উপকার

উপকার
আমার গার্লফ্রেন্ড ভয়ংকর রকমের সুন্দরী। আমার বন্ধুমহলে আর কারো আমার মতো এত সুন্দরী গার্লফ্রেন্ড নাই। এমন কী আমার ছোট বা বড় ভাইব্রাদার কারো না। এলাকার ছোট ভাইয়েরা সবসময় বলে, ভাই আপনি জিতছেন।
আমি নিজে দেখতে ডিপজলের মতো হলেও ছোটবেলা থেকেই আমার শখ ছিল পরিমনির মতো একটা সুন্দরী মেয়ের সাথে প্রেম করবার। মিতুর সাথে প্রেম করারর মাধ্যমে আমার সেই শখ পূরণ হয়েছে।
আমার গার্লফ্রেন্ড মিতু যে শুধু দেখতেই সুন্দরী তা না। আমার গার্লফ্রেন্ড আমার যথেষ্ট কেয়ারও নেয়। যেমন ধরুন, রাত দশটা বাজল। মিতু আমাকে সাথে সাথে একটা মেসেজ দিয়ে বলবে, ‘বাবু, তুমি এক্ষুণি ঘুমিয়ে পড়ো। আর একটুও রাত জাগবা না। আর্লি টু বেড আর্লি টু রাইজ। আর শুনো, সকালে উঠে অবশ্যই পড়তে বসবা। গুড নাইট, সোনা। উমমমমম্মাআআআ আমিও মিতুর কথা শুনে সুবোধ বালকের মতো ঘুমিয়ে পড়ি। প্রথম প্রথম ঘুম আসত না। রাত জেগে রুমমেটের প্যাকেট থেকে সিগারেট চুরি করে খাওয়ার অভ্যাস যার তার কিভাবে এত তাড়াতাড়ি ঘুম আসে বলেন! তবে এখন আসে। মিতুর মতো সুন্দরী একটা মেয়ের জন্য আমি সব করতে পারি। সব মানে সব। মিতু চাইলে আমি আবার ইন্ডিয়া-পাকিস্তান এক করে ফেলতে পারি। লর্ড হার্ডিঞ্জের মতো বঙ্গভঙ্গ রদের ঘোষণাও দিতে পারি। আবার দুই বাংলাকে এক করে ফেলতে পারি। আর এ তো সামান্য সকাল সকাল ঘুমিয়ে পড়া। তা-ও আবার আমার নিজের ভালোর জন্যই।
আমি ঘুমিয়ে যাই। ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখি। আমাদের বিয়ে, একটা সংসার, ফুটফুটে একটা বাচ্চা। স্বপ্নের মধ্যেই আমি আবার মাঝেমধ্যে কনফিউজড হয়ে যাই। বাচ্চাটা কী আমার মতো হবে নাকি মিতুর মতো? আমার মতো হলে তো প্রবলেম। আর ফুটফুটে থাকল না। নাহ্! মা, মানে মিতুর মতোই হবে। মিতুকে জিতিয়ে দিয়ে আমি তৃপ্তির ঘুম ঘুমাই।
মিতু যে শুধু আমার সময় আর স্বাস্থ্যের দিকেই খেয়াল রাখে তা না। আমার মানিব্যাগের দিকেও ওর যথেষ্ট কেয়ার। ডেটে গেলে পাঁচ টাকার বাদাম কিনে দিলেই খুশি। কোনোদিন দামী কোনো রেস্টুরেন্টে যাওয়ার জন্য বায়না ধরে নাই। শপিং-এ যেতে চায় না। আমার টাকা খরচ হবে বলে কোথাও গেলে রিকশা পর্যন্ত নিতে মানা করে, আমরা হেঁটে যাই।
আজ পর্যন্ত গিফট বলতে মিতুকে আমি এক প্যাকেট টিস্যু আর এক ডজন কাঁচের চুড়ি কিনে দিয়েছি। আরেকটা জিনিস অবশ্য দিয়েছি, সেটা আপনাদের বলা যাবে না। যাইহোক, আমার দেয়া সামান্য টিস্যু আর চুড়ি পেয়েই মিতু খুশিতে আত্মহারা। অথচ আমার বন্ধুরা তাদের গার্লফ্রেন্ডদের বসুন্ধরায় নিয়ে গিয়ে শপিং করে দিয়েও মন পায় না। বলে অমুকের বফ তমুক দিছে, তমুকের বফ অমুক দিছে, তুমি আমারে কিচ্ছুই দাও না। মিতুর মতো এমন সুন্দরী প্লাস লক্ষ্মী মিক্সড কম্বিনেশনের একটা মেয়েকে গার্লফ্রেন্ড হিসেবে পাওয়া মানে রাজ কপাল। মাঝেমধ্যে আমার নিজেরই নিজের কপাল দেখে হিংসে হয়। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কপালের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা, পুরুত্ব মাপি।
এই রবিবার পর্যন্ত আমার জীবনের একমাত্র লক্ষ্যই ছিল সুন্দরী প্লাস লক্ষ্মী কম্বিনেশনের মিতুকে বিয়ে করা। কিন্তু রবিবার রাতেই আমার সব হিসেব-নিকেশ উলটপালট হয়ে গেল। আমার বুকের মধ্যিখানে আম্পান নামক ঝড়ের চেয়েও একটা শক্তিশালী ঝড় তান্ডব চালিয়ে গেল। আমি জানতে পারলাম মিতুর আমি ছাড়াও আরো দুইটা বয়ফ্রেন্ড আছে। কথাটা শুনে স্বাভাবিক ভাবেই আমার বিশ্বাস করার কথা না। করলামও না। কিন্তু তথ্য-প্রমাণ সবই মিতুর বিপক্ষে। আমি মিতুকে ফোন দিলাম। বারবার দিলাম। কিন্তু রিসিভ করল না। শেষে রাতে মেসেঞ্জারে নক করায় রিপ্লাই দিল।
-তুমি আমার সাথে এইটা একটা কাজ করলা?
-কী করছি আমি?
-কী করছি মানে! তোমার সোহেলের সাথে রিলেশন নাই?
-হুম আছে।
-আমার সাথে কী জন্য এমনটা করলা জানতে পারি?
-যা করছি তোমার ভালোর জন্যই তো করছি।
-আমার ভালোর জন্য?
-হুম।
-মানে?
-মানে..তুমি তো দশটা বাজলেই ঘুমিয়ে যাও। আমিই বলি। কারণ তোমার একটা ক্যারিয়ার আছে। পড়াশোনা করা দরকার। রাত জেগে আমার সাথে প্রেম করলে তো আর পড়াশোনা হবে না। তুমি তো ঘুমিয়ে পড়ো, আমার ঘুমাতে ঘুমাতে বাজে তিনটা-চারটা। তো এতটা সময় আমি করব?
-তাই বলে তুমি সোহেলের সাথে রিলেশন করে ফেললা?
-যা করছি তোমার ভালোর জন্যই। তোমার যাতে আমার পিছনে সময় নষ্ট না হয়।
-বাহ্! আর মেহেদীর সাথে প্রেম করলা কী জন্য?
-সেটাও তোমার ভালোর জন্য?
-ওহ্! শুনি কী ভালো?
-তোমার তো আমায় টিস্যু আর চুড়ি দেয়া পর্যন্তই শেষ। কিন্তু আমার লাগে লিপস্টিক, লিপ লাইনার, নেইল পলিশ, ফেস পাউডার, আই লাইনার, মাসকারা, আইশ্যাডো, মেকআপ, শ্যাম্পু ফর হেয়ার, শ্যাম্পু আফটার শাউয়ার, কনডিশনার, কোকোনাট অয়েল, সাবান, পাউডার, টুথ পেস্ট, টিপ, বডি লোশন, সান স্ক্রিন বডি লোশন, মেহেদি, গ্লিটার, বডি স্প্রে, পারফিউম, আলতা, ফেসওয়াশ, ফেস ক্রিম, অলিভ অয়েল, মেকআপ রিমুভার, হেয়ার স্প্রে ইত্যাদি ইত্যাদি। তো, এইগুলা আমি কই পাব? তাই ওর সাথে প্রেম করছি।
-বাই দ্যা ওয়ে..ওর বাবার কী অনেক টাকা?
-না। ওর কসমেটিকসের দোকান আছে।
-ওয়াও! আপনি আমার টাকা আর সময় বাঁচিয়ে অনেক উপকার করছেন বইন। তা আমার আর কী কী উপকার করা বাকি আছে আপনার শুনি একটু? অনেকক্ষণ ধরে ঐ পাশ থেকে কোনো রিপ্লাই নাই। আমি আবার মেসেজ দিলাম, ‘কী আর কোনো উপকার বাকী নাই?’
-আছে।
-কী সেটা, শুনি?
-গতকাল আমাকে ছেলে পক্ষ দেখতে আসছিল। ছেলে বিসিএস ক্যাডার। আমি বিয়েতে রাজি হয়ে গেছি।
-বাহ্ বাহ্! এখানে আমার কী উপকার হলো?
-ওমা! তুমি নিজেই না বলতে আমার সুখেই তুমি সুখী হও। একটা বিসিএস ক্যাডার ছেলের কাছে আমাকে বিয়ে দিতে পারলে আমার ফ্যামিলি খুশি হবে। আমার ফ্যামিলির খুশিতেই তো আমার সুখ। আর আমার সুখেই তো তোমার সুখ। তোমার সুখের জন্যই তো আমি এতকিছু করলাম। আর এখন! যার জন্য করি চুরি সেই বলে চোর।
-বাহ্! ওয়াও, এক্সিলেন্ট। আচ্ছা বাবু, আমার সময় বাঁচাবার জন্য তুমি সোহেলের সাথে প্রেম করতা। আমার টাকা বাঁচাবার জন্য মেহেদীর সাথে। এখন আবার আমার সুখের জন্য বিসিএস ক্যাডার ছেলেকে বিয়ে করছ, সবই মানলাম। কিন্তু এখন তাহলে মেহেদী আর সোহেলকে ঠকানো হয়ে গেল না?
-ওমা! তা হবে কী জন্য? আমি তো তোমার সাথে প্রেম করতাম ওদের উপকারের জন্যই।
-ওদের উপকারের জন্য! মানে?
-শুনো..মেহেদী আর সোহেল দুজনেই পাতলা-পোতলা দুইটা ছেলে। ফুঁ দিলে বাতাসের আগে উড়ে যাবে টাইপ।
তো আমার মতো সুন্দরী একটা মেয়ের সাথে ওরা প্রেম করছে, পাড়ার ছেলেপুলেরা ওদের একটা হাড্ডিও আস্ত রাখবে? আর তুমি তো মাশাল্লাহ নিরানব্বই কেজি। তুমি ছেলে ভালো হলেও তোমার অমন আলকাতরার মতো কালার আর গন্ডারের মতো শরীরের জন্য আমাদের পাড়ার সব ছেলেরা তোমাকে মিনি ডিপজল হিসেবে জানে। এছাড়াও আমি তোমার নামে ভয়ংকর ভয়ংকর সব কথাবার্তা বলে বেড়াই আর বলি তুমি আমার কাজিন। ব্যাস, এই কয়েক বছরে ওদের ধারে কাছেও কেউ ঘেঁষে নাই। আর, পাড়ার কোনো ছেলেও এখন আমাকে ডিস্টার্ব করে না।
আমি আমার গার্লফ্রেন্ডের মুখে উপকারের ফিরিস্তি শুনে তব্দা প্লাস হয়ে গেলাম। মিতু আমার বা আমাদের এত উপকার করছে যে আজকালকার দিনে কেউ কারো জন্য এতটা করে না। শুধু মাঝেমধ্যে ইসরাইল ফিলিস্তিনের জন্য করে। আর মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের জন্য করে। মিতুর এই উপকার পৃথিবীর ইতিহাসে হীরাক্ষরে লেখা থাকবে।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত