ঘুম থেকে উঠার পর থেকে দেখছি খুব বৃষ্টি হচ্ছে।এই বৃষ্টির দিনে প্রিয় মানুষকে ৫টা কদমফুল উপহার দিলে সে সারাজীবন সুখে থাকে। আমি অনেক চিন্তা ভাবনা করার পরেও আমার কোন প্রিয় মানুষ খুঁজে পেলাম না। হঠাৎ শ্রাবণীর কথা মনে পড়লো। কিন্তু শ্রাবণী আমার প্রিয় মানুষ কি না সেটা বুঝতে পারছি না…
এই মুহুর্তে আমি শ্রাবণীর বাসার সামনে। বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে ওর জন্য ৫টা কদম ফুল নিয়ে এসেছি। কলিংবেল বাজাতেই শ্রাবণীর স্বামী সাকিব সাহেব দরজা খুললেন। আমাকে দেখেই উনার মুখের মাঝে একটা বিরক্তি ভাব ফুটে উঠলো। অবশ্য বিরক্ত হবারি কথা। যেদিন শ্রাবণীর বিয়ে হয় সেদিন আমি ভরপেট খেয়ে শলা দিয়ে দাঁত খিলি করতে করতে উনার কানের কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলেছিলাম, আপনি যাকে বিয়ে করছেন তার বুকের হৃৎপিন্ডের ঠিক একটু নিচে একটা তিল আছে। তিলটা কালো না হালকা লালছে। উনি নিতান্তই ভালো মানুষ দেখে এই কথা শুনার পরেও শ্রাবণীকে বিয়ে করেছিলেন তা না হলে হোসাইন বোল্ডের মত ঝড়ের গতিতে বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে যেতেন আমি উনাকে দেখেই উনার পায়ের উপর হুমরি খেয়ে পড়লাম আর সালাম করতে লাগলাম। উনি অবাক হয়ে বললেন,
~আপনি এইসব কি করছেন? আমি মুচকি হেসে বললাম,
— কেমন আছেন দুলাভাই? উনি যথেষ্ট বিরক্ত হয়ে বললেন,
~আমি আপনার কবে দুলাভাই হলাম? আর দেখেন ভাই আমার আর শ্রাবণীর বিয়ে হবার পর থেকে দেখছি আপনি আমাদের মাঝে একটা দেয়াল তুলে রেখেছেন। দয়া করে আপনি চলে যান। আমার স্ত্রী আপনার সাথে দেখা করবে না এমন সময় ভিতর থেকে শ্রাবণী এসে আমায় বললো,
– টেবিলে খাবার দিয়েছি এসে খেয়ে যাও। নীল শাড়ি চোখে কালো কাজল আর খোলা চুলে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে শ্রাবণীকে খাবার টেবিলে বসে দেখি ভুনা খিচুড়ির সাথে ইলিশ ভাজা। আমি সাকিব সাহেবকে বললাম,
— আসেন সালা দুলাভাই একসাথে বসে খাবার খাই সাকিব সাহেব কিছু না বলে অন্য রুমে চলে গেলেন আমি খাবার খাচ্ছি তাকিয়ে দেখি শ্রাবণীর কৃষ্ণবর্ণ চোখ থেকে কালো অশ্রু তার ফর্সা গাল বেয়ে অনবরত পড়ছে। আমার খাওয়া শেষ হলে শ্রাবণী নিচের দিকে তাকিয়ে বললো,
~পিয়াস আমি এখন ১৬-১৭ বছরের সেই কিশোরী না যে তোমার মহা পুরুষ ভাব দেখে তোমায় ভালোবেসে ফেলবো। আমি এখন যথেষ্ট বুঝি। তুমি আর কখনো আমার বাসায় এসো না আমি জানি শ্রাবণী মনের বিরুদ্ধে এই কথাটা বলছে। যখনি দুপুরে বৃষ্টি পড়বে তখনি শ্রাবণী নীল শাড়ি পড়বে চোখে কাজল দিবে আর খোলা চুলে রান্না করবে ভুনা খিচুড়ি আর ইলিশ ভাজা। আর পথ চেয়ে থাকবে আমার ফিরে আসার অপেক্ষায়। কিন্তু শ্রাবণী এটা জানে না আমি আর ফিরে আসবো না। আমি ৫ টা কদমফুল শ্রাবণীর হাতে দিয়ে বললাম,
— আজ থেকে তুমি সুখী হবে শরৎ কালের আকাশটা অনেকটা কুমারী মেয়েদের মত। কুমারী মেয়েদের মন যেমন এই ভালো এই খারাপ তেমনি শরৎকালের আকাশটাও এমন এই রোদ এই বৃষ্টি। কিছুক্ষণ আগেও ঝুম বৃষ্টি ছিলো আর এখন ঝলমলে রোদ। এই রোদে আমি খালি পায়ে হাটছি এই মুহুর্তে আমি বসে আছি সুধা মিষ্টান্ন ভান্ডারে। কেসে বসা লোকটা মনে হয় দোকানের মালিক। কেউ একজন উনাকে জামান বলে ডাক দিলো। আমি উনাকে বললাম,
— আরে জামান সাহেব কেমন আছেন? উনি মিষ্টি হেসে বললেন,
~জ্বি আল্লাহ রহমতে ভালোই আছি।কিন্তু আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না আমি আবার বললাম,
— আপনার তো খুশির দিন। আপনি মেয়ে সন্তানের বাবা হবেন। উনি কিছুটা অবাক হয়ে বললো,
~ আপনার পরিচয়টা?
আমি কোন উত্তর না দিয়ে মুচকি হেসে দোকান থেকে বের হয়ে আসলাম। রাস্তায় যখন হাটছি তখন খেয়াল করলাম সদ্য কিশোরী থেকে যৌবনে পা দেওয়া এক অপূর্ব সুন্দরী মেয়ে শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে একমনে ফোনে কথা বলছে। আমি উনার পাশে গিয়ে বললাম,
— আপনার ফোনে call waiting সার্ভিসটা হয়তো চালু নেই তাই আপনাকে আপনার বাড়ির লোক কল করে পাচ্ছে না। আপনি যে আপনার মায়ের সাথে রাগ করে বাসা থেকে বের হয়ে এসেছেন আপনার মা তো হাসপাতালে ভর্তি
আমার কথা শুনে মেয়েটি সাথে সাথে ফোনটা কাটলো। আর তখনি ফোনটা বেজে উঠলো। আমি আর এইখানে দাড়ালাম না। আমার মত মানুষের কোথাও থেমে থাকার নিয়ম নেই। আমকে দিনের পর দিন ছুটতে হবে। এই মুহূর্তে বাবাকে খুব মনে পড়ছে। কিন্তু এখন বাবার কথা মনে পড়লে চলবে না। আমাকে এখন আমার এক বন্ধুর সাথে দেখা করতে হবে পান্থপথ এসেছি আমার বন্ধুর সাথে দেখা করতে। দেখি আমার বন্ধু স্কয়ার হাসপাতালের গেইটের সামনে বসে আছে। আমাকে দেখেই দৌড়ে আমার কাছে এসে বললো, ঘেউ ঘেউ যার অর্থ হলো( এতদিন কোথায় ছিলি) আমি বললাম, ঘেউ ঘেউ ঘেউ( আমি মানুষের ভিড়ে হারিয়ে গিয়েছিলাম) আমাদের দুই বন্ধুর কথপোকথন চলছে। এর মধ্যে হঠাৎ সেই মেয়েটা আমার সামনে এসে দাড়িয়ে বললো,
– আপনি কি করে জানলেন যে আমি বাসা থেকে মার সাথে রাগ করে এসেছি আর আমার মা হাসপাতালে ভর্তি
আমি কিছু বললাম না শুধু একটু মুচকি হাসি দিলাম। প্রকৃতি কিছু রহস্য কখনোই সমাধান করে না। আমি চলে যাচ্ছি পিছন থেকে মেয়েটা বললো,
– আপনি তো জবাব দিলেন না আমার পিছনে ফিরে তাকানোর নিয়ম নেই।তা না হলে পিছন ফিরে মেয়েটাকে বলতাম, তোমার সাথে আমার দেখা হবে কোন এক বৃষ্টির দিনে। আমি কাক ভেজা হয়ে তোমার সামনে এসে দাঁড়াবো আর তুমি সেদিন নীল রঙের একটা শাড়ি আর চোখে কাজল পড়বে। আজ আকাশে ভরা জোছনা। আমি হাটছি সাথে আমার বন্ধু। এমন সময় আমার বন্ধু বললো,
– ঘেউ ঘেউ যার অর্থ ( চুপ করে না থেকে কিছু বল) আমি বললাম,
— ঘেউ ঘেউ ঘেউ আর অর্থ মেয়েটা হয়তো জানে না আজ রাতে ওর মা মারা যাবে আর তার একটু পরেই জামান সাহেবের ফুট ফুটে একটা মেয়ে সন্তানের জন্ম হবে। প্রকৃতি কোন কিছুই অপূর্ণ রাখে না। বিসর্জনের একটু পরেই তার আগমন ঘটে। সত্যি প্রকৃতি বড়ই অদ্ভুত….
গল্পের বিষয়:
গল্প