ডাক্তারের একটাই পরামর্শ, ‘স্যার, রোগ ব্যাধি-ট্যাধি কিছু না। আপনার শরীর অনেক দুর্বল। আমি কোনো ঔষুধ দিচ্ছি না। বাড়িতে গিয়ে ভালো ভালো খাবেন। যা মনে চায়, খাবেন। এটাই আপনার চিকিৎসা।’
‘অচিন্ত্য, পরামর্শ তো দিলে কিন্তু আমার তো খাবারে কোনো রুচি নেই। কোনো খাবারই তো মনে চায় না।’
‘কিন্তু স্যার, খেতে তো হবেই। তাহলে কি একটা ভিটামিন ঔষুধ দেব? রুচি বাড়ানোর ঔষুধও আছে। কিন্তু শুধু ভিটামিন ঔষুধে খুব বেশি কাজ দেবে না।’
‘খাওয়ার মধ্যে দুধটা একটু যা পছন্দ করি। কিন্তু আজকাল তো বাজারে দুধের চেয়ে পানিই বেশি। দুধের সেই স্বাদও নেই।’
‘স্যার, দুধ পছন্দ করেন, সে তো খুবই ভালো। এটাই তো আপনার বড় ঔষুধ। আর বাজারের চিন্তা বাদ দেন, স্যার। আপনার বাড়ির ভিতরেই তো বেশ জায়গা আছে। দু-একটা গাভী পুষতে পারলে কিন্তু এর সমাধান পেয়ে যাবেন।’
‘তা মন্দ বলোনি।’
ডাক্তারের চেম্বার থেকে কাজী আব্দুল হাফিজ শেষ পর্যন্ত একটা গরু কেনার আইডিয়া নিয়ে বের হলেন। প্রায় পাঁচ বছর হল তিনি চাকরি থেকে অবসরে গেছেন। দীর্ঘদিন একটি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ডাক্তার অচিন্ত্যর মতোই বহু ছাত্রছাত্রীর গর্বিত শিক্ষক তিনি। অনেকগুলো ছেলেমেয়ের সংসারে এখনও কেউ উপর্জনক্ষম নয়। এরই মধ্যে অবসর। বেশ কয়েকদিন হল শরীরটাও ভালো যাচ্ছিল না। এ অবস্থায় তারই ছেলেমেয়েদের পরামর্শে নিজেরই এক প্রিয় ছাত্র ডাক্তার অচিন্ত্যর কাছে গিয়ে শরীরের হাল-হকিকত জেনে এলেন। সঙ্গে গরু কেনার বাড়তি আইডিয়া।
অবসর জীবনে এসে কাজী আব্দুল হাফিজ যেন পানিতে পড়লেন। অথচ টেনে তোলার কেউ নেই। সবগুলো ছেলেমেয়ে পড়ালেখা করে। প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত নানা স্তরে। মাঠে জমি-জিরাতের দিকেও জীবনে কোনো দিন নজর দেননি। হয়তো সে সুযোগও খুব একটা পাননি। কিন্তু চেষ্টা করলে যে একেবারেই পেতেন না, এমনও নয়। সেই নজর না- দেয়ার খেসারত তিনি এখন দিচ্ছেন। হাড়ে-হাড়ে, মজ্জায়-মজ্জায়। অভাব তার আগেও ছিল। কিন্তু অভাবের দড়িতে এমন পিট-মোড়া দিয়ে বাঁধা-পড়া অবস্থায় তিনি আগে কখনও পড়েননি।
এ অবস্থায় তার একমাত্র সহায় এতকালের সঞ্চিত ইংরেজি-জ্ঞানটুকু। তিনি মূলত ইংরেজি বিষয়েরই শিক্ষক ছিলেন। চাকরিতে থাকাকালীন অল্প কয়েকটি ছাত্রছাত্রীকে প্রাইভেট পড়াতেন। সেটাও নিজের বাড়িতে বসেই। ছাত্রছাত্রী বা তাদের অভিভাবকদের অনুরোধ এবং একই সঙ্গে নিজের পরিবারে লক্ষ্মীর অসহযোগিতা, এসব কিছু মাথায় রেখেই প্রাইভেট পড়ানোর কাজটি তিনি কম-বেশি চালিয়ে গেছেন। কিন্তু এই অবসরবেলায় ছাত্রছাত্রী বা তাদের অভিভাবকদের সুবিধার চেয়ে লক্ষ্মীর অযাচিত নিষ্ঠুরতার কথা বিবেচনা করেই তিনি আবারও প্রাইভেট পড়ানোর ব্যাপারে মনোযোগ দিলেন।
সাবেক এই প্রধান শিক্ষকের যোগ্যতা নিয়ে কারও কোনো সন্দেহ ছিল না। কাজেই ছাত্রছাত্রীও কম-বেশি জুটে গেল। তারা এই শিক্ষকের বাড়িতে বেশ ভোরবেলাতেই চলে আসে। ইংরেজির তালিম নিয়ে সকাল সকাল ফিরতে হয়। কারণ ৯টা বাজলেই আবার স্কুল শুরু হয়ে যায়। বৃদ্ধ শিক্ষক কাজী আব্দুল হাফিজ ফজরের নামাজ শেষ করেই তার বাড়ির বাইরের দিকের ঘরে গিয়ে বসেন। সেখানেই একটা বড় টেবিলের তিন দিকে তিনটি বেঞ্চ বসিয়ে দিয়েছেন তার ছাত্রছাত্রীদের বসার জন্য। আর অন্য দিকটাতে তিনি নিজে একটি পুরনো হাতলওয়ালা চেয়ার নিয়ে বসেন।
তার কাছে যেসব ছাত্রছাত্রী আসে, তাদের মধ্যে একজন ছাত্রকে বেশ দূর থেকে অনেকখানি পথ পাড়ি দিয়ে আসতে হয়। যদিও তার একটা বাইসাইকেল আছে, তবু এতটা পথ পাড়ি দেয়ার ক্লান্তি তার চোখে-মুখে ফুটে ওঠে। বৃদ্ধ শিক্ষকের মনের মধ্যে ভারি একটা মায়া জেগে ওঠে এ ছেলেটার জন্য।
ছেলেটার নাম হালিম। দুই গ্রাম পার হয়ে রোজ পড়তে আসে। অল্প কয়েক দিনেই ছেলেটার মেধার পরিচয়ও পাওয়া গেল। বৃদ্ধ শিক্ষকের হাতে কত গাধাই তো ঘোড়া হয়ে বেরিয়েছে। আর এ তো দিব্যি রেসের ঘোড়া হয়েই জন্মেছে। খাঁটি সহিসের নজর এড়াল না। তিনি মনে মনে বেশ প্রস্তুতি নিয়েই এ ঘোড়ার পেছনে বাড়তি নজর দিতে থাকলেন।
দুই.
বাহার বললে কেউ তাকে আর চেনে না। এমনকি নিজের বাড়ির লোকেও সন্দিগ্ধ হয়ে জিজ্ঞাসা করে, ‘কোন্ বাহার? বাহা দালাল, না অন্য কেউ?’
বাহা দালালের দালালি গরু কেনাবেচা নিয়ে। বাড়ি থেকে চারদিকে চারটি বাজার। বাড়ির সামনের রাস্তা থেকে তিন চাকার ভ্যানে চড়ে সেসব বাজারে যায় বাহা দালাল। কোনোটার দূরত্ব তিন কিলোমিটার, তো কোনোটার আবার বারো-তের কিলোমিটার। এসব বাজারে সপ্তাহে দুই দিন হাট বসে। সেই হিসেবে সপ্তাহের সব কটি দিনই কোনো না কোনো বাজারে হাট চলে। বাহা দালালেরও কাজ তাই সপ্তাহজুড়েই।
বাহা প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে কয়লা দিয়ে দাঁত মাজতে মাজতে প্রতিবেশীর পুকুরে গিয়ে গোসল সারে। এরপর লুঙ্গি পরে খালি গায়ে বারান্দায় বিছানো মাদুরের পর সকালের খাবার খেতে বসে। কালো ভুঁড়িটা কুৎসিতভাবে লুঙ্গির গিট্টুর ওপর দিয়ে বেরিয়ে আসে।
ততক্ষণে একমাত্র ছেলে তার শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়া শেষ করে বাড়িতে এসে পৌঁছায়। খাওয়ার মাঝেই কোনো কোনো দিন ছেলের কাছে তার পড়ালেখার খোঁজখবর নেয়। পড়ালেখায় নিজে বেশি দূর এগোতে পারেনি, তাই ছেলের পড়ালেখা কেমন হচ্ছে সেটা কেবল দু-একটি প্রশ্নের মধ্যেই আটকে থাকে। ‘ঠিক মতো পড়ছিস তো? স্যারেরা যা পড়ায়, তা কি বুঝিস? কোনো অসুবিধা হয় নাকি?’ এ জাতীয় প্রশ্নই সব।
সকালটা কোনোরকমে পার করে দুপুর হতেই দুটো ভাত মুখে দিয়ে বাহা দালাল হাতে একটা লাঠি আর একটা ছাতা নিয়ে হাটের দিকে রওনা দেয়। এরপর সেখানে গরুর হাটে পৌঁছে শুরু করে দালালি। এ কাজে কোনো মূলধনের দরকার পড়ে না। একটুখানি ছলচাতুরী জানলেই চলে। বাহা প্রথমেই গরু বিক্রেতার সঙ্গে তার গরুর দামের ব্যাপারটা ঠিক করে ফেলে। এরপর মৌখিক চুক্তি। যদি বিক্রেতার চাহিদার চেয়ে বেশি টাকায় গরু বিক্রি করতে পারে, তবে সেই বাড়তি টাকার অর্ধেক গরু মালিকের আর বাকি অর্ধেক বাহা দালালের।
হাটের মধ্যে বাহার চোখ দুটো জ্বলজ্বল করে ক্রেতার খোঁজে। কোনো ক্রেতা আসামাত্রই তার কাছে গিয়ে শুরু করে গরুর নানাবিধ গুণাগুণ। রোগা-পটকা গরুও বাহার জাদুর লাঠির ছোঁয়ায় কেমন যেন তরতাজা হয়ে ওঠে। বাহার হাতের লাঠির মাথায় কৌশলে একটা ছোট্ট আলপিন বসানো থাকে। বাহা ক্রেতার সামনে সেই লাঠির মাথা দিয়ে গরুর পেছনের দিকে একটু খোঁচা দিতেই গরুর গায়ে আলপিন ফুটে যায়। আর সঙ্গে সঙ্গেই সেই গরু লাফ দিয়ে ওঠে। বাহা তখন ক্রেতাকে উদ্দেশ করে বলে, ‘গরু তো ভালোই তেজি। দু-এক হাজার বেশি চাইলেও নিয়ে যান। ঠকবেন না। গরুর তেজ দেখলেই তো বুঝতে পারছেন।’
আবার কখনও কখনও ক্রেতাদের সামনে নিজেও ক্রেতা সেজে বিক্রেতার সঙ্গে দর কষাকষি করতে থাকে। ক্রেতা হয়তো বলল, ‘বত্রিশ হাজার টাকা।’
বাহা সেটা আড়াল থেকে শুনে বিক্রেতার সামনে এসে বলবে, ‘চাচা, আমারে চৌত্রিশ হাজারে দিয়ে দেন। আপনার লস হবে না।’
ক্রেতাদের এসব নানারকম মিথ্যা কথায় আর কৌশলে বিভ্রান্ত করে গরুর প্রকৃত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে ক্রয় করানো, এমনকি যে গরু ক্রয়ে ক্রেতার কোনো আগ্রহই নেই, সেটাকেও ক্রেতার মনোপুত করে তোলাতেই দালালের সাফল্য। বাহা দালাল এ কাজে একবারে ওস্তাদ। তাকে এ কাজে হাতেখড়ি দিয়েছিল তারই বাপ। তার বাপ অবশ্য তাকে সরাসরি এসব বিদ্যা দান করেনি। কিন্তু বাপের সঙ্গে বিভিন্ন হাটে ঘুরতে ঘুরতে সে এ বিদ্যাটা বেশ রপ্ত করে ফেলেছিল। বাহাকে অন্য কারও কাছ থেকে দালালি শেখার দরকার পড়েনি। কিন্তু দিনে দিনে বাহা তার বাপকেও ছাড়িয়ে গেছে বহুকাল আগেই। আজকাল অনেকেই গরু নিয়ে হাটে যাওয়ার আগেই বাহার কাছে আসে। এসে গরুর আসল দাম জানিয়ে দিয়ে অনুরোধ করে, ‘একটু আগে-ভাগে বেচতে পারি, সেই ব্যবস্থাই করে দিও, বাহা। সদাই-পাতি করে সন্ধ্যের আগে বাড়ি ফেরার দরকার।’
দালালি পেশা বাহার রক্তে ঢুকে গেছে। যদিও সে ভালো করেই জানে, এ পেশায় সম্মান নেই। যতই বিনা পুঁজিতে টাকা-পয়সা কামাই করুক না কেন, লোকে তাকে ঠিকই দালাল বলে গালি দেয়। আজীবন মাথা নিচু করে বেঁচে থাকার এক পেশা। কোনো ভালো কাজেও কেউ মধ্যস্থতা করতে গেলে, প্রতিপক্ষ গাল দিয়ে বলে ওঠে, ‘দালালি করতে এসো না।’ কিন্তু বেঁচে থাকার এ মর্যাদাহীন সহজ পথ বাহা ছাড়তে পারেনি। তার একটাই ছেলে। লোকে বলে, পড়ালেখায় মাথা ভালো। এ ছেলেকে নিয়েই বাহা স্বপ্ন দেখে। সে কোনোভাবেই চায় না, তার একমাত্র ছেলে, হালিম এসব অসম্মানের ছোট কাজে জড়াক।
তিন.
ডাক্তার অচিন্ত্যের দেয়া আইডিয়াটা বৃদ্ধ অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক কাজী আব্দুল হাফিজের মনে ধরেছে বটে কিন্তু আইডিয়া বাস্তবায়নের রসদ তার হাতে নেই। তবুও পরিবারের অনুরোধেই নিজের একটু একটু করে জমানো কষ্টের টাকার সঙ্গে আরও কিছু ধারদেনা করে একটা গাভী কেনার জন্য একটু-আধটু খেঁজখবর নিচ্ছিলেন। হাটের থেকে গাভী কেনার চেয়ে পরিচিত কারও কাছ থেকে কিনলে, গাভীর সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া যায়। সেই ভরসাতেই তিনি বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিচ্ছেন। এরই মধ্যে জানতে পারলেন, তারই স্নেহের প্রিয় ছাত্র হালিমের বাবা তাদের নিজেদের বাড়িরই একটি গাভী বিক্রয় করবেন। আর্থিক অনটনে এই গাভীটি বিক্রয় করা তাদের একান্ত প্রয়োজন।
বৃদ্ধ শিক্ষক বেশ নিশ্চিন্ত হলেন। একদিকে বাহারের গাভী সম্পর্কে ধারণা ভালো। কেননা সে বিভিন্ন হাটে গরু কেনাবেচার সঙ্গেই দীর্ঘদিন জড়িত। নিজের ছাত্রের বাবা আর যাই হোক, তার মতো শিক্ষকের সঙ্গে দালালি-বুদ্ধির খেলা খেলবে না। আবার অন্য দিকে, তারই প্রিয় ছাত্র হালিম, তার কাছেই এখনও পড়তে আসে। সেই হালিমও নিশ্চয় তাকে কোনো ভুল তথ্য দেবে না।
দরদাম ঠিক হল। গাভীটিকে বাড়িতে আনার আগের দিন সকালে, হালিম যখন তার বৃদ্ধ শিক্ষকের কাছে পড়তে গেল, তখন তার শিক্ষক একবার আড়ালে ডেকে নিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘গাভীটা তো তোমাদের বাড়িরই। কোনো সমস্যা নেই তো, হালিম? তোমার তো সব জানা থাকারই কথা।’
‘স্যার, কোনো সমস্যা নেই। খুবই শান্ত শিষ্ট গরু। ভালো দুধও দিচ্ছে।’
স্নেহের প্রিয় ছাত্রের কথায় সব শঙ্কা মুছে ফেলে নিশ্চিন্ত মনে বৃদ্ধ অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক কাজী আব্দুল হাফিজ পুরো মূল্য নগদ পরিশোধ করে গাভীটিকে বাড়িতে নিয়ে এলেন। পরিবারের মধ্যে একটি খুশি খুশি আবহ। খুব যত্ন নিয়ে গাভীটির থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা হল।
পরদিন সকালে বৃদ্ধ শিক্ষকের স্ত্রী সেই গাভীর দুধ দোয়ালেন। রক্ত-দুধ। বৃদ্ধ শিক্ষক সে দুধের দিকে তাকিয়ে স্তব্ধ। মনে মনে আওড়ালেন, ‘শেখার কোনো শেষ নেই; শেখার কোনো শেষ নেই।’ সারা জীবনই তিনি তার ছাত্রছাত্রীদের এ কথাই তো শিখিয়েছেন, ‘শেখার কোনো শেষ নেই।’
যে ঠকায়, সে নিজেও কখনও কখনও ঠকে। নিজের বাড়ির দুধের প্রয়োজন মেটাতেই বাহা দালাল দুটি দুগ্ধবতী গাভী কিনেছিল বেশ দেখে শুনেই। একটি গাভী ঠিকই ছিল, কিন্তু গোল বেঁধেছে অন্যটি নিয়ে। এ অন্য গাভীটি দুধ দিচ্ছে বটে কিন্তু দুধ দোয়ানোর সময় দুধের সঙ্গে রক্ত বেরিয়ে আসে। ফলে দুধ আর ব্যবহার উপযোগী থাকে না।
বাহার দীর্ঘ দালালি জীবনে এ এক চপেটাঘাত। কিন্তু চতুর বাহা সে কথা কাউকেই কিছু জানাল না। কারণ তিনটি। এক, নিজের এমন বোকামির গল্প অন্যকে জানিয়ে লজ্জা পাওয়ার কোনো মানেই নেই। দুই, গরু বিক্রেতারা যারা বাহার ওপর আস্থা রাখে, তাদের আস্থায় চিড় ধরতে পারে। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তৃতীয় কারণটি হল, এ গাভী তো এখন অন্য কারও কাছে বেচতেই হবে। এই তৃতীয় কারণে বাহার পরিবারের সবাই রক্ত-দুধের গাভীর বিষয়ে কাউকেই কিছু বলল না। অপেক্ষায় থাকল, উপযুক্ত মূল্য পেলেই নতুন মালিকের হাতে তুলে দেবে। হালিমের বাবা বাহা দালাল উপযুক্ত মূল্যে উপযুক্ত ক্রেতাই পেয়েছিল বটে!
কাজী আব্দুল হাফিজের মনের মধ্যে তার প্রিয় ছাত্রের মুখটা একবার ভেসে উঠেছিল। বৃদ্ধ কাজী আব্দুল হাফিজ খুব অসহায় বোধ করলেন। তবু মৃদু হেসে স্ত্রীকে বললেন, ‘রক্তের ডাক অস্বীকার করা খুব কঠিন, বুঝলে। রক্ত ঠিকই কথা বলে।’
বৃদ্ধ শিক্ষক মনে মনে আবারও আওড়ালেন, ‘প্রভু, আমার কষ্ট যেন আমার ছাত্রের চলার পথে অমঙ্গল বয়ে না-আনে। আমি তো শিক্ষক। অভিশাপ আমাকে চরিত্রহীন করে দেবে। চিরকালই ছাত্রের চেয়ে মহান থাকাই আমার ব্রত। আমাকে ব্রাত্য করো না, প্রভু।’