সফলতা

সফলতা
–তোমার ফোনে পর্ন ভিডিও কেনো?(রাইসা) কথাটা শোনেই চমকে উঠলো রাকিব।ফোনের সব কিছু ই তো ডিলিট করেছিলো কিন্তু এই ভিডিওটা কীভাবে পেলো সে?রাকিব মিথযা বলতে চেয়েও যেনো মিথ্যাবলতে পারছে না।রাকিব চুপ ই রয়ে গেলো।রাইসাআবার  বললো,,,
–বলো না কেনো?এমন একটা জঘন্য জিনিস দেখতে তোমার খারাপ লাগে না?(রাইসা)
–সব ছেলেদের ফোনেই তো এসব থাকে,,,(রাকিব)
–সব ছেলেদের ফোনে থাকা মানেই কি তোমার ফোনে থাকবে?তুমি একটা খারাপ ছেলে,,,,তোমার সাথে আমি কখনই সম্পর্ক করবো না।(রাইসা)
রাকিব রাইসার পিছনে অনেক দিন ধরেই ঘুরছে।কিন্তু রাইসা রাকিবকে একদম ই পছন্দ করে না।কারন রাকিবএলাকার বখাটে ছেলেদের সাথে চলা ফিরা করে। রাস্তায়  মেয়েদের নানা রকম বাজে কথা বলে।কিন্তু আজ যখন রাকিব রাইসার পিছু পিছু যাচ্ছিলো হঠাৎ রাইসা তার ফোনটা চেয়ে বসলো।রাকিব এমন কথার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।তবুও সে মোবাইল বের করে রাইসার কাছে দিলো আর রাইসা এসব ভিডিও পেয়ে তাকে উক্ত কথা গুলো বললো।রাইসা রাকিবের ফোন রাকিবের কাছেই রেখেই চলে গেলো।রাকিব একদম হতাশ হয়ে গেলো।এরপর দীর্ঘ এক মাস রাইসা  মত অবস্থা।
কত যে চেষ্টা করেছে খুজ নেওয়ার তবুও লাভ হয়নি।হঠাৎ একদিন বিকেলে রাইসাকে দেখতে পেলো।রাকিব ডাক দিবে ভেবেও ডাক দেয়নি ভয়ে।তবুও সে রাইসার দিকে তাকিয়ে তার চলে যাওয়া দেখে।ঠিক তখন ই রাইসা রাকিব কে ডাক দেয়।কোনো কথা না বলে রাইসা রাকিবকে রিকশায় উঠতে বলে।রাকিব কি বলবে ভেবে পাচ্ছিলো না তবুও সে রিকশায় উঠলো।গন্তব্য কোথায় তা জানা নেই।একটা পার্কের সামনে নামলো রাকিব রাইসা।পার্কের ভিতরে দুজনে একসাথে বসে আছে। কারো মাঝে কোনো কথা নেই।রাইসা নিরবতা ভেঙে বললো,,,
–আমি স্পষ্ট কথা বলতে পছন্দ করি।তোমাকেও বলছি,কি দেখে আমার প্রেমে পড়লে?(রাইসা) রাকিব এমন প্রশ্নের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। তবুও সে স্পষ্ট জবাব দেয়,,,
–তোমার চোখ দেখে।তোমার বোরকার কারনে তোমাকে আজও দেখতে পাইনি।তবে তুমি যেমন ই হও আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।এটাও জানি তুমি কাউকেই পছন্দ করো না,,,(রাকিব)
–কে বললো?আমিও তো একজনকে পছন্দ করি।সে তোমার মতো এমন বাজে ছেলে না।সে অনেক ভালো ছেলে।নামাজ পড়ে,ভালো আচরন করে,সে সব সময় খারাপ কাজ পরিহার করে।আমিও ঠিক তেমনটাই চাই। তুমি তো তেমন নও।তুমি যে কতটা খারাপ তা বলার মতো না।(রাইসা) রাকিব এমন কথা শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।রাকিব ভাবছে,আসলেই তো সে খারাপ।তার চেয়ে খারাপ হয়তো এই এলাকায় আর কেউ নেই।তার এই খারাপ এর জন্যই হয়তো তাকে পছন্দ করেনি।তবে রাইসা যেমন সে তেমন ছেলেকেই পছন্দ করেছে। রাকিব চুপ থেকে বললো,,,
–আসলেই তুমি অন্য কাউকে,,,
–হ্যা,,,,এখন তুমি ভাববে অনেক কিছু।এটাও হয়তো ভাবছো খারাপ হয়ে যাবো।দরকার নেই আমাকে।তবে তুমি যদি। সত্যিই আমাকে পছন্দ করে থাকো তবে একটা কাজ করতে হবে।যেটা তোমার জন্য ভালো হবে। আর যদি না করো তাহলে ভাববো তুমি আমাকে পছন্দই করতে না।
–আমি তো তোমাকে পাবো না।কাজ করলে ই কি?
–তোমার ভালোর জন্যই বলছি।
যদি তুমি কাজটা করো তবে তোমার সাথে বন্ধুত্ব করবো।আর না হলে আজ যেভাবে একমাস পর দেখা হলো এরপর আর কখনই দেখা হবে না।(রাইসা) রাকিব চুপ করে আছে।এখন যে রাকিবের কি বলা উচিত তা ভেবেই পাচ্ছে না।রাকিব যে রাইসা কে অনেক ভালোবাসে সেটার জন্য এখন কি করা উচিৎ তা ভেবে কিছু ই পাচ্ছে না।তবুও যদি সে রাইসাকে একটু দেখতে পায়,কথা বলতে পারে তাহলে তাতেই তার শান্তি।এসব ভেবেই রাকিব বলে ফেললো কি কাজ?
–তোমাকে প্রিতিদিন নামায পড়তে হবে এবং মথ্যা কথা ছেড়ে দিতে হবে।আর তোমাকে তিনটা চিল্লা দিতে হবে।যদি দিতে পারো তাহলে তোমার সাথে বন্ধুত্ব করবো।আর খারাপ বন্ধুদের সাথে কথা বলা,মিলা মিশা বন্ধ করতে হবে যদি তুমি তাদেরকে ভালো করতে না পারো তাহলে,,(রাইসা)
–কাজ বললা একটা এখন দেখি অনেক,,,(রাকিব)
–এই একটা কাজ এই সব কিছু আছে তাই এমন।
তুমি যদি পারো তাহলে বন্ধুত্ব করবো তুমি ফিরে আসলেই,,, রাকিব কিছু না বলেই সেখান থেকেই চলে আসলো। সেদিন রাতে বাসায় ফিরে নানা রকম চিন্তা করতে থাকলো কিন্তু কোনো কিছুর ই কিনারা পাচ্ছিলো না। তবুও সে সিদ্বান্ত নিলো রাইসার কথা শোনবে।এরপর দিন ই শুধু মাত্র পরিবারকে জানিয়েই চলে গেলো চিল্লা দিতে।পরিবার ভেবেছিলো হয়তো জ্বীন এ ধরেছে কিন্তু এখন তারা দেখলো না রাকিব অনেক পরিবর্তন হয়েছে।বন্ধুরাও রাকিবের খোজ পায়নি। রাকিব গিয়েছিলো এক চিল্লাতে তবে সে তিন চিল্লা দিয়ে বাসায় ফিরলো।এখন রাকিবের মুখ ভর্তি দাড়ি।মাথায় সব সময় টুপি থাকে।এলাকায় যখন বের হয় যেই ছেলেকে দেখে সবাই ভয় পেতো এখন সে ই সবাইকে সালাম দেয়।সবার ভালোর জন্য কাজ করে।এর মাঝেও রাইসার চিন্তা মোটেও ভুলে যায় নি রাকিব। রাকিব একদিন রাতে বাসায় তার বেডরুমে বসে ছিলো হঠাৎ এক অপরিচিত নাম্বার থেকে কল এলো।সে কিছু না ভেবেই কল রিসিভ করে।শুরুতেই বলে,,
–আসসালামুআলাইকুম,কে বলছেন?(রাকিব)
–ওয়ালাইকুম আসসালাম,আমি রাইসা,,,
–কেমন আছেন?
–আলহামদুলিল্লাহ ভালো,,আপনি?
–আমিও ভালো।আপনি আমার চোখ খুলে দিতে সাহায্য করেছেন।
আমার প্রথমে এই আল্লাহর পথে আসতে অনেক কষ্ট হচ্ছিলো কিন্তু অবশেষে আমি পেরেছি।আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।আর আমি জানতাম না যে প্রেম করা হারাম।আমি আপনাকে অনেক সমস্যা করেছি আমি জানি।আমাকে মাফ করবেন।তবে এই পথে আমি সারাজীবন কাটাতে চাই।আপনার সেই মানুষটাও তো আল্লাহর রাস্তায়।আপনি ভালো থাকবেন আশা করি।আপনি অবিবাহিত ,আপনার সাথে কথা বলাও এখন পাপ।ভালো থাকবেন,,, রাইসা কথা গুলো মন দিয়ে শোনলো।তার মা এর কথা ই আজকে ঠিক হলো।আল্লাহ পারে না এমন কিছু দুনিয়াতে নেই।মানুষটা কত খারাপ ছিলো আথচ আজ সে ভালো হওয়ার জন্য কতই চেষ্টা করছে।রাইসা ছোট্ট একটা টেক্স্ট করলো ,,,,
–আগামী কাল আমার বিয়ে।আপনি আপনার পরিবার নিয়ে আমাদের বাসায় আসবেন।আমন্ত্রন রইলো,,, রাকিব মেসেজটা দেখে কষ্ট পেয়েছে ঠিক ই তবে সে মনকে শক্ত করে বললো,,,
–আল্লাহ তুমি যা চাও তাই হোক।আল্লাহ তুমি আমাকে তোমার গোলাম বানিয়ে রাখো।তবুও আমার সব গুনাহ মাফ করে দাও।এই মেয়ে আমার মনে এখনও আসে হায় খোদা তুমি এই মন তোমার ধ্যানে পূর্ন করে দাও। রাকিব এই মেসেজটার কোনো জবাব দেয়নি।এভাবে তিন দিন পার হয়।অন্যদিকে রাইসারও কোনো মেসেজ নেই।রাকিব ভেবে নিলো তার বিয়ে হয়ে গেছে।এর দুদিন পর রাকিব এর পরিবার রাকিব এর জন্য মেয়ে দেখলো।রাকিব কিছু ই বলেনি।বিয়েও ঠিক হয়ে গেলো।রাকিবও রাইসা কে মেসেজ দিলো যেনো তার বিয়েতে আসে।কিন্তু তারও কোনো উওর আসেনি।
বিয়ে যেদিন সম্পন্ন হলো সেদিন বাড়িতে কোনো মানুষ ছিলো না।ছিলো দুটি পরিবার এর লোক জন। রাকিব এর আগে মেয়েটিকে দেখেনি।তার বাবা মা এর কথায় ই বিয়ে।বিয়ে সম্পন্ন হয়ে গেলো যখন সেদিন বাসর রাতে রাকিব ঘরে ঢুকেই দেখলো তার বউ কালো বোরকা পরে আছে।এটা দেখে সে অবেক হয়েছে।যখন রাকিব পাশে গিয়ে বসলো তখন ই তার বউ বোরকা খুলে ফেললো।সে তো একদম অবাক।এতো সুন্দর মেয়ে তার বউ ?অসম্ভব।তবুও সে কিছু ই বলেনি।সে তার জীবনের সব ঘটনা খুলে বললো ।তার বউ শোনেই হাসতে শুরু করলো।যেখানে অন্য মেয়েরা এসব কথা শোনলে বাজে রিয়েক্ট করতো।রাকিব যখন বললো,,,
–আমি রাইসা নামের মেয়েকে পছন্দ করতাম তার জন্য আজ আমি এই রাকিব।তখনও রাকিবের বউ এর মুখে হাসি দেখেই রাকিব অবাক হয়।তখন ই তার বউ বলে উঠলো,,,
–আজ থেকে তিন আগে তুমি আসলে তোমাকেই বিয়ে করতাম।তোমাকে আসতে বলেছিলাম আসোনি।বেশি কিছু
ই বলবো না আমি ই রাইসা,,, রাকিব এক ধ্যানে রাইসার দিকে তাকিয়ে আছে। রাকিব এর মুখ থেকে অস্পষ্ট বেড়িয়ে এলো,,,
–আল্লাহ,তুমি ই সব,,,
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত