ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়াকালীন এক সিনিয়র ভাইয়াকে খুব ভালো লেগেছিলো। লুকিয়ে চুকিয়ে প্রেম করার ও শখ জেগেছিলো মনে। ছেলেটি প্রপোজ করবে, মেয়েটা হ্যাঁ সূচক উত্তর দিবে, রাতভর ফোনালাপ করবে, ঘুরতে গিয়ে রিক্সা ভাড়া, ফুচকা আর আইসক্রিম এর টাকা টাও ছেলেটি ই মিটাবে। ব্যাস! এরা দুজন প্রেমিক প্রেমিকা। তাদের মধ্যে প্রেম চলছে! আমার মতে এটাই প্রেম। ছোট বেলায় তাই ভাবতাম।
ছোট বেলায় আপুকে লুকিয়ে ফোনে কথা বলতে দেখতাম। এদিক সেদিক তাকাতো বারবার। কারো পায়ের আওয়াজ শুনতে পেলেই ভয় পেয়ে যেত। এই ব্যপার গুলো আমায় খুব টানতো। আচ্ছা, এতো ভয় পেয়ে লুকিয়ে একজন ছেলে মানুষের সাথে কথা বলার কি আছে? কয়েকদিনের মধ্যে ঐ ভাইয়াটার সাথে আমার ভালো বন্ধুত্বও হয়ে গেলো। মাস কয়েক বাদে প্রপোজাল ও দিয়ে বসলেন। দিব্যি দিন কাটছিলো, ঝামেলা বাধলো এক বছর পর। ইফাত আমায় সমানে তাড়া দিচ্ছে, ওর আর আমার ব্যপার টা বাসায় জানানোর জন্যে। কিন্তু আমিতো বাসায় জানাবো না। প্রেম করতে গিয়ে যদি কারো থেকে বকাই না খাই তবে কি আর সেটাকে প্রেম বলা যায়? যতোই দিন যাচ্ছে ইফাতের আবদার ততোই বেড়ে চলেছে।
এগুলোকে আবদার না বলে চাহিদাও বলা যায়। ওর সাথে টোটালি যোগাযোগ বন্ধ করে দিলাম। তার ঠিক পাঁচ মাস পর ওর বিয়ের কথা জানতে পারি। সে রাতে আমার আর ভালো ঘুম হয়নি, কেঁদেছিলাম খুব। শুনেছি ওর স্ত্রী একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স। জেদ ধরে আমিও নার্সিং এ পরীক্ষা দিলাম। চান্স ও হয়ে গেলো। ইফাত কে আমি সে খবর শুনালাম, সে খুশিও হলো ভিশন। হুট করে বিয়ে করে নেয়ার ঘটনা শেয়ার করলো আমায়। সরি টরি বল্লো অবশ্য। ভালো বন্ধু হয়ে থাকার অনুরোধ জানালো। আমি সেদিন জানলাম- একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেটি কেও বাসা থেকে বিয়ের জন্যে চাপ দেয়া হয়, এক রাতে বিয়ের পিড়িতে বসিয়ে দেয়া হয়, সে তার ভালোবাসার কথা বলার সুযোগ পায়না! সাময়িক মান-অভিমান কে স্থায়ী দূরত্বে পরিণত করা যায়। খুব মজার না? ইফাত আমায় ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট দিয়েছে আজ ১০সপ্তাহ। এক্সেপ্ট করিনি, থাকুক।
ভালো পাত্রী পেয়ে আমায় না জানিয়ে বিয়ে করে নেয়ার যন্ত্রণা টা তো আর কোনো ভাবেই মেটানো সম্ভব নয়। এভাবে যদি একটু পৈশাচিক আনন্দ পাওয়া যায় আর কি। ইফাতের সাথে মাঝে মধ্যে অনলাইনে কথা হয়। হানিমুনের ছবি দেখায়, বউয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়। যেন সে বুঝতে চায়না, এসবে আমার একটু হলেও খারাপ লাগতে পারে। আমার মুখে সে অন্য কোনো ছেলের কথা সহ্য করতে পারেনা। এইদিকে নিজে সংসার গুছিয়ে বসে আছে। ইফাত খুব করে অনুরোধ করলো, যেন আমার বিয়ের খবর টা অন্তত তাকে জানাই। আজ আমিও একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স। খুব শিঘ্রই ওটির ইনচার্জ হতে যাচ্ছি। ইফাত কে কল দিয়ে বাসায় আসতে বললাম, সে ব্যস্ততা দেখিয়ে ফোন কেটে দিলো। তার ছোট ভাইয়ের জন্যে মেয়ে দেখা হচ্ছে, আর্জেন্ট বাসায় যাওয়ার জন্যে খবর পাঠাচ্ছে। এবারো সরি টরি বল্লো।
বদমাইশ টা এর আগেও সরি বলে পার গেয়ে গেছে। ভেবেছি ছেলে পক্ষ আমায় দেখা হতে শুরু করে বিয়ে অব্দি সব কাজের দায়িত্ব ওকে দিয়ে, হুট করে আমার প্রাক্তন হয়ে যাওয়ার জ্বালাটা মিটাবো। বিয়েটা হুট করেই করছি, তবে বিয়ে ঠিক হওয়াটা হুট করে নয়। তন্ময়! আমার জীবনে দ্বিতীয় পুরুষ, প্রথম জন প্রাক্তন হয়ে গেছে, বিবাহিত প্রাক্তন। আর এখন তন্ময় কে পাওয়ার অপেক্ষায়। তন্ময়ের সাথে লুকিয়ে প্রেম করা হয়নি আমার। প্রথম মাসেই পরিবারের সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলাম। আমি বড় ঘোমটা টেনে বসে আছি। পরিচয় পর্বে এবার এলো তন্ময়ের ভাইয়া-ভাবি। বিশ্বাস করেন কবিরাজ সাহেব, তন্ময়ের ভাইয়া কে দেখার জন্যে আমি একটুও প্রস্তুতি নেইনি। আমার আর ইফাতের পাশাপাশি ঘর।
রোজ সকালে আমি ঘুমন্ত তন্ময় কে ডেকে উঠাই। এমন শব্দ করে ডাকি যেন ইফাতের কান অব্দি আমার কণ্ঠস্বর পৌছাতো পারে। ইফাত কে দেখতে পেলেই আমি অহেতুক তন্ময় কে ডাকাডাকি শুরু করি। আর রাতে মেসেঞ্জার চ্যাক করে ইফাতের মেসেজ পাই- সম্পর্কে আমি তোমার ভাসুর হই। ভাসুরের সামনে স্বামীর সাথে ন্যাকামো করতে লজ্জা করেনা? এখন থেকে ঠিক করেছি, ভাসুর সাহেব কে দেখলেই স্বামী কে বলবো- ওগো? কই গো? শুনছো? এই? আর যাই হোক, ভাসুরের সামনে তো আর স্বামীর নাম নেয়া যায়না!
গল্পের বিষয়:
গল্প