আমার বিয়ে

আমার বিয়ে
আমার যে বিয়ে করাটা খুব জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে সেটা বাসায় বোঝানোর জন্য কত কিছুই না করেছি! সকালে ঘুম থেকে উঠে লুঙ্গি ধোয়ার অভিনয় করেছি।
নতুন ফেসবুক আইডি খুলে আম্মাকে ফ্রেন্ডলিস্টে অ্যাড করে সময়মতো বিয়ে করার সুফল সম্পর্কে যত ধার্মিক পোস্ট ছিল সব শেয়ার দিয়েছি। হাদিসের বই থেকে তাড়াতাড়ি বিবাহ না হলে অসৎ পথে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে যত হাদিস ছিল সব গুলো জোরে জোরে সকাল বিকাল পাঠ করে শোনানোও শেষ। তবুও কাজ হচ্ছেনা। অনেক চিন্তা করে এবার নতুন এক ফন্দি আঁটলাম। এখানে একজন বন্ধুর সাহায্য লাগবে। বন্ধুমহলের যেকাউকে যেকোনো কাজে সাহায্য করার জন্য একমাত্র নিবেদিত প্রাণ হলো আক্কাস। ওকে দুঃখের কথা বলে শেষ করার আগেই সে রাজি হয়ে গেল সাহায্য করার জন্য।
তো প্লানমাফিক প্রথম দিন সন্ধ্যায় আমি আর আক্কাস আম্মাকে কে দেখিয়ে দেখিয়ে আমার ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলাম। ঘন্টা দুই পর আক্কাসের ঘাড়ে হাত দিয়ে ওকে বের করে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে এলাম। রাতে খাবার টেবিলে বসে রহস্যময় মুচকি হাসতে লাগলাম। আম্মা জিজ্ঞেস করলে বললাম, আক্কাসের সাথে একটা দুষ্টুমির ঘটনা মনে পড়ায় হাসছি এবং ঘটনাটা নিতান্তই গোপন বলে তাকে বলা যাবেনা। দেখলাম আম্মার কপালে দুশ্চিন্তার ভাজ পড়লো। তারমানে আম্মা আমাকে সমকামী সন্দেহ করা শুরু করছে! এটাই তো চেয়েছিলাম! প্লান তাহলে যথাযথই এগোচ্ছে। এবার আম্মা তাহলে আক্কাসের হাত থেকে বাঁচাতে আমায় একটা লাল টুকটুকে বউ এনে দেবে!
আক্কাস আমার বাল্যবন্ধু। আমি টেনেটুনে অনার্সটা পাশ করলেও আক্কাস ইন্টার পরীক্ষার আগেই পড়াশোনাকে বিলাসিতা নাম দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছে। বাবার চামড়ার ব্যবসা আছে। সেখানেই একটু আধটু বসে আর টো টো করে ঘুরে বেড়ায়। ওর নিজের ব্যক্তিগত কাজ বিশেষ নেই বলে সবার বিপদে আপদে ওকে পাওয়া যায়। ও না থাকলে আমার প্লান টা সাক্সেসফুল করা সম্ভব হতোনা। অন্য বন্ধুরা কখনোই এত সময় দিতোনা। কাজটা শেষ করেই ওকে হায়াদ্রাবাদী বিরিয়ানি খাওয়াব। যত খুশি খেতে চায়, খাওয়াবো। কোনো লিমিট থাকবেনা সেদিন।
বেশ কিছুদিন আম্মাকে আক্কাসের সাথে ঘনিষ্ঠতা দেখিয়ে বিভ্রান্ত করার পর অবশেষে বোধহয় তাঁর বোধোদয় হলো। আমাকে একদিন আচমকা এক মেয়ের ছবি দেখিয়ে বললো পছন্দ হয় কিনা? আমি তো খুশিতে পাগলপ্রায় অবস্থা। মেয়ে খুব একটা পছন্দ না হলেও বললাম মাশাল্লাহ ভালোই তো। অনীহা দেখালে যদি পাছে আবার বিয়ে ক্যান্সেল হয়ে যায়! আম্মা জানালো মেয়েটি আমাদের গ্রামের। কোনো এক দুঃসম্পর্কের আত্মীয়। সে যাইহোক, অত কিছু জানার প্রয়োজন নেই। মনে মনে বেশ একটা লম্বা লিস্ট বানিয়ে নিলাম দাওয়াত করা যায় এমন বন্ধুবান্ধবদের। এর দুইদিন পর হঠাৎ দেখি আক্কাসের বাবা মিষ্টি, ফলমূল নিয়ে আমাদের বাড়িতে হাজির। আম্মাকে দেখেই বললেন- “ভাবী, মাশাল্লাহ মাইয়া আমগো পছন্দ হইছে।
আক্কাসও খুশি। মুখে কয়না, হাবভাবে বুঝবার পারি। আপনেরে ধন্যবাদ দিয়া ছোটো করবার চাইতাছিনা।” আম্মা বললো- “আরে কি যে বলেন ভাই! আক্কাস তো আমারও ছেলের মত। ওর জন্য এটুকু তো করতেই পারি। আমি মেয়ের বাড়িতে কথা বলেছি। আগামী শুক্রবার আপনার বাসায় একে পাকা কথা বলে যাবে।” আমি তখন শুধু মনে মনে একটাই কথা ভেবে যাচ্ছি, আক্কাস শুয়ারটা এভাবে আমাকে ধোঁকা দিতে পারলো! আক্কাসের বিয়ে আজ। আমি মুখ গোমড়া করে বসে বসে বিরিয়ানি গিলছি। হুট করে দাঁত ক্যালাতে ক্যালাতে আক্কাস এসে বললো- “দোস্ত যত খুশি খা, কুনো লিমিট নাই।”
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত