শুক্রবার আসতো কয়েক বছর আগেও,আমার আবছা না স্পষ্ট মনে পরে কয়েক বছর আগের সেই শুক্রবারের কথা! কেমন একটা ঈদ ঈদ আমেজ ছিলো এই দিনটাতে। শুক্রবারে বাবা মাংস কিনতেন, শুক্রবারের বাজার একটু আলাদায় হতো। মা এক এক করে বাজারের ব্যাগ থেকে সব বাজার বের করে মাংসগুলো আলাদা বাসনে রাখতেন। অনেকটা সময় নিয়ে মশলা বাটতেন এরপর মাংসগুলো ধুয়ে মশলা মাখিয়ে যখন চুলায় দিতো কিছুটা সিদ্ধ হয়ে এলেই সেই আধসিদ্ধ মাংস থেকে যে ঘ্রাণ বের হতো তার বর্ণনা করা এখন দ্বায় হবে। তখন যে কাজেই ব্যাস্ত থাকিনা কেন সোজা চলে যেতাম চুলার কাছে,মা কষানো মাংসের কয়েক পিস তুলে দিয়ে বলতেন খেয়ে দেখতো সিদ্ধ হয়েছে কিনা! সেই কষানো মাংসের স্বাদ আজীবন মনে রাখার মতো অনেকেই খেয়েছেন তাই আলাদা করে ব্যাখা করার কিছু নেই।
শুক্রবারে জুম্মার নামাজের পরে মসজিদে জিলাপি এবং অনেক সময় খিচুড়ি মাংস ও দিতো। শিন্নি যেইটাকে বলে।
বাড়ির পুরুষেরা মসজিদ থেকে ফেরার পরে সেই অল্প জিলাপি অথবা শিন্নি খাওয়াটা যেন একটা স্বর্গীয় শান্তি জড়িয়ে থাকতো। কয়েক বছর আগেও সব জায়গায় ডিস লাইনের এত এভেইলেবল ব্যবস্থা ছিলোনা। বিটিভিতে শুক্র শনিবার বাংলা সিনেমা দিতো। সেই সিনেমা দেখার জন্য সবার সে কি আগ্রহ ও কৌতুহুল! এমনকি সিনেমার ফাঁকে বিজ্ঞাপন গুলো ও সবায় ধৈর্য্য নিয়ে দেখতো। শুক্রবারে পিকনিকের আয়োজনটাও নেহাত কম ছিলোনা। আহামরি আয়োজন না থাকলেও ডিম খিচুড়ি স্বল্প আয়োজনের পিকনিকে যে আনন্দ আর খুশি মিশে থাকতো তা আজ বিলুপ্তি প্রায়।
শুক্রবারে ঘুরতে যাওয়া আরেক মানসিক প্রশান্তির উৎস ছিলো। খুব দূরে কোথাও না অথবা কাছের কোন চেনা জায়গাতেই ঘুরতে যাওয়া একটা আনন্দ ও খুশি মিশে থাকতো। অনেক পরিবারকেই দেখতাম শুক্রবার এই দিনটাতে বেড়াতে যেতে। শুক্রবার অনুষ্ঠান ব্যাতীত ও দাওয়াত দিতো অনেকেই তাদের আত্মীয়স্বজনকে। মিষ্টিফলমুল নিয়ে বেড়াতে আসা সেই আত্মীয়স্বজন গুলোকে এখন একটু কমই দেখা যায়। শুক্রবারের বিকেলগুলো ও অসাধারণ ছিলো,ছোট ছোট বাচ্চাদের বিভিন্ন খেলায় মুখোরিত বাড়ির আঙিনা! ছেলেদের ক্রিকেট খেলার হট্টগোল! আমাদের মায়েদের গল্পগুজব! দূরে সদ্য শৈশব পেরিয়ে কৈশরে পা দেওয়া তরুণীর হালকা সাজগোজ, উদাস চোখে স্নিগ্ধ আকাশ দেখার চাহনি সবই যেন এখন কল্পনার অতীত! শুক্রবার মানেই ছিলো মুখরোচক খাবার,ঘুরতে যাওয়া,বই খাতা কলম পেন্সিলের ও ছুটি,শুক্রবার মানেই ছিলো অতিথি আপ্যায়ন, খেলাধুলা মানসিক শান্তির বিনোদন!
শুক্রবার আজ ও আসে সপ্তাহ ঘুরে নিয়মমাফিক ভাবে। আজ ও ম্যাক্সিমাম মানুষের বাড়িতে হরেক রকম রান্না মাংসের তরকারির ঘ্রাণ উঠে চুলাতে। কিন্তু, আগের মত সেই স্বাদ সেই আনন্দ যেন ফিকে ও মলিন হয়ে গেছে! আজ ও জুম্মার নামাজের শেষে জিলাপি বিলির প্রচলন আছে কিন্তু এখন এই জিলাপীর একটা সামাজিক ট্রল হয়েই আছে। আজ টিভি জুড়ে দেশী বিদেশি চ্যানেলের অভাব নেই। কিন্তু, টেলিভিশন দেখার প্রচলনটাই কমে গেছে। আত্মীয় স্বজনদের আনাগোনাও এখন খুব কম। বয়সের সাথে অনূভুতিরা বদলায় স্বাভাবিক। কিন্তু, আজকাল ছোটদের মাঝেও এই দিনটা নিয়ে আগের মত বিশেষ প্রফুল্লতা লক্ষ্য করা যায়না। শুক্রবারের আনন্দটা এখন কেমন যেন গল্পের মত শোনায়। সময়ের সাথে বদলে গেছে অনেক কিছুই হয়তো পরবর্তী প্রজন্মের কাছে এইগুলো রুপকথা শোনাবে!
গল্পের বিষয়:
গল্প