পাশের বাসার ভাবী বিকেলের দিকে বাসা থেকে পালিয়ে গেছে ৷ পালিয়ে যাবার আগে চিঠি লিখে গেছে ৷ ওতেই স্পষ্ট সে পালিয়ে গেছে ৷ আমি সন্ধ্যা পর ঘটনার কথা জানলাম ৷ সকালবেলা বাসা থেকে বের হয়েছি, বাসায় আজ ফেরা হবেনা ৷ পাশের বাসার ভাবীটা পালিয়ে গেছে শুনে আম্মু আমাকে বারবার ফোন দিয়ে কান ঝালাফালা করে ফেলছে ৷ আম্মুর সন্দেহ আমার উপর ৷ আমি নাকি ভাবীকে ভাগিয়ে নিয়ে গেছি ৷ ভাবী প্রায়দিনই আমার সাথে দেখা করতে আসতো, এটাই সন্দেহের কারণ! একেবারে ইজ্জতের সাড়ে বারোটা বাজিয়ে ফেলল ৷ এটা কি সম্ভব? আমার মত এত স্মার্ট ও ভাল ছেলে এরকম কাজ করতে পারে? কক্ষণো না ৷
আর আমি যদি কাউকে পালিয়ে নিয়েই যাই, যাবো কুমারী তথা অবিবাহিতা মেয়েকে নিয়ে ৷ কিন্তু এই ভাবী তো বিবাহিতা, সেই সাথে বিধবা ৷ কুমারী মেয়ের অভাব থাকলে নাহয় বিধবা মেয়েকে নিয়ে ভাগতাম, কিন্তু ঘটনা তো এমন না ৷ আম্মুর মাথায় যে কি, বুঝিনা! নিজেই তার ছেলের ইজ্জতের একদম ফেলুদা বানিয়ে ফেলল! আম্মুকে অনেক বুঝিয়ে, এমনকি নানা রকম প্রমাণ দেখিয়ে তাকে বিশ্বাস করতে বাধ্য করলাম যে আমি এমন কাজ করিনি! ৭ দিন পরের ঘটনা: আজ দুপুরে জিনিয়া নামের পাশের বাসার একটা মেয়ে ভেগে গিয়েছে ৷ আমি সকালবেলা অফিসে এসেছি ৷ আম্মুর এবারের সন্দেহের তীরও আমার দিকে ৷ আর আমিও আগের বারের মত এবারও প্রমাণ করলাম যে এরকম ফালতু কাজ আমি কিছুতেই করিনি ৷ চলছিল এভাবে! একদিন আম্মু আমাকে শক্ত কন্ঠে বলল,
—শোন, তোর বিয়ের জন্য পাত্রী দেখেছি ৷ অনেক সুন্দরী মেয়েটা ৷ ভাবছি দু-একদিনের মধ্যে বিয়ের দিন তারিখ পাকা করবো ৷ তোর বাবা বিয়েতে রাজি আছে! তোর মতামত জানা! বিয়ের কথা শুনে হকচকিয়ে উঠলাম ৷ স্তম্ভিত হয়ে আম্মুকে বললাম,
—-বুঝলাম না, হঠাৎ আমার বিয়ে নিয়ে পড়লে কেন? আমি তো এখন আর বিয়ে করতে পারবো না ৷
—-ওহ, এতদিন বিয়ে করবি বলে মুখে ফ্যানা তুলেছিলি, আর এখন আমরা বিয়ের কথা তুললাম বলে তোর দাম বেড়ে গেল? নাটক শুরু করছিস, হুহ?
—-যখন আমি নিজেই বিয়ের কথা তুলেছিলাম তখন কেন তুমি চুপ ছিলে? সেটা তো ৬ মাস আগের কথা ৷ আমার তখন বিয়ের খুব দরকার ছিল ৷ এখন দরকার নেই!
—-এর আগে বিয়ের ব্যাপারে গুরুত্ব দিইনি, কারণ তুই সেসময় ভাল চাকরিতে ছিলিনা ৷ এখন খুব ভাল জব করছিস ৷ তাছাড়া, তোর মতিগতি ভাললাগছেনা ৷ যখন তখন কোথাকার কোন মেয়েকে নিয়ে ভেগে যেতে পারিস!
—-যেটা ভেবেই আমার বিয়ে দিতে চাওনা কেন, আমি এখন কিছুতেই বিয়ে করবোনা!
—-তো কবে বিয়ে করবি, শুনি?
—-করবো, সময় হলেই করবো ৷
—-সময় টময় বুঝিনা ৷ আমি শীঘ্রই বিয়ের দিন ধার্য করবো, তোর মতামত লাগবেনা ৷ সময় মত তোকে বিয়ের পীঁড়িতে বসতে হবে, বুঝলি?
—-শোনো আম্মু, আমি গুরুত্ব সহকারেই বলছি এখনই আমি বিয়ে করতে পারবোনা ৷ যদি বিয়ে করি তবে আমার পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করবো! আম্মু বাকা চোখে তাকিয়ে বলল,
—-কে সে? কি নাম? নরম আওয়াজে বললাম,
—–ঐ যে, ঐ পাশের বাসার ভাবী পালিয়ে গেলোনা তার ননদ!
—-তার ননদ কে?
—-জানোনা মনে হয়! তার ননদ তো একটাই ৷ আওয়াজ উঁচু করে বলল,
—-পালিয়ে যাওয়া সেই মেয়ে জিনিয়া? মৃদ্যু হেসে বললাম,
—-না মা, সে তো পালিয়ে যায়নি ৷
—-তাহলে সে যে চিঠি লিখে গেল? তাছাড়া মেয়েটা তো আজও বাড়ি ফেরেনি!
—-জিনিয়া তার মামা বাড়িতে আছে ৷ মামার সাথে জিনিয়ার বাবার শত্রুতা চলছে ৷ জিনিয়া ঐ বাড়িতে আছে বলে তার বাবা, মা ওখানে যাচ্ছেনা ৷ জিনিয়াও জিদ ধরেছে তার বাবা, মা তাকে নিতে না আসলে বাড়ি ফিরবেনা! আম্মু তীক্ষ্ণকন্ঠে বলল,
—-তারমানে তোর কথামত মেয়েটা ঐ বাড়ি গিয়ে উঠেছে ৷ এই রাফাত, তুই কি মেয়েটাকে কাজী অফিসে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করার প্ল্যান করছিস? ক্ষীণস্বরে বললাম,
—আরে না মা ৷ জিনিয়াকে বিয়ে করলে ঝমজমাট অনুষ্ঠান করেই করবো ৷ ক্ষিপ্তস্বরে বলল,
—-তাহলে মেয়েটা ঐ বাড়িতে কেন? ক্ষীণস্বরে বললাম,
—-এজন্যই সে ঐ বাড়িতে যাতে তার বাবা, মা তাকে আনতে ঐ বাড়িতে যায় ৷ এবং জিনিয়ার বাবা, মায়ের সাথে কথা বলে তাদের মধ্যকার শত্রুতার অবসান হয় ৷ শত্রুতা বিনষ্ট করতেই জিনিয়ার এই প্ল্যান ৷ এমনটা করার ফলে আগের মত আবারো আত্মীয়তার সম্পর্ক বহাল থাকবে ৷ জিনিয়ার বাবা ঐ বাড়িতে গেলে নিশ্চিত যে তারা একে অপরের রাগ, অভিমান ভুলে যাবে!
—–তাদের মধ্যে এত শত্রুতা কিসের বলতো আমাকে?
—–তুমি কেন বড় ভাইকে বাসা থেকে তাড়িয়ে দিছো সেটা আগে বলো? আম্মু ভ্রু কুঁচকে অস্ফুট স্বরে বলল,
—–তুই জানিস না? মৃদ্যুস্বরে বললাম,
—–জানি, তোমার মুখ থেকে ফের শুনি ৷ বলো!
—-তোর ভাই একটা রাস্তার মেয়ের জন্য বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে গিয়েছিল ৷ এই দোষেই তার স্থান হয়নি এই বাড়িতে ৷ তাও সে এমন একজনের জন্য পালিয়ে গিয়েছিল যে মেয়েটা তাকে ছেড়ে আরেকজনকে জীবনসঙ্গী করে নিয়েছিল ৷ কি লাভ হলো তার?
—-বুঝলাম ভাইয়া ভুল করেছিল, কিন্তু সে তো ভুল স্বীকারও করে নিয়েছে ৷ এরপরও তাকে কেন বাসা থেকে তাড়িয়ে দিলে?
—-তার জন্য একটা মেয়েকে পছন্দ করেছিলাম ৷ মুখের ওপর বলে দিয়েছিল, “ তাকে বিয়ে করতে পারবোনা!”
—-এজন্য বাসা থেকে বের করে দিতে হবে?
—-তো কি করবো? তাছাড়া আমি দেখেছি তোর ভাই জিনিয়ার ভাবীর সাথে প্রায় দিনই কথা বলতো ৷ নিশ্চয় সে তার সাথে প্রেমের সম্পর্ক শুরু করে দিয়েছিল! সর্বনাশ হবার আগেই তাকে বাড়ি ছাড়া করেছিলাম!
— খুব ভাল করছো ৷ এখন তোমাকে সোজা ভাবে বলছি আমি বিয়ে করলে জিনিয়াকেই করবো ৷ তুমি তো এতদিন আমার মুখ থেকে বিয়ের কথা শুনলেই রেগে যেতে ৷ এখন যেহেতু আমার বিয়ে দিতে চাও তাহলে জিনিয়ার বাবা, মায়ের সাথে কথা বলো! আম্মু ক্ষুধার্ত বাঘের মত চোখ দুটো শিকারী টাইপের বানিয়ে ক্ষ্যাপা স্বরে বলল,
—-ঐ মেয়েকে আমার দুচোক্ষেও সহ্য হয়না ৷ তার সাথে কখনোই তোর বিয়ে হবেনা ৷ তাকে ভুলে যা! ঈষৎ রাগস্বরে বললাম,
—-বুঝছি ভাইয়ার মত আমাকেও পালিয়ে বিয়ে করতে হবে! আম্মু ফোঁস ফোঁস করতে করতে চোখ রাঙিয়ে তীক্ষ্ণকন্ঠে বলল,
—-তোর ভাই কাকে বিয়ে করেছে? আমার সহজ সরল জবাব,
—-কেন, জিনিয়ার ভাবীকে! আঁতকে উঠে উত্তেজিত গলায় আম্মু আমাকে বলল,
—-কিহ?
—-সত্যি বলছি মা ৷ আর এটা আব্বুর কথামত হয়েছে ৷
—-তোর আব্বু এমন কাজ করতে পারলো?
—-পারবেনা কেন বলো? সে যদি তার ছোট ছেলের বিয়ের সাক্ষী হয় ৷ তাহলে বড় ছেলের বিয়ের সাক্ষী কেন হতে পারবেনা? আম্মু চোখ পাকিয়ে শক্ত কন্ঠে বলল,
—-ছোট ছেলের বিয়ের সাক্ষী মানে? তোড়জোর কন্ঠে জবাব দিলাম,
—-আরে আম্মু তোমার ছোট ছেলেকে চিনোনা? আমিই তো তোমার ছোট ছেলে!
—-তুই বিয়ে করেছিস?
—-হুম আম্মু অগ্নিমূর্তির রুপ ধারণ করে, আঁতকে ওঠা কন্ঠস্বরে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
—-কাকে? নরম স্বরে উত্তর দিলাম,
—-কাকে আবার, জিনিয়াকে ৷ মাথায় হাত দিয়ে রাগস্বরে আম্মু আমাকে বলল,
—-এতক্ষণ তাহলে মিথ্যা বলেছিস?
—-কি করবো মা, আব্বু মিথ্যা বলতে বলেছিল! তার কথা অমান্য করতে পারিনি!
—-আমাকে না জানিয়ে এতসব করতে পারলো সে?
—-সে আর কি করবে বলো? তুমি তো তোমার ছেলেদের বিয়ের জন্য ৫-৭ লাখ টাকা যৌতুক ছাড়া বিয়েই দিবেনা ৷ অন্যদিকে বাবা যৌতুক চাইনা ৷ আর আমরা দু-ভাই চাইনা আমাদের পছন্দের মানুষটিকে ছাড়া বিয়ে করতে! আম্মু বাকরুদ্ধ! কম্পমান ফুলের ন্যায় দাঁড়িয়ে থেকে ভূত দেখার মত করে তাকিয়ে আমাকে অদ্ভুত নয়নে দেখছে ৷ একটু পর হয়তো বেহুশ হয়ে যেতে পারে ৷ তার আগে আব্বুকে ডাক দিলাম!
গল্পের বিষয়:
গল্প