আম্মু! আজকে ইফতারিতে কি স্যুপ খাবো আমরা?
–না মা! এটা ভাতের মাড়।
–ঐ তো এটা ভাতের স্যুপ। মজা লাগে! হি হি আজকে আমরা স্যুপ খাবো।
একটু পরই পাশের ফ্ল্যাটের এক প্রতিবেশী কলিংবেল দিল। লামিয়ার আম্মু তারাতারি ভাতের মাড়ের বাটি দুটি ডাইনিং টেবিল থেকে নিয়ে রান্নাঘরে লুকিয়ে রেখে দরজা খুললো।
–আন্টি আজ ইফতারি বানালে একটু দিও। বিরিয়ানি খাইতে খাইতে আর ভাল্লাগেনা। ভাজাপোড়া খাইতে মন চাইতেছে।
রুদাবার চোখেমুখে লজ্জা! কি করবে বুঝতে পারছেনা। কিন্তু প্রতিবেশীকে দুর্বলতা বুঝতে দিতে নেই।এমনকি কাউকেই না। সবাই দুর্বলতায় হিট করতে পারে সুযোগ বুঝে এটা রুদাবা ভালো করেই জানে। বাস্তবতা মানুষকে অনেক কিছু শেখায়। সুখে থাকা মানুষগুলো কখনও দুর্বলের সচীন অবস্থার বাস্তবতা উপলব্ধি করতে পারেনা। করলেও তা জ্ঞান বিতরণে সীমাবদ্ধ। আমি মনে করি জ্ঞান সবারই কম বেশি আছে। কেউ বাস্তবতার কড়াল থাবায় কুল হারায়,আবার কারও হাত পা বাঁধা থাকে নিজেকে ইনডিপেন্ডেন্ট করার। সবাই যে সব পারেনা! পারা সম্ভব হয়না।
অবশেষে বললো” আমরা আজ ইফতারি বানাবোনা,প্রতিদিন ভাজাপোড়া খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না।” প্রতিবেশী আরজুমানের ছোট মেয়ে তিথীর আল্লাদে গদগদ মুখটা মলিন করে সে চলে গেলো। তিথীর বাবা ব্যাংকের ম্যানেজার। এই বাড়িতে তাদের দুটো কেনা ফ্ল্যাট। ভদ্রলোক খুব বিরিয়ানি প্রিয়। আর যখনই রান্না করবে রুদাবার মেয়ে লামিয়ার জন্য পাঠাবে। রুদাবাও এই গিভ & টেক ফর্মুলা ফলো করেই চলে। এটাই পৃথিবীর চরম সত্য একটা বাস্তবতা। কেউ কাওকে একাই ভালোবেসে যেতে পারেনা। দায়িত্বের ক্ষেত্র,আত্মীয়ের ক্ষেত্র তবে ভিন্ন। তবে কোয়ারেন্টাইনে রুদাবার একটু কষ্ট হচ্ছে। এই নিম্নমধ্যবিত্তদের যা হয় আর কি। বুক ফাটে তো মুখ ফোঁটেনা।
দরজা লাগিয়ে রুদাবা ভাতের মাড়ের বাটি দুটি নিয়ে মেয়েকে নিয়ে প্রার্থনা করে,
— “হে আল্লাহ! দেখো আমার এই অবুঝ শিশুটি অভাব বুঝেনা,সে এই খাবারে মহাখুশি। এমনি করে সকল মানুষকে অল্প আহারে তৃপ্তি দান কর। এই কোয়ারেন্টাইনে আমাদের মত যারা সম্মানের ভয়ে হাত পাতেনা তাদেরকে তুমি তোমার সাম্রাজ্যের বিশাল ধনরাশি,বৃক্ষের উদ্যান ও সবচেয়ে বড় নিয়ামত কাওসার দান কর। তুমিই একমাত্র রিজিকের মালিক। তুমি আমাদের খাবারের ব্যবস্থা করো। তুমিই সম্মানের মালিক। জানিনা এ পরিস্তিতি কতদিন চলবে। তুমি আমাদের রক্ষা করো অসম্মানের হাত হতে। শুনেছি পাপের বোঝা ভাড়ি হলে নাকি তুমি মহাবিপদসরুপ আযাবের নির্দশন দাও।
চেয়ে দেখো প্রভু! এ শিশুটি কিভাবে আমার সাথে তোমার দরবারে হাত তুলেছে। তুমি তো দয়ার সাগর! ওগো দয়াময়! ক্ষমা করে দাও প্রভু! আমাদের ক্ষমা করে দাও। বিতারিত করে রক্ষা করো এই করোনা নামক তোমার দেয়া এ কঠিন মহাবিপদ হতে। হে প্রভু! তুমি অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী। অলৌকিকভাবে কাল সকালে সব দ্বার খুলে দাও, করে দাও করোনামুক্ত পৃথিবী। আমিন।” ছোট্ট লামিয়াও মায়ের দেখাদেখি বললো,”আমিন”।
গল্পের বিষয়:
গল্প