পঁচা মানুষ

পঁচা মানুষ
ঘেন্নায় গা গুলিয়ে বমি পাচ্ছিলো আমার। এমন একজন নোংরা মানুষের সাথে সংসার করছি গত এগারোটি বছর ধরে! ছিঃ ছিঃ ছিঃ! দুবছর এফেয়ার করে ফ্যামিলিগত ভাবেই বিয়ে হয়েছিল আমার আর জহিরের। বিয়ের পরের বছর ওর ঢাকার বাইরে পোস্টিং হওয়াতে আমাদের দুজনকে দুজায়গায় থাকতে হয় কারণ আমার জব ছিল ঢাকায়। তবে ও মাসে দুবার বাড়ীতে আসতো। প্রতিদিন নিয়ম করে ফোন করে সংসারের সব খোঁজ খবর রাখতো। গত ছয়মাস হলো ওর আবার ঢাকায় পোস্টিং হয় তবে সেটা আমার এক মামার তদবিরে যদিও এই তদবিরের কথাটা ওকে বলা হয়নি কারণ আগেও কয়েকবার চেয়েছিলাম কিন্তু ওর সাফ কথা, ওর জন্য আমি কারও কাছে সহযোগীতা যেন না চাই।
বেশ ভালো সংসার চলছিল আমাদের দুই সন্তান আর আমার শ্বাশুড়ীকে নিয়ে। কিন্তু খুব খেয়াল করছিলাম ও অফিসের বাইরে যতটুকু সময় বাড়ীতে থাকে পুরো সময়টা মোবাইলে ফেসবুকিং নিয়েই থাকে। আমিও জানতে চাইনি কিছুই। কিন্তু হঠাৎ একদিন গভীর রাতে ঘুম ভেঙে গেলে দেখি ও তখনও মোবাইলে টাইপ করে যাচ্ছে। বিষয়টা আমার একটু খটকা লাগে তাই ওকে কিছুই বললাম না বরং কয়েকটা রাত ওভাবেই অবজার্ভ করতে থাকলাম আর দেখলাম সে কন্টিনিউ মেসেজ করে যাচ্ছে। তাই এবারে আমি ওর মোবাইলের স্ক্রীন লকটা খেয়াল করে শিখে নিলাম।
ওকে এতটা বিশ্বাস করতাম যে আমি ভুলেও কখনও ওর মোবাইল চেক করার কথা ভাবিনি। এমনকি আমার বাবারবাড়ী বা কোনও আত্মীয় ওর মোবাইলে ফোন করলে ও বিজি থাকলে আমাকে ধরতে বলতো কিন্তু আমি ওকে বলতাম, আমাকে ফোন করার হলে সরাসরি আমার মোবাইলে ফোন করতো। তোমাকে ফোন করেছে তো আমি কেন রিসিভ করবো! আমি পার্সোনাল প্রাইভেসীটা খুব মেইনটেইন করতাম। কিন্তু ওর কার্যকলাপ আমাকে বাধ্য করেছে সেই হ্যাভিট রেখে ওর মোবাইল চেক করতে। সেদিন রাতে ওর ফেসবুকিং শেষ হলে ও ঘুমিয়ে পরে রাত প্রায় সাড়ে তিনটা তখন। আমি ওর মোবাইল নিয়ে ফেসবুক ওপেন করি, পাসওয়ার্ড সেভ থাকার কারণে সরাসরি ওপেন হয়ে গেল কিন্তু এটা তো একটা মেয়ের আইডি। অবাক হলাম। এবার ওই আইডির মেসেজ চেক করলাম। আইডিটা ফেক আর মেসেজ লিস্টে দেখলাম ওর এসএসসি ও এইচএসসি ইয়ারমেটদের ফেসবুক গ্রূপের অনেক মেয়ের সাথে চ্যাটিং।
চ্যাটিং পড়ে যা বুঝলাম, ও মেয়ে সেজে একটা সময় মেয়েদের মেয়েলি বিষয় নিয়ে কথা বলতো আর মেয়েরা হয়তো গ্ৰুপ ফ্রেন্ড ভেবে শেয়ার করতো। কারও কারও সাথে হাজবেন্ড আর শ্বশুরবাড়ী নিয়ে যতো নেগেটিভ বিষয় আছে সেসব আলোচনা করে। মেয়েরাও একটা সময় অবলীলায় নিজের একান্ত ব্যাক্তিগত লাইফও শেয়ার করে যেহেতু ও মেয়ে সেজে অনেক নেগেটিভ বিষয় শেয়ার করতো। এক মেয়ের সাথে কিছু স্টার্টিং কথোপকথন এরকম, কি, ঘুমাও নি এখনও? না, ঘুম আসছিল না। ভাইয়াও জেগে! আরে না, ও তো নাক ডেকে ঘুমুচ্ছে।
আরে কি বলো! এতো সুন্দরী বৌ রেখে নাক ডেকে ঘুমুচ্ছে! আজকে জ্বালালো না! হিহিহি। এরপর আরও কথা বার্তা যা দেখে গা ঘিনঘিন করে আমার। আর বুঝিনা ওই মেয়েগুলো কতটা হ্যাংলা হলে বান্ধবী ভেবেও এতো পার্সোনাল বিষয় শেয়ার করে! কিন্তু আইডিগুলোর চ্যাটিং পড়ে বুঝলাম একটা সময় প্রতিটা আইডি থেকেই ওকে ব্লক করেছে তবে সেটা কোনও এক ভিডিও কলের পরেই কিন্তু কিছুসময় পরে কিছু কিছু আইডি আবার ব্লক খুলে নতুনভাবে অডিও, ভিডিও কল আর নোংরা মেসেজিং চলে সাথে নোংরা ছবি,ভিডিও আদান-প্রদান। এমনকি দুই একজন মেয়ের সাথে দেখা করে ফিজিক্যাল রিলেশন পর্যন্ত করেছে যার দু একটা ন্যুড ছবি আর ভিডিও পেয়েছি। সহ্য করতে না পেরে আইডি লগআউট করে বেরিয়ে যাই।
একটু নিজেকে সামলে আবার ফেসবুক ওপেন করতেই সেখানে ওই মেয়ে উভয় আইডি আছে সাথে ওর নিজের আইডি। আমি এবার ওর আইডি ওপেন করলাম, হয়তো সব আইডির পাসওয়ার্ড মোবাইলে সেভ করে রেখেছে কারণ ও জানে আমি ওর ফোন কখনও ধরিই না। ওখানে গিয়ে আরও বমি চলে আসছিল। গ্রূপের এবং গ্রূপের বাইরের কত মেয়ের সাথে যে নোংরা চ্যাটিং, ছবি আর ভিডিও শেয়ারিং সাথে ভিডিও কল দেখে কিছুতেই নিজেকে স্থীর রাখতে পারছিলাম না। ইচ্ছা হচ্ছিল ঘুমন্ত জানোয়ারটাকে কুপিয়ে খুন করে ফেলি।
হঠাৎ মনে হলো ওর মোবাইল মেসেজগুলো দেখি আর সেখানে গিয়ে মাথা আরও ঘুরে গেল। যেসব আইডি ওকে ব্লক করে তাঁদের হয়তো ফোনেও না পেয়ে অবশেষে মেসেজ সেন্ড করা হয় সাথে ওই আইডিতে চ্যাটিং এর কিছু স্ক্রিনশট তবে স্ক্রিনশট নেবার আগে আইডি নাম আর ছবি কোনও এক ছেলের করা হয় আর বলা হয় যে, যদি আনব্লক না করে তবে যে স্ক্রিনশট নিয়ে নিয়েছে সেগুলো গ্রূপে এবং ফ্যামিলিতে জানিয়ে দেবে। আরও একটা মজার ব্যাপার হলো ও যে মেয়ে এটা প্রথমে মেয়েদের বিশ্বাস করানোর জন্য ওর একটা মোবাইলে ভয়েস চেঞ্জ অপশনে গিয়ে মেয়ে ভয়েস দিয়ে কথা বলতো যার ফলে মেয়েরা নির্দ্বিধায় ওকে মেয়ে বলেই বিশ্বাস করতো। ও মাঝে মাঝে মজা করে আমার সাথেও বিভিন্ন ভয়েস এ কথা বলতো কিন্তু সেই পন্থায় যে এতো নোংরা কাজে ইউজ করবে জীবনে ভাবনাতেও আসেনি। খুব কাঁদলাম, এ কোন জানোয়ারের সাথে সংসার করছি আমি!
কিন্তু নাহ, ওকে আমি এমনি এমনি ছেড়ে দিবো না। আমি ঐসব নোংরা কথোপকথনের স্ক্রিনশট নিয়ে মেয়েদের নাম ছবি স্টিকার দিয়ে ঢেকে এবং মেয়েদের সাথে তোলা ছবি মেয়েদের মুখে স্টিকার দিয়ে ঢেকে ওদের গ্রূপে এবং ওর নিজের ফেসবুক ওয়ালে পোষ্ট করে দিই, সাথে ক্যাপশন দিই, আমি জহির মাহমুদ নই, আমি ওর ওয়াইফ, ওর আইডি থেকে পোষ্ট করছি সকালে ওর ফোন সাইলেন্ট করে দিই যাতে কেউ ফোন করলেও শুনতে না পায় আর মোবাইলটা একটু দূরে রেখে দিই। অপেক্ষা করি ওর গ্রূপে পোষ্ট এপ্রুভের। ওদের এক অ্যাডমিন আপুর নাম্বার আমার কাছে ছিল সকালে আগে তাঁকে ফোন করে রিকুয়েস্ট করি। খানিক বাদেই এপ্রুভ হয় পোষ্ট। সাথে সাথেই গন্ডায় গন্ডায় কমেন্টস আসে ওকে অকথ্য ভাষায় গালি দিয়ে।
শুক্রবার হবার কারণে অফিস ছিলনা তাই ও অনেক বেলা পর্যন্ত ঘুমুচ্ছিলো। আমি ব্যাগ আর বাচ্চাদের গুছিয়ে ওর উঠার আগেই চলে যাচ্ছিলাম কারণ আমি চাইছিলাম না ওর সাথে আমার দেখা হোক এই মুহূর্তে তখন আমার শ্বাশুড়ী আমাকে জোরে জোরে জিজ্ঞাসা করেন কেন আমি এতো সকালে জহির ঘুম থেকে না উঠতেই বাবার বাড়ী যাচ্ছি! আমাদের কথোপকথনে ও ঘুম থেকে জেগে আমাকে জিজ্ঞাসা করলে আমার কোনও জবাব দিতেও ঘেন্না লাগছিল। এক পর্যায়ে ও আমাকে ঝাকি দেয় আর ওর স্পর্শে মনে হচ্ছিল আমার পুরো শরীর জ্বলে যাচ্ছিলো। আমি আর ধৈর্য্য রাখতে পারছিলাম না। কোনও কথা না বলে ওকে ধাক্কা দিয়ে সড়িয়ে কষে একটা চড় মারলাম ওর গালে। তাৎক্ষণিকভাবে মাথা এতটাই গরম হয়ে যায় আর ঘেন্না লাগে যে ক্ষনিকের জন্য ভুলেই গেলাম আমার সন্তানরা এই দৃশ্য দেখছে।
আমি ওকে বললাম , যা অসভ্য, তোর্ মোবাইল আর ফেসবুক ওপেন কর গিয়ে। তোর্ জন্য কত জুতাপেটা অপেক্ষা করছে তাই দেখ। আমি তোকে খুব শীঘ্রই ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দেবো আর আমার সন্তানদের আমি একাই মানুষ করবো। তোর্ মতো জানোয়ারের ছায়া পর্যন্ত আমার সন্তানদের উপর পড়তে দিবো না। বেড়িয়ে পড়লাম খোলা আকাশের নীচে। আমার সন্তানরা শুধু প্রশ্ন করে যাচ্ছে, আম্মু বলোনা কি করেছে আব্বু? তুমি মারলে কেন আব্বুকে! কেন আব্বুকে ছেড়ে যাচ্ছি!
কি জবাব দিবো বাচ্চাদুটোকে! শুধু বললাম, তোমাদের আব্বু পঁচা মানুষ আর পঁচা মানুষের সাথে কখনও থাকতে নেই। তোমরা বড় হও তখন সব বুঝতে পারবে কেন ওই পঁচা মানুষকে আমরা ছেড়ে যাচ্ছি। চোখের পানি কিছুতেই আটকে রাখতে পারছি না। তবে নাহ, শুধু কান্না নয় আমাকে শক্ত হতে হবে। আমাকে যে আমার সন্তানদের বাবা এবং মা দুটোই হতে হবে, ওদের মানুষের মতো মানুষ করতে হবে ওই জানোয়ারের ছায়া থেকে দূরে রেখে।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত