ফেসবুকে নারী-পুরুষের অন্তরঙ্গ মূহুর্তের একটি আবছা অবয়ব চিত্র দেখে মেজাজটা বিগড়ে যাচ্ছিলো খুব। মানুষের রুচিবোধ কতটা নিচে নামলে এমন ছবি আঁকতে পারে সেটাই ভাবছিলাম। কিন্তু ক্যাপশন পড়ার পর মেজাজ বিগড়ানো দূর হয়ে ছবির উপর কৌতূহল বাড়তে থাকলো খুব। সে যাইহোক সেই কৌতূহলের কারন ক্যাপশনটাই তুলে ধরার চেষ্টা করছি আপনাদের সামনে।
—বিজ্ঞানীরা এই ছবিটি দ্বারা মানুষের মস্তিষ্কের চিন্তাধারা পরীক্ষা করে থাকেন। এই ছবিটি যদি কোনো বাচ্চাকে দেখানো হয় তাহলে সে নির্দিধায় বলবে এখানে সে ডলফিন দেখতে পাচ্ছে। কারো কারো ক্ষেত্রে সেটি আটটি আবার কারো ক্ষেত্রে আবার নয়টি পরিলক্ষিত হয়। কারন বাচ্চারা এইসব জৈবিক বিষয়ে নির্বোধ হবার দরুনই তারা এখানে প্রথমেই যেটি দেখতে পায় সেটি হলো ডলফিন।
মোরাল অফ দ্যা স্টোরি হলো আপনি যদি চিন্তা-চেতনায় স্বচ্ছ থাকেন তাহলে আপনি এখানে ডলফিন দেখতে পাবেন। আর অন্যথায় যা ভাবছেন সেটা হলো আপনার নোংরা মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। আমি খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম, কারণ বিশ মিনিট ধরে তাকিয়ে থেকেও আমি কোথাও কোনো ডলফিন খুজে পাচ্ছিলাম না । যা দেখতে পাচ্ছিলাম সেটা হলো; হ্যা আপনি যেটা ভাবছেন সেটাই দেখতে পাচ্ছিলাম তখন আমি। অবশেষে হতাশ মনে কমেন্ট বক্সে ঢুকলাম। যেয়ে দেখি অন্যরা কমেন্ট করেছে কেউ সাতটা ডলফিন পেয়েছে কেউবা নয়টা৷ আমি একপ্রকারে ভেবেই নিলাম আমার মানসিকতা চরম খারাপ পর্যায়ে পৌছেছে। ইমপ্রুভমেন্ট দরকার। তারপর হাল ছেড়ে দিয়ে নিউজফিড চেকিংএ মন দিলাম আবার। হঠাৎ বড় ভাইয়ের আট বছরের বাচ্চাটা লাফ দিয়ে আমার বিছানায় পড়ে বললো ;
—চাচ্চু কি করছো তুমি? ওকে দেখেই আমার মনে পড়লো ছবিটার কথা। কেননা আমি ওকে দিয়ে একবার এক্সপেরিমেন্ট টা করিয়ে নেই? আমি দেখতে চাই ও কয়টা ডলফিন দেখতে পায় এখানে। আমি ওকে কাছে ডেকে আদর করে বললাম;
—বাবা আসো আমরা একটা এক্সপেরিমেন্ট করি। সে খুব কৌতূহলী ভঙ্গিতে আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো কি এক্সপেরিমেন্ট চাচ্চু?
—খুব সহজ এক্সপেরিমেন্ট বাবা। আমি একটি ছবি দেখাবো তোমাকে, তুমি সেই ছবিটি দেখে আমাকে বলবে সেখানে তুমি কি দেখতে পাচ্ছো? বোঝা গেলো সে খুব এক্সাইটেড এই এক্সপেরিমেন্ট করার জন্য। আমিও ছবিটি বের করে তার সামনে ধরে বললাম দেখোতো বাবা এখানে কি দেখতে পাচ্ছো? সে কিছুক্ষন তব্দা খেয়ে তাকিয়ে রইলো ছবিটির দিকে তারপর আমার দিকে তাকিয়ে অগ্নিশর্মা দৃষ্টি নিক্ষেপ করে এক ছুটে দৌড়াতে লাগলো আর বলতে লাগলো মা,মা দেখো চাচ্চু আমাকে কি ছবি দেখাচ্ছে। আমিও ওর পেছনে ছুটতে ছুটতে বলতে লাগলাম সিফাত ওরে বাবা চাচ্চুর কথা শোন যাসনে, এদিকে আয়। আর মনে মনে নিজেকে দোষ দিচ্ছিলাম ; নে আমলা এবার নিজের ইজ্জত সামলা। পোড়া কপাল আমার। আমি ওর কাছে যেতে যেতে ততক্ষণে ও ওর মায়ের কাছে পৌছে কথাটা বলতে যাবে তৎক্ষনাৎ আমি ওর মুখ চেপে ধরে আমার রুমে নিয়ে আসতে যাবো তখন ভাবি জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে সিয়াম ওর মুখ চেপে ধরেছো কেনো?
— গেম, এটা একটা গেম ভাবি ও তুমি বুঝবে না। আমরা চাচা-ভাতিজা মিলে একটা গেম খেলছিলাম তাইনারে বাবা? সিফাত শুধু মুখ দিয়ে উ উ শব্দ করে কথা বলার চেষ্টা করছিলো।
কত গেম আবিষ্কার করবা তোমরা চাচা-ভাতিজা তার কোনো ইয়ত্তা নেই। সারাদিন ই ঘরে পড়ে পড়ে আমাকে জ্বালাবা আর কোনো কাজ নেই। তা বলি প্রেম যখন করো বিয়েটা করে আনো আমারো একটু আসান হোক এবার।
এখন আমি আমার রুমে সিফাতের সামনে অপরাধীর ভঙ্গিতে বসে আছি আর তাকে বোঝাচ্ছি সে যা চায় আমি তাকে তাই দিবো। সে যেনো এই কথা আর কাউকে না বলে, এমনিতেই আমার গার্লফ্রেন্ড রিংকি মাঝেমধ্যে ওর সাথে কল করে কথা বলে৷ তখন যদি ও এই কথা বলে দেয় তবে আমার মানইজ্জতের ফালুদা হয়ে যাবে নিশ্চিত।
সিফাত মোজ মেরে বসে আছে আর আমার অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে লিস্টের পর লিস্ট দিয়ে যাচ্ছে, তার কি কি আইটেম খেলনা আর চকলেট লাগবে। আমিও তার প্রতিটি আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালনের অঙ্গিকার নিয়ে নিলাম। শুধু শর্ত হচ্ছে সে এই কথা কাউকে বলতে পারবেনা। সেও অভয় দিলো বলবেনা কাউকে। এক সপ্তাহ কেটে গেছে, এই এক সপ্তাহে ভাতিজা আমার, পকেট খসিয়ে উদরপূর্তি খেয়ে নিয়েছে আমার কাছ থেকে। কিন্তু আমার মাথায় কিছুতেই ঢুকছেনা ও এই ছবির সারমর্ম কিভাবে বুঝলো? ওর তো বোঝার কথা না। আমি মনে মনে যুগকে ব্যাপকভাবে গালাগালি করতে লাগলাম, কি যুগ আসলোরে বাবা। বড়দের পাশাপাশি বাচ্চাদের মানসিকতাও খারাপ করে দিয়েছে একদম। তারপর হঠাৎ করেই মনে হলো সিফাতকে একটু জিজ্ঞেস করি ও কিভাবে বুঝে চিৎকার দিয়েছিলো? আমার মনের মধ্যে খুতখুতানী কিছুতেই দূর হচ্ছিলো না। তাই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া আরকি।
— বাবা সিফাত তুমি সেদিন ছবিটিতে কি দেখে চিৎকার করে আম্মুকে বলতে যাচ্ছিলে? চাচ্চুকে একটু বলোতো।
সিফাত বলতে শুরু করলো;
—কেনো চাচ্চু ডলফিন ছিলো ওগুলো। দেখতে কি অদ্ভুত সুন্দর। একসাথে কত্তগুলো ছোটছোট ডলফিন, তাইতো আম্মুকে বলতে চেয়েছিলাম। আমার মনে হচ্ছে আমি এখন আকাশ থেকে আছড়ে মাটিতে পড়লাম। নিজের বলদামি আর এই এক সপ্তাহে আমার অনবরত পকেট খালি হওয়ার শোকে আমি এখন কচু গাছের সাথে গলায় দড়ি দিতে গেলাম। বেঁচে থাকলে আবার দেখা হবে। অকা ফ্রান্স বাই।
(সমাপ্ত)
গল্পের বিষয়:
গল্প