নিঃসঙ্গ – দুঃখের প্রেমের গল্প

কাউকে এতটাও প্রাধান্য দেওয়া উচিৎ না,যে সেই মানুষটা হাত ছেড়ে দিলে দুনিয়া অন্ধকার মনে হয়,নিজেকে শুধুই Lonely মনে হয়। আশা করি গল্পটা পড়ে সবার ভাল লাগবে:

ফোনটা ভাইব্রেট করেই চলেছে । স্ক্রিনের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি । হাত কাঁপছে । এত দিন,এতবছর পর আবার সেই নাম্বার থেকে ফোন এসেছে বিশ্বাস হচ্ছে না । আজও নাম্বারটা দেখে হৃদস্পন্দন কয়েকগুণ বেড়ে যায় । মনের মাঝে প্রবল ঝড় বয়ে যায় । শেষপর্যন্ত রিসিভ করে ফেল্লাম । ওপাশ থেকে ভেসে এল সেই পরিচিত কন্ঠস্বর । এতবছর পরও একটুও বদলায়নি । সেই আগের মতই আছে ….

: হ্যালো…….. কি হল? কিছু বলছ না যে?
: না আসলে ১ বছর পর এই নাম্বার থেকে ফোন আশা করিনি । তাই বুঝতে পারছিনা যে কি বলব ।

: কয়েকদিন থেকেই তোমার কথা খুব মনে পড়ছিল । কিন্তু ফোন করার ঠিক সাহস পাচ্ছিলাম না । কাল থেকে তোমার কন্ঠ শোনার খুব ইচ্ছে করছিল । তাই আজ সাহস করে ফোনটা দিয়েই দিলাম । কেমন আছ তুমি ?

: মানুষ বদলে যায় কিন্তু তাদের কন্ঠ বদলায়না। হুম আছি নিজের মত করে। নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত আছি।

কেউ কাউকে প্রচন্ড কষ্ট দিয়ে নিষ্ঠূরের মত চলে যাওয়ার পর আসলেই ভালো থাকে কিনা, আমার জানা নেই। তবে মানুষ সবই পারে। বছর খানেক ধরে জমানো হাজার হাজার ছবির অ্যালবামটা এক রাতেই পুড়িয়ে ফেলে দিতে পারে।। মানুষ সব পারে … নিষ্ঠুর হওয়াটা দোষের না ।
মানুষ যত না নিষ্ঠুর, তার চেয়েও বেশি আবেগ প্রবণ … পার্থক্যটা এখানেই, তীব্র কষ্ট দিয়ে কাউকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে আসলেই সব শেষ হয়ে যায় না। ছবির অ্যালবামটা, চিঠি গুলো, ডায়েরি পুড়িয়ে ছাই করে ফেললেই সব মুছে যায় না । ঠান্ডা মাথায় কারো স্বপ্ন খুন করেছিল সে ।

স্বপ্ন খুনির কখনো ফাঁসি হয় না। শুধু নিজের ভেতরে যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয়। কারাগারের সেই বদ্ধ ঘরে দুঃস্বপ্ন, বুকের চিনচিনে ব্যথা আর পুরনো স্মৃতি গুলো তাকে সারা জীবন তাড়িয়ে বেড়ায় । তীব্র যন্ত্রণার সুরের কম্পনের তালে হৃদপিন্ডটা ধকধক শব্দ করতে থাকে । সেই শব্দটা কেউ শুনতে পায় না। তাই সবাই ভাবে, ভালোই আছে মানুষটা … খুব ভালো আছে।

: জিঞ্জেস করবেনা আমি কেমন আছি ?
: উহু,প্রয়োজন নেই । । কিছু কিছু মানুষ আছে যারা সবসময় ভাল থাকে । তুমি হচ্ছো তাদের একজন ।

: ( ওপাশে কিছুক্ষণ নীরবতা…) আমার কথা মনে পড়েনি তোমার?

[জীবন থেকে “তুমি” টা হারিয়ে গেলেও মাথার ভেতর থেকে হারিয়ে যায় না… হয়তো অনেক অনেক নতুন মানুষের ভিড়ে “তুমি” টা চাপা পড়ে যায়… কিন্তু কোন এক গভীর রাতে সেই চাপা পড়া ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে “তুমি” টা পূর্বাভাস ছাড়াই বেরিয়ে এসে মাথায় চেপে বসে…

“তুমি” টার সমস্ত স্মৃতি মনের ভেতর এক দমকা হাওয়া দিয়ে তুমুল ঝড় বইয়ে দেয়… কষ্টের অনুভূতিগুলো জমে জমে বরফ হতে থাকে… তারপর অগোচরেই সে বরফ গলে চোখের কোণ থেকে কয়েক ফোঁটা অশ্রু টুপ করে ঝরে পড়ে বালিশে !! “সে রাতের সাক্ষী আর কেউ না… শুধু সেই বালিশটা”। ]

: হ্যা পড়েছে । অনেক মনে পড়েছে । যথন দিনের পর দিন না খেয়ে থাকতাম তখন মনে পড়ত “তুমি ঠিকমত খাচ্ছ তো?”। যখন রাতের পর রাত না ঘুমিয়ে, কেঁদে কেঁদে অসুস্থ হয়ে পড়তাম তখন মনে পড়ত “তুমি সুস্থ আছ তো?”। যখন কোন আনন্দ-উৎসবে সবাই হইচই আর আনন্দে মেতে উঠত আর আমি ঘরের দরজা বন্ধ করে অন্ধকারে বসে থাকতাম তখন মনে পড়ত “তুমি সবার সাথে খুশি আর আনন্দে মেতে উঠছো তো?”। যখন আয়নায় নিজের অযত্ন অবহেলায় শুকিয়ে যাওয়া চেহারাটার দিকে তাকাতাম তখন মনে পড়ত “তুমি নিশ্চই আরো সুন্দর হয়ে গেছ ।”। একসময় অনেক মনে পড়েছে ।

এখন আর পড়ে না । একটা সময় ছিলো তোমায় খুব চাইতাম। কিন্তু এখন আর সেই সময়টা নেই। পালটে গেছে দিন পালটে গেছো তুমি। আমিও নিজেকে পালটে ফেলেছি। জানিনা কতটুকু পেরেছি। তবে এইটুকু বলতে পারি।… আমি এখন আর আগের মতো নেই। যেই দিন তুমি চলে গেছো সেই দিন থেকে আমি অন্য জগত এর বাসিন্দা হয়ে একাকী পড়ে আছি। এখন আর কিছুই চাওয়ার নেই আমার।

সুখ বলো, আনন্দ বলো, ভালোবাসা বলো, এসব কিছুই আর চাইনা। ভুলে গেছি হাসতে। ভুলে গেছি সুখের স্বপ্ন দেখতে। সব কিছুর সাথে সাথে ভুলে গেছি তোমায় ভালোবাসতে। এখন শুধু সব ছেড়ে একলা আমি আমাকে নিয়ে বেচে আছি । থাকতে চাই এভাবেই যতদিন বিধাতা চাইবে এখন এত সময় কই এগুলো মনে পড়ার?

: (ওপাশে আবার নিরবতা ……) আমাকে কি ক্ষমা করা যায় না?
: ক্ষমা তো আমি তোমাকে ১ বছর আগেই করে দিয়েছিলাম । তোমায় ক্ষমা না করলে আমার মনে তোমার দেয়া কষ্টগুলোর ক্ষত কোনভাবেই শুকাত না । পুরনো হয়ে গেছে আমার স্বপ্ন গুলো, তুমিও বদলে গেছো নেই আগের মত. শুধু আমিই রয়ে গেলাম, সেই আগের মত । যেখানে ছিলাম সেখানেই আছি, হয়তো এভাবেই কিছু কিছু মানুষ অতিথি পাখির মত নিদিষ্ট একটা সময় নিয়ে আসে, সেই সময় টুকু জীবন টা রাঙ্গিয়ে দিয়ে যায়, যা কোন দিন ভুলার নয়। ওরা তো ওদের স্বার্থের জন্য আসে, সেই সময় টুকু চলে গেলেই ওরা চলে যায় আর আমরাও বোকার মত তাদের জায়গা দেয়। চেয়েছিলাম হাজার দুঃখের মাঝেও সুখটাকে একটু খুজে নিতে কিন্তু দুঃখের মেঘগুলো এতো কালো যে তার মাঝে আমি আর সুখের আলো টা খুজে পেলাম না বলতে পারো কি ছিলো আমার অপরাধ, তোমায় নিয়ে সুখের ঘর বাধতে চেয়েছিলাম আমি, এটাই কি আমার অপরাধ। এটাই যদি আমার অপরাধ হয়ে থাকে তাহলে দোআ করি সারা জীবন তুমি সুখে থাকো।আর আমি, তোমার দেওয়া স্মৃতি গুলো নিয়ে সারাজীবন কষ্টে কাটাবো। আচ্ছা এখন তাহলে রাখি । এখন আমার আকাশ দেখার সময়। প্রতিদিন রাতে এইসময় আমি আকাশ দেখি। আকাশের সাথে কথা বলি। আকাশ কখনো আমার সাথে ছলনা করেনা । প্রতিরাতে সে তারার ঝুলি নিয়ে আমার সামনে হাজির হয়। আমি কথা বলি সে চুপচাপ শোনে । একটুও বিরক্ত হয়না ।
…………………..Lonely – Sad Love Story Bangla…………………………….
: একরাত আকাশের সাথে কথা না বললে হয় না? আমাদের কথা থেকে আকাশের কথা কি খুব বেশি জরুরী?

: আপাতত তাই । আমার চরম অসহায়ত্ব আর একাকিত্বের সময় এই আকাশ আমায় সঙ্গ দিয়েছে। যে ১ বছর আমায় দূরে সরিয়ে রেখেছিল, তার জন্য আমি আমার ১ বছরের পাশে থাকা সঙ্গীকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারবনা। আচ্ছা আমি এখন যাব। রাতের আকাশ আমার জন্য অপেক্ষা করছে । আজ খুব সুন্দর একটা চাঁদও উঠেছে আকাশে। আজ চাঁদের সাথেও কথা বলব।

ফোনটা কেটে দিলাম। বারান্দায় এসে দাড়ালাম। আকাশের বুকে গোল একটা চাঁদ উঠেছে। তাকিয়ে আছি। খুব কষ্ট হচ্ছে। সেই ১ বছর আগের মত কষ্ট যখন তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলে। কি দোষ ছিল আমার? কেন চলে গিয়েছিলে? আজ ও তা আমি জানিনা । তারপরও অটুট বিশ্বাস, আশা ধরে রেখেছিলাম একদিন তুমি আসবে। আমি অপেক্ষা করব। করেছি, অনেক অপেক্ষা করেছি তোমাকে ছাড়া যে আমার জীবন চলছে না তা না। দিন হচ্ছে, রাত হচ্ছে,সবকিছুই হচ্ছে। কিন্তু একটা কথা কি জানো??? এই জীবনকে ঠিক জীবন বলা যায় না। বলতে পারো কি ছিলো আমার অপরাধ, তোমায় নিয়ে সুখের ঘর বাধতে চেয়েছিলাম আমি, এটাই কি আমার অপরাধ। এটাই যদি আমার অপরাধ হয়ে থাকে তাহলে দোআ করি সারা জীবন তুমি সুখে থাকো। আর আমি, তোমার দেওয়া স্মৃতি গুলো নিয়ে সারাজীবন কষ্টে কাটাবো.

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত