বাবার দৌড়ানি

বাবার দৌড়ানি
আমি এই মুহূর্তে গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি আজিজ মামার চায়ের দোকানের পিছনে। কিছুক্ষণ আগে শ্রাবণীর বড় ভাই আমাকে হালকার উপর ঝাপসা ঢলা দিয়ে গেছে। যাকে সহজ বাংলায় বলে দুই গালে দুইটা কষে থাপ্পড়। আমার অপরাধ ছিলো আমি আজ শ্রাবণীকে রিকশায় চুমু খেয়েছিলাম। যদিও শ্রাবণী রাজি ছিলো না। আমিই জোর করে চুমু খেয়েছি।
তারপরও শ্রাবণীর কি একটুও কমনসেন্স নেই, এই কথাটা নিজের বড় ভাইয়ের কাছে শেয়ার করতে হয়। আর বড় ভাইয়ের মাথায় গোবর না কি, বোনের কথা শুনে নাচতে নাচতে আমায় মারতে এসেগেলো। যে মেয়েটা দুইদিন পর আমার বউ হবে তাকে তো আমি আদর করে একটা চুমু খেতেই পারি। তাই বলে সেই অপরাধে আমাকে মারতে হবে। বিষয়টা আমার জন্য সত্যি খুব অপমান জনক বাসায় গিয়ে দেখি বাবা বেলকনিতে বসে পত্রিকা পড়ছে। বাবাকে দেখলেই আমার কেন যেন ভয়ে গলা শুকিয়ে যায়। একগ্লাস পানি খেয়ে মনে সাহস নিয়ে বাবার সামনে দাঁড়িয়ে বললাম,
–বাবা, এই মেয়েকে আমি বিয়ে করতে পারবো না.. বাবা পত্রিকা থেকে মুখ সরিয়ে আমার দিকে রাগি রাগি চোখে তাকিয়ে বললো,
~ কেন বিয়ে করতে পারবি না? আমি মনে মনে ভাবলাম, এখন যদি বাবাকে বলি আমি শ্রাবণীকে চুমু খেয়েছিলাম সেজন্য ওর ভাই আমাকে মেরেছে। তাই আমি শ্রাবণীকে বিয়ে করবো না তাহলে আমার কপালে খারাপ আছে। তাই আমতা আমতা করে বাবাকে বললাম,
— বিয়ে করবো তো বাবা। এমনি মজা করে বলেছি বিয়ে করবো না কথাটা বলে আমি যখন বাবার সামনে থেকে চলে যাবো তখন বাবা আমায় ডেকে বললেন,
~ বাবা পিয়াস, আমার কাছে একটু আয়। আমি বাবার কাছে আসতেই বাবা আমার ডানগালে কষে থাপ্পড় মেরে বললো,
~হারামজাদা তোকে কে বলেছিলো বিয়ের আগে হবু বউমাকে চুমু খেতে? পরের বার বউমার সাথে দেখা করতে গেলে মুখে টেপ মেরে যাবি। যেন ঠোঁট গুলোকে কন্ট্রোল করতে পারিস। ছিঃ ছিঃ ছিঃ মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে আমায় বললো, বাবা আপনার ছেলে আমায় জোর করে চুমু খেয়েছে। এটা একজন বাবার জন্য কতটা অপমান জনক সেটা তোর মত কুলাঙ্গার বুঝবে না বাবার কথা শুনে আমি অবাক হয়ে ভাবতে লাগলাম, শ্রাবণীর কি মাথায় সমস্যা আছে। এই কথাটা হবু শ্বশুরকে বললো কিভাবে। আর আমার বাবার ও দেখছি একটুও জ্ঞান নেই। এমন একটা কথা শুনার পর কোথায় তিনি লজ্জা পাবেন তা না, উল্টো আমায় থাপ্পড় মারলেন পরদিন সকালে শ্রাবণী ফোন দিলো। ওর ফোন দেখেই রাগে আমার শরীর জ্বলে যাচ্ছিলো। মনে মনে ভাবলাম আজ ওকে অনেক কথা শুনাবো। ফোনটা রিসিভ করতেই ওপর প্রান্ত থেকে শ্রাবণী বললো,
– আমার বাবুটা কি করে? আমার বাবুটা আমার সাথে এখন দেখা করতে পারবে? শ্রাবণীর মিষ্টি কণ্ঠে এই আহ্লাদি কথাটা শুনে কেন জানি আমার সমস্ত রাগ মোমের মত গলে গেলো। আমি তখন বললাম,
— আমি এখনি আসছি
একটা রিকশা নিয়ে আমি শ্রাবণীর বাসার দিকে যাচ্ছি। কয়টা বাজে দেখার জন্য ফোনটা বের করতেই দেখি শ্রাবণীর ১৫ টা মিসডকল। মনে মনে ভাবলাম শ্রাবণী আজ আবার ১২ টা বাজাবে। আমি ভয়ে ভয়ে শ্রাবণীকে ফোনদিতেই শ্রাবণী বলতে লাগলো,
– এত বার ফোন দিচ্ছি ফোন রিসিভ করো না কেন? আমি বললাম,
— আসলে ফোনে একটু সমস্যা তো তাই তুমি কল দিয়েছো বুঝতে পারি নি। শ্রাবণী কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
– নষ্ট ফোন ব্যবহার করো কেন? তুমি এক কাজ করো নিউ মার্কেটে যে বড় মোবাইল শো-রুমটা আছে সেখানে এসো
শ্রাবণীর মুখথেকে এমন কথা শুনার পর আমি মনে মনে ফিল করলাম কে যেন আমার কানে কানে বললো, “খোকা দিলমে লাড্ডু ফোটা ” আমি মোবাইল থেকে সিমকার্ডটা বের করে মোবাইলটা ডাস্টবিনে ফেলে দিলাম আর মনে মনে ভাবতে লাগলাম, শ্রাবণী মেয়েটা সত্যি খুব ভালো শো-রুমে ঢুকতেই শ্রাবণী একটা আইফোন দেখিয়ে বললো,
-পিয়াস এটা তোমার পছন্দ হয়? আইফোন দেখে আমি আবারও ফিল করলাম কে যেনো আমার কানে কানে বলছে, ” খোকা দিল মে দোসরা লাড্ডু ফোটা” আমি হেসে বললাম,
— হে পছন্দ হয়ছে…
শ্রাবণী ফোনটা কিনে আমার হাতে দিলো। তারপর ওকে যখন ওর বাসার সামনে নামিয়ে দিতে যায়। ও তখন রিকশা থেকে নেমে আমায় বললো,
– দাও, ফোনটা দাও. আমি অবাক হয়ে বললাম,
— ফোন কেন দিবো? শ্রাবণী তখন বললো,
-আরে ফোনটা তো ভাইয়ার জন্য কিনেছি।
আজ তো ভাইয়ার জন্মদিন এই কথাটা শুনার পর কেউ একজন আমার কানের কাছে বললো, ” খোকা, বেম্বু সাইজ কিতনী হে? আমি মনে মনে বললাম, বহত বোড়া সাইজ হে আমি ফোনটা যে ডাস্টবিনে ফেলেছিলাম তাড়াতাড়ি সেই ডাস্টবিনের কাছে আসলাম। কিন্তু ফোনটা পাচ্ছি না। হঠাৎ মনে হলো আমি তো ফোন থেকে মেমোরি কার্ডটা খুলি নি। এই মেমোরি কার্ডে আমার আর আমার এক্স গার্লফ্রেন্ড সুপ্তির কিছু অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও আছে। এই ফোনটা যদি কেউ পেয়ে যায় আর ভিডিওটা কেউ যদি ফেইসবুকে দিয়ে দেয় তাহলে তো আমার অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে। আমি তাড়াতাড়ি ডাস্টবিনে আমার ফোন পাগলের মত খুঁজতে লাগলাম। ডাস্টবিনে আমার খোঁজাখুঁজি দেখে অনেকজন আমাকে ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও আমি ফোনটা পেলাম না। ক্লান্ত শরীরে বাসায় ফিরলাম। মা আমাকে দেখে নাক চেপে বললো,
~ তুই ময়লা থেকে উঠে এসেছিস না কি? আর তোর বাবাকে তো ফোনে পাচ্ছি না। আমি মাকে বললাম,
— বাবাকে পরে খুঁজে বের করবো আগে আমাকে একগ্লাস শরবত করে দাও সোফায় বসে টিভিটা অন করতেই দেখলাম আমাকে আর বাবাকে একসাথে খবরে দেখাচ্ছে। আর রিপোর্টার বলছে,
~”উনি হলেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ইসলাম উদ্দিন। উনার টাকার পাহাড় থাকলেও উনার সন্তান আজ অবহেলিত। উনার সন্তান ঢাকা শহরে বিভিন্ন ডাস্টবিনে খাবারের সন্ধানে ঘুরে বেড়ায়। ইতিমধ্যে ইসলাম উদ্দিনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। উনি তার সন্তানকে কিভাবে অত্যাচার করে তার একটা ভিডিও আপনাদের দেখাচ্ছি” ভিডিওতে দেখলাম গতকাল বাবা যে আমায় থাপ্পড় মেরেছিলো সেটা কে যেন ভিডিও করে ওদের দিয়েছে। তার একটু পরেই শ্রাবণী আর শ্রাবণীর ভাইকে খবরে দেখাচ্ছে। শ্রাবণী কান্না করছে আর শ্রাবণীর ভাই সাংবাদিকদের বলছে,
~ঐ ছেলের সাথে আমার বোনের বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো কিন্তু যে ছেলে নিজের ঘরে এত অবহেলিত সে কি করে আমার বোনের দেখাশুনা করবে। এই ছেলের কাছে আমি আমার বোনকে বিয়ে দিবো না। খবরের মাঝখানে এইবার অনন্ত জলিলকে দেখা যাচ্ছে। অন্তন জলিল বলছে,
~আমি ছেলেটার ভিডিও দেখেছি। খুব কষ্ট দায়ক ভিডিও। খবারের সন্ধানে ছেলেটা পাগলের মত ডাস্টবিনে খাবার খুঁজছিলো। আমি কথা দিচ্ছি আমি ছেলেটার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবো না আর সহ্য করা যায় না। আমি টিভিটা বন্ধ করে তাড়াতাড়ি থানায় গেলাম। অনেক কষ্টে বাবাকে জামিনের ব্যবস্থা করলাম। ওসি সাহেব আমাকে দেখে কাঁদতে কাঁদতে বললো, এমন সন্তান যেনো ঘরে ঘরে জন্মায়। বাবা এত অত্যাচার করার পরেও বাবাকে মুক্ত করতে সন্তান ঠিকেই এগিয়ে এসেছে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে বাবা আমায় দেখেই বললো,
~ আমি আজ ইতিহাস করবো বাবার হাতে ছেলে খুন। তোর মত কুলাঙ্গারের বেঁচে থাকার অধিকার নেই আমি দৌড়াচ্ছি আর আমার পিছনে বাবা আর বাবার পিছনে কিছু সাংবাদিক যাদের খেয়ে দেয়ে কোন কাজ নেই..
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত