এঞ্জেল মধুবালা

এঞ্জেল মধুবালা
” মা,আমি আর পড়াশুনা করব না । আমি বিয়ে করতে চাই।” প্রায় ছয় দিন রিহার্সাল করার পর আজ এক নিশ্বাসে এই কথা বললাম মাকে। আমার এমন কথা শুনে মার চোখ ছানাবড়া। অবশ্য এমন একটা পরিস্থিতির জন্য আমি মনে মনে প্রস্তুতই ছিলাম ।মা রেগে মেগে বলল,
” অয়নী তুই কি পাগল হয়ে গেছিস?”
” না মা এখনো পাগল হই নি । তবে বিয়ে না দিলে এবার আমি সত্যি সত্যি পাগল হয়ে যাব।”
” কত বড় বেহায়া মেয়ে নিজের বিয়ের কথা নিজেই মাকে বলিস তুই?”
” কি আর করব মা কেউ তো বলে না তোমাকে আমার বিয়ের কথা ।
তাই নিজেই বললাম।” মা কিছুক্ষন চুপ করে থেকে আমার কাছে এসে ফিস ফিস করে বলল,” অয়নী তুই কি কাউকে পছন্দ টছন্দ করিস নাকি?” মার এমন কথা শুনে ফুচকা খাওয়ার মতো হা করে রইলাম কিছুক্ষন। মা আমায় আবার ধমক দিলো। ” কি রে অয়নী বল ? কোন ছোকরার সাথে লাইন পাকিয়ে রেখেছিস?”
আমি নিজেকে কোন মতো সামলে নিয়ে বললাম,” নাউজুবিল্লাহ।মানাউজুবিল্লাহ। তোমার মেয়েকে তুমি চেন না?আর তুমি তো ভালো করেই জানো একমাত্র তুমি আর কাপড়ের দোকানদারগুলো ছাড়া কেউ আমার রূপের প্রশংসা করে না।”
” তাহলে হঠাৎ বিয়ের ভুত মাথায় চাপল কেন?” ” এই লক ডাউনে একটা গল্প করার মতো তো মানুষ চাই।মেসেঞ্জারে চ্যাটিং করতে আর লুডো খেলতে আর ভাল লাগে না। আর আমার লুডোর পার্টনার ও ইদানিং অনলাইনে কম আসে।” মাথা নিচু করে অনুনয়ের সুরে বললাম। মা আবার রেগে গেল।” তোর গল্প করার মানুষের অভাব বুঝি? আমার আর তোর বাবার সাথে গল্প করবি বসে বসে। লুডো ও খেলবি আমাদের সাথে ।” ” মাআআআ..প্লিজ। আমার ব্যাপারটা ভেবে দেখো!” বিকেলে দেখি বাবার সাথে এ ব্যাপারে ব্যাপক আলোচনা সভা বসেছে মার। বাবা বলল,” সব ইতো বুঝলাম। এই লক ডাউনে জামাই কোথায় খুজব বলো? আর খুজে খুজে পেলেও সে জামাইয়ের যদি করোনা পজিটিভ হয়? বিয়ের আগে তো বলতে পারব না যাও বাবা করোনা টেস্ট করে এসো।” মা ও বেশ চিন্তিত হয়ে বলল,” হুম । মেয়ের একটা পছন্দ থাকলে না হয় তার সাথেই আমি এই সুযোগে দৌড়ে গিয়ে বললাম,”মা আমাকে একজন পছন্দ করেন ।”
” কি বলিস? এইত একটু আগে বললি তোর কারো সাথে প্রেম ট্রেম নেই?” ” না না ওসব নেই। তবে নীচ তলার কাপড়ের দোকানদার আঙ্কেল আমাকে পছন্দ করেন । আমি তার বাড়িতে যেতে রাজি আছি।উনাদের বাড়িতে কারো করোনা পজিটিভ ও নেই। লক ডাউনের পর থেকে কেউ বাইরে বেরোয় নি।” এ কথা শুনে বাবা রেগে মেগে আগুন হয়ে উঠে চলে গেলেন। মাকে বললেন,” তোমার মেয়ের মাথায় গন্ডগোল হয়েছে ।” মা বলল,” কিরে অয়নী তুই এত নিচে নেমে গেছিস! ছি ছি ছি । এই মুখ আমি কি করে দেখাব? কাকে দেখাবো?”
আমি বললাম,” কেন মা সমস্যা কি? এখানে নিচে নামার কি হলো? আর নিচে নামলেও মাত্র একতলা নিচে নেমেছি। উনার দোকানে জামা কিনতে গেলেই উনি আমায় আদর করে বলেন অয়নী মা তুমি যা ফরসা এই ড্রেসটা তোমাকেই একমাত্র মানাবে। তুমিই বলো তোমার এই কালো ভুত মেয়েকে আর কেউ এভাবে ফর্সা বলে? অন্যান্য দোকানদার বলে অবশ্য। তবে তারা তো আর চেনা জানা নয়। উনি যখন আমাদের চেনা জানাই আছেন উনার বাড়িতে বৌ হয়ে গেলে তো সমস্যা দেখছি না । আর উনাদের বাড়িতেও তো একটা মেয়ে মানুষ দরকার। আন্টি গত হবার পর থেকে বাড়িটার যাচ্ছে তা অব্স্থা। ছেলেটাও কেমন অগোছালো হয়ে গেছে ।শাসন করার কেউ নেই।”
” তুই জানিস উনার ছেলে অহন তোর চেয়েও বয়সে দু চার বছরের বড়?”
” হ্যা জানি বলেই তো বলছি। প্রস্তাবটা দাও না মা।”
” ঐ ছেলে তোকে আম্মা বলে ডাকলে খুশি হবি তুই?”
” নাউজুবিল্লাহ। আম্মা কেন ডাকবে? বৌ ডাকবে বৌ।
নীচ তলার আঙ্কেল তো আমাকে মেয়ে হিসেবে পছন্দ করেন ।। অহন ভাইয়ের কাজিন মিলার থেকে খবর পেয়েছি অহন ভাইয়াও লক ডাউনে পাবজি লুডো আর ফ্রি ফায়ার খেলতে খেলতে বোর হয়ে গেছে । “
বৌ সেজে অনেক্ষন যাবত বসে আছি অহনের আসার কোন নাম গন্ধ নেই । উপায় না পেয়ে মেসেঞ্জারে আবার লুডো খেলতে শুরু করলাম। আমার একমাত্র লুডো পার্টনার ” অবুঝ বালক” নামের এক আইডির সাথে লুডো ম্যাচ বেশ জমে উঠেছে। এরই মধ্যে অহন ঘরে ঢুকে খুশিতে চেল্লানো শুরু করল,” ইয়েস ইয়েস! খাইসি তোর পাকা গুটি ” আমি লুডোতে প্রতিপক্ষের অতি মূল্যবান পাকা গুটি না কেটে ওর দিকে তব্দা লেগে তাকিয়ে রইলাম। অহন বলল, ” আরেহ অয়নী বুঝলে আজ সেই খাওয়া খেয়েছি।” “কি খেয়েছ?” এঞ্জেল মধুবালার পাকা গুটি। আরেহ লক ডাউনে ঐ তো আমার এক মাত্র লুডো পার্টনার।”
আমি নিজের ম্যাচে তাকিয়ে দেখলাম আমার পাকা গুটিটি অবুঝ বালক নামের আইডি টি খেয়ে দিয়েছে। অহনের দিকে তাকিয়ে বললাম,” তুমিই অবুঝ বালক?” হ্যা । লুডো খেলার জন্য ফেইক আইডি ওটা। তার কিছুক্ষন পর মাথা চুলকে বলল,” এক সেকেন্ড এক সেকেন্ড তুমি কি করে জানলে? আমি তো শুধু এঞ্জেল মধুবালার সাথে লুডো খেলি।” আমি মুচকি হেসে বললাম,” এখনো বুঝলে না? আমিই তোমার এঞ্জেল মধুবালা।”
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত