ভোর ছয়টায় এ্যালার্মের শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো। বিয়ের পর এটাই শ্রাবন্তর প্রথম ঈদ।স্বাভাবিক নিয়মেই সে শশুরবাড়ীতে ঈদ করছে।তাই সকালে উঠেই বাবা – মায়ের কথা মনে হচ্ছিলো।আজ কে বাবার পাঞ্জাবি -সুরমা-আতর এসব কে গুছিয়ে দিবে??কে ছোট ভাইটিকে তাগাদা দিয়ে উঠাবে,,নামাজে যাওয়ার আগে নিজে হাতে সেমাই খাইয়ে দিবে??
এসব ভাবতে ভাবতে মনটা উতলা হয়ে উঠছিলো।তারপরও ফ্রেশ হয়ে সে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ালো।এবার তার দুই ননদ তাদের ছেলে-মেয়েসহ বাবার বাড়ী এসেছে ঈদ করতে।তাই শাশুড়ি মায়ের সাথে হাতে হাতে সব কাজ করতে হবে। কিন্তু রান্নঘরে গিয়ে তো সে অবাক!! মাত্র ভোর ৬ঃ৩০ বাজে,, অথচ এর মাঝেই মা দুই পদের সেমাই,,দেশী মুরগী রান্না শেষ করে পাশে রেখে দিয়েছে।কালাই ডালের খিচুড়ি চুলায়।পাশে আব্বা বসে গল্প করছে আর মা রান্না করছে। আমার যে কি ভীষণ লজ্জা লাগছিলো তা আর বলার মত না।আমি উঠার আগেই মা এসব করে ফেলেছে!! ছিঃছিঃ…
–মা,,আমাকে ডাকলেন না কেন??
–কেন রে?? অতো সকালে উঠে তুই কি করবি??
গতরাতে তো ননদ-ভাবী র মিলে মধ্যরাত অবধি মেহেদী দিয়েছিস,,আড্ডা দিয়েছিস।এখন এতো সকালে উঠে কি করবি??যেগুলো রান্না হয়েছে সেগুলো ঘরে নিয়ে যা। আমি সেগুলো ঘরে এনে টেবিলে সাজিয়ে দিলাম। ইতিমধ্যে আপারা,,, বাচ্চারা সবাই উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলো।মায়ের সাথে বাকী রান্না শেষ করে এসে আব্বা আর আরযুর পাঞ্জাবী-পাজামা,,সুরমা, আতর,,টুপি সব গুছিয়ে দিলাম।নামাজে যাওয়ার ঠিক আগ মুহুর্তে আব্বা একটা প্যাকেট দিয়ে বললো,,,”তোমার রিটায়ার্ড বুড়ো ছেলে একটা সুতি শাড়ী কিনেছে তোমার জন্য,, পরবে তো”??
আমি আনন্দে কেঁদে ফেললাম এবং আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করলাম এতো ভালো একটা পরিবার পাওয়ার জন্য। আব্বারা নামাজ পড়ে আসার আগেই সবাই মোটামুটি সাজুগুজু করে রেডী হয়ে গেলাম।আব্বার দেওয়া শাড়ীটাই পরলাম।আর আমি আর আরযু মিলে আমার দুই ননদ,,ওদের ছেলে-মেয়ে,,, আব্বা – মায়ের জন্য যা যা কিনেছিলাম সেগুলো সবাইকে দিলাম। ওরা সবাই সেগুলো পেয়ে অনেক খুশি হলো। নামাজ থেকে এসে আব্বা অনেক খুশি হয়েছিলো।আরযু আর আমার ননদ দুইটা আব্বাকে পাকড়াও করলো,,,
– আব্বা শুধু বৌমাকে শাড়ী কিনে দিয়েছেন।আমাদের টা কই?? এটা ভারী অন্যায়।
–মা বললেন,,,এতো বছর তোদের কে দিয়েছি।তখন তো ও ছিলো না।আজ শুধু ওর দিন।আর তোদের প্রত্যেকের জন্য রয়েছে ১০০ টাকা করে সেলামী। খাবার টেবিলে বসে সবাই হইহই করে মায়ের হাতের রান্না খাচ্ছিলাম।এমন সময়ে আব্বু ফোন করলো,,,
-আসসালামু আলাইকুম আব্বু।ঈদ মোবারক
-ওয়ালাইকুম আসসালাম মা।ঈদ মোবারক। কেমন আছো??
-ভালো আছি বলতে গিয়ে ঠোট দুটে কেঁপে উঠলো।তাই আর কথা বাড়ালাম না।
আব্বু আমার শশুর-শাশুড়ী কে ঈদ মোবারক জানিয়ে,,জামাই সহ সবাইকে ঈদের পরদিন দাওয়াত দিয়ে ফোন টা রেখে দিলো। খাওয়া শেষে।সবকিছু গুছিয়ে ঘরে যাচ্ছিলাম এমন সময় আব্বা ডেকে বললেন,,, বৌমা আরযু কে বলো তোমাকে একটু বাইরে থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসুক।ঈদের দিন কি সারাদিন ঘরে বসে থাকবে না কি?? আমি ঘরে গিয়ে আরযু কে সেটা বলতেই ও বললো,,
— এই দুপুরে আমি কোথাও যাচ্ছি না।এখন একটু ঘুম দিবো।তারপর বিকেলে দ্যাখা যাবে। ভীষণ রাগ হচ্ছিলো…আমার মত যদি সবাইকে ছেড়ে ঈদ করতে হতো তাহলে বুঝতো!! একটু পর শাশুড়ি ডাক দিলো,,,
– বৌমা,,,একটু এদিকে আসো।
— জ্বী মা,,, বলেন।
–আরযু কি ঘুমায়??
— হুমম
–কি যে বদঅভ্যাস!! আজীবন ঈদের দিন দুপুরে ঘুমায়।
–আমি আমার দুই মেয়ে এবং নাতি-নাতনী মিলে একটা অটো ভাড়া করেছি ঘুরতে বের হবো।তুমিও চলো।
-ইয়ে,, না,, মানে আপনার ছেলে ঘুমাচ্ছে। উঠে যদি দ্যাখে আমি নেই…..
-সেটা বলার জন্য তোমার শশুর কে রেখে যাচ্ছি।
-ঠিক আছে মা।চলেন।
অটোতে ননদদের সাথে গল্পে আড্ডায় খেয়াল করি নি গাড়ী কোনদিক দিয়ে কোথায় যাচ্ছে।প্রায় ৪৫ মি পর অটো থামলে বুঝলাম আমি আমাদের বাড়ীর সামনে দাড়িয়ে আছি।আমি অবাক হয়ে মায়ের দিকে তাকালাম।মা বললেন,,,
— এতো অবাক হচ্ছিস কেন?? আমার দুই মেয়ে আমার বাড়ীতে ঈদ করতে এসেছে।আমার যেমন আনন্দ হচ্ছে তেমনি তুই তোর বাবা-মায়ের ও একমাত্র মেয়ে তাদের সেই আনন্দ থেকে বঞ্চিত করাটা কি ঠিক হবে??এখানেই দাড়িয়ে থাকবি না কি ভিতরে যাবি??
–আমি মা কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলাম। এদিকে গাড়ীর শব্দ শুনে আব্বু- আম্মু,,ছোট ভাইটা বাইরে বেরিয়ে এসেছে। আমার শাশুড়ি আব্বু কে বললেন—
–বেয়াইসাব,, আমার বাড়ীর সব গুলো কে নিয়ে চলে এসেছি।।চলেন ভিতরে যাই।সেমাই -পায়েস যা রান্না হয়েছে নিয়ে আসেন। সবাই মিলে পেট পূজো করি। মায়ের কথার ধরন শুনে সবাই হেসে উঠলো।
গল্পের বিষয়:
গল্প