বাথটবে গলা পর্যন্ত ডুবিয়ে বসে আছি। আমার স্ত্রী তানিয়া অফিস থেকে আসার পরে বাথটবে সাবান দিয়ে ফ্যানা তুলে। তারপরেই আমি এসে বসে পড়ি, ভেতরে থেকে দরজা বন্ধ করে। বাইরে থেকে সে কিছুক্ষণ চিল্লাচিল্লি করবে, আমি শুনব না। এটাই প্রতিদিন হয়। আজও হচ্ছে।
‘ আরে ঐ অলসের ঘরে অলস। সারাদিন টইটই করে ঘুরে বেড়াবি। আর সন্ধ্যা হলে বাথটবে গিয়ে মারা যাবি! আর মানুষের গোসল করা লাগে না? ‘
‘ আমি অলস আমার বাবা অলস না। আমার মাও না। সাবধানে কথা বলো। ‘
‘ তুই দরজা খুল আগে। সাবধানেই কথা বলছি। ‘
‘ স্বামীকে তুইতোকারি করলে সংসারে অমঙ্গল হয়! ‘
‘ তোকে দিনরাত পূজা করলেও সংসারে মঙ্গল হবে না। আমার শরীর গিজগিজ করছে, আর তুই বাথটবে গিয়ে বসে আছিস! ‘
‘ কাপড়চোপড় খুলে এসি চালিয়ে বসে থাকো। ভালো লাগবে! ‘
অন্যদিন তানিয়া এটাই করে। দরজা জানালা সব বন্ধ করে আগে। তারপর এসি চালিয়ে কাপড়চোপড় খুলে বসে থাকে! আমি দুই তিন ঘন্টা পর বের হলে সে তখন গোসল করে। ততক্ষণে আমাকে বকাবকি করার শক্তি সে হারিয়ে ফেলে। আমি এমনি এমনিই এই কাজটা করি না। বাথটবে যদি আমি ফ্যানা তুলে বসে থাকি। একটুও আরাম লাগে না! বরং ব্যারাম ব্যারাম লাগে! সেই একই সাবান দিয়ে তানিয়া ফ্যানা তুললে তখন বসলে এত আরাম লাগে, বলে বুঝানো যাবে না! এই রহস্য আমি আজও উদঘাটন করতে পারনি।
আজকে তানিয়া এসি চালিয়ে খালি গায়ে রুমে বসে থাকতে পারবে না। কারণ গ্রাম থেকে মা এসেছেন। তিনি শোবার রুমে বসে তসবি পড়ছেন। আমি শুনতে পাচ্ছি মা বলছেন, ও কী প্রত্যেকদিন এরকম করে? তানিয়া আবার সত্যবাদী মেয়ে। মিথ্যা সে কোনোভাবেই বলবে না যদি খুব জরুরি প্রয়োজন না হয়। সে উত্তর দিল, জি আম্মা। সে রোজই এরকম করে। আমি অফিস থেকে এসে ফ্যানা তুলি। তখনই গিয়ে সে বাথটবে বসে পড়ে! সারাদিনেও তাঁর গোসল করার নাম থাকে না। আমি বাসায় আসলেই তাঁর গোসল করার কথা মনে হয়! মা আবার বললেন, সর্বনাশ! তাইলে তুমি তো মহা যন্ত্রণায় আছো! ওর সাথে বসবাস করছো কীভাবে? মানুষ চাইলেই ভালো মানুষকে ছেড়ে চলে যেতে পারে। কিন্তু বদ মানুষকে ছেড়ে চলে যেতে পারে না। আমি হলাম বদ মানুষ। আমাকে তানিয়া কোনোদিনও ছেড়ে চলে যেতে পারবে না। সে জবাব দিল, মাঝেমাঝে ইচ্ছে হয় চলে যাই। পারি না তো!
‘ পারতে তো হবে। এভাবে পরে পরে মরবে না কি? ‘
‘ কিচ্ছু করার নাই মা। আচ্ছা ওর কথা বাদ দেন। আপনি পান খাবেন? অফিস থেকে আসার সময় পান এনেছি। ‘
‘ পান আগে খাইতাম রে মা। এখন আর খাই না। পান খাইলে অনেক ক্ষতি। মানুষ না কি তাড়াতাড়ি মারা যায়। এত অল্প বয়সে মারা গেলে চলে? ‘
‘ নাহ, চলে না। ‘
আমার মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে উঠা দরকার। কিন্তু উঠতে পারছি না! কারণ কী? গ্লু, ফেভিকল টাইপ কিছু কি তানিয়া রেখে দিয়েছে? রাখলেও তো পানির মধ্যে আঠা লাগার কথা না! এ কী! শরীরও তো কুটকুট করছে! হায় হায়, ফ্যানার মধ্যে দেখি পিঁপড়াদের মেলা বসেছে! তাঁরা সবাই আমাকে এমনভাবে ঘিরে রেখেছে যেন তুলে নিয়ে যাবে। এক যুগ ধরে তারপর রেখে রেখে খাবে! এই কাজটা তানিয়ার ছাড়া আর কারো না!
‘ তানিয়া! ‘
‘ জি, বলেন। ‘
‘ তুমি বাথটবে লাল পিঁপড়া ছেড়ে দিলে কেন? আর কীসব গন্ধ করছে পানি! কেমিক্যাল-টেমিক্যাল দিয়েছ না কি? ‘
‘ আজকে আমার পিঁপড়া দিবস। প্রতি মাসের শেষ মঙ্গলবার আমি পিঁপড়াদের নিয়ে মেলা বসাই। মিষ্টিজাতীয় কেমিক্যাল ওদের প্রিয় খাবার! ‘
‘ তোমার পিঁপড়া দিবস না টিঁপড়া দিবস আমাকে আগে বলবে না? আমাকে তো এরা গিলে খাচ্ছে! ‘
‘ কমপক্ষে পিঁপড়াদের খাবার হয়ে ওদের একটু সাহায্য তো করুন? আপনার মনে একটুও দয়া মায়া হয় না এদের প্রতি? ‘
‘ ধুত্তেরি! তুমি এসে তোমার পিঁপড়া সামলাও। আমার গোসল শেষ! ‘
আমি বাথরুমের দরজা খুলতে যাব, খুলছে না! বাইরে থেকে বন্ধ করা!
‘ তানিয়া! দরজা খুলো। আমার অবস্থা খারাপ! ‘
‘ শুভ রাত্রি। আপনার রাতের খাবার দেখুন বাথটবের পাশে রাখা আছে। আজকে আর দরজা খুলা হবে না! ‘
এই মেয়ে পাগল হয়ে গেছে। মায়ের সাহায্য নেওয়া উচিত। মা বলল, ও কী আজকে বের হবে না?
‘ না, সে মাসের একটা দিন পিঁপড়াদের সাথে কাটায়। বড় দয়ালু লোকটা। ‘
‘ ওহ, তাহলে কি আমি ভুল শুনলাম? ও যে বের হতে চাচ্ছে? ‘
‘ আপনার কানে মনে হয় পিঁপড়া ঢুকেছে! পিঁপড়া দিবসে সবার কানে পিঁপড়া যায়। তখন ভুলভাল শুনে। ‘
‘ হতে পারে, আচ্ছা চলো খাই। আমার খিদে পেয়েছে। ‘
‘ চলেন। ‘
আমি মাকে ডাকছি। একটা দুইটা পিঁপড়া তো আর না! কোটি কোটি পিঁপড়া। এত পিঁপড়া তানিয়ে পেল কোথায়? ওরা আমার শরীর উঠে নাকে মুখে ঢুকে যাচ্ছে! আম্মা আবার বলল, এখনো কি ভুল শুনছি? ‘ জি, একবার কানে পিঁপড়া ঢুকে গেলে সারা দিনই সে ভুল শুনে!
গল্পের বিষয়:
গল্প