পরিণতি

পরিণতি
আজ গ্রাম থেকে কাব্য’র বাবা-মা শহরে এসেছিলেন ডাক্তার দেখাতে। তারা দুপুরের খাবার খেয়েই রওনা দিয়েছেন।গ্রামের গৃহস্থ বাড়ি তাদের। বাড়ি ছেড়ে একটা দিন অন্যত্র থাকার উপায় নেই তাদের। গ্রাম থেকে বহুদিন পর ছেলের বাড়ি এসেছেন। আসার সময় পুকুরের সবথেকে বড় রুইমাছ টি নিয়ে এসেছেন ছেলেকে খাওয়ানোর জন্য। শত ব্যস্ততার মধ্যেও চলে যাওয়ার আগে নিজ হাতে রান্না করতে ভুলেন নি আনোয়ারা বেগম।
দ্রুত দুপুরের খাওয়া-দাওয়ার পরেই রওনা দিয়েছেন।পিছে ট্রেন ছুটে যাওয়ার ভয়। বিকেল পাঁচটা। অফিস থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে ভাত খেতে বসেছে কাব্য। ভাতের ভেতর একটা চুল পাওয়ায় বেশ কর্কশ গলায় ডাক দেয় মাহদিয়া কে। মাহদিয়া তখন কাব্য কে খেতে দিয়ে, রান্নাঘরে থালাবাসন ধুতে ব্যস্ত। মাহদিয়া ডাইনিং রুমে আসতেই কাব্য চেয়ার ছেড়ে উঠেই মাহদিয়ার তলপেট বরাবর কষে একটা লাথি মারে।হঠাৎ আঘাতে ব্যালেন্স হারিয়ে ফেলে মাহদিয়া। কয়েক হাত দূরে গিয়ে ছিটকে পড়ে যায়। প্রচন্ড ব্যাথায় কাতরাতে থাকে সে। কাব্য খুব বিচ্ছিরি ভাষায় মাহদিয়ার মা তুলে একটা গালি দিয়ে বলে,
-মাগী আর কতো ঢং দেখাবি! মাহদিয়া মেঝেতে পড়ে প্রচন্ড ব্যথায় কাতরাতে থাকে। অতিকষ্টে বলে,
-আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। সত্যিই সহ্য করতে পারছিনা। তুমি আমাকে শুধু একটু হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছে দাও। তোমার পায়ে পড়ি কাব্য সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ না করে আরো কিছু বিচ্ছিরি বিচ্ছিরি গালিগালাজ করে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। ফ্ল্যাটের দরজা খোলা-ই ছিলো।
কিছুক্ষণ পরে পাশের ফ্ল্যাটের সাকিবের মা আসে ফ্রিজে মাছ রাখতে। কোরবানির গোশত রেখে তাদের ফ্রিজে সুঁই রাখবার মতোন জায়গা টুকুনও অবশিষ্ট নেই। ফ্রিজ ডাইনিং রুমে রাখা। ডাইনিং রুমে ঢুকতেই তার চোখ যায় টেবিলের উপরে রাখা ভাতের প্লেটের উপরে। সেই সাথে দেখতে পায় প্লেটের উপরে একটা আধপাকা চুল। বুঝতে পারে কাব্য’র মা আজ রান্না করায় তারই চুল হয়তো-বা পড়েছে। কারণ মাহদিয়ার চুল বেশ ঘন কালো রঙের। হঠাৎ চোখ যায় মেঝেতে। মাহদিয়া পড়ে আছে। হলুদ শাড়িতে রক্তের দাগ ভেসে উঠেছে। সাকিবের মা ভয় পেয়ে যায়। কারণ মাহদিয়া আট মাসের অন্তসত্বা। তাড়াতাড়ি সাকিবের বাবাকে ডাক দেয়। অবস্থা গুরুতর দেখে কাব্য কে বেশ কয়েকবার কল ও দেয়। কিন্তু কল ওয়েটিং। উপায়ন্তর না দেখে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যান মাহদিয়া কে নিয়ে।
ফুটফুটে একটা মেয়ে হয়েছে মাহদিয়ার। সিজারের ঝামেলা পোহাতে হয়নি তাকে। হাসপাতালের ডাক্তার-নার্স সহ সকলেই বাচ্চাটিকে দেখে মুগ্ধ হয়ে যায়। এতো ফুটফুটে চেহারার, গোলাপী রঙের বাচ্চা খুব কমই দেখা যায়। কিছুক্ষণ পরেই সকলেই বলাবলি করতে থাকে বাচ্চার বাবা কোথায়? তাকে দেখছি না কেন? রাত পেরিয়ে সকাল হয়ে যায় কাব্য’র কোনো খোঁজ নেই। তাকে ফোন করেও পাওয়া যাচ্ছে না। এভাবে দুইদিন অতিবাহিত হয়ে যায়। এদিকে হাসপাতাল থেকে বিল পরিশোধের জন্য বারবার বলছে। উপয়ান্তর না দেখে মাহদিয়া তার গলায় থাকা স্বর্ণের চেইনটি জমা দেয় রিসিপশনে।
চেইন খানা তার মায়ের দেওয়া শেষ স্মৃতি ছিলো। বাসায় ফিরে শরীর বেশ দূর্বল লাগে তার। সেই অবস্থায় রান্না চড়িয়ে দেয়৷ কারণ এখন সে না খেয়ে থাকলে বাচ্চা দুধ পাবেনা। বাচ্চা কে শুইয়ে রেখে রান্না ঘরে যায় সে। এমন সময় কাব্য আসে বাসায়। বাচ্চাকে দেখেই রেগে যায় সে। দ্রুত রান্না ঘরে ছুটে যায়। মাহদিয়া রান্নায় ব্যস্ত। কাব্য পেছন থেকে তার চুলের মুঠো ধরে টান দেয়। কড়াইয়ের গরম তেল ছিটকে মাহদিয়ার পায়ের উপর পড়ে। সেই অবস্থাতেই ধাক্কা দিয়ে মেঝেতে ফেলে এলোপাথাড়ি লাথি মারে। এতো টুকুতেই থেমে থাকেনা। পাশে পড়ে থাকা গরম খুন্তি চেপে ধরে মাহদিয়ার মুখে। তারপর অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে করতে বলে,
-তোকে না বলছিলাম বাচ্চা নষ্ট করে ফেলতে। কার কাছে গিয়ে পেট বানাইছিস তার কাছেই যা। আমি বাচ্চার পরিচয় দিতে পারবো না। মাহদিয়া মেঝেতে পড়ে ছটফট করতে করতে অস্ফুটস্বরে শুধু বলে,
-বাচ্চার বাবা তুমি।আমি কারো কাছেই যায়নি। আর আমার বাচ্চাকে আমি খুন করতে পারিনা। সে নিষ্পাপ।
-বুঝছি তুই আমাকে শান্তিতে থাকতে দিবি না। মর তুই তোর বাচ্চাকে নিয়ে।
মাহদিয়া নির্বাক হয়ে যায়। তার পায়ের তলা থেকে যেন আজ মাটি সরে গেছে৷ এই মানুষটিকেই সে ভালোবেসে ছিলো! এই মানুষ টিকেই সে বিশ্বাস করে তার বাবা-মা কে ফেলে চলে এসেছিলো! মাহদিয়া ও কাব্য ছয় বছর প্রেম করার পরে কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করেছিলো। প্রেমের শুরুতে কাব্য’র আগ্রহ টাই বেশি ছিলো। রোজ সে মাহদিয়া কে ফলো করতো। বিভিন্ন জিনিস গিফট করতো৷ ভালোবাসা প্রকাশের জন্য কতশত পাগলামিই না করেছিলো কাব্য। একসময় কাব্য’র পাগলামির কাছে হার মেনে যায় মাহদিয়া। ধীরেধীরে সেও দূর্বল হয়ে পড়ে কাব্য’র প্রতি। তারপর টানা ছয় বছর চুটিয়ে প্রেম করেছে তারা। তাদের কাপল দেখে ক্যাম্পাসের সবাই হিংসা করতো মনে মনে। অতঃপর বাসার সম্মতি না নিয়েই পালিয়ে বিয়েও করে ফেলে তারা৷ কাব্য ছোট খাটো একটি চাকরিও পেয়ে যায় প্রাইভেট কোম্পানি তে। বেশ ভালোই যাচ্ছিলো তাদের দুজনের ছোট্ট সংসার। অর্থকড়ির অভাব থাকলেও, তাদের মাঝে ভালোবাসার কোনো কমতি ছিলো না।
একসময় দুজনের পরিবার থেকে তাদের বিয়েটা মেনেও নেয়। কাব্য যেদিন জানতে পারে মাহদিয়া প্রেগন্যান্ট, সেদিন তার আনন্দ দেখে কে! খুশিতে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিলো৷ সবকিছু ভালোই চলছিলো। হঠাৎ কাব্য যে কোম্পানিতে চাকরি করে, কোম্পানির মালিক মারা যান। কোম্পানির দায়িত্ব চলে যায় মালিকের মেয়ে শায়লার উপরে। শায়লা দেখতে যেমন সুন্দরী, তেমনি বুদ্ধিমতীও। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সে সব দায়িত্ব বুঝে নিয়ে, কোম্পানি তার নিয়ন্ত্রণে করে ফেলে। কিছুদিনের মাঝেই শায়লার সাথে খুব ভালো একটা সম্পর্ক হয়ে যায় কাব্য’র। তারা বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে খাওয়া-দাওয়া, ডিস্কো তে অনেক রাত অব্দি ফূর্তিতে মেতে থাকতো প্রায়ই৷ এমনকি তাদের মধ্যে অনেকবার শারীরিক সম্পর্ক হয়৷ শায়লা কাব্যকে বিয়ের কথা বলে। এবং সেই সাথে বলে দেয়, তার স্ত্রীকে ডিভোর্স দিতে।
কাব্য রাজি হয়ে যায় শায়লার প্রস্তাবে। কারণ শায়লাকে বিয়ে করতে পারলে সে কোম্পানির মালিক হতে পারবে। বিপুল পরিমাণ অর্থকড়ির মালিক হয়ে যাবে সে রাতারাতি। দামী বাংলো, দামী গাড়ি, বিপুল পরিমাণ অর্থকড়ি এসব ভাবতে ভাবতে সে আর স্বাভাবিক থাকতে পারে না। একটা ঘোরের মধ্যে পড়ে যায়। এখন তার মাথায় শুধু একটাই চিন্তা ঘুরপাক খায়, মাহদিয়া কে ডিভোর্স দিয়ে কিভাবে শায়লা কে বিয়ে করা যায়। কিন্তু সে মাহদিয়া কে ডিভোর্স দিতে পারছিলো না। কারণ মাহদিয়ার সামান্যতম কোনো দোষ সে খুঁজে পাচ্ছেনা। যাতে করে ডিভোর্স দেওয়া যায়। পরে সাত-পাঁচ না ভেবে মাহদিয়া কে সরাসরি ডিভোর্স দেওয়ার কথা বলে। মাহদিয়া ডিভোর্সের কথা শুনে প্রথমে মনে করে কাব্য হয়তো-বা মজা করে তাকে ভয় দেখাচ্ছে। কিন্তু পরে যখন বুঝতে পারে বিষয়টি সিরিয়াস, তখন সে কাব্য’র হাতে পায়ে পড়ে কান্নাকাটি করে৷ তারপরও কাব্য’র মন গলে না। বরং সে প্রতিনিয়ত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতে থাকে মাহদিয়া কে। তারপরও মাহদিয়া সব কিছু সহ্য করে চুপচাপ সংসার করছিলো। আর এখন তো বাচ্চা ও হয়ে গেছে।
কাব্য মনে মনে ঠিক করে ফেলে সে, মাহদিয়া আর তার বাচ্চাকে খুন করবে। তারপর শায়লাকে বিয়ে করে ধনীর খাতায় নাম লিখাবে। রাত তখন সাড়ে বারোটা বাজে। কাব্য বাসায় ফিরেছে মাত্র। আজ সে সব প্রস্তুতি নিয়েই নিয়েছে। মাহদিয়া আর বাচ্চাকে সে খুন করবে আজ রাতেই। বেডরুমে এসে চুপিসারে মাহদিয়ার খাটের নিচে একটি টাইম বোম রেখে দেয়। আর খাটের নিচে গ্যাস সিলিন্ডার রেখে দেয়।যাতে সবাই ভাবে গ্যাস সিলিন্ডার থেকেই দূর্ঘটনা ঘটেছে। তারপর বাসা থেকে বের হয়ে আসে। আর ত্রিশ মিনিটের ব্যবধানেই বোমার আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে মাহদিয়া এবং তার বাচ্চার শরীর। সে এখন অব্দি কখনোই তার বাচ্চাকে কোলে নেয় নি। ছোট নিষ্পাপ শিশু তার বাবার দিকে তাকিয়ে শুধু হাসে।
মাহদিয়া অনেকবার কোলে দিতে চাইলেও সে কখনোই বাচ্চাকে কোলে নেয়নি। কাব্য মনে মনে একটা পৈশাচিক আনন্দ অনুভব করে। এবার শায়লাকে বিয়ে করতে তার আর কোনো বাধা নেই। শায়লাকে ফোন দেয় সে।দেখা করতে চায়৷ শায়লা তাকে মেইন রোডে অপেক্ষা করতে বলে৷ কাব্য মেইন রোডের পাশে দাঁড়িয়ে শায়লার জন্য অপেক্ষা করছিলো। হঠাৎ একটা ট্রাক ব্রেক ফেল করে কাব্য কে পিষে দেয়৷ ভাগ্য ভালো ট্রাকের চাকা তার পায়ের উপর দিয়ে উঠে। যারফলে সে বেঁচে যায় ঠিকই কিন্তু পঙ্গু হয়ে যায়। কাব্য হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছে। তার একটি পা কেটে ফেলা হয়েছে। পাশে বসে আছে মাহদিয়া। সে অসম্ভব রকম কান্নাকাটি করছে৷ সেদিন রাতে মাহদিয়া ওয়াশরুমে গিয়েছিল। আর তখনই বোমা বিস্ফোরণ হয়। মাহদিয়া বেঁচে গেলেও বাচ্চাটি আর বাঁচেনি৷ বোমার আঘাতে তার শরীর ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। মাহদিয়া এখনো জানেনা যে, এটি কাব্য’রই কাজ৷
নিজ সন্তানকে হারিয়ে সে পাগলপ্রায়৷ মানসিক ভারসাম্য হারাতে বসেছে। এমন সময়ে তার ভালোবাসার মানুষের এই অবস্থা। দুদিন পর কাব্য’র অফিস থেকে একটি লোক আসে। এসে ভালোমন্দ কিছু জিজ্ঞাসা না করেই একটি খাম দিয়ে চলে যায়৷ মাহদিয়া তখন ডাক্তারের সাথে কথা বলছিলো। কাব্য খামটি খুলতেই দেখতে পায়, তাতে প্রায় লাখ দুয়েক টাকা এবং একটি চিঠি। কাব্য বুঝতে পারে শায়লা পাঠিয়েছে। দ্রুত চিঠিটা পড়ে সে। চিঠির সারমর্ম ছিলো এমন, “তোমাকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়৷ কারণ আমি কোনো পঙ্গু কে বিয়ে করতে পারবোনা। এখানে দু লাখ টাকা আছে। যদি প্রয়োজন পড়ে তবে বলবে, আরো কিছু টাকা পাঠিয়ে দিবে। আর হ্যাঁ, ভুলেও আর কখনো অফিসে আসবেনা তুমি। ভালো থেকো।”
কাব্য চিঠি টা পড়ার পরে বাস্তবে ফিরে আসে। এতোদিন ধরে সে একটা ঘোরের মধ্যে ছিলো। বুঝতে পারে সে কি ভুল করেছে। সে তার করা ভুলের জন্য অনুশোচনা ভোগে। শোয়া থেকে উঠে বসতে চায়। কিন্তু শরীরে সেই শক্তি টুকু নেই৷ জোরে উঠে বসতে গিয়ে বেড থেকে পড়ে যায় নিচে৷ এমন সময় মাহদিয়া দৌঁড়ে আসে। মাহদিয়া কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয় সে৷ আর বলে আমাকে মাফ করে দাও। আমি অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছি। তারপর সবকিছু খুলে বলে। মাহদিয়া কিছুক্ষণের জন্য বাকরুদ্ধ হয়ে যায়৷ তারপর স্বাভাবিক হয়ে সামলে নেয় নিজেকে। কাব্য কে মাফ করে দিতে চাইলেও পারেনা। কারণ সে তার মেয়েকে খুন করেছে। এর প্রতিশোধ সে সুদে আসলে নিবে।
একসপ্তাহ পর।
হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়ে তারা বাসায় ফিরে। নতুন বাসায় উঠেছে তারা। কাব্যকে সুন্দর করে রাতের খাবার খাইয়ে দেয় মাহদিয়া। আর ঔষধের সাথে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে দেয়৷ কাব্য ঘুমিয়ে গেলে তাকে শক্ত করে খাটের সাথে বেঁধে ফেলে। তারপর এক হাড়ি গরম পানি ঢেলে দেয় কাব্য’র গায়ে। কাব্যের ঘুম ভেঙে যায়। সে উঠতে চায়। কিন্তু হাত-পা শক্ত করে বেঁধে থাকায় উঠতে পারেনা। সামনে তাকিয়ে দেখে মাহদিয়া। মাহদিয়া হাসছে বেশ জোরে হাসছে। হাসলে মাহদিয়া কে অসম্ভব রকম সুন্দর লাগে৷ এই হাসি দেখেই মেয়েটিকে ভালোবেসে ফেলেছিলো সে। তবে আজ ভয়নক লাগছে তার হাসি৷ কাব্য ভয় পেয়ে যায়৷ মাহদিয়া কে কিছু একটা বলতে যায়। কিন্তু তার ঠোঁট ফেভিকল দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে মাহদিয়া।
মুখ দিয়ে একটা শব্দ ও বের করতে পারেনা সে। মাহদিয়া রান্নাঘর থেকে ধারালো বটি নিয়ে আসে। তারপর কয়েকটি কোপ বসিয়ে দেয় কাব্য’র বুক বরাবর। বুক হা হয়ে ফাঁক হয়ে যায়। কাব্য সবই দেখছে। যন্ত্রণায় ছটফট করছে৷ কিন্তু মুখ থেকে একটা শব্দ ও বের করতে পারছেনা৷ মাহদিয়া এবার দু হাত দিয়ে টেনে আরো বড় ফাঁকা করে দেয়। তারপর হাত ঢুকিয়ে ফুসফুস – কলিজা ধরে টান দেয়৷ কাব্য যন্ত্রণা সহ্য না করতে পেরে হয়তো কিছু একটা বলতে চাইছে কিংবা শেষবারের মতো পানি খেতে চাইছে। কিন্তু সেই সুযোগটুকুও আর পায় না। মাহদিয়া টেনে হিচড়ে কাব্য’র ফুসফুস- কলিজা শরীর থেকে ছিড়ে আলাদা করে ফেলে৷ শেষবার পানি টুকুও খেতে চাওয়ার সুযোগটুকুও পায়নি সে।
নিদারুণ যন্ত্রণা ভোগ করে মারা যায় কাব্য। মাহদিয়া হাসছে। আজ সে সুখের হাসি হাসছে৷ এখন তার মনে আর কোনো দুঃখ কষ্ট নেই৷ নেই কোনো শূন্যতা। তার খুব ঘুম পাচ্ছে। সে ঠিক করে নিয়েছে সকালে থানায় গিয়ে সবটা বলবে। তারপর যে শাস্তি পাওয়ার পাবে। সেটা নিয়ে তার কোনো মাথা ব্যথা নেই। আপাতত সে একটা ঘুম দিবে৷ শান্তির ঘুম। বহুদিন ঘুমানো হয়না তার। বড্ড ক্লান্ত সে। তবে শেষবার সে তার ভালোবাসার মানুষটির সঙ্গে একবার ঘুমাতে চায়৷ মাহদিয়া চটচটে রক্তের উপরেই শুয়ে পড়ে। একহাতে কাব্যের কলিজা ধরা। ভালোবাসার মানুষের কলিজা। অন্য হাত কাব্য’র বুকের মধ্যে। বুকের একদম গভীরে। বুকের যতোটা কাছে যাওয়া যাই, তার থেকেও যেন একটু বেশিই কাছেই।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত