আব্বা নতুন এন্ড্রয়েড ফোন কিনেছে। সেই কি তার ভাব, মনে হয় বিল গেটস। সারাদিন মেবাইল নিয়েই পরে থাকে। আর ফুল সাউন্ড দিয়ে মোটর বাইক রেস খেলে। আব্বার জ্বালায় আম্মা অতিষ্ট। আমিও হালকা পাতলা অতিষ্ঠ। আম্মা রাগও করতে পারেনা। আম্মা যদি বলে….
-কি শুরু করলে তুমি?
–কি করলাম?
-এইযে ভুউম ভুউম করে সারাদিন মোটর বাইক খেলো এত সাউন্ড দিয়ে, একদম অসহ্য লাগে আমার।
–তো আই কিত্তাম?
-দেখো ছেলের মতন তুমিও ফাইজলামি করবানা।
–আচ্ছা তুমি যে এইযে সিরিয়াল দেখো আমি কখনো না করছি? একদিন না করার ফলে তুমি ভাত না দিয়ে ওদা মুড়ি দিয়েছিলে মনে নেই? আম্মা আর কিছু বলেনা। সত্যিইতো একদিন সিরিয়াল দেখা না করায় ওদা মুড়ি দিয়েছিলো। অনেকেই ওদা মুড়ি চেনেননা। পাম ছাড়া মুড়িকে ওদা মুড়ি বলে। আব্বা একটা ছোট স্পিকার বক্স কিনেছে। এখন স্পিকার লাগিয়ে গেমস খেলে। আশেপাশের মানুষ সবাই অতিষ্ট। কেউ কিছু বললে আব্বা সাফসাফ বলে দেয়..’সমস্যা হলে বাড়ি ভেঙে বিদেশে যাও।’ আমি আব্বার রুমে গেলাম, রাগ করে বললাম….
–দেখো গেমস খেলবা ঠিক আছে, সাউন্ড কম দাও।
-হ আইছে আমার বিচারক, কমামুনা।
–দেখো আব্বা এটা ঠিকনা।
-কেন তুই যে পাবজি খেলার সময় উল্টাপাল্টা বকস আমি কিছু কইছি?
–না।
-তাহলে যা এনতে, নইলে পিডানি খাবি। বুকের বা পাশে পাহাড় সমান ডিপ্রেশন নিয়ে আব্বার রুম থেকে চলে আসলাম। মাঝেমাঝে মনচায় আব্বারে বিক্রি করে মাসব্যাপী শুধু বিরিয়ানি খাই। আর বিছানায় ঠ্যাঙ তুলে কেলিয়ে ঘুমিয়ে থাকি। কিন্তু সেটা হয়ে ওঠেনা। হাজার হলেও আব্বাতো! রুমে শুয়ে আছি কিছুক্ষণ পরই আব্বার আগমন। মুচকি হেসে বলল….
–বাবা কেমন আছো তুমি? এতসুন্দর করে কথা!? কেমনে তালোই? আব্বা হটাৎ এত আদর করে কথা বলছে কেন! নিশ্চই কাহিনী আছে, বললাম….
–আব্বা শইলডা ভালানি? কিছু হইছে?
-দেখতো মোবাইলে কি হলো, কল আসলে রিংটোন বাঁজেনা। মনে হয় মোবাইলের স্পিকার গেছে, হৈ হৈ…খুশিতে গুলগুলা হয়ে আব্বার ফোন হাতে নিলাম। কিন্তু আমার ধারণা ভুল হলো। আসলে আব্বার ফোন সাইলেন্ট করা। সামান্য সাইলেন্ট করা এই জিনিসটা আব্বা বোঝেনা?! আমি বিরশ মুখে বললাম….
–মোবাইল আর চলবেনা আব্বা।
-হুপ, কি কস? একটু আগেইতো গেমস খেললাম।
–তুমি কি মোবাইল সম্পর্কে বোঝো?
-নাতো।
–সেজন্যেই এমন হয়েছে। সবসময় মোবাইলে গেমস খেলার ফলে মোবাইলের স্পিকার গেছে।
-মানে?
–মানে আমরা যদি সারাদিন হেডফোন লাগিয়ে গান শুনি তাহলে কান বয়ড়া হবে তেমনি মোবাইলে তুমি সারাদিন গেমস খেলো। গেমসের অতিরিক্ত সাউন্ডের ফলে মোবাইলের কান নষ্ট হয়েছে।
-কসকি? এখন কি হবে?
–স্পিকার পাল্টাতে হবে।
-স্পিকারের দাম কত?
–এই চার, পাঁচশ। আমার কথাশুনে আব্বা হা করে রইলো৷ ফিসফিসিয়ে কি যেন ভাবলো। তারপর বলল….
–৫০ টাকায় হবেনা? পুরাতন দেখে লাগাস। আব্বার কথা শুনে টাসকি খেলাম। কই ৪/৫ শ, আর কই ৫০। পুরাই শিহরিত হলাম, ভাবা যায় এগ্লা? আমি বললাম….
–স্পিকার ১ হাজার করে দাম, আমার পরিচিত দোকান আছে তাই বললাম ৪/৫ শ।
-কিন্তু এত টাকা!
–তাহলে বাদ দাও, গেমস খেলাও হবেনা। আব্বা আমার কথা শুনে হতাশ হয়ে গেলেন। মাথা চুলকিয়ে পকেট থেকে ৫০০ টাকার নোট বের করে বললেন….
–এইনে মোবাইল ঠিক করে আনিস। ভালো স্পিকার লাগাবি।
-আরে টেনশন করোনা তুমি।
বলেই ছো মেরে টাকাটা নিয়ে নিলাম। আব্বা মোবাইল দিয়ে চলে গেলো। আমি খুশিতে একদফা ঘুরান্টি ডান্স দিলাম। তারপর সেই একখান ভাব মেরে বাজারে গিয়ে ইচ্ছেমত পেট পুরে বিরিয়ানি খেলাম। সন্ধ্যায় বাসায় এসে মোবাইলের সাইলেন্ট সেরে আব্বাকে দিলাম। আব্বা সে কি খুশি। আর আমি মুচকি মুচকি হাসি। এখন আব্বা তেমন একটা গেমস খেলেনা। তবে মোবাইল ছাড়াও ওঠেনা। খাওয়ার সময় মোবাইল, গোসল করতেও ডিজে গান ছেড়ে গোসল করবে। টয়লেটে গেলেও মোবাইল নিয়ে যাবে। কিন্তু বিপত্তি বাঁধলো ফেসবুক আইডি খুলে দেওয়াতে। উল্টাপাল্টা কমেন্ট করে৷ লিস্টের সকল মেয়েদের মেসেজ দিয়ে বিরক্ত করে। ভাবছি কি করা যায়। অনেক্ষণ ভাবার পর মাথায় শয়তানি বুদ্ধি আসলো। দৌঁড়ে গেলাম আব্বার রুমে, চিৎকার করে বললাম….
–আব্বা তেশ মারছে আব্বা আমার চিৎকারে ভয় পেয়ে বিছানায় উঠে বসলো৷ বুকে হালকা থুতু দিয়ে বলল….
–কি হয়েছে চিল্লাচ্ছিস কেন?
-আব্বাগো তেশ মারছে…
–থাব্রা খাবি, কি কস।
-হ আব্বা সত্যিই কইছি।
–বল কি হয়েছে?
আমি আমার মোবাইলে ফেসবুকে গিয়ে আব্বার নাম সার্চ করলাম। সেখানে আব্বার নামে দুটো আইডি, মানে একটা ক্লোন করা (ক্লোনটা আমিই খুলছি)। প্রোফাইল পিকচার একই। আব্বাকে দেখিয়ে বললাম….
–এই দেখো তোমার নামে অন্য আইডি খোলা।
-হায়হায় আমি সেলেব্রিটি হলাম?
–সেলেব্রিটি না ফাও, এখন কেউ যদি ঐ আইডিতে উল্টাপাল্টা পোস্ট করে?
-কেন করবে?
–তোমার নামে আইডি খুলছে, সেটা দিয়ে যদি মেয়েদের উল্টাপাল্টা কথা বলে তাহলেতো তোমার দোষ হবে।
-কেন?
–কারণ সবাই ভাববে এসব তুমি করছো, তোমাকে হ্যারেজমেন্টের অপরাধে জেলেও দিতে পারে।
–কি কিইইই…
-হ আব্বা সত্যি কইলাম। আব্বাকে দেখে বুঝলাম বেচারা হেব্বি চিন্তায় পরে গেছে। মাথা চুলকিয়ে বলল….
–এখন কি করব?
-কি আর করবা ওপাশে কেউ উল্টাপাল্টা কথা বলবে পুলিশ এসে তোমায় ধরে নিয়ে যাবে।
–না এটা হতে পারেনা, তুই আমায় বাঁচা বাবা।
-সরি আব্বা সেটা সম্ভব না, আর অনেক টাকার দরকার।
–কত টাকা?
-বাদ দাও, পুলিশে নিক তোমায়।
–না আমার মানইজ্জত হারাতে চাইনা, বল কত টাকা। যাক লাইনে এসেছে। নিজের প্রতিভায় নিজেই মুগ্ধ হলাম। মুখে হতাশার ছাপ নিয়ে বললাম….
–১০/১২ হাজারতো লাগবেই।
-সামান্য এটার জন্য এত টাকা? কেন?
–কারণ ঐ আইডি ডিলিট করতে হবে, ডিলিট করতে এত টাকাই লাগবে। নইলে জেল। আব্বার মুখ কাচুমাচু হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে এখনই কেঁদে দিবে৷ আমি বললাম….
-আচ্ছা ৬ হাজার দাও, আমার বন্ধুকে দিয়ে করাব কাজটা। আব্বা উপায় না পেয়ে ৬ হাজার টাকা দিলো। আমিও খুশিতে মনেমনে মহাকাশে ঘুরতে থাকলাম। লুঙ্গী ডান্স দিতে থাকলাম। ওরে আমি এখন কোটিপতি। ইচ্ছেমত পারফিউম মেরে শাহরুখ খান ভাব নিয়ে বাজারে গেলাম। বন্ধু সিয়ামকে নিয়ে ইচ্ছেমত বিরিয়ানি, রোস্ট খেলাম। শপিং করলাম৷ আব্বার নামে খোলা ফেইক আইডি ডিলেট করে দিলাম। আহা আকাশে বাতাসে কি শান্তি। খুব ভোরে অনুভব করলাম কে যেন আমার কম্বল ধরে টানছে। ঘুম থেকে উঠে তাকিয়ে দেখি আব্বার হাতে লাঠি। রাগ করে তাকিয়ে আছে। আমি ঢোক গিলে বললাম….
–কিচ্চে আব্বা?
-ওঠ তুই আজকে, তোর খবর আছে।
–কেন কি হইছে?
-তুই আমার নামে ফেইক আইডি খুলছিলি?
–মানে মানে? কি বলছো আব্বা?
-সিয়াম সব বলছে আমায়, তোর হারামিগিরি ছুডামু আজকে। সব টাকা বাইর কর৷ খাইছেরে! শালা হ্রামি সিয়াম সব সত্যিই বলে দিছে আব্বাকে। এবার টাকা আমার পিছন দিয়ে বাইর করব। আব্বা হেব্বি রেগে আছে। কোনকিছু না ভেবে লুঙ্গী খিঁচে ইয়াহু বলে দরজার ভেঙ্গে দৌঁড়৷ আব্বা সাথে সাথে মারলো বারি। বারিও লাগলো ঠাস করে। আমি ভয়ে আরো দৌঁড়। আব্বাও পিছে পিছে দৌঁড়। আব্বা বলছে….
-হারামি খাড়া আজকে, আমার টাকা দে। কে শোনে কার কথা! আমি কোনকিছু না ভেবে উড়াধুরা দৌঁড়। দৌঁড়াচ্ছি আব্বাও দৌঁড়াচ্ছে। পিছু ছাড়ছেনা। আমিও দৌঁড় থামাবনা আজকে। দৌঁড়ে এক পর্যায়ে আব্বা হতাশ হয়ে পরে রইলো। আমিও আব্বার চোখের আড়াল হলাম। অনেকক্ষণ পর হাঁপাতে হাঁপাতে ফেসবুকে টু মারলাম সিয়ামকে গালি দেওয়ার জন্য। দেখি সিয়াম ব্লক করে রেখেছে। টাইমলাইন ঘাটতেই আহাম্মক হলাম। কোন শালায় জানি আমাকে দেওয়া আব্বার দৌড়ানি ভিডিও করে পোস্ট দিয়েছে ‘শীতের সকালে গোসলের ভয়ে বাসা থেকে দৌঁড়ে পালিয়ে যাচ্ছে এক যুবক।’
গল্পের বিষয়:
গল্প