ঘুড়ির দ্বীপ

সেদিন রাতে ঘুড়ি-রাজার বাড়িতে কারোরই, কম-বেশি, খুব একটি ঘুম হয়নি। কীভাবে হবে, এমন একটি দিনে, যখন তাঁদের সকলকে জানাতে হয়, বিগত অর্ধ শতাব্দীরও বেশী সময় ধরে যিনি ছিলেন তাদের নাটাইয়ের সম্রাট, যে-সম্রাট ছাড়া অন্য কোন সম্রাটের কথা কল্পনাই করতে পারেনি কেউ এতদিন- আজ থেকে, তাঁর ঘুড়ি আর উড়বে না- কোনদিনও না- ঘুড়ির দ্বীপের আকাশে?

তবে, তাঁর জায়গায় অন্য কাউকে কল্পনা করতে যাবেও বা কেন, দ্বীপবাসীরা? বিকল্প-বিশ্বের অউরঙ্গপো সাগরের মাঝে এই ছোট্ট দ্বীপটির দিকে কার?-ই বা খেয়ে-দেয়ে এমন ঠেকা পড়েছিল, একটু খবর নেবে, খেয়াল করবে, জানতে চাইবে, সেখানে কি হচ্ছে, না-হচ্ছে? এমনও নয়, যে জায়গাটি সম্পূূর্ণ অচেনা। না, বিকল্প-বিশ্বের অন্যান্য দেশের বাসিন্দারা, সাগরের এক কোণে গুঁজে পড়ে-থাকা এই দ্বীপটির অস্তিত্ব সম্পর্কে সচেতন ছিল বটেই, একজন সাধারণ মানুষ যেভাবে তার বাঁ পায়ের কড়ে আঙ্‌গুল সম্পর্কে সচেতন থাকে, সেভাবে। নতুন জুতোর শিরীষছেঁচা নির্মমতায় কখনো ফোস্কা পড়লে, কিম্বা, পায়ের নখ কাটার সময় সেটিকে নিয়ে কিছু টানাটানি করতে হলে, অথবা ঝামাপাথর নিয়ে গোসলের পিঁড়িতে বসে পা বাড়াবার সময় চোখে পড়লে, পড়লো; না পড়লে তো নাই। এই ছিলো বিকল্প-বিশ্বের সাথে ঘুড়ির দ্বীপের সম্পর্ক, বরাবর।

অর্থাৎ, সুখে থাকলে, কেউই এসে তাঁদের ভূতের হাতে কিল খাওয়া দেখাটিকে প্রয়োজন মনে করবে না। সেদিক থেকে, বিকল্প-বিশ্বের চোখে, দ্বীপটি ‘নো নিউজ ইজ গুড নিউজ’ ধরনের একটি জায়গা। তবে, বাইরের আর কেউ সেই দ্বীপ নিয়ে কোন কথা বলুক, না-বলুক, প্রসঙ্গ উঠলে প্রায়ই লোকের মুখে শোনা যায় একই কথা- ওহ, ওই ঘুড়ি উড়ায় যে, যেই দ্বীপটায়, ওটার কথা হচ্ছে? ঘুড়ির দ্বীপের কথা বলতে গেলে ঘুড়ির কথা উঠতে বাধ্য। বিকল্প-বিশ্বে খুব কম লোকই ছিল, যারা জানত না যে, সেই ঘুড়ি-উন্মাদ দ্বীপে, অন্তত, ঘুড়ি ওড়ানোর ব্যাপারে, অন্য কোন জাতি তাদের ধারের কাছেও পৌঁছতে পারবে না। ঘুড়ি ওড়ানো ছিল সেখানকার মানুষের জীবনের একটি অবিচ্ছিন্ন অংশ।

ঘুড়ির কারণেই, বিগত শতাব্দীর শেষদিকে, বিকল্প-বিশ্বের অউরঙ্গপো সাগরের সেই অঞ্চলে অভিনীত হয় এক বিশাল লড়াই। চারিদিকে হৈচৈ, মারামারি, ফাটাফাটি, কাটাকাটির সৃষ্টি হয় কেবল দ্বীপের মানুষদের ঘুড়ি ওড়ানোর অধিকার নিয়ে। তখনকার দিনে দ্বীপটির প্রশাসন হতো পরদেশীদের হাতে, পরবর্তীতে, ইতিহাসের পাতায় যাদের এপিটাফ্‌? থাকবে- ‘ঘুড়ি ওড়ানো চলবে না, কইলেই হইলো?’ সেসময় হাজার-হাজার ক্ষিপ্ত ‘ঘুড়িয়াল’ নেমে পড়ে রাস্তায়, প্রতিবাদে, চোখের নিমেষে নাটাইয়ের সুতো ঢিলে হয়ে যায় প্রচুর। কিন্তু, তাতে কিছু আসে যায় না। তাঁরা ঘুড়ির দ্বীপের মানুষ; ঘুড়ি তাঁরা ওড়াবে।

এই লড়াইতে, তাদের হাতে নাটাই নাই তো কী হয়েছে? গাছের ডালপালা ভেঙ্গে রাতারাতি তাঁরা তা নির্মাণ করে নেয়। সুতো নেই, তো কী হয়েছে? মায়েরা নিজ-নিজ বস্ত্র থেকে সুতো টেনে টেনে তাঁদের ছেলেদের হাতে ধরিয়ে দেয়, ভাতের ফ্যানের মধ্যে কাচের বোতল গুঁড়ো করে শত শত বোন সযত্নে সেই সুতোয় মাঞ্জা দিয়ে রাখে ঘুড়িপ্রেমিক ভাইদের জন্য। ফ্যানের মধ্যে আবার তাঁরা কপালের সিঁদুর বা লাল রঙ মিশিয়ে দেয়, যাতে করে সুতোয় রক্ত লাগলে টের পাওয়া না যায়। দীর্ঘ নয় মাস ধরে আন্দোলনের গর্ভে সংঘর্ষ বৃদ্ধি হতে হতে দেখা যায় একদিন, ছিটকে বেরিয়ে, জন্মায় নতুন করে বিকল্প-বিশ্বের চোখে তাঁদের আসল পরিচয়। সেদিন, মুখ তুলে তাকালে দেখা যায় মেঘ ফুঁড়ে বেরিয়েছে ঝলমলে রোদ, সূর্য মিসকি মিসকি হাসছে আর আকাশ ছেয়ে গেছে এক শত, দুই শত, তিন শত, অসংখ্য শত ঘুড়িতে!

তবে, ঘুড়ি তো কেবল এক প্রকারের নয়- তাদের মধ্যে রয়েছে শ্রেণি, ভাগ ও উপবিভাগ এবং, যাদের একেটির এমন নাম দেওয়া হয়, যে শোনামাত্র, শুধু ঘুড়িয়ালদের কাছে নয়, যেকোনো মানুষ নাম শুনেই সেই ঘুড়ির পরিপূর্ণ একটি ছবি এঁকে নিতে পারবে মনে- যেমন, একরঙা, দোরঙ্গা থেকে শুরু করে তেরঙ্গি চৌরঙ্গী পর্যন্ত, তারপর কানকাটা, মুখপোড়াসহ আজব একেক প্রকারের ঘুড়ি জাত- যাদের আবার রামধনুর প্রতিটি রঙ ও তাদেরই মিশ্রণের কারণে সৃষ্টি হয় আরও বিস্তারিত ভাগ ও উপবিভাগ। একই প্রকার ও একই রঙের ঘুড়ির মধ্যেও তফাৎ থাকে, যা একজন দক্ষ ঘুড়িয়াল এক ঝলক দেখেই বলে দেবে; কেবল রঙ ও ঋতুর উপরেই নির্ভর করে অনেককিছু। সেদিন আকাশে এমন কোন প্রকার বা রঙের ঘুড়ি ছিল না, যা উড়তে দেখা যায়নি। মুক্তাকাশ-বাহিনীর ঘুড়িয়ালদের কারণে সেদিন থেকে যেই আকাশে, যারই, যখন ইচ্ছে, ঘুড়ি উড়িয়ে আসমানের দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারবে। সেই অধিকার তাঁদের কাছ থেকে কেউ আর কোনদিনও ছিনিয়ে নিতে পারবে না।

সেই থেকে দ্বীপটিকে ‘ঘুড়ির দ্বীপ’ বলেই বিকল্প-বিশ্বের সকলে চেনে। দেশটির নামটাই যেন তার বর্ণনা- এবং, পরবর্তীতে, সেই ঘুড়ি-আন্দোলনের যোদ্ধাদের চেতনা ধরে রাখা থেকেই আসে সেখানকার মানুষের আত্মপরিচয়। তারা কখনই ভুলবে না, কতখানি নির্যাতিত, আতঙ্কিত, ঘুড়িশূন্য, নাটাই-চ্যুত অবস্থায় তাদেরকে দিন কাটাতে হয়েছে এককালে। ঘুড়ি তাদের আন্দোলনের প্রতীক, ঘুড়ি তাদের অহংকার, তাদের গৌরব। লোকে ঠাট্টা করে বলে, তাঁদের দ্বীপে ঘড়ির চাইতে ঘুড়ি বেশী। প্রত্যেকেই, তাঁদের মধ্যে, মনেপ্রাণে ঘুড়িয়াল- ঘুড়ি ওড়ানো ছাড়া আর কিই বা আছে জীবনে? ঘুড়ির সাথে তাদের এতোটি গভীর ও রক্তের মাঞ্জা-দেয়া, ইতিহাসের সুতো দিয়ে বোনা, আত্মপরিচয়ের চাদর সম্পর্কে তাঁরা না জানলে কি আর ঘুড়ির দ্বীপের মানুষ হল, তারা? এগুলো সম্পর্কে জানা তো তাঁদের মৌলিক কর্তব্য।

সেই সম্পর্কের কথা- তাঁদের ইতিহাসের কথা- দ্বীপের মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেয়ার ভার নেন, নাটাই হাতে, একদল দক্ষ ঘুড়িয়াল। তবে, তাঁদের সেই নাটাই দিয়ে তাঁরা হাতেনাতে লড়াই করে না, যেভাবে মুক্তাকাশ-বাহিনীর সৈন্যেরা করেছিলো এককালে; বরঞ্চ, তাঁরা তাঁদের একেকজনের ঘুড়ি ওড়ানোর মাধ্যমে দ্বীপটির ইতিহাসের কথা বলে যায়, গেঁথে দেয়, সেভাবে, মানুষের মনে বারংবার সেই ঘুড়ি আন্দোলনের চেতনা। তবে, তাঁরা সকলেই পরিপকস্ফ ঘুড়িয়াল হওয়া সত্ত্বেও, তাঁদের মধ্যেও ঘুড়ি ওড়ানোর কায়দাকানুনের বেশকম ছিল একেকজনের। দেখা যায়, একেকজন ঘুড়িয়াল জনগণের মনে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, সেই থেকে শুরু তাঁদের জনজীবন, যা থেকে আসে জীবনজ্বালা এবং, যার শেষ প্রান্তে অপেক্ষা করে তাঁদের জন্য জর্দা, জায়নামাজ ও জানাজা।

বলা বাহুল্য, তাঁদের মধ্যে এই কারণে তীব্র প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হয়। সকলেই চায় যে কেবল তাঁদেরই ঘুড়ি ওড়ানোর গল্পকথা থেকে যায় লোকের মনে। তাতে বা কিই লাভ হয়, তা একমাত্র ঘুড়িয়ালেরাই বলতে পারে। তবে, এতো শত শত ঘুড়িয়ালের মধ্য থেকে মানুষের কাছে নাম ও ভালোবাসা কামাই করাটি এতো সহজ নয়। এর কারণে, দুধের মধ্যে লেবু চিপে দই পাতবার সময় যেভাবে দুধ হঠাৎ করে জমাট বেঁধে চাকাচাকা হয়ে যায়, ঘুড়িয়ালদেরও হয় তাই এবং, সেই থেকে, আরম্ভ হয় তাঁদের, একই পাত্রের ভেতরে চাকায়-চাকায় খুনসুটিপানা, চিমটাচিমটি ও নানা ধরনের মোগল আমলে রাজপ্রাসাদের সমতুল্য ষড়যন্ত্রের সৃষ্টি।

তবে, সব ঘুড়িয়াল যে তেমন, তা বলা ঠিক হবে না। তাঁদেরই মধ্যে ছিল হাতেগোনা কয়েকজন, যাদের ঘুড়ি একবার আকাশে উড়লে চোখ ফেরানো যায় না। তাঁরা এই খেলার শীর্ষতম স্থানের খেলোয়াড়- তাঁদের মধ্যে অনেকেই স্বপ্ন দেখে, যৌবনকাল থেকে; সম্পূর্ণ জীবন দান করে দেয় তাঁরা, শুধু লোকে একটু তাঁদের নাম করবে, একটু সম্মান করবে, একটু হয়তোবা ভিড়ের মধ্যে চেয়ার ঠেলে বসতে দেবে, কিম্বা দ্বীক্‌?সু-তে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে বিদ্যুতের বিল পরিশোধ করবার সময় সেই, দু-চারজন হলেও, লাইনের মানুষ ডিঙ্গিয়ে একটুখানি আগে তাঁদের কাজটা সেরে নেবে- হাজার হোক, ঘুড়িয়াল তো, তাঁদেরকে দিয়ে কি আর বিল দেওয়া হয়- এটুকুই ছিল তাঁদের পাওনা। এর চাইতে এক চিলতেও বেশী নয়- বিশেষ করে আর্থিক দিক থেকে তো নয়-ই। সারাদিন দাঁত কেলিয়ে ছাদের ওপর নাটাই চালিয়ে ঘুড়ি ওড়ানোর জন্য আবার কোন মক্কেল টাকা পাবার আশায় থাকবে?

লোকের কথায়- আরে, ঘুড়ি ওড়ানো তো একটা খেলা! এটা তো কোন পরিশ্রমের কাজ না, যে তাঁর জন্য আবার টাকাও দিতে হবে। আর পেটে ভাত? অন্নের কথা হয় অন্য কথা- কেউ তো আর পিঠের সাথে পিস্তল ঠেকিয়ে তাদেরকে বলে নাই সব ফেলে-থুয়ে ঘুড়ি ওড়াতে! একমাত্র ঘুড়িয়াল ছাড়া বুঝবে না কেউ, এই কথাগুলো তাঁদের বলা যে কতখানি ভুল। ঘুড়িয়ালদের মুখোমুখি অপমান করবার সমান। তবে, একদিক থেকে, দ্বীপের বাসিন্দারা ঠিকই ধরেছিল- এমন কাজ, ঘুড়িয়ালদের মতো মন-প্রাণ দিয়ে করার জন্য কারও অর্থের প্রয়োজন হয় না। তাঁদের পাওনা যেন অন্য কোন মাত্রা থেকে আসে। তবে, একথাটিও ঠিক- ঘুড়ি ওড়ানোর মধ্যেও কতো কায়দাকানুন থাকে, যা প্রত্যেকের জানা থাকে না। অনেকে জন্মাই সেই জ্ঞান নিয়ে, অনেকে শিখে নেয়, অনেকের দ্বারা হয় না। সেই কারণেই ঘুড়ি দ্বীপের আকাশ ছেয়ে হাজারো ঘুড়ি থাকা সত্ত্বেও, সকলের চোখ যেতো প্রতিবার কেবল একটি ঘুড়িয়ালের ঘুড়ির দিকে।

ঘুড়ির রাজা। নাটাই সম্রাট। যার নাটাইয়ের সাথে সুতোর একদিক ধরে রাখা ইতিহাস, আরেকদিক, খুঁটি গেড়ে বাঁধা বর্তমান। যার একেকটি ঘুড়িখেলা দেখলে মানুষের মন ভরে যায় সুখে ও দুঃখে, তারপর রাগে, তারপর, পাথরের মতো শীতল একটি অনুভব, সেই সাথে প্রচ পরিমাণে মনোবল। এমনই ভিন্ন ধরনের ছিল তাঁর ঘুড়িখেলা, যে তাঁকে জোর করে, বা আবদার করে, এমনকি ঘুষ দিয়ে ঘুড়ির রাজা উপাধিটি অর্জন করতে হয়নি। আর সকল ঘুড়িয়াল নিজেরাই তাঁকে স্তম্ভে দাঁড় করিয়ে দেয়। সেই ঘুড়ির রাজা যে এককালে নাও থাকতে পারে দ্বীপবাসীদের মাঝে, সেই কথাটি, এখন, উপলব্ধি করতে তাঁদের সময় লাগবে। ঘুড়ির রাজার সুতো কেটে যাবার মুহূর্তে কেউই কল্পনা করতে পারেনি যে দ্বীপ-জুড়ে এতগুলো পূর্ণবয়স্ক লোক একত্রে কেঁদে উঠবে, যেভাবে করুণ গলায় কুকুরের ছানা কেঁদে ওঠে যদি তাঁদের মায়ের কোন অঘটন ঘটে যায়। সেদিন, রাতে পড়ে যায় এক গা ছমছম করে দেয়া নিস্তব্ধতা। ঘুড়ির বদলে দ্বীপবাসীরা রংবেরঙের ফানুসের ভেতরে প্রদীপ জ্বেলে আগুনের সাহায্যে সেগুলোকে ঊর্ধ্বে ছেড়ে দেয়। তবে, সেই কাজটিতে তাঁদের কারও মনে বিন্দুমাত্র কোন আনন্দ জাগে না; খালি শোক আর শোক।

সবার মনে একই কথা- ঘুড়ির রাজা নেই; এখনো চোখ বন্ধ করলেই যেন অনুভব করা যায় সামনেই দাঁড়িয়ে আছেন, নাটাই হাতে। একথা ভেবে, ঘুড়ির দেশে, খুব কম লোকই শুকনো চোখে ঘুমোতে যায় সেদিন, কিন্তু, তাই বলে এই নয়, যে তাদের মধ্যে সকলেই ছিল সমানভাবে শোকাহত। তাদের মধ্যে এমনও ছিল কিছুজন, যারা আজীবন ধরে ঘুড়ির রাজার শত্রু, অথচ, তাদের চেহারা ও ভাব দেখে কেউই বুঝতে পারবে না, সেকথা। একদিক থেকে তারা জানতো, যে ঘুড়ির রাজাকে অবহেলা করলে, অসম্মান করলে, তাদেরই ক্ষতি, তাই কাছাকাছি, মাথা নত করে ওঁৎ পেতে থাকতো। রেশমগুটির মতো তারা আড়ালে বহুকাল ধরে চেষ্টা করে, রাজার নাটাইয়ের সুতোয় পচন ধরিয়ে কেটে দেয়ার জন্য, কিন্তু, সেটুকু ক্ষমতা তাঁদের নেই।

অবশ্য, এটুকু বলতে হবে, এসব ভাব সামনাসামনি প্রকাশ করবার মতো স্পর্ধা তাদের কারও কখনো হয়নি। তাদের মুখেও তুমুল বেদনার ছাপ, তবে- খুঁটিয়ে না দেখলে চোখে পড়বার কথা নয়, ভেতরে যেন একধরনের স্বস্তি। যাকগে, এবারে বোধহয় আমাদের ঘুড়ির দিকে অবশেষে লোকের একটু নজর পড়বে, তাঁরা ভাবে। ভাববার কথাও- কেননা, সারাজীবন গুঁতিয়ে গুঁতিয়ে, লেদে-পেদে তো কম ঘুড়ি আকাশে উড়োয় নি তারা। লোকের চোখে পড়েনি কেন, সেটি তো তাঁদের গুরুর কারণে। তবে, আর নয়। এবারে আকাশের দিকে তাকিয়ে ঘুড়ির কথা বলতে গেলে প্রথমেই তাদের ঘুড়ি চোখে পড়বে, নয়তো কার? এতদিনকার অপেক্ষা কি তারা এমনি এমনি করেছে?

সব?ই তাঁদের ঠিক ছিল যদি ওই ভ ব্যাটা- পুরো রাজপুত্রের ভাবসাব নিয়ে- হুট করে এসে হাজির না হতো তাদের মাঝে। ভুয়া কবিরাজের মতো এসেই তার সব সরঞ্জাম ফুটপাথে বিছিয়েই শুরু করে দিলো লোকজনের চোখ ধাঁধানো যতসব কারবার।

রাজার যে একটি ছেলে আছে, সেটুকুই অনেকের জানাশোনা ছিল না। পরে বের হয়, রাজার যে কেবল ছেলে আছে, শুধু তা নয়, ছেলেটির ঘুড়ি ওড়ানো একবার দেখার মতো। প্রকৃত, ন্যায্যভাবে সেদিন যাদের চোখ ভেজা ছিল, তাদের মধ্যে একথা জেনে কেবল আনন্দ আর উল্লাস। বাহ! তাঁরা ভাবেন- এমন না হলে কি আর রূপকথা? আর, তার ওপর, এতদিন পর দ্বীপে এসে হাজির হন যেই ব্যক্তি, কথিত রাজার ছেলে, সে হয়ে যায় তাঁদের মধ্যে সবচাইতে বেশী তাজ্জব। কারণ, সে তো ঘুড়ি ওড়াতে আসে নাই। সে চেয়েছে ছোটবেলার মতো বাবার নাটাইয়ের দিকে চোখ রেখে কেবল তাঁর কাছে বসে থাকতে, এছাড়া আর কিছুই না। এটি ঘুড়ি ওড়ানো নিয়ে কিছু না। এককালে, রাজা অনেক আবদার করেন ছেলের কাছে। বলেন, ঘুড়ি ওড়ানো তাঁর রক্তের ভেতরে। তাকে ওড়াতে না চাইলে সেই ঘুড়ি নিজেই ছেলেকে উড়িয়ে নিয়ে যাবে একসময়। রাজার ছেলে কখনও বাবার এসব কথায় কান দেয়নি। তার চোখে, পৃথিবীতে ঘুড়ি ওড়ানোর চাইতে আর অনেক বেশী মূল্যবান কাজ পড়ে ছিল। ওটা তো কাজ নয়; ওটা খেলা।

ভবঘুরে, দুনিয়া-দেখা ছেলেটির তো জন্মের পর থেকে কেবল ঘুড়ি দেখার কাজ ছিল না। বাবা ঘুড়ি ওড়ান, সেটুকু দেখেই তার আনন্দ। ঘুড়ির দ্বীপে ফিরে আসবার কারণ ছিল তার সম্পূর্ণ ভিন্ন। ঘুড়ির রাজপুত্র জানতো, যে ঘুড়ির রাজার এই জগতে আর বেশীদিন নাই। সিদ্ধান্ত নেয়, সে বাবার কাছে যাওয়ার। যায়। পৌঁছে দেখে, ঘুড়ির রাজার এমন অবস্থা, তাঁর সুতো যেকোনো দিন কেটে যেতে পারে। হয়তবা সেই কথাটিই তাঁর মনে আসবার অপেক্ষায় ছিলেন, রাজা, কারণ, ছেলের এই উপলব্ধি আসামাত্র, ঘুড়ির রাজার সুতো কেটে যায়। ভেসে চলে যান, তিনি, নিলক্ষ্‌মা আকাশে, দূর, বহুদূর, অউরঙ্গপো সাগরের ওপর দিয়ে, বিকল্প-বিশ্বের দিগন্ত পেরিয়ে অবচেতন অজান্তে।

যাবার আগে, ঘুড়ির রাজা, তাঁর চোখে- অন্তত- যে আসলেই রাজপুত্র- ছেলের হাত ধরে কাছে টানেন। বলেন, খোকা, আমার নাটাই দিয়ে গেলাম তোমার হাতে। এটা বহন করো। হয়ে যাও তুমি আমার ঘুড়িয়াল। কারণ, জানবে, তোমার ঘুড়ির পাশাপাশি উড়বে আমারই নিশান। জন্মের পর জনমের পর জনম করে এসেছি যেই কাজ, সেই কাজ এতটা সহজে থামবার নয়। খালি মনে রেখো একটি কথা… ঘুড়ির রাজা থেমে, ঘোলাটে চোখে তাকান, ছেলের দিকে। কথা যেন তাঁর মুখ দিয়ে বেরুতে চাইছে, অথচ গলায় কে যেন স্বরের-গেট তালা মেরে বন্ধ করে রেখেছে। ছেলে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে।

চুল পাকার সাথে মাথায় বুদ্ধির সম্পর্ক কখনও করিও না। কেবল পাকিছে যার গোঁপের চুল, তাঁকে অধিকতর চালাক ভাবিয়া করিও না ভুল।

অথচ, রাজার ছেলে ভাবে, তার কোন গোঁপ নাই। অথচ, এটিও ভাবে, যে সে ঘুড়ি ঠিকমত ওড়াতেও জানে না। অন্তত, তার বাবা যেভাবে আশা করছিলেন, সেভাবে তো নয়। তবে, রাজার ছেলে যা ভাবুক আর নাই ভাবুক, বাস্তবে যা হবার, তা তৎক্ষণাৎ হয়ে যায়। ঝাঁকে ঝাঁকে ভক্তরা নেমে পড়ে ছেলেটির ওপর, রাজার হাজারো শুভাকাঙ্ক্ষীরা তাঁকে ঘিরে। দুঃখের বিষয় এই, যে, ঘুড়ির দ্বীপে, মানুষের বিনা কারণে তাঁদের জনপ্রিয় ব্যক্তিদের সন্তানদেরকেও জনপ্রিয় ব্যক্তি বানানোর অভিজ্ঞতা তাঁদের ডেকচি বোঝাই করা ছিল। এটিই ছিল নিয়ম। নাটাই হাতে, ছেলেটি রাতারাতি হয়ে যার ঘুড়ির জগতে গোনার মতো একজন।

তবে, নদীতে বড়সড় আকারের কোন পাথর পড়লে প্রথমেই পানির প্রচ ঝাপটা আসে। সেটি হয় নির্বাক করে দেয়া, থতমত খেয়ে যাবার মতো ব্যাপার। তারপর, সেখান থেকে গোলাকার, বৃত্তের মতো প্রসারিত হতে থাকে একের পর এক তরঙ্গ, যেন একদল আসামি কোন এক ঘটনাস্থল ছেড়ে ছিটকে পালিয়ে যাবার প্রচেষ্টায়। একসময় দেখা যায়, সেগুলো কমতে কমতে আর কিছুই থাকে না। লোকের মুখে শোনা যায়, যে এককালে বিশাল একটা পাথর পড়েছিলো নদীতে, কিন্তু সেটুকুতেই থেমে যায় তাঁরা। তাঁদের কাছে নদীর পানি আজীবন যেমন দেখাতো, তেমনই দেখা যায়।

ঘুড়ির রাজার সুতো কেটে যাবার পর, ঘুড়ির রাজপুত্রের কিছুটা এধরনের মনে হয়, তারপর, একসময়, সে বড় বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। নদীতে পাথর পড়বার পরপর সে দেখে যে তাঁর রাতারাতি নিকট আত্মীয়র সংখ্যা যেন বেড়ে দ্বিগুণ, কিম্বা তার চাইতে বেশী। জুটে যায় সাথে সাথে কত নতুন ভাই, বোন, খালাম্মা, খালু, চাচা, চাচী, ভাইপো আর ভাইপরী; আসল পরীও। সবারই কাছে ঘুড়ির রাজার সাথে তাদের জীবনের অন্যতম কোন স্মৃতি- যেমন, শীতকালে, রোদে, ছাদে বসে, রাজার কাছ থেকে মাঞ্জা দেয়ার তাঁদের একেক পদ্ধতি শেখা। তারা সকলেই ছিলেন তাঁর খুবই আপনজন, তাঁরা বোঝান, সেই সূত্রে তাঁরা রাজার ছেলেরও আপনজন বলে নিজেদের দাবি করেন।

তবে, অল্প কিছুদিনের মধ্যেই রাজার ছেলে বুঝে যায় যে হাসি ঝকঝক করিলেই শুভাকাঙ্ক্ষী হয় না। বুঝে যায়, যে তাঁর নাটাই হাতে ওভাবে দাঁড়িয়ে থাকাকে অনেকে ভাববে অহংকার। একদিক থেকে এটি আসলেই এক পর্যায়ে তাঁর অহংকার হয়ে দাঁড়ায়, তবে, সেটি কেবল তাঁর বাবা- ঘুড়ির রাজার- ছেলে হবার কারণে নয়। বাবার কাছ থেকেই তো শেখা- ঘুড়ি চমৎকার উড়লে সেটিকে সর্বপ্রথম স্বীকৃতি দেবে ঘুড়িয়াল নিজেই। আরেকদিক থেকে, ঘুড়ি যদি একেবারেই উড়বার উপযুক্ত না হয়, সেটিকে স্বীকার করতে হবে প্রথমেই ঘুড়িয়ালকে ও মাটিও দিতে হবে তাঁকে। কখনও যেন এমন না হয়, যে তোমার ঘুড়ি উড়ছে দূরে মাথার ওপরে অথচ মানুষকে বোঝাচ্ছ তুমি ওড়াতে পারো না। আফসোস করে, লজ্জিত হয়ে, ক্ষমা চেয়ে যে অন্যদের বলে তাঁর ঘুড়ি ওড়ানোর কথা, চায় শুধু লোকের কাছে তাঁর কীর্তি দেখাতে, সেই অমানুষের ঘুম ভাঙবার পর বিছানা ছেড়ে না উঠলেও চলে। সে তো ঘুড়িয়াল নয়, সে মানুষের নজর আকর্ষণকারী একটি বানর। রাজার মুখের কথা।

তবে, হতে পারে রাজার ছেলের রক্তের মধ্যে ঘুড়ি ওড়ানোর মহাকাব্য লেখা ছিল, কিম্বা ছোট থেকে বাবাকে ঘুড়ি ওড়াতে দেখে তাঁর নিজেরও বেশ ভালো ধারণা হয়ে গেছিলো ঘুড়ি ওড়ানোর ব্যাপারে। ঘুড়ির রাজপুত্র আকাশে ঘুড়ি উড়িয়ে দেয়ার সাথে সাথে অনেকেরই চোখ চলে যায় সেদিকে। লোকে ভাবে, রাজার ছেলের ভেতরে কীভাবে যেন একটি গুপ্ত সত্তা কাজ করে। সে জানে, বাতাস কোন প্রান্ত থেকে বইলে তাঁর ঘুড়ি কোন দিক থেকে ছাড়া উত্তম হবে। কোন একটি ঘুড়ি হাতে নিয়ে সুতো ধরে চোখের সমান সমান ধরতেই সে জানে, যে বাম পাশে ঠিক আড়াইটি গিঁটের প্রয়োজন আছে, নইলে সেটি কিছুদূর উপরে উঠেই ডান দিকে কন্নি খেতে আরম্ভ করবে। সে জানে, মাদী ঘুড়ির লেজ থেকে কটা বেণী কেটে দিলে সেই ঘুড়ির ভারসাম্য ফিরে আসবে। এগুলো কেউ তাঁকে শেখাননি, এমনকি ঘুড়ির রাজা নিজেও না।

রাজার ছেলে আপনমনে তাঁর ঘুড়ি উড়িয়ে যায়। কখনও বা, আকাশের দিকে তাকালে সে তাঁর বাবার ঘুড়ি দেখতে পায়। যেই মানুষ তাঁর সারা জীবন দান করে দিয়েছেন ঘুড়ি ওড়ানোর পেছনে, উন্মুক্ত আকাশে একটি ঘুড়ি উড়তে দেখলে তাঁর কথা মনে পড়বে, এটি তো স্বাভাবিক।

রাজার শত্রুরা এতকিছু দেখে আর চুপ করে থাকতে পারে না। রাজার সুতো কেটে যাবার পর, ছেলে প্রথম প্রথম অনুভব করে চারিদিকে কেবল শূন্যতা ও নিস্তব্ধতা। তারপর, ক্রমে ক্রমে শোনা যায় যেন দূর থেকে একটি খড়মড়ে আওয়াজ। ঠিক কোত্থেকে, বোঝা মুশকিল। চোখের গোচরের চার ধারে যেন ঘন গাছপালার ভেতর থেকে কি জানি নড়ে ওঠে থেকে থেকে। তারপরেই পড়ে যায় সন্ধ্যা। অন্ধকার নেমে আসে চারিদিকে এবং, ঠিক তার পরপর জ্বলে ওঠে একের পর এক হলদে, লালচে চোখ। ডিমের কুসুমের ভেতরে অসংখ্য রক্তের শিরা দেখা দিলে যেমন হয়, সে ধরনের চোখ। রাজার শত্রুরা ক্ষুধার্ত; তাঁদের নাকের ফত্নার ভেতরে জ্বলছে রক্তের ঘ্রাণ। এই বেয়াদব, আগন্তুক ছোকরাটাকে তাঁদের শিক্ষা দেয়া চায়। ঘুড়ির রাজত্ব এখন তাঁদের, যারা এতদিন মাথা নিচু করে সব সহ্য করে এসেছে!

রহস্যজনকভাবে, রাতারাতি ছড়িয়ে যায় চারিদিকে রাজার ছেলের নামে বিভিন্ন ধরনের অপ্রীতিকর তথ্য। প্রথম প্রথম, সে বুঝতে পারে না। সে তাঁর ঘুড়ি ওড়ানো নিয়ে ব্যস্ত, তবে, একসময়, খেয়াল করে, যে, অনেকের ব্যবহারে আগের সেই আন্তরিকতা যেন নেই। লোকে যেন তাঁকে দেখলে এড়িয়ে চলে, পাশ কেটে চলে যায়, কথা কম বলে। তবে, আমি তো কারও ক্ষতি করতে আসি নাই, সে ভাবে। কিন্তু, তা ভেবে কী লাভ? গুটিপোকাগুলো এমন একেক জায়গায় তাঁর নাটাইয়ের সুতোয় তাঁদের দাঁত বসিয়ে দেয়, যে রাজার ছেলে দেখে তাঁর পক্ষে আর ঘুড়ি ওড়ানো সম্ভব নয়। কী দরকার, এমন পবিত্র একটি জিনিস নিয়ে এতো খাবলা-খাবলি করবার?

ঘুড়ি ওড়ানো ছেড়ে দেয় সে।

থাক গে, তাঁরা, তাঁদের ঘুড়ি আর নাটাই নিয়ে। আমি চলি। আগেই ভালো ছিলাম, যখন এই ঘুড়ি-ফুড়ির ঝামেলা ছিল না মাথার ওপর। রাজার ছেলে সিদ্ধান্ত নেয়, সে আবারও দ্বীপ ছেড়ে দূরে কোথাও গিয়ে বাকি জীবনটা ঘুড়িমুক্ত ভাবে কাটাবে। রাজার শত্রুরাও তাই চান। আবারও দীর্ঘ নয় মাস কেটে যায় এসব দুশ্চিন্তায়, তারপর, একদিন, দ্বীপ ছেড়ে যাবার যখন আর মাত্র কটা দিন হাতে, রোজকার মতো রাজার ছেলে রাতের আহার সেরে ঘুমোতে যায়।

সেদিন, স্বপ্নে, বাবাকে দেখে।

তবে, দেখে, ঘুড়ির রাজা তাঁর সাথে কোন কথা বলছেন না; শুনছেন। ছেলে নিজেই বাবাকে বসে বোঝাচ্ছে যেন কিছু কথা। অথচ, স্বপ্নের মধ্যে যে স্বয়ং বাবা তাঁর পাশে বসে, সেটিও সে উপলব্ধি করতে পারে না। কথাগুলো যেন সে বিড়বিড় করে নিজের কাছেই বলে যায় একনাগাড়। স্বপ্নের মধ্যে যদি কান খাড়া করা সম্ভব হয়, রাজার ছেলে তখন ঘুমের ঘোরে তাই করলেন। কিছুক্ষণ বাদে, তাঁর নিজেরই কথা নিজের কাছে স্পষ্ট হয়ে আসে।

মানুষের সমালোচনা ও নিন্দা নিয়ে বেশী ভাবতে গেলে, আমার ঘুড়ি ওড়াবার সময় কোথায়? বাবা বলেছিলেন, আমাদের সকলেরই একসময় না একসময় সুতো কাটার সময় এসে যাবে। তখন তো কেউ দেখবে না, যে জোর জবরদস্তি করে মাথায় মুকুট পরানো এই হতভাগ্যটা গুটিপোকার সাথে লড়াই করে রুখে দাঁড়িয়েছে কিনা। লোকে দেখবে সে কেমন ঘুড়ি উড়িয়েছে। আর ঘুড়ির সাথে ঘুড়ি লড়াই করে কখনও পারে নাই। কারণ, তাঁরা বোঝে না, যে ঘুড়ি কোনদিকে উড়বে, সেই ক্ষমতার সিংহের ভাগ বাতাসের হাতে- আর বাতাস কে সৃষ্টি করে? যতদিনই বা থাকি, ঘুড়িয়াল, থাকবো কি ঠকবাজ, জোচ্চোর বিমানের-বহনের মতো, নাকি উড়াল দিয়ে সৃষ্টিকর্তার আঙ্গিনায় বসে তাঁর মমতার আলোয় স্নান করবো? পরম সৃষ্টির মালিক, যার ভেতর থেকে সকল সৃষ্টি আসতে বাধ্য, একটি গুটিপোকাও তিনি বানান কোন এক প্রয়োজনে। হয়তো এমনই এক শিক্ষা দিতে।

তাই, আকাশে যখনই দেখবে দেখার মতো একটি ঘুড়ি উড়ছে, নিজেকে বলবে, বাছা- এটি, ও এর চাইতেও বেশী তুমি করবে, তোমার জীবনে। আর, গুটিপোকা? স্বপ্নের মধ্যেও রাজার ছেলে হাসে। মনে পড়ে, সে ছোটবেলায় সাদা সাদা পোকাগুলোকে দেখে মানুষের গোঁপ কল্পনা করতো। ভাবে, গুটিপোকা, সে আজীবন অন্যের নাটাইয়ের সুতোর দিকে নজর না দিয়ে যদি নিজের ভেতরে নিজেকে টেনে নিতে পারে একটিবার, সেও চোখ মেলে দেখবে যে সে আর পোকা নয়; ডানা গজিয়ে সেও হয়ে গেছে প্রজাপতি। একথা ভাবতেই রাজার ছেলের ঘুম ভেঙ্গে যায়। সে বিছানা ছেড়ে ওঠে। হাতে নাটাই নিয়ে রওনা দেয়, ছাদের উদ্দেশে।

ভাবে, ঈশ্বরের আঙ্গিনার একটু রৌদ্রস্নান করা চায়।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত