সাদমান কল করেছে , ওর গলায় এক অন্যরকম তৃপ্তি খুঁজে পাচ্ছি , কেমন যেনো বিশ্বজয়ের আনন্দ ওর কণ্ঠে ঠিকরে পড়ছে ,
– বন্ধু, বিদিশা প্রেগন্যান্ট ,আমি বাবা হচ্ছি সাদমান বড়লোক বাবার ছেলে , সেইসাথে স্মার্ট , গুডলুকিং , বিদিশা ওর স্ত্রী নয় , ওর গার্লফ্রেন্ড , জাস্ট এগারো মাসের সম্পর্ক ওদের , এরই মাঝে সবকিছুই করে ফেলেছে , আমি ঠান্ডা গলায় বললাম
– তা এবোরেশন টা কোন হসপিটালে করছিস ?? কীভাবে করবি ?? গোপনে কাজটা করে দিবে নির্ভরযোগ্য এমন কাউকে পেয়েছিস নাকি আমি এরেঞ্জ করবো ?? সাদমান কিছুক্ষণ চুপ করে ছিলো , এরপর নীরবতা ভেঙ্গে বাজখাঁই গলায় বস্তির ভাষায় বললো
– কু**, ন**সক , শু*র , আমাকে তোর মতো কাপুরুষ ভাবছিস ?? আমার বন্ধু হয়ে তুই এইটা কি বললি ?? শোন , আজকে আমরা বিয়ে করছি , ভাবছি বিয়ের পর মিরপুরের ফ্লাটটায় বিদিশাকে নিয়ে উঠবো , তুই বিকেল চারটায় নিলয় আর শাফাতকে নিয়ে কাজী অফিসে চলে আসিস , বিয়ের পর তোদের জন্য ট্রিট আছে আমি আর বিশেষ কিছু বললাম না , শুধুই বললাম
– হুমম , আচ্ছা আসবো বিদিশা মেয়েটা বেশ সুন্দরী , ওর প্রেমে মগ্ন ছিলো অনেকেই , আমার বন্ধু হানিফও বিদিশাকে ভালোবাসতো, শুধুই ভালবাসতো বললে ভুল হবে , প্রচণ্ড রকম ভালোবাসতো, হানিফের নাকটা একটু অস্বাভাবিক রকমের লম্বা ছিলো , আমরা তাই ওকে মজা করে কাঠঠোকরা নামে ডাকতাম , মিডিল ক্লাস ফ্যামিলির ছেলে ছিলো , খুব গুছিয়ে কথা বলতো , দীর্ঘ দুই বছর বিদিশাকে ভালোবেসে গেছে , কিনতু পাত্তা পায় নি ,একপাক্ষিক ভালোবাসা যাকে বলে , একদিন বিকেলে হটাৎ করে এসে হানিফ আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো ,
– বন্ধু , বিদিশা আর আমার হইলো না রে , বিদিশা ওই বাবাখোর সাদমানের প্রেমে পড়ে গেছে , আমার দুই বছরের ভালোবাসা ওর কাছে কিছুই নারে ,
সাদমান তখন নেশাখোর হিসেবে বেশ পরিচিত ছিলো , বড়লোকের ছেলে বলে পায়রার মতো দুহাতে টাকা উড়াতো, রেগুলার নাইটক্লাব পার্টিতে জয়েন করতো , আর গার্লফ্রেন্ড ? সেতোহ অগণিত , বড়লোকের ছেলে বলে ওর গার্লফ্রেন্ডের অভাব নেই , সেই ফা*বয় সাদমানের নজর পড়লো বিদিশার উপর , হানিফ সাধাসিধে মানুষ , পাগলের মতো বিদিশাকে ভালোবেসে গেছে , সে জানতো সাদমান বিদিশাকে কখনোই বিয়ে করবে না , জাস্ট কিছুদিন শারীরিক সম্পর্ক রেখে তারপর ছেড়ে দেবে , সেটাই হানিফ বিদিশাকে বারবার বুঝাতে চেয়েছিল , কিনতু প্রেমে অন্ধ বিদিশা সেসব মানতে চায়নি , উল্টো হানিফকে থাপ্পড় মেরে দিয়েছিলো ,
ভালোবাসার অবহেলা আমার সাধাসিধে বন্ধু হানিফ সহ্য করতে পারে নি , ফলশ্রুতিতে পরদিন সকালে রেললাইনে হানিফের কাঁটা মৃতদেহ পাওয়া যায় , হানিফের এই মৃত্যূটা আমি কেনো জানি মেনে নিতে পারছিলাম না , হানিফ ছিলো আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু , একই ডিপার্টমেন্টে পড়ার সুবাদে ওর সাথে আমার বন্ধুত্বের চেয়েও বেশি ভাই-ভাই সম্পর্কটাই ছিলো , একই মেসে ছিলাম , একসাথে ঘুরে বেড়ানো , বাস্কেটবল মাঠে আড্ডা , মাঝে মাঝে টুরে যাওয়া হতো আমাদের , ওর মৃত্যূতে আমি কেনো জানি মানতেই পারছিলাম না , এক অব্যক্ত প্রতিশোধস্পৃহা আমার অন্তরকে ধ্বংস করে দিচ্ছিলো , প্রতিরাতে ঘুমানোর পর স্বপ্নে আমার বন্ধু হানিফের দুঃখদুর্দশাময় চেহারা দেখতে পেতাম ,দেখতাম ও কাঁদছে , ওর লম্বা নাক বেয়ে পানি পড়ছে , ঘুমুতে পারতাম না , তখনই ঠিক করলাম আমি আমার বন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নেবো , প্রথমে সাদমানের সাথে বন্ধুত্ব করবো ,
তারপর সাদমান বিদিশা দুজনের কাছ থেকেই প্রতিশোধ নেবো , প্লানমাফিক আমি সাদমানকে ছায়ার মতো ফলো করা শুরু করলাম , কিছুদিনের মাঝেই ওর সাথে আমার একটি ভালো ফ্রেন্ডশিপ হয়ে গেলো , রেগুলার ওর সাথে পাবে যাওয়া , একসাথে ড্রিংকস করা , জুয়ার আড্ডায় বসে আড্ডা সবকিছুই চলতে লাগলো , আমি জানতাম সাদমান কখনোই এক নারীতে আটকে থাকতে পারবে না , তাই আমিই ওকে বিদিশার প্রতি আরো বেশি লেলিয়ে দিলাম , ওকে বিদিশার প্রতি আরো আসক্ত করে দিলাম , ও অন্যান্য মেয়ে ছেড়ে বিদিশার পেছনেই পড়ে থাকলো , ফলশ্রুতিতে বিদিশা এখন প্রেগন্যান্ট , এখনি আমার প্রতিশোধ পূর্ণ করার উপযুক্ত সময়, অবশ্য এর আগেও প্রতিশোধ নিতে চেয়েছি , মাসখানেক আগেও খিলক্ষেতের মোড়ে সাদমানকে মারার জন্য লোক ফিট করেছিলাম , কিনতু ওকে মারতে পারে নাই ওরা , সাদমানের সাথে ওর আরেক বন্ধু থাকায় কিলিং মিশন বন্ধ রাখতে হয়েছিলো ,
তখন থেকেই সুযোগে ছিলাম কখন সাদমানকে বাগে পাওয়া যায় , কিনতু বিদিশার প্রেগন্যান্ট নিউজটা শুনেই মনে হলো এটাই পারফেক্ট সময় ওদের কাছ থেকে হানিফের মৃত্যুর বদলা নেয়ার , সাদমানকে এখন দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিলে বিদিশা অটোমেটিক শাস্তি পেয়ে যাবে , আর কিছু করা লাগবে না , ফোন করে কিলারদের আবার ভাড়া করলাম , আজকেই ফাইনাল অ্যাপ্রুচ হবে , পরিকল্পনামাফিক আমি সাদমানকে একাকী নিরিবিলিতে ডেকে নিবো , সেখানে আগে থেকেই প্রস্তুত থাকবে আমার ভাড়ার কিলাররা , তারপর বিকেলে কাজী অফিসে চলে এলাম , সাদমান বিদিশা দুজনেই জামাই বৌ সেজে এসেছে, দুজনকে বেশ লাগছে , বিয়ে হয়ে গেলো ,আমি স্বাক্ষী দিলাম , সাদমান আমাদের নিয়ে রেস্টুরেন্টে গেলো , খাওয়াদাওয়ার পর আমি আর সাদমান স্মোক করতে স্মোকিং জোনে এলাম , সাদমান সিগারেট ধরিয়ে আমার কাঁধে হাত রেখে বললো
– জীবনটা কি অদ্ভুত তাই নারে দোস্ত ? এই আমি সাদমান কেমন ছিলাম আর এখন কেমন হয়ে গেলাম , কখনোই এক মেয়ে নিয়ে থাকতাম না , অথচ দেখ , আজ আমি বিবাহিত , দোস্ত ভাবছি এসব কিছু ছেড়ে দিবো , আর নেশা করবো না সিগারেটও খাবো না , আমি বিদিশারে ভীষণ ভালোবাসিরে , আমার বাচ্চাটার বাবা হবো আমি , এসব নেশাফেশা করে আর টাকা উড়াবো না , কি লাভ জীবনটা ধ্বংস করে , ভাবছি বাবার বিজনেসে এবার থেকে লেগে যাবো , কি বলিস ??? আমি চুপচাপ অবাক হয়ে ওর কথা শুনছিলাম , এই কি সেই সাদমান ! ! ওদিকে কিলাররা কল করেই যাচ্ছে , কল ধরতেই বললো
– ভাই , কই আপ্নে , মাল নিয়া আমরা রেডি আছি , আজকে আর ওই সাদমাইন্নার নিস্তার নাই , আজকেই ওরে আজরাইলের হাতে ধরাইয়া দিমু , ওরে নিয়া আহেন তাড়াতাড়ি
– মিশন এবর্ট , তোরা চলে যা , তোদের পাওনা পৌঁছে যাবে
-কি কন ভাই , আমরা তোহ রেডি
-তোদেরকে চলে যেতে বলছি , তোদের পুরো পাওনাটাই আধাঘণ্টার মাঝে পৌঁছে যাবে ..
বলেই কল কেঁটে দিলাম কেনো জানি আজ খুব ক্লান্ত লাগছে , সরকারি গোরস্তানে হানিফের কবরের পাশে গিয়ে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম , কেনো জানি চোখ দিয়ে কান্না আসছে
– আমি পারলাম না রে হানিফ , যাদের জন্য তুই আত্মহত্যা করলি তাদেরকে শাস্তি দিতে পারলাম নারে ভাই , যার জন্য তুই আত্মহত্যা করলি তোর সেই বিদিশা মা হতে চলেছে , ওই সাদমান ওরে বিয়ে করেছে , ও নাকি বিদিশারে পাগলের মতো ভালোবাসে , ওই নেশাখোর সাদমান বিদিশা আর তার বাচ্চার জন্য শোধরে গেছে , আমি কি করে ওদের সাজানো স্বপ্ন ধ্বংস করি কিভাবে ওই মাসুম বাচ্চাটারে ওর বাবার আদর থেকে বঞ্চিত করি , , আমাকে মাফ করিস তুই ভাই বলেই চলে আসলাম , আজ আমার প্রচণ্ড ঘুম পাচ্ছে , রুমে এসেই বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম রাতে স্বপ্নে হানিফকে দেখলাম , ওর মাঝে এক অসম্ভব শুভ্রতা দেখতে পাচ্ছি , অথচ এর আগে যতবার ওকে স্বপ্নে দেখেছি ততবারই ওকে বিধ্বস্ত লেগেছিল , হানিফ যেনো আজ প্রচণ্ড খুশি , ওর চেহারার শুভ্রতা চোখে পড়ার মতোই , হানিফ এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো
– বন্ধু আমার বিদিশা মা হতে চলেছে , আমার মতো সুখী আর কেউ নাই রে বন্ধু , আমার বিদিশার একটা ছোট্ট মেয়ে হবে , দেখিস ওর নাকটা হবে একেবারেই আমার নাকের মতো , কাঠঠোকরার মতো , বলেই ও হাসতে লাগলো ,আমি অবাক বিষ্ময়ে ওর শুভ্র হাসি দেখছি , এই হাসি ভুলবার নয় , কখনোই নয়
গল্পের বিষয়:
গল্প