রিমির বাবু

রিমির বাবু
আরে, তুমি রিমি না? চিনতে পেরেছো আমাকে? আমি তোমার আকবর চাচা। সেই ছোটবেলায় দেখেছিলাম তোমায়। বাহ, এখন কতো বড়ো হয়ে গিয়েছো!” “আসসালামু আলাইকুম চাচা। অবশ্যই আপনাকে চিনতে পেরেছি। চাচা, আপনার শরীর ভালো আছে?” রিমি সহাস্যমুখে বললো।
“ওয়ালাইকুম আসসালাম। আল্লাহ্‌র রহমতে ভালোই আছি। তুমি ভালো আছো তো, মা?”
“জ্বি চাচা, খুব ভালো আছি।”
“এই পার্কের মধ্যে একা একা বসে কি করছিলে, মা? কারো জন্য অপেক্ষা করছো কি?”
“জ্বি চাচা। ওই যে সামনের ‘দ্য স্মার্ট চাইল্ড স্কুল’ টা দেখছেন, ওই স্কুল থেকে আমার বাবুটা আসবে এখানে। তাই বসে বসে অপেক্ষা করছি। বেশি দেরি হবে না অবশ্য, এখনি এসে পড়বে।”
“তো তোমরা নেত্রকোনা থেকে ঢাকায় কবে আসলে? আর তোমার বাবা-মার শরীর ভালো আছে তো?”
“জ্বি চাচা, আব্বু আম্মু ভালো আছেন। আব্বুর কোমরে একটু ব্যথা আছে শুধু। ঔষধ খেয়ে যেতে হয় রেগুলার। আর আমরা ঢাকায় এসেছি প্রায় তিন বছর হতে চললো। আপনি এদিকে কোথাও যাচ্ছিলেন নাকি?”
“বয়েস হয়েছে মা। বিকালে এই পার্কে একটু হাঁটাহাঁটি করি। তাহলে শরীরটা খানিক সতেজ থাকে। তাছাড়া, এখান থেকে আমার বাসাও কাছেই। যাবে তুমি?”
“আজ না চাচা। স্কুল ছুটি হলে বাবুটা এসে খুঁজবে আমাকে। অন্য একদিন যাবো।”
“আচ্ছা, মা। বাবুটাকে নিয়ে যেয়ো। তো বাবুটা কি ছেলে? না মেয়ে?”
“অবশ্যই ছেলে।”, আকবর চাচা একটু ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
“নাম কি রেখেছো?”
“বাবুর নাম?”
“হুম।”
“সৈকত। আরো নাম আছে ওর। আমি সৈকত বলেই ডাকি। ও এখনি এসে পড়বে। আপনি বসুন চাচা, আপনার সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো। খুব মিষ্টি ছেলে।”
“ঠিকাছে মা। তুমি এখন কি করছো তাহলে? পড়াশোনা শেষ?”
“না চাচা, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে অধ্যয়ন করছি। অনার্সের আরো তিনটা সেমিস্টার বাকি।” আকবর চাচা কথাটা শুনে মনে মনে ভাবছে, পড়াশোনা শেষ না করেই বিয়ে, বাচ্চা এগুলোতে জড়ানো ঠিক হয় নি মেয়েটার। বেশ কিছুক্ষণ গল্প করলো চাচা-ভাতিজি। আকবর চাচার আর বসে থাকতে ইচ্ছে করছে না। কিছুটা বাধ্য হয়েই বললো, “আজ আমি উঠি, মা। তোমার বাবুর সাথে আরেকদিন দেখা করা যাবে। আমার এ সময় একটু না হাঁটলে শরীরে প্রচন্ড ব্যথা জমা হয়।” “আরে না চাচা। এতোক্ষণ যখন বসেছেন, আর দু চার মিনিট বসুন, ও ঠিক চলে আসবে।” রিমি বাদামওয়ালাকে ডাকলো, “এই যে বাদাম, এদিকে আসুন।” বাদামওয়ালা রিমির ডাক শুনেও ওদিকে হেঁটে চলে যাচ্ছে। রিমি বেশ কয়েকবার ডাকলো, “এই বাদাম, এই বাদাম।”
তবুও বাদামওয়ালা পরোয়া না করে নিজের মতো হেঁটে চলে যাচ্ছে। এবার বেশ রাগ হলো রিমির। রিমি নিজেই দ্রুত গতীতে হেঁটে গিয়ে বাদামওয়ালাকে বললো, “কি ব্যাপার? আপনাকে ডাকছি তবু শুনছেন না কেনো?” “আফা, আফনে তো ‘এই বাদাম, এই বাদাম’ কইরা বাদামডিরে ডাকতাচুইন, আমারে না। বাদামডিরে তো আর আমি বাইন্দা রাখচি না, জিগায়া দেখুইন কেরে যায় নায় আমার মাথার উপ্রে থাইকা।” রিমি রাগ কন্ট্রোল করে দশ টাকার বাদাম কিনলো। নিজে কয়েকটা বাদাম রেখে বাকি বাদাম গুলো আকবর চাচার হাতে দিয়ে বললো, “নিন চাচা, বাদাম খান, ভালো লাগবে।”
এরই মধ্যে সেই বহুল প্রত্যাশিত বাবু এসে হাজির হলো। লম্বায় প্রায় আকবর চাচার সমান। ভরাট চেহারা। সুদর্শন বলাই যায়। এসেই রিমিকে বললো, “সরি বাবু, একটু দেরি হয়ে গেলো। বুঝোই তো, স্কুলের বাচ্চাকাচ্চাদের পড়ানো কি একটা ঝামেলার কাজ।” রিমি তার বাবুকে আকবর চাচার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। পরিচয়পর্ব শেষে আকবর চাচা বাদাম হাতে সামনের দিকে হাঁটছে আর ভাবছে, এতো বড়ো বাবু আমি জীবনেও দেখি নি। মাশআল্লাহ!
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত