“বাবা ফেসবুকে ঢুকে দেখ আমার ছবি পাঠিয়েছি।তোর একটা ছবি ফেসবুকে পাঠিয়ে দে না।কতোদিন হলো তোকে দেখিনা।” কথাটি শুনে চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। নিজের অজান্তেই কখন জানি চোখ থেকে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়েছে। আমি কাব্য। আমার বয়স আর কতোই বা হবে। ছত্রিশ কি সাইত্রিশ বছর হবে। ঢাকায় নামকরা একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে ম্যানেজার হিসাবে কর্মরত আছি। আমার সাত বছর বয়সী ছেলে রাহাত এবং স্ত্রী লামিয়া কে নিয়ে ঢাকাতেই থাকি।
আমার মা জাহানারা বেগম। এখন তার বয়স প্রায় ষাট ছুই ছুই। আমি যখন খুব ছোট, মাত্র হামাগুড়ি দিতে শিখেছি; তখন আমার বাবা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। আমার মা যৌবন কালে যথেষ্ট সুন্দরী ছিলান। বাবা মারা যাওয়ার পরে অনেক ভালো ভালো বিয়ের সম্বন্ধ আসে। নানা বাড়ি থেকেও তাকে বিয়ের জন্য অনেক চাপ দিতে থাকে। কারণ মায়ের বয়স তখন মাত্র ২৩ বছর। আমাদের সমাজে এমন অল্প বয়সী বিধবা মেয়েদের জীবন অনেক কষ্টের।
সমাজের কালো থাবা এরকম মেয়েদের কে সুখে থাকতে দিতে চাই না। নানান রকম কুৎসা রটায় কারণে অকারণে। মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই নানা বাড়ি থেকে অনেক জোরাজোরি করে আমার মা কে বিয়ে দেওয়ার জন্য। আর আমার দেখাশোনার দায়িত্ব তারা নিবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু আমার মা আর দ্বিতীয় বার বিয়ের পিড়িতে বসতে রাজি হন না৷ তার একটাই কথা, “মেয়েদের জীবনে বিয়ে একবারই হয়।” নানা বাড়ির সাথে যোগাযোগ সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ করে দিয়ে আমাকে নিয়ে দূরে চলে আসে।যেখানে আমাদের কোনো আত্মীয়স্বজন নেই। সেলাই মেশিন চালিয়ে আমাদের মা ছেলের ছোট্ট সংসার চালান।ধীরেধীরে আমি বড় হতে থাকি৷ আমাকে কখনোই কোনো কিছুর অভাব বুঝতে দেননি তিনি। যখন আমি মেট্রিক পরীক্ষা দিবো, তখন আমার মা আমাকে নিয়ে নানা বাড়ি যান। সবার কাছ থেকে আমার জন্য দোয়া চাইতে। ছোটবেলা থেকেই আমি পড়াশোনায় বেশ ভালো ছিলাম। মেট্রিক এবং ইন্টার মিডিয়েটে ফাস্ট ডিভিশনে পাশ করি৷
পাবলিক ভার্সিটির জন্য এপ্লাই করি। বেশ ভালো সাবজেক্টে চান্সও পেয়ে যাই। ভার্সিটি তে পড়াকালীন সময়ে একই ডিপার্টমেন্টের একটি মেয়ের সাথে গভীর প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি৷ মেয়েটির নাম লামিয়া। বড়লোক বাপের একমাত্র মেয়ে৷ যেমন সুন্দরী তেমনই জেদি। কাউকে কিছু না জানিয়েই বিয়ে করে ফেলি আমরা।পরে অবশ্য লামিয়ার পরিবার থেকে আমাদের বিয়ে মেনে নেন। আর আমার পরিবার! আমার পরিবারে মা ছাড়া আর কেউ নেই। আর তার কাছ থেকে অনুমতি নেওয়ার কোনো প্রয়োজন মনে করিনা আমি। কারণ তার এখন বয়স হয়ে গেছে। সে আর কি বুঝে। আর আমাকে কখনো কোনো কাজে বাঁধাও দেননি তিনি। ছোটবেলা থেকে আমার কোনো কাজেই তিনি কখনো দ্বিমত পোষণ করেন নি।
আমি যখন কলেজে পড়ি তখনকার কথা, কলেজ থেকে তিন দিনের জন্য শিক্ষাসফরে যাবে কক্সবাজারে। মায়ের কাছে বায়না ধরি আমিও যাবো৷ টাকা জমা দেওয়ার জন্য সময় বাকি আছে আর মাত্র ছয়দিন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টাকা জমা না দিলে যেতে পারবো না। বন্ধুরা সবাই টাকা জমা দিয়ে ফেলেছে। শুধু আমিই বাকি টাকা জমা দিতে। মায়ের উপর রাগ করে ভাত খাওয়া বন্ধ করে দেই আমি৷ আমার মা অনেক বুঝিয়ে আমাকে নিজ হাতে খাইয়ে দেন এবং বলেন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই টাকা জমা দিয়ে আসবো৷ তুই মন খারাপ করিস না। এরপর টাকা জমা দেওয়ার আগের দিন পর্যন্ত আমার মাকে দিন-রাত এক করে অন্যের কাপড় সেলাই করতে দেখেছি। মাঝে তো একবার শরীর দূর্বল হয়ে মাথা ঘুরে পড়ে যান।
মা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই আমার কক্সবাজারে যাওয়ার জন্য টাকা জমা দেন।যেদিন সকালে আমি কক্সবাজারে যাবো, ঐদিন মাকে কোমড়ের ব্যথায় কাতরাতে দেখেছি। আমি ঔষধ খাওয়ার কথা বললে মা বলে যে, “এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে। তুই সাবধানে থাকিস। আর পানির বেশি কাছাকাছি যাবি না বাবা। সবসময় স্যারদের সাথে সাথেই থাকবি।” শুধু এই পর্যন্ত করেই থামেনি। আমি যখন বাসা থেকে বের হবো, গেইটের সামনে বন্ধুরা দাঁড়িয়ে আছে আমার অপেক্ষায়। মা তখন কোমড়ের ব্যথায় কাতরাতে কাতরাতে গেইটের কাছে চলে আসে। বন্ধুদের সামনে মা আমার মাথায় দোয়া দুরুদ পড়ে ফুহ দেয়। মায়ের পরণে তখন ছিলো একটা পুরাতন শাড়ি। আর আমি পড়ে আছি নতুন শার্ট প্যান্ট,দামী জুতা। মায়ের জন্য সেদিন বন্ধুদের সামনে বেশ লজ্জা পেয়েছিলাম। বুঝিনা তার কি দরকার এতো ন্যাকামি করে ফুহ দেওয়ার।
পুরাতন কাপড় পড়েই আমার মা অনেক দিন কলেজে চলে যেতো আমাকে একনজর দেখার জন্য। আমি ঠিকমতো পড়ালেখা করছি কিনা দেখার জন্য। প্রতিবারই আমি অসম্ভব লজ্জা পেতাম। কারণ আমি সবসময় ভালো ভালো জামা কাপড় পড়তাম। আর সেখানে আমার মা কিনা এমন পুরাতন শাড়ি পড়ে। কি লজ্জা! ঈদের সময় সে নিজের জন্য কিছু না কিনলেও আমাকে নতুন কাপড় কিনে দিতো ঠিকই।
একবার রোজার ঈদের দু একদিন আগের কথা। মায়ের সাথে জামা কাপড় কিনতে গিয়েছি। আমার শার্ট প্যান্ট কেনা শেষ। শুধু জুতা কিনতে বাকি। মা তখনও কিছুই কেনেনি। মায়ের একটাই মাত্র স্যান্ডেল। তাও দু জায়গায় সেলাই করা। মা নিজের জন্য একটা স্যান্ডেল পছন্দ করেছেন। দাম দুশো টাকা। এখন শুধু আমার স্যান্ডেল কেনা বাকি৷ আমি একটা জুতা পছন্দ করলাম। দাম নয়শো টাকা। একদম। দোকানদার একটা পয়সাও কম নিতে রাজি নন। এদিকে আমিও নাছোড়বান্দা। আমার ঐ জুতাই লাগবে। সেদিন মা নিজের জন্য পছন্দ করা স্যান্ডেল টি রেখে, আমাকে নয়শো টাকা দিয়ে জুতা কিনে দিয়েছিলেন।
কাছে আর একটি টাকাও অবশিষ্ট ছিলো না। আমি নতুন শার্ট-প্যান্ট আর জুতা কিনে খুশি মনেই হাটছিলাম। হঠাৎ টের পেলাম মায়ের বাম পায়ের স্যান্ডেলের ফিতা ছিড়ে গেছে। আগেও একবার ছিড়ে গিয়েছিল। মা সেলাই করে পরতেন এতোদিন৷ কিন্তু এখন এই রাস্তার মাঝে স্যান্ডেল সেলাই করার ও উপায় নেই৷ এদিকে ইফতারেরও আর বেশি বাকি নেই। মা ছেড়া স্যান্ডেল টি এক হাতে নিয়ে হাটতে থাকেন। মানুষজন কি ভাববে, এটা ভেবে আমি বেশ লজ্জা পাই। তাই জোরে পা চালিয়ে মায়ের থেকে বেশ খানিকটা সামনে চলে যাই। যাতে কেউ না বুঝে যে ছেঁড়া স্যান্ডেল আর পুরাতন শাড়ি পড়া মহিলাটিই আমার মা। আমি নতুন জামা-কাপড়ের ব্যাগ দুলিয়ে দুলিয়ে আগে আগে হাটতে থাকি। সামনের মোড় ঘুরতেই জোরে একটা দৌড় দেই৷ যাতে মা চাইলেও আর আমার পাশাপাশি হাটতে না পারে।
অফিসে ছুটি বলতে দুই ঈদ আর পহেলা বৈশাখ। এছাড়া খুব একটা ছুটি পাইনা। আর ছুটি পেলেও বাড়িতে খুব একটা আসা হয়না।কারণ আমার স্ত্রী একদমই সহ্য করতে পারেনা আমার মাকে।আর আমারও মায়ের এতো ন্যাকামি ভালো লাগে না। ছুটি শেষে প্রতিবার ঢাকায় ফেরার সময় মা আমাদের যাওয়ার পথে দাঁড়িয়ে থাকেন। আর শাড়ির আঁচলে চোখের পানি মুছেন।আমি বাড়িতে আসলে অবসরে সারাদিন ফোন নিয়ে ফেসবুকিং করি৷ আর আমার স্ত্রী মায়ের সাথে প্রয়োজনের বাইরে একটাও কথা বলেনা। মা আমার ছেলে রাহাতের কাছে গেলে লামিয়া এমন ভাবে চোখ রাঙায় যেটা দেখে রাহাত আর তার দাদির কাছে তেমন একটা যায়না। কথাও বলেনা। এমনিই এক ঈদের ছুটিতে বাড়িতে এসেছি।ফেসবুক চালাচ্ছি। হঠাৎ নিউজফিডে ছোট মামা আর তার ছেলের ছবি আসলো। মা পাশেই বসা ছিলো। মা ছবি দেখে বললো,
-আচ্ছা তোর ফোনে হাসানের (আমার ছোট মামা) ছবি আসলো কিভাবে? তুই তো বহুবছর তোর মামা বাড়িতে যাস না।
-ফেসবুকে ছবি দিয়েছে রাজু (মামাতো ভাই)।ফেসবুকে ছবি ছাড়লে দেখা যায়।
-আচ্ছা।
হঠাৎ অস্ট্রেলিয়া থেকে আমার ছোট শালা সাকিব ভিডিও কল দিলো মেসেঞ্জারে। তার সাথে কিছুক্ষণ কথা বললাম। মাকে বললাম কথা বলো। কিন্তু মা ক্যামেরার সামনে একবার তাকিয়ে লজ্জা পেয়ে সরে গেল। সাকিবের সাথে কথা বলা শেষে বসে আছি। কিছুক্ষণ পরেই পাশ থেকে মা বলে উঠলো,
-আচ্ছা তুইও কি ফেসবুকে ছবি ছাড়িস?
-হুম। মাঝেমধ্যে ছাড়ি। মা বেশ কিছু সময় আমতা আমতা করে, তার হাতে থাকা বাটন ফোনটির দিকে তাকিয়ে আমাকে বললো,
-আমাকে একটা টাচ ফোন (স্মার্টফোন) কিনে দিবি? তাহলে মাঝেমধ্যে তোদের দেখতে পাবো। তোদের কে দেখে দেখে কথা বলতে পারবো। কতোদিন পরপর বাড়িতে আসিস। দু’দিন থেকেই আবার চলে যাস। একটা টাচ ফোন হলে তাহলে যখন ইচ্ছে তোকে দেখতে পেতাম। এমন সময় রুমে আমার ছেলে রাহাত ঢুকে। তার হাতে নয় ইঞ্চি স্কিনের একটি দামী ট্যাব। শুধুমাত্র তার গেইমস খেলার জন্য কিনে দেওয়া হয়েছে। রাহাতের পিছন পিছন আমার স্ত্রী লামিয়া ও আসে। মায়ের সব কথা সে এতো সময় দরজার আড়ালে থেকে শুনছিলো। মায়ের স্মার্টফোন কেনার কথা শুনে সে দরজার আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে।এসেই বেশ ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে,
-আপনার ঢং দেখে আর বাঁচিনা। বুড়ি হয়ে গেছেন।এক পা কবরে। এখন মরার চিন্তা করে আল্লাহ-রাসূলের নাম নিবেন। তা না এখন উনার নতুন ফোন লাগবে। এইযে ভাত খাচ্ছেন, নতুন নতুন জামা কাপড় পড়তেছেন।এসব কতো কষ্টের টাকা জানেন।বসে বসে শুধু ছেলের টাকা ধ্বংস করা ছাড়া তো আর কিছুই পারেন না। রাহাতের স্কুলে মাসে মাসে কতো টাকা লাগে এসব হিসাব আপনি কি করে বুঝবেন। আপনি তো আছেন ছেলের টাকা ধ্বংস করায় ব্যস্ত।
লামিয়ার কথা শুনে মা আর একটা কথাও বলেনা।শাড়ির আঁচলে চোখের পানি মুছতে মুছতে রুম থেকে বেরিয়ে যান। মা চলে যাওয়ার পরেই লামিয়া ফোন বের করে অনলাইনে একটা শাড়ি দেখিয়ে বলে, এটা অনলাইনে অর্ডার দিয়েছি।দেখো কতো সুন্দর শাড়ী টা। মাত্র সাড়ে আট হাজার টাকা দাম। আমাদের পাশের ফ্ল্যাটের ভাবি এই সেইম শাড়ি কিনেছে সাড়ে নয় হাজার টাকা দিয়ে। আর আমি তার থেকে এক হাজার টাকা কমেই পেয়ে গেলাম।
আমি চুপচাপ লামিয়ার সাথে একমত পোষণ করি।
ইদানীং আমার শরীর টা খুব দূর্বল। ব্রেইন টিউমার ধরা পড়েছে আমার। দেশ বিদেশের অনেক নামীদামী ডাক্তার দেখিয়েছি। কিন্তু কোনো কিছুতেই কাজ হয়নি। হয়তো আর খুব বেশি দিন বাঁঁচবো না। এদিকে আমার এই দুর্দিনে লামিয়া আমার পাশে নেই। সে রাহাত কে নিয়ে তার বাপের বাড়ি চলে গেছে। সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছে, তার একটা ভবিষ্যৎ আছে।লামিয়া কে এখন ফোন দিলেও সে আর রিসিভড করেনা।সেদিন ভিডিও কল দেওয়ায় কঠিন ভাবে বলে দেয়,সে আর আমার মুখ দেখতে চায় না। মাকে এখনো এবিষয়ে কিছুই জানায়নি। অযথা চিন্তা করবে ভেবে।
আজ রোজার ঈদ। সারাদিন ফ্ল্যাটে একা একা শুয়ে বসে সময় কাটাচ্ছি। সময় কিছুতেই যাচ্ছে না।এমন সময় দেখলাম মা কল দিয়েছে। এতোদিন মায়ের ফোন খুব একটা রিসিভ করতাম না।কিন্তু আজ সাথে সাথেই রিসিভ করলাম।
-বাবা কেমন আছিস? কি করিস?
-এইতো বসে আছি।
-খাওয়া দাওয়া করেছিস তো?
-হ্যাঁ।
-বাবা একটু তোর ফেসবুকে ঢুকে দেখ আমার ছবি পাঠিয়ে দিয়েছি।তোর একটা ছবি ফেসবুকে পাঠিয়ে দিস।কতোদিন হলো তোকে দেখিনা।
-তুমি ফেসবুক পেলে কোথায়?
-সে এক মজার ঘটনা।
আমার ফোন টা তো অনেক পুরাতন হয়ে গেছে। ঠিকমতো কথা শোনা যায় না।তাই পাশের বাসার আবিরের কাছে দিয়েছিলাম ফোন ঠিক করার জন্য৷ আবির কে দেখলাম তোর মতোই ফেসবুক চালায়। ওকে অনুরোধ করলাম আমার একটা ছবি তুলে ফেসবুকে দিয়ে দিতে। যাতে তুই আমাকে দেখতে পাস। কথাগুলো শুনে আমি আর চুপ থাকতে পারলাম না।কোনো এক অজানা কারণে কেঁদে ফেললাম।আমি চুপ করে থাকায় মা বললো,
-হ্যালো…হ্যালো.. বাবা শুনতে পাচ্ছিস? আমার তখন কান্নায় গলা জড়িয়ে গেছে। গলা একটা শব্দ ও বের হচ্ছে না। বোবার মতো কিছুক্ষণ গুঙিয়ে গুঙিয়ে কাঁদলাম। মা যাতে আমার কান্না শুনতে না পারে, তাই মিউট করে রাখলাম। আমার চুপ করে থাকায় মা কি ভাবলো জানি না। তবে আমি ফোন কেটে দেওয়ার আগে মা নিজে নিজেই বললো শুনতে পেলাম,
-” বাবা কথা শুনতে পাস? হ্যালো… হ্যালো…কল টা মনে হয় কেটে গেছে। কতোদিন হয়ে গেলো আমার ছেলে টাকে দেখিনা।ব্যস্ততার জন্য আমার ফোন ও রিসিভ করার সময় পায়না। আজ একটু কথা বলবো, কিন্তু কথা শোনাই যায় না ঠিকঠাক মতো। আমার ফোন টা মনে হয় নষ্ট হয়ে গেছে। নাহলে ছেলে কথা বলবে আর আমি শুনতে পাবো না তাই কি হয় নাকি। ছেলেটা আমার সংসার চালাতে গিয়েই হিমশিম খেয়ে যায়। সেখানে আমি আবার বোকার মতো তার কাছে নতুন ফোন কিনতে চাই।দেখি গলার চেইন টা বিক্রি করে এবার একটা টাচ ফোন কিনবো। অযথা চেইন দিয়ে কি বা হবে। তার থেকে একটা টাচ ফোন থাকলে মাঝেমধ্যে ছেলে টাকে দেখতে পাবো একটু।”
মায়ের কথা এই পর্যন্ত শোনার পরে আমি আর সহ্য করতে পারলাম না। ফোন কেটে দিলাম। আর নিজের প্রতি ঘৃণা জন্মালো, আমি কতোটা স্বার্থপর এটা ভেবে। আমি জানি, মায়ের ঋণ আমি কখনোই শোধ করতে পারবো না। কিন্তু আমি যতোদিন বেঁচে আছি, মাকে আর কষ্ট পেতে দিবো না। পরদিনই চলে গেলাম মার্কেটে। নতুন একটা স্মার্টফোন কিনলাম মায়ের জন্য। নীল রঙ টা মায়ের খুব পছন্দ। তাই নীল রঙের একটা ব্যাক কভার ও কিনলাম।তারপর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। শীতের সকাল। বাড়িতে ছোট মামা-মামি এসেছেন।মায়ের লিখে দেওয়া লিস্ট নিয়ে বাজারে আসছি আমি। সব কেনা শেষ। বাসায় ফিরবো। ঠিক এমন সময় মাকে ভিডিও কল দিলাম।
-কি হলো? তোর আসতে এখনো কতো দেরি?
-মা সব কিছু কেনা শেষ। হঠাৎ কিছু ফ্রেশ চিংড়ি মাছ পেলাম। এই দেখো… নিবো?
(মা হেসে দিয়ে বললো নিয়ে আয়।) ইশ! এতোদিন কতো বোকা ছিলাম আমি। নাহলে কি আর মায়ের এমন অমূল্য হাসি উপভোগ করা থেকে নিজেকে বঞ্চিত করতাম। ভালো থাকুক পৃথিবীর প্রতিটি মা নামক যোদ্ধা।
গল্পের বিষয়:
গল্প