প্রতিফল

প্রতিফল
বাসায় কোনো বিয়ের প্রস্তাব আসলে ই বাবা আমাকে নিয়ে আলাদা ভাবে বসে ছেলের সম্পর্কে বলেন। কি, কেমন হবে, আমার কি মত সবকিছু ই বাবার সাথে আলাপ করি।
এসবের মধ্যেও যখন আমি আমার পছন্দের পাত্রের সাথে হাত ধরে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাই একজন বাবা হিসেবে কতটা কষ্ট পাবেন তা তখন বুঝিনি। আমার আবেগের বসে আর বাবার কিছু কঠিনতায় আমি এরকম করি। কারণ, আমি জানতাম বাবা সিফাতকে কখনো মেনে নিবেন না। কারণ সরুপ হল ওর পরিবারে কেউ নেই বলে। ওর বাবা মা নেই নানাবাড়িতে কিছু আদর অবহেলায় বেড়ে উঠা। কিন্তু বাবার এক কথা, ছেলের পরিবার থাকতে হবে। আর তিনি এক কথার মানুষ।
যখন পালিয়ে যাই সিফাতের তেমন কোনো আর্থিক ভালো ব্যবস্থা ছিল না। শেষ বারের মত যখন বাবার সাথে অন্যকোনো ছেলে সম্পর্কে যাচাই বাচাই করছিলাম তখন কোন দিক থেকে ই ঐ ছেলেকে বাবার কাছে না করতে পারছিলাম না। তাই বিয়ে ঠিক হয়ে যাওয়ায় পালিয়ে যাই। এরপরে আমার আর সিফাতের জীবনে অনেক উত্থান পতন হয়। অনেক দিন ভালো চাকরির খোঁজে অনেক কষ্টে দিন কাটাতে হয়েছে। কিন্তু কখনো একজন আরেকজনের হাত ছাড়িনি। যখন অনেক খারাপ অবস্থায় ছিলাম তখন সিফাত কে বলেছিলাম চল বাবার কাছে যাই। এখন তো বিয়ে হয়ে গেছে অনেক দিন হল বাবা যেকোনো ভাবে মেনে নিবে। আর একটা চাকরির ব্যবস্থা ঠিক করে দিবেন। সিফাত কিছুতেই সেটা মানত না। তাঁর কথা হল, যখন সামনে যাব তখন মাথা উচু করে যাব। একে তো পালিয়ে বিয়ে তার উপর যদি এই অবস্থায় বাবার সামনে গিয়ে দাড়াই সেটা সিফাত মেনে নিতে পারবে না ওর আত্মসম্মানে লাগে। তাই এরপরে আমিও কিছু বলিনি।
ঠিক বিয়ের সাত বছর পর আমরা আলহামদুলিল্লাহ একটা ভালো অবস্থায় আসি। সিফাতের চাকরি হয় আর্থিক অবস্থা খুব ভালো হয়ে যায়। তখন ই একদিন সিদ্ধান্ত নিলাম বাবার সামনাসামনি দাড়াব। সব ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে নিব। সিফাত মানা করেনি আর। অনেক ভয় ভীতি নিয়ে বাবার সামনে যাই। লজ্জিত মুখ আর বাবার অপমানের কথা মনে হলে বাবার দিকে তাকাতেই যেন সাহস পাই না। তবুও কৃতকর্মের ক্ষমা পাওয়ার জন্য বাবার পায়ে পড়ি।
বাবা সেদিন অনেক কিছু বললেও ঠেলে দিতে পারেন নি নিজের সন্তান বলে কথা। রক্তকে কি শরীর থেকে আলাদা করা যায়। এরপরে বাবা একটা কথা বলেন আমাকে, “সব ক্ষমার অর্থ কষ্টকে মুছে দেওয়া নয়।” অসুস্থ থাকায় বাবা এর ১৫ দিন পরে ই মারা যান। নিজেকে কতটা ক্ষমা করতে পেরেছিলাম জানি না। তবে আজ বুঝতে পারছি এই পুলিশ স্টেশনে বসে বসে। আমার নিজের মেয়ের যখন খারাপ ভিডিও ভাইরাল হয়ে মেয়েটা সুইসাইড এটেম্প করে তখন বুঝতে পারছি ভুল টা কোথায় ছিল। যথেষ্ট খেয়াল রেখে ভালোবাসা দিয়েও মেয়ে কে ধরে রাখতে পারিনি।
সৃষ্টিকর্তা মানুষের ভুল গুলো কে চোখের সামনে ধরিয়ে দেন। আমি যখন বাড়ি থেকে পালিয়ে ছিলাম তখন ১৯৯৪/৯৫ সাল, সে অনুযায়ী সমাজে একটা মেয়ের বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়া অনেক বড় একটা ব্যাপার ছিল আর পরিবারের জন্য লজ্জাকর সম্মানহানি এখনো আছে এমনি। কিন্তু সময়ের তালে ভুল পথ গুলোও আরো উন্নতর হয় আর তা হল একটা মেয়ের ভিডিও ভাইরাল হওয়া যা এখন চরম আকার ধারণ করেছে আমাদের সমাজে এই বিংশ শতাব্দী তে। যা আমার অতীত ভুলকে বারবার চোখের সামনে টেনে ধরছে আয়নার মত করে। তখন বাবার একটি কথা ই মনে হচ্ছে,
-“সব ক্ষমা মানে কষ্টকে ভুলে যাওয়া নয় ” বাবা আমাকে ক্ষমা করেছিলেন ঠিক ই কিন্তু মনের মধ্যে একজন পিতা হয়ে যে কষ্ট টা উনি পেয়েছিলেন তা সৃষ্টিকর্তা দৃষ্টি এড়ায় নি। তিনি একজন বাবার কষ্টটা কে যন্ত্রণাকে মেনে নিতে পারেন নি। যার ফল সরুপ এই অবস্থা আজ। তাই বাবা মা’কে এমন কোনো জায়গায় আঘাত করা ঠিক না যা উনারা মুখে না বললেও সৃষ্টিকর্তা তার প্রতিফল দিয়ে দেন নিজ নীতি তে।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত