মানুষ সাজগোজ করে নিজেকে সুন্দর দেখানোর জন্য কিন্তু আমার খালা শাশুড়ী সাজগোজ করে মানুষকে ভয় দেখানোর জন্য। । বাসায় সীমিত পরিসরে ইফতার পার্টির আয়োজন করেছি। নিমন্ত্রন পেয়ে আমার শ্বশুর শাশুড়ী চলে এসেছেন। আমার অতীব প্রিয় খালা শাশুড়ীকেও দাওয়াত দেওয়া হয়েছে তবে তিনি এখনো এসে পৌঁছাননি। আমরা তার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। আমি আর রিহান শরবত বানাচ্ছি। শাশুড়ী মা রিহানের আম্মুর সাথে ইফতার সামগ্রী তৈরি করছেন। এমন সময় কলিং বেলের আওয়াজ শুনে শ্বশুর সাহেব দরজা খুলতে গেলেন। আমিও শ্বশুর সাহেবের পিছু পিছু গেলাম।
দরজা খুলতেই কিম্ভূতকিমাকার মানব সদৃশ্য এক জন্তু দেখে আমার বয়োবৃদ্ধ শ্বশুরের মাইনর হার্ট অ্যাটাক হয়ে গেলো। আমি পেছন থেকে ঠেস দিয়ে না ধরলে পড়েই যেতেন। আমাদের সাব কন্টিনেন্টে এমন সাজসজ্জার মানুষ আগে কখনো দেখিনি। পাপুয়ানিউগিনি দ্বীপপুঞ্জের আদিবাসী হুলি উইগম্যান গোত্রের মধ্যে এধরেনের বেশভূষার প্রচলন আছে। তালপাতার মতো প্রশস্ত আইলেশ, শনের ঝাড়ুর মতো আইব্রো। গিরিমাটির প্রলেপ দেয়া বর্ণিল গালের মাঝ বরাবর কৃত্রিম বিউটি স্পট যেন ভারত মহাসাগরের বুকে এক টুকরো মাদাগাস্কার । বনো মহিষের নাকের দড়ির মতো সুবিশাল নথ, পাগলা ঘোড়ার লেজের মতো অপূর্ব কেশ বিন্যাশ। দেখে মনে হচ্ছে এই বুঝি টগবগিয়ে দৌড় শুরু করবেন। আমি কোনোরকম নিজেকে সামলে নিয়ে বাকরুদ্ধ শ্বশুরকে বললাম,
– বাবা দেখেন মালিহা খালা চলে এসেছেন। কিছুটা হুশে ফিরে শ্বশুর সাহেব বললেন,
– ও মালিহা! এতো দেরি করলে যে?
– আর বলবেন না দুলাভাই একটু পার্লারে গেছিলাম, সেরিয়াল পেতে পেতে লেট হয়ে গেল।
– ও আচ্ছা, এসো ভিতরে এসো।
খালা শাশুড়ীকে অনেক আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছে। বাংলা মুভির রিনা খানের মতো ঠোঁট পাউট করে তিনি অনবরত হাসছেন। তার এই দুর্ধর্ষ হাসি যে নিরীহ মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে তাকে কীভাবে বুঝাই। শ্বশুর সাহেবের হাত পা এখনো কাঁপছে, তিনি কিছুতেই স্থির হতে পারছেন না। আমার দিকে বিধ্বস্ত দৃষ্টিতে নিরুপায়ের মতো তাকালেন। আমি ভীতসন্ত্রস্ত শ্বশুরের কাঁধে হাত রেখে বললাম,
– বাবা আপনি কী ভয় পেয়েছেন?
– অনি আমাকে ধরো, আমার শরীর কাঁপছে!
– সাহস হারাবেন না বাবা, দোয়া ইউনূস পড়তে থাকুন।
শ্বশুর সাহেবের কাঁপুনি থামছেনা, আমি সশব্দে সূরা ফাতিহা পাঠ করে তার সারা শরীরে ফু দিয়ে দিলাম।
ভয়ার্ত শ্বশুর সাহেব কাঁপতে কাঁপতে বললেন,
– অনি তুমি ভয় পাওনি?
– না বাবা, খালাম্মা আসবেন শুনার পর থেকেই আয়াতুল কুরছি পাঠ করছি। তাছাড়া আমি অষ্টধাতুর তাবিজ ধারন করেছি, ভূত প্রেত দেখলে আমার ভয় লাগে না!
গল্পের বিষয়:
গল্প