রাগ থেকে প্রেম

ইমু এর মুখ টা এর দিকে ওর সব বান্ধবী রা
তাকিয়ে আছে।মনে হচ্ছে ইমু কোন
ব্যাপার নিয়ে রেগে আছে।ওর সব
বান্ধবীরা ই ইমু এর রাগ সম্পর্কে ভাল
ধারণা আছে।তাই কেউ ভয়ে কিছু
বলছে না ওকে।রুমি, ইমু বলে ডাক
দিতেই ইমু জোড়ে সোড়ে একটা
চিৎকার দিয়ে বলে উঠল..
-কি……
–এত রেগে আছিস কেন দোস্ত।
রেস্টুরেন্ট এ কি কেউ এভাবে গোমড়া
মুখ করে রাখে!
–মেজাজ খারাপ হচ্ছে।দেখ দেখ।
সামনের টেবিল এর ছেলেটা আমার
দিকে কিভাবে চেয়ে আছে!মন
চাচ্ছে কাছে গিয়ে ওর ঘাড়টা মটকে
দেই।
–আচ্ছা আচ্ছা।কুল বেবি কুল।খাবার খা
এখন।
হঠাৎ ইমু চেয়ার থেকে উঠে গিয়ে
তার দিকে এতক্ষণ চেয়ে থাকা
ছেলেটির কাছে গিয়ে দাঁড়াল।
কিন্তু সে কি।ছেলেটি তবু ও চেয়ে
আছে তার দিকে।কি আজব ছেলেরে
বাব্বা!ইমু ছেলেটির সামনে থাকে
জুস এর গ্লাস টা দিয়ে ওর মুখের দিলে
ছুড়ে মারলো।ছেলেটি হকচকিয়ে উঠল।
–লজ্জা করে না মেয়েদের দিকে
তাকিয়ে থাকতে?ঘরে, মা বোন নেই?
–মা ঘরে নেই।পাশের বাসার আন্টির
সাথে কৈ যেন গিয়েছে আর বোন
নেই।আফসুস!
রাগে গজগজ করছে ইমু এর শরীরটা।ও
হে,,ছেলেটি এর নাম অরন্য।অরন্য এর
সাথে থাকা ওর বন্ধু শান্ত, ইমু কে কিছু
বলতে যাবে আর অরন্য তাকে থামিয়ে
দিল।
–শালা,,কত দিন বলসি বাসা থেকে
চশ্মা টা নিয়ে আসবি।
–আনলাম তো।কিন্তু রেস্টুরেন্ট এ কি
চশ্মা পড়া জরুরি! আমি তো কাছের
জিনিস দেখি আর দূরের জিনিস দেখি
না।
–টিস্যু টা দিয়ে মুখ টা মুছ।
অরন্য মুখ মুছে ওর চশ্মা টা পড়ার জন্যে
ব্যাগ এর পকেট গুলা চেক করছে।চশ্মা
খুজার সময় তাকে প্রতিবন্ধি এর মত
দেখাচ্ছিল।ইমু ব্যাপার গুলা লক্ষ করছিল
কিছুক্ষন যাবৎ।ইমু বুঝতে পারে যে
ছেলেটার চোখে প্রব্লেম।অবশেষে
অরন্য চশ্মা টা পড়ে মেয়েটির দিকে
এক নজর চেয়ে একটু মিষ্টি হাসি দিয়ে
আবার তার বন্ধুর কথার প্রতি মনযোগ
দিল।ইমু লক্ষ করল,,হাসিতে ছেলেটিকে
অনেক কিউট লাগে।ইমু ও তার বান্ধবী
দের সাথে কথায় ব্যাস্ত হয়ে পড়ল।
ইমু চোখগুলা তাড়াতাড়ি এদিক ওদিক
করছে।কৈ,, ছেলেটি গেল কৈ।ইসস,,সরি
টা ও বলা হল না।রেস্টুরেন্ট এর বিল
চুকিয়ে ইমু বাহিরে একা দাঁড়িয়ে
আছে।বান্ধবীরা সবাই চলে গেছে,যে
যার জায়গায়।ইমু এর কালো গাড়িটা
রাস্তার ঐ পারে।হঠাৎ রাস্তাটা যেন
ব্যাস্ত হয়ে পড়ে।ইমু কোনভাবেই
রাস্তাটা পেরুতে পারছে না
বিপরীত দিক থেকে গাড়ি আসার
জন্যে।হঠাৎ কারো কন্ঠের আওয়াজে ইমু
কিছুটা শান্ত হয়ে তার ক্লান্ত চাহনী
তে পিছনে তাকায়।মুখ টা তার
পরিচিত।হুম,,এটাই অরন্য।
–আমার হাত টা ধরুন।
ইমু আর কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছিল না
রাস্তা পার হওয়ার।এদিকে সন্ধ্যা
নেমে আসছে।অরন্য হাত বাড়াতেই ইমু
ক্ষপ করে ওর হাত তা ধরে ফেললো।ঠিক
যেন বাচ্চাদের মত।অরন্য আবার ও
মায়াভরা একটা হাসি দিল ইমু এর
দিকে চেয়ে।ইমু ওর হাতে কি যেন
খসখস একটা বস্তু অনূভব করলো।সে লক্ষ করল
অরন্য তার হাতে পলিথিন পেঁচিয়ে
আছে।আসলে অরন্য এটা ইচ্ছে করেই করে
যাতে ইমু এর হাতে,ওর হাতের স্পর্শ না
লাগে।
–excuse me,,আমরা চলে এসেছি।এখন
আমার হাত টা ছাড়তে পাড়ুন।
–ও হে,,আসলে রেস্টুরেন্ট এর ব্যাপার
টার জন্যে…
ইমু কথাগুলা মাথা নিচু করে বলছিল
কিন্তু মাথা উঠাতেই দেখে অরন্য তার
থেকে অনেক দূরে চলে গেছে।ইমু অরন্য
এর পিছু নিল।ইমু দেখল,,অরন্য একটা
রিক্সা তে চেপে বসল।ইমু ও আরেকটা
রিক্সা তে চেপে বসল।কিন্তু সে
কি,,কিছুদূর যেতেই অরন্য নেমে পড়ল
রিক্সা থেকে।রিক্সা বাড়া
মিটিয়েই সে হাটা শুরু করল আবার।ইমু ও
একি কাজ করল।অরন্য বুঝতে পারছিলে
যে তাকে কেউ ফলো করছে তাই সে
দ্রুত হাটা দিল।””তুমি যদি হও উসাইন
বোল্ট আমি হলাম ইমু বোল্ট”” ইমু ও হাটা
দিল।
–এই ছেলে,,,দাড়াও!
–কোন মেয়ের রাগি কন্ঠ শুনে অরন্য
দাঁড়িয়ে গেল।এ পৃথীবিতে ও নাকি
কেউ তাকে ডাকবে।সত্যি ই আজব।
কথাগুলা ভাবা শেষ করে আরেকটা
চিন্তা মাথায় ঘুরপাক শুরু করা মূহুর্তেই
মেয়েটির কথায় তার ভাবনার ছেদ
পড়ল।
–এই যে মিস্টার,,পিছনে তাকাবেন
না।সামনের পার্ক টাতে চলুন চুপচাপ।
–যাওয়া টা কি জরুরী?
–কোন সন্দেহ!সামনে এগুন।
–এই যে,,সামনের বেঞ্চিটাতে বসুন।
রিক্সা থেকে নামলেন কেন মাঝ
পথে।আপনার জন্যে আমাকে ও হাটতে
হল অনেকটা পথ।উফফফ
–ভাড়া ছিল না।যতটুকু বাড়া ছিল ততটুকু
দিয়ে ভাড়া চুকানোর পর নেমে পড়ি।
আর আমার কাছ থেকে তেমন কিছু আশা
করার কোন ব্যাপার নেই যে আপনি
আমাকে ফলো করবেন।
–আবার মুখে মুখে কথা!
–ওকে।আমি চুপ হলাম।আপনি বলুন।
–তো রেস্টুরেন্ট এ যাওয়ার টাকা!
–সেটা তো ফ্রেন্ড…
–ওকে ওকে।আর বলতে হবে না।আমার
কার্ড।কাল দেখা করবেন।খবরদার,,প
পিছনে তাকাবেন না।
অরন্য বাধ্য ছেলের মত কার্ড টা হাতে
নিয়ে উল্টিয়ে পালটিয়ে দেখছিল।
বড় কোন কোম্পানি হবে হয়ত।পিয়ন এর
পদে চাকুরী দিবে হয়তবা।পিছনে
তাকিয়ে অরন্য একটা কালো বিড়াল
ছাড়া আর বেশি কিছু আবিষ্কার করতে
পারল না।
May I come in madam…
Yes শুনার সাথে সাথেই অরন্য তড়িঘড়ি
করে অফিসটাতে ঢুকে পড়ল।কিন্তু যখন
দেখল, চেয়ারে বসা লোকটি madam না
sir তখন সে ই নিজ থেকে লজ্জা পায়।
অরন্য ভেবেছিল কালকের মেয়েটা ই
তার ম্যাডাম হবে।কিন্তু লোকটির
মুখের উপর থাকা পাহাড়ের মত কালো
গোফটা অরন্য এর ভুল ভাঙাতে সক্ষম হয়।
–প্লিজ সিট।
–সরি স্যার।আমি প্রথমে ভেবেছিলাম
আপনি…
–বুঝতে পেরেছি।আপনি আপনার
ম্যাডাম এর কথা বলছেন তো!সে মারা
গেছে কয়েকদিন আগে।
–কি বলেন!তাহলে আমি কাল কার
সাথে কথা বললাম!
–আরেহ,,সে ছিল ইমু।আমার ভাগ্নে।আর
ম্যাডাম বলতে বুঝাচ্ছি আমার ওয়াইফ
কে।কয়েকদিন আগে মারা গেছে
বলতেই চোখ মুছতে লাগলো।আফসুস।
–অরন্য ও বলে উঠল,,আফসুস।
–আপনি আফসুস বলছেন কেন?
–এই যে,,আপনি বললেন বিধায়।
–একটা লম্বা নিঃস্বাশ নিয়ে
লোকটি আমার কাছে আমার কাগজপত্র
দেখতে চাইলো।
–আমি কাগজপত্র গুলা বাড়িয়ে
দিলাম।
–হুম,,অরন্য সাহেব।আফসুস!
–আফসুস!
–আপনি বললেন কেন?
–এই যে,, আপনি বললেন।চাকরী টা কি
হচ্ছে না?
–হুম,,কাল থেকে ম্যানেজার এর পদ
টাতে আপনি জয়েন করছেন।
–রিয়েলি!!
–চোখ বাহির হয়ে যাবে পরে ইমু কে
দেখতে পাবে না।বাহিরে গিয়ে
দেখ,,কেউ অপেক্ষা করছে তোমার
জন্যে।
–ইমু টা কে স্যার?
–get out..get out.
ইমু এর মামা এর ধমক এ অরন্য থতমত হয়ে
বাহিরে চলে এল অফিস এর।বাহিরে
কাউকে ই দেখা যাচ্ছিল না।শুধু
কালো একটা গাড়ি কে দেখা গেল
যেটা সে কোথায় যেন দেখেছিল এর
আগে ও।মনে করতে পারছিলো না..এ
গাড়ি টা…
–এটা আমার।
–ও হে,,,মনে পড়েছে,,রেস্টুরেন্ট এর
সামনে দেখেছিলাম।আর আপনি সেই
মেয়েটা না!এখানে কি করছেন!
এই এই,,হাত ছাড়ুন।আমাকে কৈ নিয়ে
যাচ্ছেন।
–চুপ!আমার পাশের সিটে উঠে বসুন।
–কিন্তু আমি যাব না।আমার জন্যে ইমু
অপেক্ষা করছে।
–কোন ইমু আসবে না।
–না,,আসবে।
–চলুন তো বলেই ইমু অরন্য কে ধাক্কা
দিয়ে গাড়ি তে উঠিয়ে নিল।
ইমু,অরন্য কে কালকের পার্ক এর সামনে
নিয়ে আসলো।এখানে মনে হয় ইমু আছে
কথাটা শুন্তেই অরন্য তড়িঘড়ি করে
নেমে পড়ল গাড়ি থেকে।অরন্য বাহির
হওয়ার সাথে সাথে ইমু ও নেমে পড়ল।
–কৈ ইমু?তাকে যে দেখছি না।
–পিছনে তাকাবেনা, খবরদার!আমার
চোখের দিকে তাকাও।আমি ই ইমু।
–আ আ আপনি!
–ঐ,,এভাবে বললা কেন?আমাকে পছন্দ
হয় নি!
–না,,হয়েছে বলতে বুঝতেসি না,,এত
আটা ময়দার মাঝে তা বুঝা মুশকিল..
–এ্যা…..
–কিছুক্ষন পড় অরন্য বলে উঠল,,এবার বুঝা
যাচ্ছে।আচ্ছা যাও,, আই লাভ ইউ।
–এভাবে কেউ প্রপোজ করে!
–আসলে দুষ্টুমি করছিলাম।সত্যি,,অনেক
ধন্যবাদ আপনাকে।আমাকে একটা
চাকরী দেয়ার জন্যে
আমার অনেক দরকার ছিল এ চাকরী এর।
আমি আপনার কাছে চির কৃতজ্ঞ।
কথা বলে অরন্য নিল আকাশের দিকে
একবার তাকিয়ে নিল,,তারপর চশ্মাটা
হাত দিয়ে একবার নাড়া দিয়ে হাটা
শুরু করল।ইমু এর মত এত বড় লোকের মেয়ের
সাথে অরন্য এর যায় না।শুধু শুধু কষ্ট।এক
ফোটা চোখের কোনে পানি জমে
উঠল অরন্য এর।পিছন থেকে হাত ধরে
একটা হেচকা টান দিয়ে ইমু, অরন্য কে
বুকে নিয়ে বলে উঠল,,আমাকে ছেড়ে
কৈ পালাও চান্দু?
–ইমু,,আমি অরন্য,,চান্দু না।
–চুপ!আমার কাছে চান্দু,,তোমার কোন
সমস্যা?..ইমু বলে উঠল।
–না মানে,,জানু এর বদলে চান্দু
বললা,,তাই..অরন্য বাচ্চাদের মত বলে
উঠল।
ইমু বুঝতে পারলো…
এই ছেলেকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না।
যা করার ইমুকেই করতে হবে।
তাই ইমু নিজে হাটুগেরে অরন্যের সামনে
বসে বললো…
— আই লাভ ইউ…
অরন্য এখন ভেবে দেখলো এই মেয়ের সাথে প্রেম না
করে পার পাওয়া যাবে না।
তাই অরন্য বললো…
— আমি তোমার চান্দু হয়ে সারা জীবন
তোমার কাছে থাকতে চাই…
আই লভ ইউ টু…..
এভাবেই শুরু হলো ইমু আর চাঁন্দু (মানে অরন্য)
এর নতুন পথ চলা…।

(সমাপ্ত)

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত