সকালে ঘুম থেকে উঠে পাশে চায়ের কাপ আর একটা গোলাপ দেখে কিছুটা আশ্চর্য হলাম। ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখি ৯:২৫ বাজে ! তারাহুরু করে বিছানা থেকে নামতে গিয়ে শাড়ি তে পা পরে ধপাস করে পরে গেলাম। আজ এত দেরি হল কি করে। মায়ের চা ওর নাস্তা এই অল্প সময়ে করতে হবে। অফিসে যাবে ঠিক দশটায়। কোনোকিছু না ভেবে রান্না ঘরে যাওয়ার আগে ই দেখি ডাইনিং এ সব নাস্তা রেডি করা ঢাকনা দিয়ে ঢাকা ।
তখন ই মনে পড়ল চা আর গোলাপের কথা। চা রেডি নাস্তা রেডি! হঠাৎ পিছন থেকে শাশুড়ি বললেন, ফ্রেশ হয়ে নাস্তার টেবিলে আসতে। আমি ঠিক বুঝলাম এসব মা ই করেছেন। আমি বললাম, আজ একটু দেরি হয়ে গেছে। আপনি এসব করতে গেলেন কেন আমাকে ডাক দিলে ই পারতেন। আমি কিছু করিনি তো। সব আদিব করেছে। তখন ই আদিব একদম রেডি হয়ে টেবিলে আসল। এসে ই বলল, এত কষ্ট করে চা বানালাম পছন্দ হয়নি ! না খেয়ে চলে আসলে। আসলে আমি ঘড়ি দেখে অবাক হয়ে গেছি তাই। তাড়াতারি ফ্রেশ হয়ে পরে নাস্তা করলাম। মা কিরকম ভাবে যেন হাসছে একটু একটু। আমার লজ্জা লাগছিল। রান্না ঘরে গিয়ে দেখি রান্না করার সবকিছু কাটা ধুয়ে সুন্দর করে রাখা।
আমি কিছুটা আবার অবাক হয়ে বললাম, এসব কি আদিব? এরকম করার কি আছে তাহলে আমি কি করব? অফিসে যাবে আর এসব করছ আজকে শুক্রবার ছুটির দিন ভুলে গেছ। আর আমি তো একটা দিনই ছুটি পাই তুমি তো তাও পাও না। তাই এই একটা দিনের ছুটি না হয় একটু ভাগাভাগি করে নিলাম। আমি কথাটা শুনে ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম অনেক্ষণ। না বলা এতুটুকু কেয়ার কয়জন পায় ! হঠাৎ ফোন আসল সীমা আসছে। মানে আমার ননদ আর ননদাই আসছে। তাই রান্নার পরিমান টা আরেকটু বাড়িয়ে দিলাম। সব কাজে ই আদিব সাহায্য করছিল না করছি তারপরও। আবার কি রকম লাগছিল মা কি ভাববে এসব। মা দিনের বেলা দুপুরের নামাজের আগে একবার চা খান উনার ঘরে চা দিতে গিয়ে দেখলাম শুয়ে শুয়ে তসবিহ পরছেন। চা দিয়ে চলে আসলাম।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল আপুর জন্য অপেক্ষা করছি সবাই। একসাথে খাব বলে কারো খাওয়া ই হয়নি। বিকেল পাঁচটার দিকে উনারা আসলেন। ছুটির দিনেও আসতে এত দেরি। মা বললেন। মেয়েকে কোচিং থেকে আনা নেওয়া ঘরের কাজ সবটুকু করে ঘুছিয়ে রাতের জন্য রান্না করে তারপর আসা। যাই হোক সবাই খেতে বসল। খাওয়ার টেবিলে লক্ষ্য করলাম দুলাভাই এর পাশে ই বসা আপু। আমি সব সার্ভ করছিলাম। দেখলাম পাশে জগ থাকা সত্ত্বেও আপু গ্লাসে পানি ঢেলে দিচ্ছে। আমি সার্ভ করছি তারপরও আপু আলাদা ভাবে দুলাভাইকে খাবার বেড়ে দিচ্ছে। যাই হোক সবার খাওয়া মোটামুটি শেষ আমি আর আপু বাকি মানে সার্ভ করতে গিয়ে একটু সময় লাগছে খেতে। তাই আমরা এখনো টেবিলে খাচ্ছি।
খাওয়ার মধ্যেই হঠাৎ আপুর ডাক পড়ল হেডফোন টা নিয়ে দিতে আপু গেল। আবার একটু পরে ই টিভি অন করার জন্য ডাক পরল। আদিব ওয়াশরুমে ছিল। এভাবে বেশ কয়বার ডাক পরায় আপু ঠিকমত কিছু ই খেতে পারল না। হঠাৎ ভিষম খেয়ে কিরকম অবস্থা মা তখন খানিকটা রেগে গিয়ে বললেন, কি ফোন জানি,, কিসব আর টিভি টাও অন করতে পার না। মেয়েটা খেতে বসেছে ঠিকমত খেতে পারছে না। একটুও কি খেয়াল রাখা যায় না নাকি ওর নিজের কোনো খাওয়া দাওয়া করা লাগে না মনে করেছ। আমার শ্বাশুড়ি অনেকটা কড়া মেজাজের এটা সবার ই জানা। আপু বাধা দিলেও তাতে সায় দিচ্ছেন না। কাজ করে যাবে সমস্যা নেই করবে তবে মাঝে মাঝে একটু খেয়াল রাখলে একটু সাহায্য করলে হাত পঁচে যায় না বা খসে পরে না। ভালো লাগে । আমার ননদাই কিছুটা বিরক্তি ভাব নিয়ে দাড়িয়ে।
তুমি সকাল থেকে একটু সাহায্য করলে তোমার এমন কিছু হয়ে যেত না। বরং কাজটা তাড়াতারি হত। কিছুটা লজ্জিত হয়ে মাথা নিচু করে আছেন। আমার শাশুড়ি একটু ঠান্ডা হয়ে বললেন, দেখ বাবা ঘরের বউরাও মানুষ তোমার মত। আর তোমার মত আমার ছেলেরও বউ আছে। আমি ছোট থেকে শিখিয়ে এসেছি ভাই বোন হোক আর স্বামী স্ত্রী হোক যে যেটুকু যতটুকু পারবে একে অপরকে সাহায্য করবে। আমার মেয়েকেও বিয়ে হওয়ার আগ অব্দি তার ভাই যে রকম হোক কাজে সাহায্য করেছে হোক পড়াশোনা বা ঘর গুছানো। তাই এখন অবদি আমার বউমাকে সে সময় পেলে সাহায্য করে বলছি না তো সব করতে। যতটুকু পার ফ্রি থাকলে খুশি মনে। জানো তো মেয়েদের একটু মন থেকে যত্ন করলে তারা তোমাকে সারা জীবন মাথায় তুলে রাখবে যে সম্মান আর কেউ তোমাকে দেবে নে। তুমি যেমন ই হও না কেন অন্যদের কাছে।
আমাকে আমার স্বামি শিখিয়েছে আমি আমার সন্তান কে শিখিয়েছি এভাবে ই কিন্তু সব পরিবর্তন হবে। যদি আমরা একটু চিন্তা ধারা পাল্টাই। শুধু আমার মেয়ে বলে নয়। তোমার ছেলে মেয়ে তাদের জন্যেও। মায়ের কথাগুলো শুনছিলাম আর কোথায় যেন নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করছিলাম। এরকম মানুষের জন্য মন থেকে শ্রদ্ধা ভালোবাসা আসে। যার মা এমন তার সন্তান তো এমন হবে ই। এরমধ্যে আপুর মেয়ে রান্না ঘরে কি আনতে গিয়ে ডাক দিল। গিয়ে দেখি গরম পানি হাতে পরে অনেকটা লাল হয়ে গেছে। দুলাভাই দৌড়ে গিয়ে ধরে সেখানে ঔষুধ লাগিয়ে দিলেন। আর বার বার মানা করছিলেন এসব করতে। তখনই আদিব বলল আপনার মেয়ে বলে ই আজ আপনার খারাপ লাগছে কষ্ট লাগছে। মনে রাখবেন আপনার স্ত্রী ও কারো মেয়ে কারো বোন।
দুলাভাই বুঝতে পেরে ক্ষমা চাইল। আর আমি শুধু হতবাক হয়ে ঐ মা আর ছেলেকে দেখছি। মানুষ সুন্দর তার বাহ্যিক দিক দিয়ে নয় মানুষের সৌন্দর্য মনে আর তার সুন্দর চিন্তা ধারায়। রুপ বয়সের ভাঁজে হারিয়ে যায়। কিন্তু এই সৌন্দর্য দিয়ে সারাটা জীবন পার করে দেওয়া যায় সেখানে সময়ে সময়ে ভালোবাসা, শ্রদ্ধা আর সম্মান টা সময়ের ব্যাস্তানুপাতিক হারে বাড়তে থাকে। আজ আমারও তাই হল। সম্মান এরকম মা আর সন্তানের জন্য। আর আমার ভাগ্যের প্রতি আরো অনুগত হলাম।
গল্পের বিষয়:
গল্প