এ্যারেঞ্জ ম্যারেজ

এ্যারেঞ্জ ম্যারেজ
-আসসালামু-আলাইকুম…
-ওয়ালাইকুম আসসালাম, কে বলছেন?
-যার সাথে আপনার বিয়ের কথা চলছে…
-ওহ তাসফিয়া?
-হুম…
-তো বলুন…
-না মানে, আপনারা তো দেখতে আসলেন। আপনার পছন্দ হল, মুরুব্বিরা বিয়ের কথা শুরু করে দিয়েছে…
-তো? আপনার কি আমাকে পছন্দ না? নাকি বয়ফ্রেন্ড আছে…
-না আসলে তেমন কিছু না। বলছিলাম কি, আপনি কি ফ্রি আছেন?
-হ্যা, কেন?
-না মানে, আসলে আমাদের ভিতরে তো আলাদা করে তেমন ভাবে কথা হয়নি। যদি কোথাও মিট করেন তো…
-আচ্ছা বলুন কোথায় আসতে হবে?
-থ্যাংকস, আমি আপনাকে মেসেজ করে জানাচ্ছি….
-ওকে।
-ওহ, আরেকটা কথা বলতে ভুলে গেছি। আমার সাথে আমার তিনটা বান্ধুবিও থাকবে বলেই মেয়েটি ফোন কেটে দিল। ‘তাসফিয়া ইকবাল’ নামক মেয়েটার সাথে আমার বিয়ের কথাবার্তা চরছে। গত দু’দিন আগে দেখতে যাওয়ার পরে আমার পছন্দ হয়। মূলত তারপরে থেকেই বিয়ের ব্যাপারে কথাবার্তা চলছে। তার সাথে আমার আলাদা করে তেমন কথা হয়নি আবার আগে থেকেও পরিচিত ছিলাম না। কাজেই মিট করার কথা শুনতেই এক পা’য়ে দাড়িয়ে রাজি হয়ে গেছি।
বিকেলের দিকে তাসফিয়ার নম্বর থেকে মেসেজ আসল। উত্তরার একটি নামকরা রেস্টুরেন্টে মিট করার কথা বলেছে। রেস্টুরেন্টের নাম দেখেই আমার গলা শুকাতে শুরু করল! প্রেশার বেরে যেতে শুরু করল। আমি রীতিমত ঘামতে শুরু করলাম। এদিকে মাসের শেষের দিক। পকেটের বেহাল অবস্থা। ভাবছিলাম তাসফিয়ার ব্যাপারে। মিট করার কথায় রাজী হয়ে কি ভুল করলাম? মেয়েটা কি একটু বেশিই উচ্চবিলাসি? ওকে বিয়ে করা কি ঠিক হবে। বিয়েটা কি ক্যান্সেল করে দেব মানুষ হিসেবে আমি একটু হিসেবি আরকি। যাকে এখনকার যুগে কিপ্টে বা কিপ্টা বলা হয়। সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে ভাবলাম গিয়েই দেখি। রাজি যখন হয়েছি। তখন না গেলে,শুধু আমার না পুরো পরিবারেরই দুর্নাম হবে।
বাড়িতে আমার বোনের জন্য কোথাও টাকা রেখে শান্তি নেই। কোন মতে আমি ঘর ছাড়লেই সে এসে মানিব্যাগ, প্যান্টের পকেট, বালিশের নিচে সহ সবজায়গায় হাতরে টাকা পেলেই নিজের মনে নিয়ে নেয়। তবুও এদিক সেদিক হাতরে, বিভিন্ন গোপন জায়গা খুজে মোটামুটি কিছু টাকার জোগার করে ফেল্লাম। এতে চার-পাচজনের খাবারের বিলের টাকা হয়ে যাবার কথা সন্ধ্যার পরে রওনা হলাম। এত দামী রেস্টুরেন্টে এর আগে খু্ব কমই ঢোকা হয়েছে। বলতে গেলে ঢুকতামই না কখনো। যদি না দু-একটা বন্ধু ট্রিট দিত। রেস্টুরেন্টের সামনে এসেই আবারো গলা শুকিয়ে গেল। হাত-পা অবশ হয়ে আসতে শুরু করল। বিয়ের আগেই যদি এই মেয়ের জন্য এত খরচ করতে হয়, বিয়ের পরে না জানি কি হবে তা আল্লাহ মালুম। দোয়া-দরূদ পড়ে বুকে ফু দিয়ে আল্লাহর নাম নিয়ে ভিতরে ঢুকলাম। গিয়ে দেখি কর্ণারে জানালার পাশে চারজন মেয়ে বসে আছে। তাদের ভিতরে একজন তাসফিয়া। এতজন বান্ধবি নিয়ে দেখা করার কি দরকার ভেবে পেলাম না। তাসফিয়া ডাকল…
-এই যে এদিকে আসুন…
আমি গেলাম। হাসিমুখে নিজের সিটে বসলাম। আর আড়চোখে তাকিয়ে সবাইকে দেখে নিলাম। এদের ভিতর একজন আবার সেই লেবেলের মুটকি! একটা ছোট-খাট হাতির বাচ্চার সাথে একে অনাসয়ে অদল-বদল করা যাবে। মনে মনে তার নাম দিলাম নীল তিমির বাচ্চা! উনাকে দেখেই আমার মাথা ঘুরানো শুরু করে দিল। মনে হচ্ছিল এই বুঝি জ্ঞান হারিয়ে পরে যাব তাসফিয়া ওর বান্ধবিদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে দিতে বলল…
-ওহ আপনাকে তো বলাই হয়নি! আমি ভ্রু কুচকে ওর দিকে তাকালাম। সে বলল…
-আসলে আপনার সাথে বিয়ের কথা চলছে দেখে আমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে ব্রেকআপ আর আপনার সাথে বিয়ে উপলক্ষে আমার বান্ধবিদেরকে ট্রিট দিচ্ছি ঠিক সেই সময়ে তাসফিয়াকে উদ্দেশ্য করে নীল তিমির বাচ্চা বলল…
-আগে খাবার অর্ডার কর। তারপরে খেতে কথা বলা যাবে…
-কি খাবি বল? (তাসফিয়া)
-অনেকদিন হল বুফে ডিনার খাই না! আজকে বুফে অর্ডার করলে কেমন হয়?
আমার বুকে ব্যাথা শুরু হল। ডানহাতটা বামবুকে চেপে ধরলাম। মনে হচ্ছিল ভিতর থেকে কলিজাটা বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে আমি মনে মনে বললাম ‘এই যে তিমির বাচ্চা জীবনে বুফে ডিনার করছিস? ওহ, তোর তো আবার এতটুকুতে হবে না, তোর চাই সমুদ্র পরিমাণ!’ বাস্তবে যতটা সম্ভব মুখে হাসি ধরে রাখলাম। কিন্তু ভিতরটাতে মনে হল দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে তাসফিয়া হেসে বলল…
-তোদের যা ইচ্ছা। আপনার কোন সমস্যা আছে?
বলেই সে আমার দিকে তাকাল। আমি কোন কথা বলতে পারছিলাম না। এসি থাকা সত্যেও ঘামতে শুরু করেছি। বারবার মনে হচ্ছে, অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেও এই বিপদ থেকে বাচা যাবে। নেহাৎয়ই মান-সম্মানের ভয়ে হাসি দিয়ে বুঝিয়ে দিলাম, ‘না, কোন সমস্যা নেই’ অথচ আমার সমস্যার কোন অন্ত নেই। খাবার চলে আসার পরে চারজনে মিলে খাচ্ছে। প্রতিটা আইটেমই এক এক করে প্লেটে তুলে নিচ্ছে। খাচ্ছে আর ওরা নিজেদের ভিতর কথা চালাচালি, হাসা-হাসি করছে। আমি মুগ্ধ নয়নে তাদের খাওয়া দেখছি। খাবার বেলায়ও যে এত বিলাসিতা করা যায় এদেরকে না দেখলে জানা হত না। বিশেষ করে হাতির বাচ্চাটা! সে কোন কথা বলছে না, খুব আয়েশ করে খেয়ে যাচ্ছে। কথা বলে সময় নষ্ট করার মত সময় তার নেই। আমি ভাবছি কিভাবে এখান থেকে কেটে পড়া যায়? তাতে অবশ্য মেয়েগুলা বিপদে পড়বে, আমার দুর্নাম হবে, হয়ত বিয়েটাও ভেঙ্গে যাবে। সে যাই হোক, আমার এমনিতেই বিয়ের স্বাধ মিটে গেছে!
হঠাৎ তাসফিয়া বলল…
-ওমা সেকি, আপনি খাচ্ছেন না কেন? আমি গলা পরিষ্কার করত করতে বললাম…
-আসলে, যদি কিছু মনে না করেন তো আমি একটু ওয়াসরুম থেকে ঘুরে আসছি…
বলেই উঠে চলে এলাম। তাদের চোখকে ফাকি দিয়ে বাইরে বেরিয়ে হাফ ছেড়ে বাচলাম। এখন শান্তি লাগছে, আরাম পাচ্ছি। হেটে হেটে যাচ্ছি বলে লোকে ভাববে কি কিপ্টে! টাকা বাচানোর জন্য হেটে যাচ্ছে। অথচ কেউ বলবে না, হাটতে আমার ভালো লাগে ওদিকে তাসফিয়া ফোনের উপরে ফোন দিচ্ছে। আমি ফোনটা এ্যারোপ্লেন মুড করে হাটায় মনযোগ দিলাম। অনেকটা পথ যেতে হবে…
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত