শশুর বাড়ি

শশুর বাড়ি
বিয়ের তিনদিন পর শশুর বাড়ি গিয়েছি। শশুর বাড়ি গিয়েই দেখি, আত্মীয়-স্বজনে বাড়ি হই হই রই রই বেপার। বিয়ের সময় যে সব আত্মীয় আসতে পারেনি, তারা এখন আসছে।
প্রায় চার ঘন্টা জার্নি করে শশুর বাড়ি আসছি। শরীর খুব ক্লান্ত লাগছিল। এদিকে এক এক করে সবার সাথে নিশি পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিল, এ ওমুক ও তমুক। রুমে গিয়ে ফ্রেশ হতে হতে চারদিক অন্ধকার হয়ে গেছে। নিশির সাথে মাত্র কয়দিন ধরে বিয়ে হয়েছে। এই অল্প কয়দিনেই নিশি আমার চোখের ভাষা বুঝতে শিখে গেছে। আমার চোখ দেখলেই নিশি বুঝতে পারে আমি কি চাইছি। খাটে হেলান দিয়ে শুয়ে আছি। এরই মধ্যে নিশি রুমে এসে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে, মুচকি এক হাসি দিয়ে চলে গেল। নিশি আমার চোখ দেখে বুঝতে পারছে, আমি কি চাইছি। কয়েক মিনিট পর নিশি রুমে এসে আমার পাশে খাটে বসল। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে নিশি বলল, “নাও শুরু করো” আমি নিশির চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম, “ইস্ আমি পারব না, আমার সরম করে, দরজা জানালা সব খোলা, সবাই দেখবে তো।”
নিশি লজ্জা মাখা এক হাসি দিয়ে, উঠে গিয়ে দরজা জানালা সব বন্ধ করে দিয়ে খাটে এসে বসল। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, “এবার শুরু করো, সব বন্ধ করে দিছি, কেউ দেখবে না”। আমি খাবার খাওয়া শুরু করলাম। জার্নি করে প্রচন্ড ক্ষুদা লেগে গেছিল। নতুন জামাই তো তাই সবার সামনে খেতে লজ্জা করে। সেজন্যই দরজা জানালা বন্ধ করে খাইতেছি। খাবার খাওয়া শেষ করেই, পাশের রুমের সামনে গিয়ে দাড়ালাম। জানালা দিয়ে দেখলাম, শালী একা একা টিভি দেখছে, বিখ্যাত সেই মুভি, ” টাইটানিক”। রোজ আর জ্যাকের সেই কাছা কাছি ঘনিষ্ট দৃশ্য চলছে। রুমে ঢোকা মাত্রই দাড়িয়ে গেল, শালী। শালী আমাকে দেখে, কাচু মাচু হয়ে আমার সামনে মাথা নিচু করে আছে। বুঝতে পারলাম শালী আমার লজ্জা পাচ্ছে। শালী আরও কিছুটা আমার দিকে ঝুকে এসে বলল, ধরেন?
আমি ধরলাম, রিমোট। আমার হাতে রিমোট দিয়ে শালী দৌড় দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। একা একাকি আর করব। রিমোট দিয়ে চ্যানেল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে খবর দেখতে থাকলাম। এরই মধ্যে শশুর আর শাশুরি রুমে এসে বসল। টুক টাক কথা হচ্ছিল, আমার ব্যবসা বাণিজ্য কেমন চলছে এই প্রসঙ্গে। কথায় আছে না, “যেখানে বাঘের ভয়, সেখানে রাত হয়।” আমার বেলা হয়েছে, “যেখানে ইজ্জত যাবে, সেখানে ব্যাটারীর চার্জ শেষ হবে।” রিমোট দিয়ে চ্যানেল বদলাচ্ছি, হঠাৎ করে রিমোট কাজ করছে না। বোধ হয় ব্যাটারী শেষ।এমন এক চ্যানেলে এসে ব্যাটারী শেষ হয়েছে, কি আর বলব, আপনি কি দম্পতি জীবনে অসুখী? বিয়ে করতে ভয় পাচ্ছেন?
অনেক টাকা নষ্ট করেও কাজ হয়নি? আর চিন্তা নেই, মাত্র এক ফাইল সেবনেই রেজাল্ট। বিফলে মূল্য ফেরত। কোন পার্শপ্রতিক্রীয়া নেই আমি ম্যাকানিকের মতো মাথা নিচু করে খুটিয়ে খুটিয়ে রিমোট দেখতে লাগলাম। আরচোখে শশুরকে দেখলাম, মাথা উচু করে সিলিং ফ্যান দেখছে। মনে হচ্ছে, সেকেন্ডে কতবার ফ্যান ঘোরে সেটাই গুনছে। হঠাৎ করে কারেন্ট চলে গেল। যাক খুব জোর ইজ্জত নিয়ে কোন রকম বাঁচলাম। রাত ১২টার মতো হবে। পাশের রুম থেকে ১ ২ ৩ ৪ গুনার শব্দ আসছে। পাশের রুমে শশুর-শাশুরী ঘুমায়। আমি নিশিকে বললাম, এত রাতে ১ ২ গুনছে কে? ভালো করে বুঝার জন্য বেড়ার পাশে কান রাখলাম, শাশুরীর গলার আওয়াজ। শাশুরী বলছে, “এটা ছেড়ে দাও, আমি শেষ হয়ে যাব, পাঁচবার খাইছ, আর খাইয়ো না।” বুড়া হলে যা হয় আরকি। রাত জেগে লুডু খেলতেছে। ঘুমাতে ঘুমাতে তিনটা বেজে গেল।
সকালে ঝগড়ার আওয়াজে ঘুম ভাঙল। বাইরে ধর মার খা, এমন একটা অবস্থা। কিছুই বুঝতে পারছিনা। নিশি আমার আগেই ঘুম থেকে উঠেছে। আমি বললাম, কি হইছে? নিশি বলল, তার বড় দুই বোন ঝগড়া করছে। মুডটাই খারাপ হয়ে গেল। সকালে ঘুমের সময় ডিস্টার্ব। আমি বাইরে বেরিয়ে দেখি, সত্যিই তাই। নিশির বড় দুই বোন ঝগড়া করছে। একজন আরেক জনের চুল ধরে টানা টানি করছে। কেউ ফেরাতে পারছে না। আমাকে দেখেই তারা দুজনে একটু শান্ত হলো। শত হলেও নতুন জামাই। আমি কাছে যাওয়া মাত্রই দুই জেটুস বলল, “এই বাড়ির সবাই পাগল। নতুন জামাই আসছে, আজ সে বিচার করবে এই ঘটনার? আমি বললাম, ঘটনা কি?
একসাথে দুই জেটুস চিৎকারে বলল। আমি কিছুই বুঝলাম না। আমি বললাম, এক এক করে বলেন, আবারও দুজনে চিল্লাই উঠল। ও বলছে, আমি আগে বলি, এ বলছে, আমি আগে বলি। আবারও ঝগড়া বেধে গেল। কি এক মুসকিলে পড়লাম সকাল বেলা। দুজনকে শান্ত করে বললাম, “যার কণ্ঠ কাকের মতো, চেহারা পিচাশের মতো, কথা বলতে গেলে, কাকের মতো কা কা করে কথা বলে, সে আগে বলুন? যার কণ্ঠ কোকিলের মতো সুন্দর, চেহারা নায়েকা অপু বিশ্বাসের মতো, সে পড়ে বলুন? দুই জেটুস একবার আমার মুখের দিকে, একবার তারা দুই বোনের দিকে চেয়ে তাকাতাকি করছে। কেউ কোন কথা বলছে না।
আমি বুঝতে পারলাম, কেউ কথা বলবে না। তাই রুমে চলে আসতেছিলাম। এরই মধ্যে, তাদের দুই স্বামী আমার দিকে দৌড়ে এসে বলল, ভাই কি এমন বললেন যে সবাই চুপ হয়ে গেল। আমরা এত চেষ্টা করেও চুপ করাতে পারলাম না। আমি কোন কথা না বলে, রুমে এসে শান্তিতে শুয়ে পড়লাম।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত