বৌ

বৌ
বন্ধুদের সাথে বসে একটা রোমান্টিক মুভি দেখতেছিলাম,নায়ক-নায়িকার রোমাঞ্চ শুরু হওয়ার পর বন্ধুরা সবাই প্রচন্ড আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে রইলো টিভির পর্দার দিকে ঠিক তক্ষুনি আমার বুকের ভিতর থেকে একটা আফসোস,হতাশা দীর্ঘশ্বাস হয়ে বের হয়ে এলো। কি লাভ এই রোমান্টিক মুভি দেখে আমার তো আর বৌ নেই। অতঃপর টিভি বন্ধ করে দিয়ে বসে রইলাম। এরকম একটা রোমান্টিক সিনের সময় টিভি বন্ধ করাতে বন্ধুরা সবাই আমার উপর রেগে গেলো,ইচ্ছেমতো গালাগালি শুরু করলো,কিন্তু আমি রিমোট দিই নি,দিবো না কিছুতেই,আমার তো বৌ নেই। এসব দেখে কি হবে আর???
রেগে গিয়ে বন্ধুরা ইচ্ছেমতো মারতে লাগলো,মারছে,মারুক। কি হবে মার খেলে,আমার তো আর বৌ নেই যে আমি মার খেলে কান্না করে চোখমুখ ফুলিয়ে ফেলবে। রাতে বাসায় গিয়ে বিছানার উপর উঠে লাফাতে লাগলাম,আমার লাফালাফির শব্দ শুনে আব্বা আম্মা ছোট বোন নিশি ছুটে এলো, ততক্ষণে আমি খাট ভেঙে ফেলেছি।
আম্মাঃ কি করলি তুই এটা,নতুন খাট টা ভেঙে ফেললি কোন আক্কেলে????
আমিঃ কি হবে এতো বড় খাট দিয়ে আমার তো আর বৌ নেই।
আব্বাঃ হারামজাদা,জুতা পিটা করে আমি তোরে মেরেই ফেলবো,তুই আমার নতুন কেনা খাট ভেঙে ফেললি আবার বৌ’য়ের কথা বলিস।
আমিঃ মেরে ফেলেন আব্বা,বেঁচে থেকে কি লাভ আমার,আমার তো আর বৌ নাই। রাগে গজগজ করতে করতে আব্বা রুম থেকে বের হয়ে গেলো। আম্মা এসে আমার কানের উপর একটা চড় মারলেন,মুহূর্তেই আমার কানের ভিতর অসংখ্য ঝিঝি পোকার সঙ্গীত শুরু হয়ে গেলো। তাতে কি,আমার তো আর বৌ নেই।
আমিঃ আম্মা এই কানে একটা দাও,আমি কালা হয়ে যাই,আমার তো আর বৌ নেই যে তার কথা শুনার জন্য আমার কান থাকা দরকার হবে। মা বাঘিনীর মতো হুংকার দিয়ে নিশিকে নিয়ে চলে যায়। বৌ’য়ের কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলাম। সকাল হতেই নিশি ডাকাডাকি শুরু করলো অফিসে যাওয়ার জন্য। ৮ টা বেজে গেছে। ওকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে আমি অফিসে যাই প্রতিদিন।
আমিঃ নিশি আজকে থেকে তুই একা একা যাস স্কুলে আমি আর অফিসে যাবো না,মেইল করে রিজাইন দিয়ে দিবো।
নিশিঃ কেনো ভাইয়া,কি হইছে তোমার???
আমিঃ কি লাভ চাকরি করে আমার তো আর বৌ নেই যার জন্য ইনকাম করা লাগবে। নিশি গিয়ে আব্বাকে বলে দিলো কথাটা। আমি আমার রুমে থেকে শুনতে পাচ্ছি আব্বা আমেনা খালাকে বলছে বাগান থেকে শক্ত দেখে একটা গাব গাছের ডাল নিয়ে আসতে,আজকে আমার বিয়ের সাধ মিটিয়ে দিবে আব্বা। ছিঃ কি অশালীন কথা,আমি কি গে নাকি,তার উপর আব্বা!!!
অবস্থা বেগতিক দেখে না খেয়েই বের হয়ে গেলাম কোনোমতে রেডি হয়ে। অফিসে ঢুকতেই সুন্দরী রিসেপশনিস্ট মিস রুপা বললো,কি ব্যাপার নিষাদ সাহেব,আপনি আজকে স্যান্ডেল পরে অফিসে এলেন যে,আবার উল্টো শার্ট পরা। তাকিয়ে দেখি সত্যি আমি টয়লেটের জুতা পায়ে দিয়ে চলে এসেছি,রাতে যে শার্ট টা খুলে রেখেছি,উল্টো হয়ে ছিলো সেটা,সেভাবেই গায়ে দিয়ে চলে এসেছি। মিস রুপার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম,কি করার,আমার তো বৌ নেই যে এসব ছোটখাটো খুঁটিনাটি বিষয় মনে করিয়ে দিবে। ডেস্কে গিয়ে বসতেই রজব মিয়া এলো চা নাকি কফি কোনটা খাবো জিজ্ঞেস করতে।
আমিঃ তোমার যা ভাল্লাগে তাই আনো রজব আলী,আমার তো বৌ নেই যে বলে দিবে। রজব মিয়া আমার দিকে চোখ সরু করে তাকিয়ে বের হয়ে গেলো। কিছুক্ষণ পর বড় স্যার একটা ফাইল পাঠালো,দেখে সাইন করে দেয়ার জন্য। কি আর সাইন করবো আমি,আমার তো বৌ নেই। এতো কাজ করে কি হবে আমার?? কিছুক্ষণ পরেই বড় স্যারের রুমে ডাক পড়লো আমার।
স্যারঃ নিষাদ সাহেব,ভালো আছেন???
আমিঃ আমার আর ভালো স্যার,আমার তো….
স্যারঃ আপনার তো বৌ নেই,এইতো???
আমিঃ জ্বী স্যার।
স্যারঃ আপনার বৌ লাগবে সেটা আপনি আপনার বাসায় জানাবেন আমার ফাইলে এসব কি???
তাকিয়ে দেখি আমার সাইনের জায়গায়,পুরো ফাইলের সব পেপারে আমি লিখে রাখছি আমার তো বৌ নেই।
স্যারঃ আপনাকে আমি বরখাস্ত করবো।
আমিঃ জ্বী স্যার করেন,আমার তো বৌ নেই যে আমার চাকরী করা লাগবে।
স্যারঃ আজকের মতো বিষয় টা সতর্ক করে দিলাম,ভবিষ্যতে সাবধান হবেন। অফিস থেকে বাড়ি ফিরতেই দেখি আব্বা আম্মা নিশি সাজগোজ করছে,কোথাও বেড়াতে যাবে হয়তো। যাক তারা,আমার তো বৌ নেই যে আমি ও যাবো,রেডি হবো।
আব্বাঃ গাধা,এখানে বসে না থেকে রেডি হ,তোর জন্য মেয়ে দেখতে যাচ্ছি।গাব গাছের ডাল টা আছে কিন্তু রেডি হতে দেরি হলেই তোর পিঠের উপর উড়ামু আমি সেটা। কোনোমতে রেডি হয়ে গেলাম মেয়ে দেখতে,কিছুক্ষণ পর মেয়েকে সামনে আনা হলো। কিন্তু আমার তাকাতে ইচ্ছে করে না, কি লাভ অন্য কারো মেয়ে দেখার,এই মেয়ে তো আমার বৌ না,আমার তো বৌ নেই যে তার দিকে তাকিয়ে থাকবো। রাতে বাসায় ফিরার পর আম্মা আব্বা আমাকে জিজ্ঞেস করলো মেয়ে আমার পছন্দ হয়েছে কিনা।
আমিঃ কি লাভ আমার পছন্দ দিয়ে,আমার তো বৌ নেই।
আম্মাঃ নিষাদের বাপ,এই পোলা তো মনে হয় পাগল হইয়া গেছে।
আব্বাঃ গাঁধা,মেয়ে আমাদের পছন্দ হয়েছে,আমরা বিয়ের আলাপ করতে চাই,তোর মতো অপদার্থ কে যে ওরা পছন্দ করেছে সেটাই তো তোর ভাগ্য। যে যা বলার বলুক,আমার তো বৌ নেই যে প্রতিবাদ করবে। অতঃপর বিয়ে হয়ে গেলো। বাসর ঘরে ঢুকে বিছানায় গিয়ে বসতেই নিরা আমাকে সালাম করলো।
আমিঃ যাও শুয়ে পড়ো,বসে আছো কেনো এখনো,আর এই রুমে কেনো তুমি???
নিরাঃ এই রুমে কেনো মানে,কোথায় থাকবো আমি তাহলে??? আপনার সাথে কে থাকবে??? আমি সিগারেটে আগুন জ্বালিয়ে,ধোঁয়ার রিং ছেড়ে উদাস হয়ে বললাম,তুমি নিশির সাথে গিয়ে ঘুমাও,আমার তো বৌ নেই যে আমার সাথে এক বিছানায় ঘুমাবে। নিরা রাগ করে রুমে থেকে বের হয়ে গেলো। যাক,আমার তো বৌ নেই যে তার রাগ ভাঙাবো। কিছুক্ষণ পরেই আব্বা এসে হাজির গাব গাছের ডাল নিয়ে। টানা সাড়ে আড়াই ঘন্টা পর আমার জ্ঞান ফিরে।
আব্বাঃ আরো ২টা ডাল রেডি করে রেখেছি,এখন আবার কেলানি খাবি,তুই মরলে ও কিছু হবে না, তোর কেউ নেই।
কেলানি খেয়ে এখন আমার মনে পড়েছে আমার তো বৌ আছে।
আমিঃ না আব্বা আমার তো বৌ আছে।
আব্বাঃ হুশ হয়েছে তাহলে। বৌমা,এই ২ টা ডাল এখানে রেখে গেলাম,আবার গোলমাল করলে আমাকে ডেকো না,দেখেছো তো কি ঔষধ দিয়েছি,তুমি ও দ্বিধা করবে না ঔষধ দিতে। আব্বা আম্মা চলে যাওয়ার পর নিরা আমার পাশে এসে বসে।
নিরাঃ কেমন লেগেছে মাইর খেতে,আমার কিন্তু সেই মজা লেগেছে তখন দেখতে। আমি মনে মনে ভাবছি,আসলেই,আমার তো বৌ নেই,এই মেয়ে আমার বৌ হলে এরকম নিষ্ঠুরের মতো কথা বলতো না।
নিরাঃ কিছু বলছেন আপনি মনে মনে?? আপনার বৌ নেই সেটা বলছেন??
আমিঃ না না,কিছু না।আমার বৌ তো আছে,তুমি তো আমার বৌ। দ্বিতীয় বার আর ভুল করার রিস্ক নিলাম না। বৌ থেকেও যে আমার বৌ নেই সেটা আর কাউকে বলা যাবে না।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত