শুকনো পাতা

শুকনো পাতা
রম্য গল্প লেখাই যে একদিন আমার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে সেটা আমি কখনো কল্পনাও করিনি। এখন ভয়ের সাথেসাথে টেনশন বাড়ছে চক্রবৃদ্ধি হারে। থানা থেকে ফোন এসেছে। আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। অফিসার মোটামোটি আমার পরিচিত, বললাম….
–স্যার বলুন?
-আপনি কই?
–বাসায়, কেন?
-আপনার নামে দুটো মার্ডার কেস আছে।
আমি আকাশ থেকে পরলাম। মুহূর্তেই টেনশন বেড়ে গেলো। আমি আবার কাকে মার্ডার করলাম..! ওসি সাহেব বললেন….
–আপনি পরিচিত তাই ফোন করে জানালাম। দয়া করে পালাবেন না, পালালে আপনাকে ক্রস ফায়ার করে মারা হবে।
-কিন্তু আমিতো কোন মার্ডার করিনি।
–সেটা থানায় আসলেই বুঝতে পারবেন।
-কিন্তু স্যার!
–দেখুন আপনার যা বলার থানায় এসে বলুন৷ আর দয়া করে পালানোর কোন চেষ্টা করবেন না।
টেনশনে কান দিয়ে ধোয়া বের হচ্ছে। বাম কান দিয়ে লাল ধোয়া আর ডান কান দিয়ে পিংক কালারের ধোয়া। কিন্তু সেটা অদৃশ্য। আমি কি করব বুঝতে পারছিনা। ড্রাইভার মোখলেসকে কাহিনী খুলে বলতেই বলল….
–আলহামদুলিল্লাহ অনেকদিন পর তাহলে মাংস দিয়ে ভাত খেতে পারব।
-মানে?
–আপনার নামে মাডার কেস। পুলিশ ধরে নিয়ে যাবে।
-তো?
–তো আবার কি!
বাসায় মাংস রান্না হলে আপনার ভাগের গুলোও পাবো। আর তাছাড়া আপনার মৃত্যু দন্ডও হতে পারে। সেটা হলে আপনার চল্লিশায় মাংস দিয়ে ভাত খেতে পারব। আর তখন গাড়ি নিয়ে ইচ্ছে মতন মর্জিনার লগে ঘুরব, লংড্রাইবে যাব কেউ বকবেনা। শালা আমি এখন থানায় যায়নি আর মোখলেস আছে আমার মরন নিয়ে। তুমি এতবড় বাটপারি করবা আমার লগে? আমি উরান্টি দিয়ে মোখলেসের পাছায় লাথি দিলাম। লাথি এত জোড়ে দিছি যে ব্যাটার জবান বন্ধ। মোখলেস পাছা হাতাতে হাতাতে কাঁদো কাঁদো ভাবে বলল….
-আপনে থানায় যাইবেন দেইখা আমি একটু প্রাংক করলাম আর আপনে মারলেন?
–এটা কেমন প্রাংক?
-মরন প্রাংক, আপনাকে পরীক্ষা করলাম।
মেজাজটা আবার চড়ে গেলো। দরজায় চিপায় মোখলেসের আঙ্গুল রেখে চাপ দিলাম। মোখলেস মুখ হা করে চিৎকার দিতেই ওর মুখে মুরগী ছাউ ঢুকিয়ে দিলাম। বেচারা ঠোঁট মিলাতে পারছেনা, হা করেই আছে। মুরগীর ছাউ ভেতরে চেঁচাচ্ছে দেখে মা মরগি ছুটে এসে মোখলেসেরে মুখে ঠোকর দিলো। পা দিয়ে আছর কাটতেই মোখলেস মাথা নিচু করে মুরগির ছাউ বের করে দিলো। আমিও দরজার চিপা থেকে আঙুল বের করে দিলাম। মোখলেস হাঁপাতে হাঁপাতে বলল….
–আপনের মিয়া ফাঁসি হওয়া উচিৎ।
-তাল গাছে বিলাই, আয় তরে কিলাই।
–মার্ডার কেসের কথা শুনে আপনের মাথার তার ছিঁড়ছে নাকি ভাই?
-যাই থানায় দোয়া করিস..!
–আর আইসেননা৷ মৃত্যুদন্ড হলে ফোন করে জানাইয়েন পার্টি দিব। মোখলেসকে কিছু বলতে যাব তার আগেই এক দৌঁড়। দূর থেকেই আবার ভেংচি কেঁটে বলল….
–আপনার জন্য গভীরভাবে আমি আর মর্জিনা শোকাহত৷ আশা করি খুব শীঘ্রই চল্লিশা খাব।
-মোখলেইসা হারামি!
–ভাই ঈদ মোবারক। সামনে শুক্রবার জুম্মায় জিলাপি দিব।
বলেই মোখলেস এক দৌঁড়ে পগারপার। কতবড় বাটপার হলে এমন করতে পারে। তাই বলে একটুও মায়া নেই? এটা মানতে পারলামনা৷ আমি ভাদাইমার মতন মুখ করে থানার দিকে গেলাম। পালালাম না যদি আবার ক্রস ফায়ার করে তখন? না এত তাড়াতাড়ি মরতে পারবনা। মারিয়ার সাথে এখনো বিয়ে হয়নি। কিন্তু মেসেঞ্জারে আমাদের বিয়ে বাসর সবই হয়েছে। আমাদের একটা মেয়ে একটা ছেলেও আছে মেসেঞ্জারে। ছেলের নাম ‘তিত করলা’ আর মেয়ের নাম ‘পিংক ঝিঙা।’ যাইহোক মারিয়াকে কেসের ব্যাপারে কিছু বলা যাবেনা। পাছে টেনশনে পরে যায়। থানায় আসার পর ওসি সাহেব কোন কথা না বলেই কলার ধরে হাজতে ঢুকিয়ে দিলো। আমি বললাম….
–এসব কি স্যার?
-মার্ডার করেছিস আবার বড়বড় কথা চুপচাপ থাক।
–কিন্তু আমিতো কোন মার্ডার করিনি।
-চুপ কর, তোর নামে দুই দুইটা মার্ডার কেস।
–কিসের মার্ডার? কখন করছি বলেন?
-কিছু করিসনি৷ তুই রম্য লিখেছিস তোর রম্য পড়ে এক অপারেশনের রুগি হাসতে হাসতে মারা গেছে। সেই মার্ডার কেসের আসামি হিসেবে তোকে জেলে আনা হয়েছে।
–আজব ব্যাপার! এটার দোষ কেন আমার হবে?
-শুধু এটাই দোষ নেই, আমাদের এক পুলিশ চোরকে গুলি করার সময় তোর গল্পের কথা মনে পরেই হেসে দেয়। ফলে গুলিটা মিস হয়ে এক সাধারণ মানূষের লাগে। সেই দুইটা কেস তোর উপর।
–এটা আমি মানিনা তাই বলে আমার দোষ?
-অবশ্যই তোর দোষ৷ শুধু দোষ না তোর ফাঁসিও হতে পারে।
–আজব ব্যাপার! হাজাম মুসলমানি করতে গিয়ে যদি কোন ছেলের নুনু ধরে আর ছেলেটা সুরসুরি পেয়ে নড়াচড়া করে নুনু কেটে ফেলে তখন কি হাজামের দোষ?
-এ কেমন লজিক?
–এটাই সায়েন্স! হাবিলদার সহমত বলো। হাবিলাদার এসে আমার পাছায় বারি দিলো। পুলিশের বারি কি ভয়ংকররে। ওসি সাহেব বলল….
–চুপচাপ থাক। আগামিকাল তোকে কোর্টে হাজির করা হবে। তারপর তোর বিচার। আর একটা কথাও বলবি না, যদি বলিস তোর সাজা আরো ভয়ংকর হবে।
আমি চুপসে গেলাম। এটা কি হলো! ভয়ে কলিজা শুকিয়ে যাচ্ছে। রাত ১০ টার সময় ওসি সাহেব সাথে একজন হাবিলদার নিয়ে আসলো। আমার হাত বাঁধলো, তারপর চোখ বাঁধলো। আমি দরূদ শরীফ পড়া শুরু করলাম। আমায় জেল থেকে বের করে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে জানিনা। আমার প্রসুর টেনশন হচ্ছে। মনে পরছে আমার আর মারিয়ার মেসেঞ্জারের সন্তানের কথা। আমার সবচেয়ে প্রিয় সন্তান হলো আমার মেয়ে ‘পিংক ঝিঙা।’ আহারে কি হবে আমার ছেলে মেয়ের ওরা যে এতিম হয়ে যাবে। আমাকে অনেক্ষন পর একটা জায়গায় নিয়ে আসা হলো। লিফটে করে উপরে নেওয়া হলো। চোখ খুলল, একটা বড় রেস্টুরেন্টে। আমাকে অবাক করে দিয়ে ওসি সাহেব বললেন….
–কি খাবি খা।
-এতবড় রেস্টুরেন্টে!?
–হা হা এটাই তোর জীবনের শেষ খাওয়া।
তাই ভালো জায়গায় নিয়ে আসলাম। আর চুপচাপ খা কোন কথা বলবিনা।
ভয়ে আমার বুক ধরফর করছে। এর মধ্যে বাসা থেকে কেউ খোঁজ নিলনা। শুধু মোখলেস একটা মেসেজ দিয়েছে ‘ভাই ফাঁসির আগে ওয়াটসাপ কইরেন আর ভিডিও কল দিয়েন পারলে। না পারলে একটা সেলফি দিয়েন। হ্যাশ ট্যাগ দিয়ে পোস্ট করব, ওপারে চলে গেলেন রম্য রুপ্পেল, ইন্টারের মেয়েদের বুকের ধন।’ মোখলেসকে ব্লক করেছি। ওর মতন স্বার্থপরের সাথে কোন কথা নেই। আমি খাওয়ায় মনোযোগ দিলাম। ভয়ে আর খেতে পারলামনা। তবুও কোন রকম হতাশ হয়ে ৫ প্লেট বিরিয়ানি খেলাম। খাওয়া শেষে ওসি সাহেব আমায় একটা বিশাল মাঠে নিয়ে আসলো। তারপর বলল….
–দৌঁড় দে এখানে।
-কিউ?
–তোকে ক্রস ফায়ার করব। যদি বেঁচে যাস তো ভালো। এটাই তোর শেষ চান্স।
-কিইইইই?
–চুপচাপ দৌঁড়া, এখনি…
বলেই ওসি সাহেব কোমড় থেকে পিস্তল বের করার জন্য প্রস্তুত হলেন। আমি ঘুরান্টি দিয়ে দিলাম দৌঁড়। সাথেসাথেই ঠাসসসসস করে শব্দ হলো। আমি বুকে হাত দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পরলাম। আ আ আ…মারিয়া, মা পিংক ঝিঙগা আমি আর বাঁচতে পারলামনা। একি আমার নিঃশ্বাস চলছে কেন? খেয়াল করলাম বুকে কোন রক্ত নেই। তারমানে গুলি লাগেনি। হোয়াট দা ভাগ্য। আমি উঠে দাঁড়াতেই ওসি সাহেব দৌঁড়ে পাশে দাঁড়ালেন। আমি আবার ভয়ে ভয়ে তাকাতেই উনি হাসতে থাকলেন। আমি ভয়েভয়ে বললাম….
–স্যার মাফ কইরা দেন।
-হুর্মিয়া, আপনে আমার কলিজা আপনের জায়গা বু্কে।
–মানে?
-মাফ করবেন ভাই, আসলে আমি আপনার গল্পের অনেক বড় ফ্যান তাই আপনাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য এমন প্রাংক করলাম।
–হোয়াট?
-হা হা হা, এইসব সাজানো নাটক ভাই। এরসাথে আপনার মা-বাবাও জড়িত। আমিই তাদের সব বলছি। আর আপনার ড্রাইভার মোখলেসও।
–আই পাক ইউটর সিস্টেম।
-ভুল হয়ে গেছে ভাই,
আসলে চাইছিলাম যে আপনাকে ভয় দেখাতে। আর আপনি জোস লেখেন, ভাবছিলাম আপনাকে একদিন ট্রিট দিব। আপনে মিয়া দেখি ভয়েও ৫ প্লেট বিরিয়ানি খেলেন। কেমনে কি ভাই? আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা। হঠাৎ মাথা ঘুরে মাঠেই পরে গেলাম। যখন চোখ খুললাম তখন দেখি সকাল৷ আমার পাশে ওসি সাহেব। আমি হাসপাতালের বেডে। ওসি সাহেব দুঃখ প্রকাশ করলেন। আমায় বললেন সকালে মোখলেস এসেছিলো আমায় দেখতে। আমি কিছু বলতে যাব তার আগেই ওসি সাহেব বললেন…
–আপনার ড্রাইভার মোখলেস পুরাই জোস, আমি ওরো ফ্যান হয়ে গেলাম। এখন চলি ডিউটি আছে। আর ফেসবুকে যান হা হা হা হা ওসি সাহেব রহস্যময় হাসি দিয়ে চলে গেলেন। আমি ডাটা অন করে ফেসবুকে গেলাম। যা দেখলাম তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না৷ মোখলেস আমায় ট্যাগ করে আমার ঘুমানোর ছবি পোস্ট করেছে। সাথে ক্যাপশন দিয়েছে, ‘সদ্য ফেল করা ইন্টারের নিব্বির ছ্যাঁকা খেয়ে ইঁন্দুর মারা ঔষধ খেয়ে হাসপাতালের বেডে ভং ধরে শুয়ে আছেন সবার প্রিয় রম্য রুপ্পেল।’
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত