পার্কের সেই পুরনো বেঞ্চটিতে প্রতিদিনের মতো ছেলেটি আজও বসে আছে,,, বসার আগে ছেলেটাকে দেখতে পেলাম,প্রথমে বেঞ্চটি সার্টের হাতা দিয়ে মুছে নিলো,,,,
কিন্তু অবাক ব্যাপার হচ্ছে সেই মুছা জায়গাটায় ছেলেটি বসলো না,,, বসলো তার একটু পাশে,,,, আমি দূর থেকে সব দেখে যাচ্ছি,, ভাবলাম,হয়তো প্রিয় মানুষটির জন্য জায়গাটা মুছে রেখেছে,,,,
একটু পরে অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়তে লাগলো,,, সবাই একটা সেফ জায়গায় গিয়ে দাড়ালাম শুধু একটি মাত্র ছেলে ছাড়া,,, হ্যা,সেই ছেলেটি,,, দেখতে পেলাম হাতে আজ একটা গোলাপ ফুল এনেছে,,, আমি মনে মনে ভাবলাম,”ছেলেটা পাগল নাকি!!” পার্কটি যে দেখাশুনা করে তার কাছে জিজ্ঞেস করলাম,”আচ্ছা চাচা উনি কি পাগল!!”
–হ্যা,পাগল,,,অপেক্ষার পাগল, –মানে!!ঠিক বুঝলাম না,,, –তাহলে শোনো, প্রায় দুই বছর আগের কাহিনী, ছেলেটিকে দেখতাম প্রতিদিন এই পার্কে একটা সুন্দরি মেয়েকে নিয়ে ঠিক ওই বেঞ্চটিতে বসে থাকতে,,,
তো, একদিন সেখান দিয়ে যাওয়ার পথে ছেলেটি আমাকে ডেকে বললো,”চাচা,আপনি কি আমাদের জন্য একটু দোয়া করবেন,,,,!!” –ঠিক বুঝলাম না,,, –আসলে চাচা,আজ আমরা পালিয়ে বিয়ে করেছি,,,
আর আমাদের পরিবার থেকে আমাদের মেনে নেয়নি,,,তাই তাদের দোয়াও পাইনি,,,,করবেন আমাদের জন্য একটু দোয়া?? ছেলেটার কথাগুলো শুনে চোখে পানি চলে আসলো, কেউ যাকে কোনদিনও পাত্তা দেয়নি,,অনেক সময় যাকে অনেকে নিচু নজরে দেখে,সেই লোকটির কাছে ছেলেটি দোয়া চাচ্ছে!!!” –কি চাচা,কিছু ভাবছেন?? –হ্যা,,,ভাবছি,,,”পৃথিবীতে আমার মতো একটা মানুষেরও দোয়ার দাম আছে!!” –হ্যা চাচা,,,দিবেন আপনার ওই দামি দোয়া?? –হ্যা,অবশ্যই,,, এরপর আমি তাদের দোয়া করলাম আর আল্লাহ্-র কাছে তাদের জন্য দোয়া চাইলাম,,,,
তারপর, আমি তাদের জিজ্ঞেস করলাম,”আচ্ছা বাবা,তোমরা থাকো কই??” –চাচা,আপাতত এই পার্কেই আছি,,(ছেলে) –ঠিক বুঝলাম না,,, –হ্যা,চাচা,,,পার্কটি আমাদের অনেক ভালো লাগে,,,,তাই তো প্রতিদিন আসি,,, –মজা করো নাতো,,,, থাকবে কোথায়?? –আসলে, আমরা একটা বাসা ভাড়া করেছি,,,সেখানেই থাকবো,,, –ওও,,, এরপর আমি সেখান থেকে চলে গেলাম,,, এভাবেই চলছিলো তাদের জীবন,, তারা প্রতিদিন’ই এই পার্ক এ আসতো,,,, সবসময় হাসি-খুসিতে মেতে থাকতো ,,,, এভাবে কেটে গেলো প্রায় দেড় বছর,,,,
কিন্তু, কোন একদিন ছেলেটাকে দেখতে পেলাম একা আসছে,,, তো আমি তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,”কি বাবা,আজ মামনি আসে নাই??” –না,,,, –কেন!!অভিমান করেছে বুঝি!! –হ্যা,অনেক অভিমান করেছে,,,যে অভিমান আর কোনদিনও ভাঙাতে পারবো না,,,, এই বলেই ছেলেটি কেঁদে দিলো,,, আমি জিজ্ঞেস করলাম,”কাঁদছো কেন!!কি হইছে কও তো,,,,!!” –চাচা,ও আর নেই,,, –কি!!কেন কি হইছে?? –আমি আর ও, এই পার্ক থেকে বের হয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে হাটছিলাম,,,এমন সময় ওর মাথায় প্রচন্ড ব্যথা শুরু হয়,,,যার ফলে ও ওখানেই অজ্ঞান হয়ে যায়,,,,, এরপর হাসপাতালে নিলে জানতে পারি,ওর ব্রেন টিউমার হইছে,,,, আমি প্রথমে ভেবেছিলাম, ডাক্তার হয়তো ভুলভাল বকছে,,,,তাই এর থেকেও আরোও বড় ডাক্তার দেখাই,,,,কিন্তু তারাও এই একই কথা বলে,,,,
তারা বলে, ও নাকি বড়জোর আর ১বছর বাঁচবে,,,, মেয়েটা আমাকে বলেছিলো,”আমি যতদিন বেঁচে থাকি তুমি আমাকে প্রতিদিন এই পার্কে নিয়ে আসবে,,,আর আমরা এই বেঞ্চটিতেই বসবো,,,,কারণ, এখানে তোমার সাথে বসে থাকলে আমি অনেক শান্তি পাই,,,,
”এরপর প্রায় ১বছর ৪মাস ২২দিন পর, মেয়েটি আর নেই,,,, চলে গেছে না ফেরার দেশে,,,,চলে গেছে,প্রিয় পার্কটির প্রিয় বেঞ্চটি ছেরে,,,,,,, ছেলেটি আবারো আমাকে জরিয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে দিলো,, ছেলেটিকে সেদিন শান্তনা দিতে পারিনি,,, কি বলে শান্তনা দেবো!!! : কথাগুলো বলতে বলতে চাচা হঠাৎ কেঁদে দিলেন,,,,আর আমার চোখও ঝাপসা হয়ে এসেছে,,,,, চাচা বললেন,”জানো, ছেলেটির হাতে আজ গোলাপ ফুল কেন!!!” “ছেলেটির হাতে গোলাপ ফুলটা এই জন্য,আজ তাদের ৩য় বিবাহবার্ষিকী ”
:ছেলেটা আজও ওই বেঞ্চটিতে বসে মেয়েটার জন্য অপেক্ষা করে,,,,, এভাবেই হয়তো সারাজীবন ছেলেটির জীবনে বিবাহবার্ষিকী আসবে,,,,কিন্তু, পালন করার জন্য সাথে থাকা প্রিয় মানুষটি আর আসবে না,,,,, : এর’ই মধ্যে বৃষ্টি কমে গেলো,,,, ছেলেটিকে আর একবার একনজর দেখে চলে গেলাম,,,,
আর অপেক্ষা করতে লাগলাম আগামী কালের জন্য,,,, কারণ , আমি জানি,ছেলেটা কালও আসবে,,,,আর একই নিয়মে ওই ধুলিমাখা বেঞ্চটি মুছে প্রিয় মানুষটির জন্য অপেক্ষায় থাকবে,,,,,