পরিবর্তন

পরিবর্তন
সকালে অফিসে যেতে দেরি হয়ে যাচ্ছিলো দেখে শ্রাবণী তাড়াহুড়ো করে গোসল করে কাপড় গুলো না ধুয়েই অফিসে চলে যায়। আমি শ্রাবণীর ভেজা কাপড়গুলো ধুয়ে ছাদে যখন শুকাতে নিয়ে যাই তখন দেখি আমার পাশের ফ্ল্যাটের আনোয়ার ভাই ছাদে দাঁড়িয়ে ব্রাশ করছে। আমি দড়িতে যখন শ্রাবণীর ভেজা শাড়িটা মেলে দিচ্ছিলাম আনোয়ার ভাই আমায় দেখে মুচকি হেসে বললো,
~ পিয়াস ভাই, আপনায় একটা কথা বললে কিছু মনে করবেন? আমি বললাম,
— বলেন কি বলবেন আনোয়ার ভাই হাসতে হাসতে বললেন,
~ ভাই, আপনি পুরুষ মানুষতো না কি? কিছু মনে করবেন না, আপনাকে আমার কোনো এংগেলে পুরুষ মানুষ মনে হয় না কথাটা শুনে আমি এই বিষয়ে কিছু না বলে বললাম,
— ভাই আমি যাই। বাসায় আমার কিছু কাজ আছে আনোয়ার ভাই তখন বললো,
~বাসায় গিয়ে তো মিয়া মেয়েদের মত থালাবাসন পরিষ্কার করবেন আর ঘর ঝাড়ু দিবেন আমি তখন হেসে বললাম,
— শুধু থালাবাসন আর ঘর পরিষ্কার না দুপুর আর রাতের জন্য রান্নাও করতে হবে আমার কথা শুনে আনোয়ার ভাই মনে হয় কিছুটা রেগে গেলো। উনি তখন বললেন,
~যান মিয়া, মেয়েদের কাজ করেন গিয়ে। হাফলেডিস কোথাকার আমি আর কিছু না বলে চুপচাপ নিচে নেমে আসলাম। আমাদের সমাজের কিছু মানুষ এখনো ঘরের কাজ গুলোকে শুধু মেয়েদের কাজ মনে করে। ৬ বছর প্রেম করার পর আমি শ্রাবণীকে বিয়ে করি। আর বিয়ের পর দুইজনেই চাকরিতে জয়েন করি। দুই বছর চাকরি করার পর আমি কিছু কারণে চাকরিটা ছেড়ে দেই। এখন আপাতত বাসায় আছি বাসার কাজ কর্ম করছি আর নতুন চাকরির জন্য চেষ্টা করছি। ঘর গোছানোর কাজ যখন শেষ তখন শ্রাবণী ফোন দিয়ে বললো,
– পিয়াস, রাতে দেশি মুরগি আর জাম আলু দিয়ে পাতলা ঝোলের তরকারি খেতে ইচ্ছে করছে। আমি মুচকি হেসে বললাম,
— ঠিক আছে আমি রান্না করছি বাইক নিয়ে ৪০ মিনিট ধরে শ্রাবণীর অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে আছি অথচ শ্রাবণীর আসার নাম নেই। তাছাড়া শ্রাবণীর ফোনের সুইচ-অফ। মনে মনে ভাবলাম ও হয়তো মিটিংয়ে আছে আসতে দেরি হবে। তাই পাশের চায়ের দোকান থেকে একটা সিগারেট কিনে মনের সুখে কয়েক টান দিতেই খেয়াল করি শ্রাবণী আমার সামনে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে। রাগলে শ্রাবণীর নাকে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে যায় আর ফর্সা চেহারাটা একদম গোলাপি হয়। খুব অদ্ভুত রকম সুন্দর লাগে তখন। আমি সিগারেটটা দূরে ফেলে দিয়ে বললাম,
–ভুল হয়ে গেছে, এই কান ধরছি আর জীবনেও কখনো খাবো না। এইবারের মত মাফ করে দাও বাইক চালানোর সময় শ্রাবণী আমায় খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
– পিয়াস, তোমায় আমি প্রচন্ডরকম ভালোবাসি। তোমার কিছু হলে আমি সত্যি মরে যাবো আমি বললাম,
— আরে পাগলি, আমি জানি তো তুমি আমায় প্রচন্ড ভালোবাসো শ্রাবণী তখন আমার পিঠে সমানে কিল ঘুষি মেরে বলতে লাগলো,
– জানিস তাহলে সিগারেট খাস কেন? আমি চোখের থেকে আড়াল হলেই তুই সিগারেট খাস আমি হাসতে হাসতে বললাম,
— ছিঃ ছিঃ স্বামীকে তুই করে বলতে নেই শ্রাবণী তখন আমায় আবার শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
-পুরোনো অভ্যাস তো কুরবানী ঈদের ৯ দিন আগেই আমি শ্রাবণী গ্রামের বাড়ি এসে পরেছি। বাবার হাতে কুরবানীর গরু কিনার জন্য টাকা দিতেই বাবা অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে বললো,
~ আমি বেহালাল রোজগারের টাকা দিয়ে গরু কুরবানী দিতে পারব না? আমি অবাক হয়ে বললাম,
— বেহালাল বলছো কেন বাবা? বাবা তখন রেগে গিয়ে বললো,
~নিজে বাসায় মেয়েদের মত বসে থেকে বউকে দিয়ে রোজগার করাচ্ছো। লজ্জা করে না বউয়ের টাকা দিয়ে চলতে? আমি তখন বাবাকে বললাম,
— এইখানে লজ্জার কি আছে? স্ত্রী যদি সংসারের হাল ধরে তাহলে সমস্যা কি? আর মেয়ে মানুষ টাকা ইনকাম করলেই সেটা বেহালাল হবে এটা কেমন কথা? বাবা আরো রেগে গিয়ে বললো,
~তোমার এত প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে পারবো না। তোমার বউয়ের টাকায় আমি কুরবানী দিবো না বাবার কথা গুলো সহজে মেনে নিতে পারছিলাম না। তাই আমি আর শ্রাবণী ঈদ না করেই ঢাকায় আবার এসে পরি। বিকালের দিকে বেলকনির গ্রীল ধরে যখন বাহিরে তাকিয়ে ছিলাম তখন হঠাৎ শ্রাবণী এসে বললো,
– তোমার একটা ভালো চাকরি হলেই আমি আমার চাকরিটা ছেড়ে দিবো। আমি অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,
— কেন? শ্রাবণী চোখের কোণে জমে থাকা জলটা মুছতে মুছতে বললো,
– তোমায় কেউ বাজে কথা বললে আমার খুব কষ্ট হয় আমি শ্রাবণীকে কাছে টেনে বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললাম,
— সমাজের কিছু মানুষ খারাপ কথা বলবেই। এতে কষ্ট পাওয়ার কিছু নেই। কথা গুলো এক কান দিয়ে ঢুকিয়ে অন্য কান দিয়ে বের করে দিবে। দেখো একদিন সমাজের সকল মানুষ বুঝবে আর সেদিন এই সমাজটা পরিবর্তন হয়ে যাবে এমন সময় আনোয়ার ভাইয়ের ফ্ল্যাট থেকে ভাবীর চিৎকারের শব্দ শুনে আমি শ্রাবণী দৌড়ে উনাদের ফ্ল্যাটে গেলাম৷ গিয়ে দেখি আনোয়ার ভাই উনার স্ত্রীকে মারছেন। আমি আনোয়ার ভাইয়ের হাত থেকে লাঠিটা কেড়ে নিয়ে বললাম,
— আরে, আপনি ভাবীকে মারছেন কেন? আনোয়ার ভাই রেগে গিয়ে বললো,
~ আমি পুরুষ তাই আমি আমার স্ত্রীকে মারছি। আপনার মতো হাফলেডিস না যে ঘরে বসে মেয়েদের কাজ করবো আর বউয়ের ইনকাম খাবো আমি উনার কথা শুনে বললাম,
— তারমানে নিজের পুরুষত্ব প্রমাণ করার জন্য স্ত্রীর গায়ে হাত তুলতে হবে? আনোয়ার ভাই যখন আমায় কিছু বলতে যাবে তখন শ্রাবণী রেগে গিয়ে বললো,
– আপনার নিজেরও তো একটা মেয়ে আছে। আপনার মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার পর আপনার মেয়ের জামাই আপনার মেয়েকে মেরে তার পুরুষত্বের প্রমাণ দেয় তখন আপনার কেমন লাগবে? শ্রাবণীর কথা শুনে আনোয়ার ভাই একদম চুপ হয়ে আছে। শ্রাবণী তখন আনোয়ার ভাইয়ের কাছে গিয়ে বললো,
– আমার স্বামীর পুরুষত্ব নিয়ে যদি আপনার সন্দেহ হয় তাহলে একটা কাজ করেন। নিজের শ্রাবণী আনোয়ার ভাইয়ের কানে কানে কি যেন একটা বললো। আনোয়ার ভাই কথাটা শুনে মাথা একদম নিচু করে আছে। আমি রুমে এসে অবাক হয়ে শ্রাবণীকে বললাম,
— তুমি কানে কানে কি এমন বললে যে আনোয়ার ভাই একদম মাথা নিচু করে ফেললো? শ্রাবণী আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
– খারাপ কথা গুলো এক কান দিয়ে শুনে আরেক কান দিয়ে বের করে দিতে হয় না। প্রতিটা খারাপ কথা গুলোর জন্য প্রতিবাদ করতে হয়। যেন নেক্সট টাইম এই খারাপ কথাগুলো বলার আগে দ্বিতীয়বার ভাবে। সমাজ এমনি এমনি কখনোই পরিবর্তন হবে না। প্রতিটা খারাপ কাজ আর খারাপ কথার সঠিক জবাব দিতে পারলে সমাজ এমনিতেই পরিবর্তন হবে
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত