তমিজের বিস্ময়

তমিজের বিস্ময়

অগ্রহায়ণের সোনা রোদে তালতলার পুকুরপাড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে আজগর মোল্লার প্রচণ্ড জল তেষ্টা পায়। কিন্তু বাড়ি থেকে এতদূর এসে শুধু পানি খাওয়ার জন্য ফেরত যেতে ইচ্ছা করে না। ভরদুপুরে মাঠ-ঘাটে মানুষের আনাগোনা নেই বলেই সে নিজের ছায়া দেখতে থাকে। লম্বা দেহে ধড়টা নেই! পুকুরের জলে মিশে গেছে। উল্টোদিকের তালগাছটাও যেমন মাথা ডুবিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। এই জলে ডোবা মাথায় তার উত্তরের হাওয়া লাগে, গা-টা শীতে কেঁপে ওঠে। ঠিক তখনই এনায়েত এলো।

কাকা, আমি কি দেরি করে ফেললাম?

নারে বাপ। তোর কাকির ঠ্যালানিতে আগে আইসা পড়ছি। তা আনছিসনি?

হ। বলে এনায়েত প্যান্টের পকেট থেকে মোবাইল বের করে। বলে, দ্যাও নাম্বারটা, টিপে দিই।

কতক্ষণ ঢেউ খেলে তরঙ্গ যেতে থাকে, কিন্তু লাইনটা পাওয়া যায় না। বার কয়েক চেষ্টা করে ওই একই কথা,.. এই মুহূর্তে..। একটু পরে এনায়েতের বাজার সমিতির মিটিং, আজগর মোল্লার গোয়ালে গরু নেওয়ার তাড়াও থাকে। কিন্তু ছেলেটার খোঁজ নিতে পারল না বলে মুখটাতে সন্ধ্যা নেমে আসে। তারা যখন পরস্পর নিজেদের পথে নেমে পড়ে, তখন আর তালগাছের ছায়াটিও জলে থাকে না। আজগর কখনও নিজের বাপের ছায়া খুঁজে পায়নি। তাই ছেলেকে চোখের সামনে মেলে রাখে সর্বক্ষণ।

আজগর মোল্লার ছেলে তমিজকে খুঁজে পাওয়া গেল টিএসসির দেয়ালের পাশেই। অবসন্ন দেহে বসে আছে। তার রাতজাগা চোখে নুনপোড়া জ্বালা। পার্শ্ববর্তী ছেলেটি মেয়েটিকে, মেয়েটি ছেলেটিকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে চুমু খেলেও তা সে দেখতে পায় না। সে এক চিলতে ঘুমের মধ্যে কেষ্টপুর গ্রামের তালপুকুরের স্বপ্ন দেখে। এখনও সে রাজধানীকে স্বপ্নে পায় না।

বুদ্ধি হবার পর থেকে পিতৃহীন আজগর মোল্লা এসেছিল মেলা দূর। মানুষের কাছে কেবল শুনেছে, ও তো মাটিকাটা বিটির ছাওয়াল। কথাটা যখন গ্রামের লোকজন বলত, তখন তাদের ভাষায় খরতা আজগরের মন বিষাক্ত হতো। মাকে আর মা মনে হয় না, শক্র মনে হতো। কিন্তু সারাদিনের অভুক্ত মুখে যখন জরিনা খাতুন মোটা মোটা ভাতের নলা তুলে ধরে বলত, খাও বাজান.. খাও; তখন সেই ভাত গিলে ফেলতে তার চোখের মাঝে ক্ষুধা আর কষ্টের জল ভর করত। মায়ের শক্ত হাতের ভাতগুলো কত স্বাদু আর তুলতুলে হয়ে মুখের ভেতর গলে যেত! চোখের পানি মুছিয়ে মা-ই বলতেন, মাইনষের কথায় কান দিস ক্যান? তুই হইলি জামসেদ মোল্লার ছাওয়াল। তোর বাপ পাকদের মারতে গেছিল, শ্যাষে নিজেই গুলি খাইয়া.. বলতে বলতে জরিনা খাতুনের কণ্ঠ রোধ হয়ে আসত। আর তা ঝেড়ে ফেলে বেশ তেজের সঙ্গে বলে উঠত, তুই সেই বাপের ছাওয়াল।

তখন আবার আজগর মায়ের বুকে মিশে থাকত। মনের মধ্যে একটা যুদ্ধের ছবি আঁকতে আঁকতে বড় হতে থাকে সে। গ্রামের লোকের অন্নে নয়, মাটিকাটা মায়ের দেওয়া থালাভর্তি ভাত তাকে তাগড়া যুবক বানালো। সে বর্গা চাষা হলো। তার হাতে অন্যের জমির ফসল সোনা হয়ে ফলে। সেই মাটিকাটা মাকে, যুদ্ধে শহীদ হওয়া বাপকে সবাই ভুলে গেলেও, সে ভোলেনি। কত বছর হয়ে গেল, মায়ের কবরের লাগানো আতা ফলের গাছে বছরের পর বছর আতা ফলে। সেই আজগর মোল্লার ছেলে তমিজ দেখতে পেয়েছিল বহুদূরের স্বপ্নের জীবন। সরকারি স্কুলে বৃত্তি পেয়ে স্যারদের প্রিয় হয়ে ওঠা তমিজ। এ রকম গাঁওগেরামে তার মতো মাথা কম।

আজগর মোল্লা এক হাজার টাকা বিকাশ করেছে তমিজের নামে। তিনটা মুরগির বারো হালি ডিম বিক্রির ৫৭৬ টাকা, বাকিটা খোপের দুই পাতিহাঁস বেচে এসেছে। তাই দিব্যি নিজের নাসিকায় নথ ঝুলিয়ে আজগরের বউ আমেনা বলে, আমার ছেলে ভার্সিটি পাস দিলে আর এত চিন্তা থাকবো না। চাকরি করা ছাওয়ালের মায়ের আর কিসে দুঃখ, বল?

সে কথার উত্তর সহজে দিতে পারে না রাবেয়া খাতুন। তার ছেলে তো আর পড়েনি, মাথাটায় পড়ার বোঝা নিতে পারত না, তাই মামার সঙ্গে শহরের দালান মিস্ত্রিও হলো। পড়তে জানা মানুষের সুখ সে জানে না। নছিমন বিবি খানিকটা চাকরির মর্ম বোঝে। তার মেয়ে সুখী, গার্মেন্টসে চাকরি করে। মাসে মাসে হাজার টাকার নোট পাঠায়। সে-ই বলে, সুখী কইছে পড়তে জানলে আরও হাজার টাকা পাঠাইতে পারত। এইসব গল্প বরইগাছের নিচে বসে হয়। বরই ফুল তখন খানিক ঝরে, খানিক বসে থাকে গুটি হবার অপেক্ষায়। সেই কথাগুলো পানের কষে লাল হয়ে ছুড়ূত টানে গলার ভেতর গিলে ফেলে তারা। মাগরিবের আজান পড়লে না উঠে উপায় থাকে না কারও। সাঁঝের বাতি জ্বালাবার জন্য কুপির সলতে ঠাণ্ডা মুখে মাচার নিচে অপেক্ষা করে। পল্লী বিদ্যুতের আলো সন্ধ্যায় তাদের জোটে না। তা আসতে আসতে রাত ৮টা। তাই হারিকেন আর কুপির সঙ্গ তাদের ছাড়তে হয়নি। ছেলেটি সে আলোতেই ক্লাসের পর ক্লাস পেরুলো।

বিশ্ববিদ্যালয় পড়ূয়া তমিজ তখনও শুধু গেঁয়ো নয়, সে ক্লাসে যথেষ্ট নির্বুদ্ধিতার পরিচয়ও দিয়ে ফেলে। স্কুলের মতো হাত উঁচু করে শিক্ষকের প্রশ্নের জবাব দিতে অতিব্যস্ত হয়। এই নিয়ে হাসাহাসির পাত্র সে। বিষয়টা তাকে ভাবায়। তার ধারণামতে, কলেজের ফার্স্ট হওয়া ছেলেমেয়েই তো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসেছে। তা উত্তর দেবে না! ওরা কেন সারাক্ষণ হুল্লোড় করে বেড়ায়? ভর্তি পরীক্ষায় অঙ্কে যে মেয়েটি ফার্স্ট হয়েছে, সেও! শহুরে মেধাবীদের ব্যাপার-স্যাপারই আলাদা। তারপরও পৃথিবীর কত খোঁজ জানে! তমিজ ঠিক বোঝে না। সারাজীবন ঘাড় গুঁজে কেবল পাঠ্যপুস্তকই পড়েছে। আউট বই বলতে দুই একটার বেশি না। অঙ্কের হিসাব বুঝতে তাকে বেশি পড়তেও হয়নি। ওর চেয়ে বেশ বুদ্ধি রাখে পাশে বসা ক্লাসমেট সীমান্ত। সে মফস্বল শহর থেকে এসেছে। সেই তমিজের থোড়ায় চিমটি কাটে- থাম। এমনে হাত তোলার বয়স নাই।

তমিজ ফ্যালফ্যাল চোখে চেয়ে থাকে। বুঝতে পারে না, আবার সীমান্তের কথা ফেলতেও পারে না। এখানে আসার পর সেই তার একমাত্র বন্ধু। হলের বারান্দায় দু’জনের টিনের ট্রাঙ্ক পাশাপাশি থাকে। রাতে হোস্টেলের গেস্ট রুমেও জায়গা আঁটে না তমিজ কিংবা সীমান্তের। এমনকি আরও অনেকের। দু’জন বারান্দায় একসাথে বিছানা পেতে শুয়ে পড়ে। সেই সীমান্তের কথায় আজকাল আর হাত তোলে না। রাতে তমিজের ঘুম আসে না। হলের বারান্দায় শুয়ে শুয়ে ব্রিটিশ খিলান দেখে, ভেতরের খোলা চত্বর থেকে হু হু করে শীতের বাতাস আসে। আর আসে মশার ঝাঁক। তাতে হাত-পা নাড়াতে নাড়াতেই রাত পার হয়। তাই সারাদিন আজকাল ঘুম চোখে লেগেই থাকে। এমনকি, সেদিন ক্লাসের মধ্যে বেঞ্চে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছিল। হঠাৎ নাকের শব্দে পাশের বেঞ্চে বসা সরু নাকের, টকটকে লাল কামিজ পরা ইসরাত হেসে ওঠে, কিরে গাধা? স্যারের প্রশ্নের উত্তর দিবি না? হাত তোল।

সীমান্তের ধাক্কায় জেগে খুব লজ্জা পায়। তমিজের চোখে বিস্ময় লেগে ছিল, সেই প্রথম দিন থেকেই। প্রথম ক্লাসের দিন, যখন অপরাজেয় বাংলার সামনে দিয়ে যাচ্ছিল তখন থমকে দাঁড়ায়। কত বিশাল ভাস্কর্য! ছবিতে আগে দেখেছে, কিন্তু বাস্তবে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তার পা থেমে যায়। নিবিড়ভাবে ভাস্কর্যটি দেখতে দেখতে তার খুব বাবার কথা মনে পড়ে। আজগর মোল্লা সব সময় দুঃখ করতেন, দাদাজান জামসেদ মোল্লার কোনো অবয়ব তার কাছে নেই। তমিজ তাকিয়ে দেখে মাঝের লুঙ্গি পরা মোটা মতো লোকটিকে, দাদার মতো লাগে। সে ভাবে, বাপকে একবার শহরে এনে এই ভাস্কর্যটা দেখাতে হবে। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখতে থাকে একজন যোদ্ধার মুখ; মনে গেঁথে নিয়েছিল। এ যেন তারই পূর্বপুরুষ।

রাতে সীমান্ত জানায়, আর চিন্তা নাই। এক বড় ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে, গেস্ট রুমের মধ্যে রাতে থাকা যাবে। তমিজ বলে, আমি টাকা পেয়েছি, চল একটা ডাবল মশারি কিনে আনি। সীমান্ত তখন আরও বিস্ময়কর খবর দেয়। বলে, তুই যদি আজ সন্ধ্যার মিছিলে যাস, তবে তোর কথা ভাইকে বলতে পারি।

তার মানে, সীমান্ত একা রুমের মধ্যে ঘুমাবে? তাকে আজও বাইরে থাকতে হবে? তমিজের ভালো লাগে না। কেষ্টপুর হাই স্কুলের হেড স্যারের কথা মনে পড়ে। স্যার বলেছিলেন, মিটিং-মিছিল করে সময় নষ্ট করিস না যেন। মনোযোগ দিয়ে পড়বি। ফার্স্ট হবি। এর বাইরে তমিজ ভাবতে শেখেনি। তার কেমন যেন খারাপ লাগে। সীমান্ত তমিজের চিন্তিত মুখখানা দেখে কী ভেবে নেয়। বলে, আজ আমি তোর সাথে বারান্দাতেই থাকব।

তখন তমিজ আরও বেশি চিন্তায় পড়ে যায়। ওকে সীমান্ত ভালোবাসে বলেই না আজ রাতেও সাথে থাকতে চাইছে। তমিজ বলে, কিসের মিছিল রে সীমান্ত? আমাদের হলের জন্য সিট বাড়ানোর দাবি?

না, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বিষয় না। জাতীয় বিষয়।

এ কেমন কথা! ছাত্রদের কোনো দাবি থাকবে না?

শোন তমিজ, এটা তোর বইয়ের ভাষা না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের দেশের অনেক কাজে সংযুক্ত থাকতে হয়। আমরাই তো ভবিষ্যৎ।

গত দুই দিন সীমান্ত কোথায় কোথায় ঘুরেছে। তার মানে, ও রাজনীতিতে ঢুকে পড়ল! দুদিন ও ঠিকমতো ক্লাসও করেনি। সবে পড়া শুরু। ওর পড়াশোনা হবে তো? এসব চিন্তায় তমিজের কেমন বেতাল লাগে। সে বলে, না রে, তুই ভেতরেই ঘুমাস। একটা রাত তো, কালই আমি মশারি কিনে নেব।

সীমান্ত ভাবে, এখনও গোঁয়ার ছেলে রয়ে গেছে তমিজ। কেউ নতুন গানের দল করছে, কেউ স্টাডি সার্কেলে যুক্ত হচ্ছে, কেউ বা রাজনীতি। হবেই বা কী করে, ওই পাঠ্যপুস্তকের আদর্শ ছাড়া একটা দৈনিকও পড়ে দেখেনি কোনোদিন। সীমান্ত বলে, তুই তাহলে থাক। আমি মিছিলটা সেরে আসি।

সন্ধ্যাটা তমিজ পাবলিক লাইব্রেরিতেই কাটায়। গত কয়েক দিন ধরে সে যেন এই জায়গাটার প্রেমে পড়ে গেছে। কত বই! ঘাড় গোঁজ করে প্রতিটি সন্ধ্যা আউট বই পড়ে পার করছে। যেন এক নেশা পেয়েছে তাকে। তা ছাড়া ক্লাসের সবাই কত কী জানে! তাকেও জানতে হবে। এ যেন এক জেদ।

আমেনা বেগম অভ্যেসমতো সন্ধ্যার কুপিটা খোলা ঘরের বারান্দায় রাখে, হারিকেনটা ছোট ঘরে তমিজের পড়ার টেবিলে। মাসের পর মাস পেরিয়ে গেছে, ছেলে নেই। কিন্তু অভ্যেসমতো ছেলের টেবিলে আলো দেয়। তমিজের ভর্তি গাইড বইটা টেবিলের উপরেই ছিল। কী মনে করে তা উল্টেপাল্টে দেখে। পাতা উল্টাতে উল্টাতে এক জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছবি দেখে থেমে যায়। তার তমিজ এখন এইখানে। নিজের অজান্তেই বলে ওঠে, ভালো থাকিস বাপ।

রাতে ডাইনিংয়ে তমিজ সীমান্তকে পেল না। একাই খেয়ে নিল। বারান্দায় বিছানা পেতে ট্রাঙ্কটা সাইড টেবিল করে বই নিয়ে বসে, কিন্তু পড়তে পারে না। সীমান্তের জিনিসগুলোর দিকে খানিক তাকিয়ে থাকে। মিছিল গেছে, এখনও ফেরেনি। তাই চিন্তা হয়। টিভিতে সে সব সময় মিছিলে মারামারির দৃশ্য দেখেছে; পুলিশের লাঠিচার্জ। কী জানি, সীমান্ত কোথায়! এক সময় বইয়ে মন দেয় তমিজ। বেশ রাত হয়ে গেছে। হঠাৎ লোকজনের আওয়াজ পেয়ে তাকায়। সবাই ফিরছে। সীমান্ত হাঁপাতে হাঁপাতে এসে তমিজের পাশে বসে পড়ে, মেলা ধকল গেল।

তমিজ দেখে ও এত ঠাণ্ডার মধ্যে কেমন দরদর করে ঘামছে। বলে, পানি খাবি?

উত্তরের অপেক্ষা না করে এক গ্লাস পানি এনে দেয়। নে খা, কই গেছিলি?

সীমান্ত ঢকঢক করে গ্লাস খালি করে। বলে, সে মেলা কথা। পরে বলি, সর একটু শুতে দে। তমিজের বালিশেই ও শুয়ে পড়ে। বলে, গেস্ট রুমে তখন নেতাদের মিটিং চলছে। তমিজ দেওয়ালে ঠেস দিয়ে বসে থাকে। ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে গেছে সীমান্ত। মশার জ্বালায় বসেও শান্তি নেই। বসে বসে ঝিমুতে থাকে তমিজ আর মাঝে মাঝে অভ্যেস মতো মশাকে টার্গেট করে থাপ্পড় মারে। চোখ বন্ধ রেখেই তা করতে শিখেছে সে। বাড়ির কথা মনে পড়ে। মা সব সময় মশারি টাঙিয়ে ভালোমতো গুঁজে দিত। শুধু তো মশা না, সাপ-পোকার ভয়ও ছিল সেখানে।

হঠাৎ ঘুমের মধ্যে সীমান্ত কঁকিয়ে ওঠে, শীত..

তমিজ লেপের নিজের অংশটুকু গুটিয়ে ওর গায়ে দিতে গিয়ে দেখে জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে সীমান্তের গা। সারাটা রাত তমিজ নিজের গামছা ভিজিয়ে মুছে দিতে থাকে।

সকালে তমিজ বলে, তোর বাড়িতে ফোন দিই?

সীমান্ত বলে, না, বাড়ির মানুষ অত দূর থেকে তাড়াতাড়ি আসতে পারবে না। তুই বরং বড় ভাইকে একটা খবর দে।

তমিজ ইতস্তত করে। সীমান্ত ভাবে, কী বোকা ছেলে, তুই কি নেতা হতে যাচ্ছিস?

তমিজ বলে, না। তোকে একা রেখে যাই কী করে?

কিন্তু সে যায়। এবং সত্যি সত্যি খুব দ্রুত তারা সীমান্তকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করে দেয়। তমিজ হাসপাতালে সীমান্তের পাশেই ছিল। জ্বর কিছুতেই কমে না। পাঁচদিন পর ডাক্তার জানালেন, সীমান্তের ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে। ডাক্তাররা বেশ যন্ত্র নিয়ে তাকে চিকিৎসা করছেন। কিন্তু সীমান্তকে অবাক কেরে দিয়েছে তমিজ। নিয়মিত ওর পাশেই ছিল সে। কাল তারও ভীষণ জ্বর ওঠে। হাসপাতালে সিট নেই, সীমান্তের বেডের পাশে বারান্দায় জায়গা হয়েছিল তমিজের। ক্রমশ সীমান্ত ভালো হয়ে ওঠে। তমিজের অবস্থা খারাপ। মাঝরাতে ঘুম ভেঙে সীমান্ত শুনতে পায় তমিজের গলা, বাজান, তুমি একবার শহরে আসো। কলা ভবনের সামনে.. দাদাজানের.. আছে। আসো বাজান, তুমি একবার আসো..। খানিক থেমে আবার বকে যায় তমিজ, আমি বাড়ি যাব.. বাজান.. এখানে অনেক শীত..।

সীমান্তকে বোকা বানিয়ে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত তমিজের মৃত্যু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের খোলা বারান্দায় আর দশজনের মতো তমিজ সইতে পারে না, রাতের নির্ঘুম সময়। সে চিরতরে ঘুমিয়ে যায়। আজগর মোল্লার একমাত্র স্বপ্ন হারিয়ে যায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত