সকাল ৮টা থেকে অফিস। গতকাল রাতে ভার্সিটির এসাইনমেন্ট রেডী করে ঘুমাতে অনেক রাত হয়ে গিয়েছিলো।ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং টেবিলে বসে ঝিমুচ্ছি।একটু পরে আম্মু প্লেটে করে বিরিয়ানি নিয়ে হাজির।বিরিয়ানির মোহনীয় গন্ধে আমার ঘুম ফুড়ুৎ।তাড়াতাড়ি বিরিয়ানির প্লেট সামনে টেনে গাপুসগুপুস খাওয়া শুরু করলাম।
-আম্মু এই সাতসকালে বিরিয়ানি পায়ছো কই?
-তোর মামা অানছে।এগুলা ওরশের বিরিয়ানি।
-হ আম্মু অনেক মজা।একটা টিফিন বক্সে করে বিরিয়ানি দিও তো।লাঞ্চে খাবো।
আম্মুর দেয়া বিরিয়ানির বক্স নিয়ে অফিসে আসলাম।আমি আমার টেবিলে বসে কাজ করছি।১০টার দিকে এক কলিগ এসে বললো,
– তাহমিনা ম্যাম,খুশির সংবাদ আছে।আজকের লাঞ্চ বস করাবে।বসের মেয়ে হয়েছে।তাই অফিসের স্টাফদের আজ ট্রিট দিবে।ট্রিটের কথা শুনে মনে মনে গান করলাম, “আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে।” (আমি বরাবরি ট্রিটের পাগল।কেউ ট্রিট দিতে না চাইলেও জোর করে আদায় করে নেই।মনে মনে ভাবলাম লাঞ্চ যখন বস করাবে তাহলে আম্মুর দেয়া বিরিয়ানি গুলো এখন খেয়ে ফেলি।অফিসের ক্যান্টিনে গিয়ে বক্সের বিরিয়ানি গুলো খেয়ে নিলাম।)
লাঞ্চ টাইমে অফিসের সবার জন্য বিরিয়ানি আনা হলো।যার যার টেবিলে বিরিয়ানির প্যাকেট দিয়ে গেলেন অফিসের পিওন।প্যাকেট খুলতে কি সুন্দর অমৃত ঘ্রাণ ভেসে আসলো আমার নাকে। আহা! বিরিয়ানি খাওয়া শেষে কেমন যেনো একটু গা টানা দিতে ইচ্ছা করছিলো।মনে মনে বললাম, ইশ!বস যদি লাঞ্চ ব্রেকে অফিসের স্টাফদের ঘন্টাখানেক ঘুমানোর সুযোগ দিতেন কতোই না ভালো হতো। অফিস ছুটির পর বিকেলে টিউশনে গেলাম।স্টুডেন্টকে পড়াচ্ছি।কিছুক্ষণ পরে আন্টি(স্টুডেন্টের মা) একটা ট্রে টেবিলে রেখে গেলেন। ওমা এই কি কাণ্ড…! আন্টি ট্রে-তে একটা প্লেটে বিরিয়ানি দিয়েছে।তাও বড় সাইজের মুরগীর ল্যাগ পিস দিয়ে।সাথে ৪ পিস শসা ও এক গ্লাস কোল্ড ড্রিংকস।এসব দেখে আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো।জম্পেশ করে পুরো প্লেট বিরিয়ানি খেয়ে স্টুডেন্টের বাসা ত্যাগ করলাম।
সন্ধ্যায় গেলাম ভার্সিটিতে এসাইনমেন্ট জমা দিতে।সেখানে গিয়ে শুনলাম আজ সায়মার(আমার বান্ধবী) জন্মদিন।সে আমাদের ট্রিট দিবে। সবাই রেস্টুরেন্টে বসে আছি।ওয়েটার এসে বললো কি খাবেন ম্যাম? সায়মার কথা শুনে ওর মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে আছি….!যা শোনার জন্য আমি মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না। সায়মা ৬ প্লেট বিরিয়ানির অর্ডার দিয়েছে। যাই হোক বিরিয়ানি খেতে খেতে সায়মাকে বললাম, দোস্ত আজকে তোর জন্মদিন যদি আগে বলতি,তাহলে তুকে গিফট দিতাম।কিন্তু আজকে ব্যাগে বাসায় যাওয়ার গাড়ী ভাড়া ছাড়া আর বেশি টাকা নাই রে। আগামী বছর জন্মদিনে তোকে পাক্কা গিফট দিবো। তোর বফের কসম।
-চাপাবাজি বন্ধ রাইক্ষা বিরিয়ানি খাওয়া শেষ কর।যেটা সেটা তে আমার বফরে টানবি না। (যাই হোক এই যাত্রায় বাঁচা গেলো।ভাগ্যিস জন্মদিন সেটা আগে বলেনি।না হয় আমার টাকা দিয়ে ওর জন্য আবার গিফট কিনতে হতো।) রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে রিকশা যোগে বাসায় আসলাম।রুমে ঢুকে শুয়ে আছি।আম্মু এসে বললো-
– কিরে ভাত খাবি না?
– না আম্মু খিদে নেই।
– ওরশের বিরিয়ানি অল্প ছিলো।সেগুলা তোর জন্য রেখে দিছি।তুই যখন খাবি না রাফসানকে (ছোট ভাই) কে দিয়ে দিচ্ছি।
– না না আম্মু রাফসানকে দেয়ার দরকার নাই।আমি খাবো।
– রান্নাঘরে আছে।চুলায় গরম করে খেয়ে নে। সারাদিন মিলে ছয় দফা বিরিয়ানি খাওয়ার পর ঘুমাতে গেলাম।বুকে ভীষণ ব্যথা করছে। না না এটা কোন ব্রেকআপ/ট্রেকআপ এর ব্যথা না। এটা গ্যাস্ট্রিক এর ব্যথা।মাঝরাতে আম্মুর রুমের দরজা ধাক্কাচ্ছি।
-আম্মুরে ও আম্মু দরজা খোল।একটা গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ দাও। আম্মু দরজা খুলে আমার হাতে ওষুধ দিয়ে বললো,
– সারাদিন না খাইয়া না খাইয়া পড়ালেখা জব এসব নিয়ে থাক।আর বুক ব্যথা লাগবে না। আমি যে সারাদিন ছয় বার বিরিয়ানি খেয়েছি সেটা আম্মুর অজানা থেকে গেলো।
গল্পের বিষয়:
গল্প