আমার কাল্পনিক শাশুড়ি

আমার কাল্পনিক শাশুড়ি
বউমা শোনো, কম তেলে ইফতার ভাজবা। আমার শাশুড়ি রান্না ঘরে এসে কথা টা পিছন থেকে বলে গেলো। মেজাজ টাই গরম হয়ে গেলো। এই মহিলা এতো কিপটা বলার বাইরে। কম তেলে আবার ইফতার ভাজে কিভাবে? আমি তো পারি না। পিছনে ঘুরে দেখলাম আমার গুণধর একমাত্র আপন স্বামী এসে দাঁড়ালো। বললাম,
—তোমার মা কি বলে গেলো শুনলে?
–শুনলাম। আহা, বাদ দাও তো।
—আচ্ছা, রান্নার ক্ষেত্রেও কি কিপটামি করা মানায়? দাড়াও আমি আজকে ঝগড়া করবো।
—তোমরা না পারও দুজনে। এই ঝগড়া কর, আবার দেখি গলায় গলায় ভাব। ধুর, সেও গেলো চলেয়া। নিজেও গেলাম,
–আম্মা, আর কত কিপটামি করবেন শুনি? এতো টাকা পয়সা খাবে কে?
—কি বললা তুমি? আমি কিপটা? শুনলা নিলয়ের বাবা? শুনলা তুমি?
—আবার ঝগড়া তোমাদের!!!! উফফফ পারি না আর। যা তো মা, তুই ইফতারি বানা। সময় বেশি নাই।
—যাই যাই। আব্বা, এই মহিলা রে ক্যান বিবাহ করছিলেন আপনি?
—আরে চুপ থাক, পাগলরে চেতাইস না। যা এখন।
গেলাম আবার ইফতার ভাজতে। আজান দিবে, সবাই টেবিলে বসা। আম্মাও আসলো, এসে বসলো। শরবত দিলাম আধা গ্লাস, প্লেটে মুড়ি দিলাম অর্ধেক। ইচ্ছা করেই দিলাম। হায়রে কি যে চিল্লানো শুরু করলো। আমি মিটমিট করে হাসছিলাম। কি করবো। এই সময়ে এই তামাশা!!! পাশ থেকে নিলয় আর আমার শ্বশুর দেখে হাসছে। তাদের হাসি দেখে উঠে চলে গেলো। আমিও গেলাম, দেখি একা একা বিড়বিড় করছে। আমি কিপটা!! আমারে কিপটা বলল? পরের মেয়ে তো। হ্যা এই কথাই শুনতে হবে আমার। একটু আয় করে খাইলে হয় কি শুনি? আমি আর খাবোই না এই ঘরে।
—এই যে ধরেন। কিপটা শাশুড়ি। ইফতারি খাবেন না?
— না। যাও এখান থেকে। সবাই তো একজোট হয়েছো। আবার ঢং দেখাতে আসছো?
—আহা, খান তো। আপনার এতো ঢং দেখাতে হবে না। কালে কালে কত কি যে দেখবো।
— কি বললা আবার?
—কিছু না কিছু না। ধরেন হা আ আ আ করেন।
কোনো রকম খাইয়ে দিয়ে আসলাম। মহিলা আর যাই হোক। ভালোবাসে আমায় খুব। কয়েকদিন বাবার বাড়িতে থেকেছিলা।। প্রতিদিন ফোন দিয়ে একটা ঝাড়ি দিত।
–তুমি কি আইবা না? বাপের বাড়ি গেছো ভালো কথা। এই বাড়িতে আর আসা লাগবে না ওইখানেই থাকো।
— যাবো কি করতে? গেলে তো খালি কাজ করা লাগে আমার। আপনি তো বসে বসে পান চিবাতে পারেন। আর খালি পারেন কিপটামি করতে। কথা টা বলতেই ফোনে আবার ঝগড়া।
—আমি বসে বসে পান চিবাই? আর তোমারে দিয়া সব কাম করাই? কি দেইখা আমি যে তোমায় বউ কইরা নিয়া আইছি। হারে হারে টের পাই আমি এখন। থাকো তুমি বাপের বাড়ি। আসা লাগবো না। খবরদার আমার বাড়িতে আইবা না।
—জ্বী আচ্ছা। আর শুনেন, ওই সোফার পাশের টেবিলে আপনার ওষধের বক্স টা রাখা আছে। বাকি ওষুধ গুলো শেষ হলে বক্স খুলে সময় মত খেয়ে নিবেন।
—হ্যা হ্যা জানি আমি কোথায় আছে। বলা লাগবে না তোর। একদম মিথ্যা কথা। না জাইনাই এই কথা বলে। কিছুক্ষণ পর আবার ফোন।
—তুমি কই রেখে গেছো ওষুধ? কি জানি বললা।
—আমি তো জানতাম। আবার কল দিবেন। তখন বললেন ক্যান জানেন আপনি।
—বলবি তুই? ফোনেও জ্বালাবি আমায়?
—সোফার সাথের টেবিলের উপরে রাখা। রাখি এখন, টা টা।
—কি অসভ্য, আমায় টা টা দেয়। কোথায় সালাম দিয়ে ফোন রাখবে।
এইভাবে ঝগড়া লাগে তো লাগেই। কথায় ছাড়ি না। শুনেছি শাশুড়ি গুলো খুব দজ্জাল হয়। আমার টাও তাই। তবে আমিও তেমন। যেমন শাশুড়ি তেমন বউ আরকি। বাসায় এসে দেখি, সব এলোমেলো সংসার আমার। হায় আল্লাহ। আসলাম কেন। তাতেও দোষ। কিন্তু সেইই আবার তার ছেলেরে বার বার ফোন দিয়ে বলেছে আমায় নিয়ে আসতে। আমি কি খবর জানি না? সব জানি।
গেলো এই কাহিনী। রোজায় হঠাৎ করে আবার এক অঘটন ঘটলো। বাথরুমে কাপড় ধোওয়ার গুড়া সাবানে পিচ্ছিল হয়ে ছিল। খেয়ালই ছিল না আমার। সে যেয়েই ঠাস করে পরে যায়। প্রচণ্ড ব্যাথা পায়। অতঃপর সব দোষ তো আমারই। বয়স্ক মানুষ তার উপর এই রকম পরে যাওয়া। একে তো কিপটা। টাকার চিন্তায় এবারো তার ঘুম হারাম। ডাক্তার দেখাতে টাকা লাগবে না? বুঝিয়ে শুনিয়ে হসপিটালে নিয়ে যাই। আমার উপর যেভাবে তাকায়, ভয়ে মরে যাই। চোখ রাঙ্গিয়ে তাকায়। হাসপাতালের বেডে সে শুয়ে ছিল। আমি আর রুমে ঢুকি নি। বাইরে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম। কিছুক্ষণ পর নিলয় কে ডাক দিতে বলল, গেলাম না, আবার সে নিজেই ডাক দিল,
—কিরে তুই কি আসবি? নাকি উইঠা যাবো। এত ঢং করে না দাঁড়িয়ে এদিকে আয়।
—আমি ঢং করি? নাকি আপনি করেন।
—হইছে হইছে আমি করি। পান বানা খাবো।
—বানাচ্ছি বানাচ্ছি। যত্তসব ঢং, এই অবস্থায় ও পান খাবে। এই যে নেন ধরেন, হা করেন।
–আবার বাথরুমে সাবানের গুড়া ফেলে রাখিস।
–আচ্ছা
—ফাজিল বউ।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত