স্নেহের অঙ্গীকার

স্নেহের অঙ্গীকার
আজ বাসায় ফিরতে বেশ দেরী হলো। অতিরিক্ত রোগী থাকার কারনে চেম্বার থেকে বের হতে পারলাম না। রাত প্রায় ১২ টা বাজলো বাসায় ঢুকতে ঢুকতে। বাসায় ঢুকে দেখলাম আমার স্ত্রী তামান্না বাসায় নেই। প্রতিদিন তো সে আমার আগেই বাসায় আসে। আমি যতক্ষণ না আসি ততক্ষণ সে ডাইনিং টেবিলে হটপটে খাবার নিয়ে বসে থাকে আমার সাথে খাওয়ার জন্যে। আজ এখনো ফিরলোনা কেনো বুঝতে পারছিনা।
তামান্নার নিজের আইসক্রিম এবং কফিশপ আছে। সে নিজেই এইটা চালায়। তার ছোট থেকেই স্বপ্ন ছিলো বিজনেস উইমেন হবে। আর ব্যবসায় শিক্ষায় তার ট্যালেন্ট আমি স্কুল জীবন থেকে দেখেছি। হ্যা, তামান্না আমার স্কুল জীবনের প্রেমিকা। ভালোভাবে পরিচয় হয়েছিলো নবম শ্রেণিতে, আর দশম শ্রেণিতে প্রেম। সে ছিলো ব্যবসায় শিক্ষার মেরিট স্টুডেন্ট আর আমি ছিলাম বিজ্ঞান বিভাগের মেরিট স্টুডেন্ট। তখন থেকেই প্রেম। আর তখন থেকেই আমরা ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা ভাবনা করতাম। দশম শ্রেণিতে থাকাকালীন তামান্নাকে একবার জিজ্ঞেস করেছিলাম,
— ক্লাস এইটে এতো ভালো করার পরও সাইন্স নিলে না যে? তামান্না মুচকি হেসে বলেছিলো,
~ মাথায় যে বিজনেস উইমেন হওয়ার ভুত চেপেছে! এইটুকু বলে খুব দূরে তাকিয়ে তামান্না হাসি থামিয়ে আনমনা হয়ে গেলো। জিজ্ঞেস করলাম,
— কি হলো?
~ মনে হয়না হতে পারবো। এস.এস.সি আর এইচ.এস.সির পরেই তো বাসায় বিয়ে বিয়ে করবে। তারপর কোনো এক প্রবাসী কিংবা বিসিএস ক্যাডারের সাথে বিয়ে দিবে। সে টাকা উপার্জন করবে, আর আমি বাসায় রান্নাবান্না। আমি তামান্নার হাত ধরে বলেছিলাম,
— ম্যাডাম, আমি আছি তো।
~ কোন পরিবারের লোকেরা ঘরের বউকে ব্যবসা করতে দিবে? তামান্নাকে একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
— জামাই ঠিক থাকলে সব ঠিক। আমিও জব করবো, আর তুমিও তোমার বিজনেস করবে। তামান্না বললো,
~ বাচ্চা কে সামলাবে?
— বাচ্চার দাদা-দাদী আছে তো।
~ তা ঠিক। রান্নাবান্না আমি ম্যানেজ করে ফেলবো। বিজনেস তো আর সারাদিন করবোনা। একটা সময় করে রাত ৭/৮ টার দিকে বাসায় চলে আসবো। রান্নাবান্না করে আমার জামাইয়ের অপেক্ষায় বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকবো।
— আচ্ছা। তামান্না আমার হাত শক্ত করে ধরে বললো,
~ আর যদি কখনো ফিরতে বেশি দেরী হয়? রাগ করবে না তো? আমি বললাম,
— না। তখন আমি ম্যানেজ করে নিবো। বরং তোমার পছন্দের খাবার রেডি করে রাখবো। কারন যেদিন তুমি দেরীতে ফিরবে সেদিন বুঝে যাবো নিশ্চয় তোমার কাজের প্রেসার অনেক বেশি ছিলো।
~ আচ্ছা। আজ তামান্না দেরী করায় হঠাৎ বহুদিন পর এসব স্মৃতি মনে পড়ে গেলো। আমি তাড়াহুড়ো করে ফ্রেশ হয়ে কিচেনে গিয়ে দেখলাম রান্না আম্মুই করে রেখেছে। তাও বিরিয়ানি। আমি বিরিয়ানি গুলো গরম করে নিলাম আর তামান্নার প্রিয় স্ট্রভেরী আইসক্রিম বের করে রাখলাম ফ্রিজ থেকে। বেশি ঠান্ডা সে খেতে পারেনা। একটু পরেই দেখলাম মোবাইলে মেসেজ এসেছে, ‘জামাই, দরজা খুলেন। আমি এসেছি। আম্মা-আব্বা ঘুম তাই কলিং বেল দিলাম না।’ আমি গিয়ে দরজা খুললাম। তামান্নার মুড অফ। খুব শক্তপোক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরলো আমাকে। আমি তার কোঁকড়াচুলোতে হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
— কি হলো ম্যাডাম? তামান্না মাথা নাড়লো। বুঝিয়েছে কিছু না। আমি বললাম,
— দেরী হলো যে আজ?
~ আজ কাস্টমার বেশি ছিলো। আবহাওয়া রোমান্টিক তো তাই সব কাপলরাই আইসক্রিম আর কফি ডেটে এসেছিলো।
— ওহ।
~ স্যরি। একটু বসেন। আমি এক্ষুনি ভাত রেডি করছি। আমি তামান্নাকে একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরে রুমে যেতে যেতে বললাম,
— খাবার আমি রেডি করেছি। আপনি শুধু ফ্রেশ হয়ে নিন। তামান্না স্বস্তির মায়াভরা চোখে আমার দিকে তাকালো। আমি বললাম,
— গোলাপি শাড়িতে বেশ মানিয়েছে। তামান্না মুচকি হেসে বললো,
~ ফ্রেশ হয়ে আসছি। দুজনেই ডাইনিং টেবিলে খেতে বসলাম। তামান্না বিরিয়ানি দেখে খুব খুশি। খেতে খেতে বললো,
~ চৌধুরী সাহেব।
— হুম?
~ কথা তো রেখেছেন দেখছি। রাগও করেননি। খাবারও রেডি করেছেন বউয়ের জন্যে।
— গুণীজনেরা বলেছেন, বউকে খুশী রাখতে তা না হলে জীবন তেজপাতা। তামান্না হাসলো। খাওয়া শেষ করলাম দুজনেই। তামান্না ড্রইং রুমে বসলো। আমি বললাম,
— বসেন, আইসক্রিম আনছি।
~ ওয়াহ রে ওয়াহ! আমার জামাইটা! খাইয়ে দিতে হবে কিন্তু।
— আচ্ছা।
খাওয়ার পর প্লেটগুলো গুছিয়ে এসে আইসক্রিম নিয়ে বসলাম তামান্নার পাশে। আর আইসক্রিম খাইয়ে দিচ্ছিলাম। তামান্না বললো,
~ আচ্ছা জানেন? আজ এক কাপল আমার শপে কফি খেতে খেতে খুব রাগারাগি করেছে।
— কেনো?
~ ছেলেটা নাকি বিয়ের আগে বলেছিলো মেয়েটাকে চাকরি করতে দিবে। এখন দিচ্ছে না ব্লা ব্লা।
— কেনো? জব করতে দিলে সমস্যা কোথায়?
~ কেনো মানে? সবাই কি আর আমার চৌধুরী সাহেব নাকি?
— তাই?
~ জ্বি। কাল শুক্রবার না?
— হ্যা। তামান্না বললো,
~ অফ ডে। আড্ডা হবে নাকি?
— অবশ্যই।
~ আপনি বারান্দায় যান। আমি কফি বানিয়ে আনছি।
— কেনো আমি বারান্দায় কেনো যাবো? আমিও থাকবো রান্নাঘরে আপনার সাথে।
~ আপনি থেকে কি করবেন?
— আমি থেকে কি করবো মানে? আপনি যে কফি বানাবেন তখন আপনার শাড়ির আঁচল সরিয়ে কোমর বেয়ে পেটে হাত দিয়ে আপনাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরবে কে? পিঠের উপর থেকে চুলগুলো সরিয়ে চুমু খাবে কে? আপনার ঐ গোলাপের পাপড়ির মতো ঠোঁটগুলো স্পর্শ করবে কে?
~ যাহ! দুষ্টু। বেশি হয়ে গিয়েছেন। আম্মাকে ডাক দিবো কিন্তু এখন।
সেই রাতটি আমরা উপভোগ করেছি বারান্দায় খোলা আকাশের নিচে। দু কাপ কফি। আমি আর সে। এমন রাত আমাদের জন্যে নতুন কিছু না। আমাদের সম্পর্কটাই যে এমন, ভালোবাসাটাই যে এমন!
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত