শুকনো পাতা

শুকনো পাতা
আম্মাকে শুনিয়ে শুনিয়ে ছোট বোন রোদেলাকে গল্প শোনাচ্ছি..’জানিস রোদেলা, আমাদের নানা হলো জন্মের কিপ্টা। কিপ্টার ঘরে কিপ্টা। উনার মতন কিপ্টে মানুষ এই পৃথিবীতে নাই।’ রোদেলা ভ্রু-কুঁচকে তাকালো। আড়চোখে তাকিয়ে দেখি আম্মা কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে। আমি আবার বললাম….
–একবার কি হয়েছে শোন, এক ফকির নানার কাছে ভিক্ষা চাইছে নানা তাকে বলে টাকার অভাবে আমি তিনদিন কিছু খাইনা। হা হা হা…!
-এত কিপ্টা নানা?
–খালি কিপ্টা না, কিপ্টা অফ দা দুনিয়া।
-আর নানি কেমন ছিল?
–ধুররর নানির কথা বাদ দে, উনার তো জয়েন্টে জয়েন্টে কিপ্টামি।
আম্মা তৎক্ষনাৎ রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে আমার কাছে এসেই হুংকার দিলো। রাগে চোখদুটো লাল হয়ে আছে। আমি বললাম….
-কি হয়েছে আম্মা?
–তুই আমার বাবা-মা’র নামে উল্টাপাল্টা বলছিস কেন?
-আমার মুখ দিয়ে আমি বলি।
–কেন বলবি? আর এসব মিথ্যা কেন বলিস?
-ইট’স মাই চয়েস। মাই মুখ, মি টকিং উয়িথ রোদেলা ইউর কিপ্টা বাবার সম্পর্কে!
–ফাজলামো করবিনা একদম।
-এটা স্বাধীন দেশ আমরা যা ইচ্ছে বলব।
–সহমত ভাইয়া। (রোদেলা)
-তুই চুপ কর, ভাইয়ের সাথে থাকতে থাকতে দিনদিন তুইও কুটনি হচ্ছিস
–ইটস মাই চয়েস। (রোদেল)
আম্মা গালি দিয়ে চলে গেলো৷ রোদেলা আর আমি হেসে ফেললাম। আম্মা ফিরে তাকালো৷ আমি ভেংচি কাটলাম। রোদেলা আবার বলল….
–বলো আমাদের নানি কেমন?
-নানি অনেক কিপ্টা ছিল। একবার এক মহিলা নানির কাছে কিছু টাকা ধার চেয়েছিলো। নানি সাথেসাথে অজ্ঞান হয়েছিলো।
–হা হা হা, সত্যি সত্যি অজ্ঞান?
-ধুরর অজ্ঞান হওয়ার ভং ধরছিলো।
–ভং কেমনে ধরে?
-আরে অভিনয় করে আরকি।
–হা হা হা… আর মামারা?
-এরা হলো কিপ্টার ছাউ।
–তাহলে আম্মাও কিপ্টার ছাউ? আম্মাতো কিপ্টে না!
-আমরা জন্ম হওয়ার পর আম্মা কিপ্টামি ছেড়ে দেছে।
–নইলে আমরাও কিপ্টার ছাউ হতাম। হা হা হা…!
রোদেলা হাসছে। ওর সাথে তাল মিলিয়ে আম্মাকে শুনিয়ে শুনিয়ে আমিও হাসছি। বুঝতেই পারছি আম্মা হেব্বি রেগে
আছে। তো আই কিত্তাম। রোদেলাকে বলতে থাকলাম….
–আমাদের নানা এতই কিপ্টে ছিল যে একটা লুঙ্গী ৬ বছর পর্যন্ত পরতো। মনে কর লুঙ্গীর অর্ধেক ৩ বছর বাকি অর্ধেক তিন বছর।
-কিভাবে?
–কিভাবে আবার হাটু অবধি পরতো। আর নানিতো তরকারি রান্না করলে যে বাজার খরচ বেশি লাগবে তাই শুধু হলুদ আর লবণ দিয়ে তিন বেলা খিচুড়ি রান্না করতো। চিন্তা কর কত বড় কিপ্টে।
-হা হা হা…তুমি কিপ্টার নাতি, আমি কিপ্টার নাতনী।
–আর শোন, নানি আমাদের সবসময় ছোট চামচ দিয়ে ভাত দিত। অল্প দিয়েই বলতো অল্প খাওয়া ভালো, বেশি খেলে নাকি পেট ফুলে।
রোদেলা হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আম্মা রাগে ফুঁসছে। কিছু বলতেও পারছেনা৷ আমারো হাসি পাচ্ছে। মনচাইতেছে ডিংকা চিকা নাচি। আহা! নাহ, আর কিছু বলা যাবেনা৷ বললে পরে আবার আম্মা খেপে যাবে। রাতে খেতে বসলাম। আম্মা বিভিন্ন প্রকারে রান্না করছে। আম্মা হঠাৎ কি মনে করে এত আয়োজন করলো। কাহিনী কি! কেউতো আসার কথা না আজকে। একটু পর আম্মা হাজির, হাতে প্লেট। আমার দিকে এগিয়ে দিলো। দেখলাম সেখানে খিচুড়ি হলদে হয়ে আছে অতিরিক্ত। আমি ভ্রু-কুঁচকে বললাম….
–এসব কি?
-কোনসব?
–খিচুরি এমন কেন?
-শুধু হলুদ আর লবণ দিয়ে রান্না করছি। আজ থেকে তিনবেলা এগুলো খাবি আর আমরা খাব ভালো মন্দ।
–এটা কোন কথা? এসব মানবনা, এটা রীতিমতো অন্যায়।
-ইট’স মাই চয়েস! মাই হ্যান্ড, আমি রান্না করছি। তুই ইটিং দা হলুদ খিচুড়ি। নো টকিং, নো পকপকানি, চুপচাপ খা।
আম্মার কথা শুনে শিহরিত। হোয়াট এ কথা! আমার আর বুঝতে বাকি রইলনা এটা আম্মার প্রতিশোধ। নানা-নানিকে কিপ্টে বলার ফল এটা। আমি তবুও বললাম….
–এটা হবেনা, আমাকেও ওসব দাও।
-এটা স্বাধীন দেশ, আমি যা নিজে রান্না করে দিব তাই খেতে হবে। সো ইট’স নান অফ ইউর বিজনেস।
–এভাবে কথা বলছো কেন?
-মাই ইচ্ছে, মাই চয়েস।
বুঝতে পারছি আম্মার সাথে কথায় আর পারবনা। তবুও কয়েকবার রিকুয়েষ্ট করলাম৷ কিন্তু আম্মার ঘাউড়ামি মার্কা কথায় আর পারলামনা। রাগ করে উঠে আসলাম। সবার খাওয়া শেষ আমি এখনো না খাওয়া৷ শুধু একটা ডিম বেজে অনেক বলে কয়ে ভাত নিয়ে ডিম দিয়ে খেলাম। আর তারা খেলো মাংস দিয়ে। এ জীবন রেখে কি লাভ! পরদিন জুতো কেনার জন্য আম্মার কাছে টাকা চাইলাম। আম্মা বলল….
–কিসের টাকা?
-জুতো কিনব।
–সেদিন না কিনলি?
-সেদিন কই? ১ বছর হলো। আর একটা জুতো ছিড়ে গেছে।
–তো কি হয়েছে, আরেকটা পায়ে দিবি।
-আজব একটা জুতা কিভাবে পায়ে দিব?
–কেন আমার বাবা যদি একটা লুঙ্গী অর্ধেক অর্ধেক করে ৬ বছর পরতে পারে। তুই কেন এক জোড়া জুতো একটা একটা করে ২ বছর পরতে পারবিনা!?
-এ কেমন লজিক! লুঙ্গীর সাথে জুতো কেমনে?
–ইটস মাই চয়েস।
আম্মা আর কিছু না বলে চলে গেলো। আমি আহাম্মক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। এভাবে ধোকা খাব ভাবিনি। কোন দুঃখে যে নানা-নানিকে কিপ্টে বললাম। এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। সামনে যে আরো বিপদ আছে সেটা বুঝতে আর বাকি রইলনা। রাতে আবারো খেতে গেলাম। অদ্ভুত আজকেও আমার জন্য সেই খিচুড়ি। আর তাদের জন্য বিরিয়ানি। রোদেলাও আম্মার সাথে। আমি কিছু বলার আগেই আম্মা বলল….
–রোদেলাকে তুই এসব শুনিয়েছিস ওর দোস নেই। সব দোস তোর।
-তাই বলে তিনবেলা এই খিচুড়ি খাব?
–হ্যাঁ খাবি।
-পারবনা! বিরিয়ানি দাও।
–জীবনেও না, তুই ওসবই খাবি।
আমি রাগ করে বাইরে চলে গেলাম। ২ ঘণ্টা পর মোবাইলে আম্মার মেসেজ.. ‘টেবিলে বিরিয়ানি রাখা আছে খেয়ে নিস।’ আমি এক দৌঁড়ে বাসায় এসে হাজির। টেবিলে দেখলাম প্লেট ঢেকে রাখা। প্লেটে নিশ্চয়ই বিরিয়ানি। আমি ঢাকনা সরাতেই মাথা চক্কর দিলো। ছোট চামচ দিয়ে অল্প একটু বিরিয়ানি রাখা। বড়জোর ৩ লোকমা হবে। এ কেসা মজা বারেক ভাই! আমি হনহন করে আম্মার রুমে গিয়ে বললাম….
–এইটা কেমন বাটপারি করলা?
-বাটপারি কই করলাম? আরে গাধা অল্প খাওয়া ভালো, বেশি খেলে পেট ফুলে যায়।
–দেখো তুমি আমার সাথে এমন করতে পারোনা।
-কিচ্চি?
–টাকা দাও আমি হোটেলে গিয়ে বিরিয়ানি খাব।
-বিশ্বাস কর ৫ দিন থেকে কিছু খাইনা আমি।
–একটু আগেই তো বিরিয়ানি খেলে?
-ইট’স মাই লাইফ, মাই ইচ্ছে, মাই চয়েস!
–দেখো টাকা দাও। আচ্ছা যাও ধার হিসেবে দাও পরে দিয়ে দিব।
আম্মা সাথে সাথে বিছানায় ধপাস করে শুয়ে পরলো। আমি ভ্রু-কুঁচকে তাকালাম। এটা কি হলো!? আমি আম্মাকে ডাকলাম, চুপচাপ চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। এ কেমন বিচার! টাকা ধার চাওয়াতে আম্মা অজ্ঞান হওয়ার ভং ধরছে। প্রতিশোধ লেবেল অফ দা ইয়ার। আমি বার কয়েক আরো ডাকলাম, আম্মা শুয়েই রইলো। চোখ আর খুললনা। মুখটা চিকার মতন করে আম্মার রুম থেকে চলে আসলাম। ৩ লোকমা বিরিয়ানি খেয়ে, চুলোয় ভাত বসালাম সাথে ডিম। এখন থেকে নিজেরই রান্না করে খেতে হবে। ইট’স কল্ড মাইনকা চিপা।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত