেটাই বলেছি। তাছাড়া ভাবির সাথে তো আমার আগে কখনও দেখা কিংবা কথা হয়নি। ছিঃ ছিঃ, তিনি কেন আমাকে বলতে যাবেন? কেন বলুনতো?’

‘আমার তো মনে হয় আমার মায়ের দেখভাল করতে তার ভালো লাগে না। আকারে ইঙ্গিতে তা বোঝায়। কিন্তু আমি পাত্তা দেওয়ার মানুষ না। যদি কখনও তার মুখে এই কথা শুনি তবে তার একদিন কী আমার একদিন।’

‘ভাই, এসব কথা আমাকে বলে লাভ কী? আপনারা কী করবেন সেটা আপনাদের ব্যাপার। আমি শুধু মেডিকেল অ্যাডভাইস দিলাম।’

সাব্বির হনহন করে বেরিয়ে যায়। আজ ছুটির দিন। সকাল থেকেই তিনতাসের আড্ডা বসবে। গতরাতের ১৯ হাজার টাকার লস পুষিয়ে নিতে হবে।

পিয়ারি বেগম এসব কিছুই জানতে পারেন না। সকালবেলাটা তিনি প্রায়ই তন্দ্রাচ্ছন্ন থাকেন। মাঝরাতে দেওয়া ঘুমের অষুধগুলো তখন মনে হয় বেশি কাজ করে। তিনি এ সময় স্বপ্নের ঘোরে থাকেন। তার আজকের স্বপ্ন টয়লেট নিয়ে। স্বপ্নে দেখেন তিনি খুব সুন্দর একটা টয়লেটে বসে আছেন। খুব সুন্দর পরিপাটি এমন টয়লেট ব্যবহারের সুযোগ তিনি অনেকদিন পাননি। গত চার বছরতো বিছানায় টয়লেট হচ্ছে। আজ এতো সুন্দর টয়লেট ব্যবহারের সুযোগ কাজে লাগাতে তার ইচ্ছে হয়। মায়ের গন্তব্য টয়লেট, ছেলের তিনতাসের আড্ডা, বউ যায় শাশুড়ির প্রক্ষালন প্রস্তুতিতে।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত