লাল মোটরসাইকেল

লাল মোটরসাইকেল
সকালে ঘুম থেকে উঠে যখন ওয়াশরুমে গেলাম; তখন দেখি ওয়াশরুমের দরজার লক না খুলেই আমি ওয়াশরুমের ভিতর ঢুকে গেছি। আবার যখন বাহিরে বের হবো তখন ও দেখি একই কান্ড। দরজার লক না খুলতেই বাহিরে বের হয়ে গেছি। এমনটা কেন হচ্ছে ঠিক বুঝতে পারলাম না। হঠাৎ দেখলাম আমার মত দেখতে একজন বিছানায় শুয়ে আছে। আমি দেখে ভয়ে চিৎকার করতে করতে মায়ের কাছে গেলাম। মা মনে হয় আমার চিৎকার শুনে নি। উনি উনার মতই রান্নাঘরে রান্না করছে। আমি ভয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে মাকে বললাম,
— মা, আমার মত দেখতে একটা ছেলে আমার বিছানায় শুয়ে আছে। ছেলেটা কে, আর বাসার ভিতর ঢুকলো কিভাবে? মা আমার কথার কোনো উত্তর দিলো না। উত্তর না দেওয়ার অবশ্য কারন আছে। গতকাল রাতে আমি মা’র সাথে খুব রাগারাগি করেছি। এজন্যই হয়তো মা আমার সাথে কথা বলতে চাইছে না। আমি রান্নাঘর থেকে বের হয়ে আমার নিজের রুমে আসলাম। হঠাৎ রুমের ফ্লোরে তাকিয়ে দেখি রিভোটিল ঔষধের ৩টা পাতা পরে আছে। তখনি আমার মনে হলো বিছানায় যে শুয়ে আছে সেটা আর কেউ নয় আমি নিজেই শুয়ে আছি। আর আমি এই মুহুর্তে মরা একজন মানুষ। গতকাল রাতে বাবা মা’র সাথে রাগারাগি করে ৩ পাতা ঘুমের ঔষধ খেয়ে ফেলেছিলাম যার ফলে আমার মৃত্যু হয়েছে! আর আশ্চর্য্যজনক ভাবে আমি মরার পর ভূত হয়ে এই বাসাতেই ঘোরাফেরা করছে।
এই মুহুর্তে আমার কী করা উচিত ঠিক বুঝতে পারছি না। আমি কি এখন আমার দেহের পাশে শুয়ে থাকবো নাকি বাসা ছেড়ে পালিয়ে যাবো? হঠাৎ শুনি বাবা মাকে বকাঝকা করছে । দুনিয়ার সবচেয়ে বড় বদলোক হলো আমার বাবা। জন্ম দেওয়ার পর থেকেই এই লোক আমায় জ্বালিয়েছে। ছোট থেকে আমায় শুধু শাসন আর শাসন করেছে। বেঁচে থাকা কালীন এই বদলোককে শিক্ষা দিতে পারি নি! এখন ভূত হয়ে এই লোককে শিক্ষা দিবো! আমি বাবা মায়ের রুমে আসলাম। তারপর বেলকনিতে রাখা বাবার চেয়ারে বসে পায়ের উপর পা তুলে বাবাকে বললাম,
– বল, ইসলাম উদ্দিন । বল তোর কি সমস্যা? তুই আমার অবলা মাকে বকছিস কেন? ভূত হয়ে একটা জিনিস ভালো হয়েছে। বাবাকে এখন তুই করে বলা যাচ্ছে। যদি বেঁচে থাকতাম আর বাবাকে তুই করে বলতাম তাহলে বাবা আমায় মেরে কোমরের হাড় ভেঙে দিতো। বাবা আমার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে মাকে বলছে,
– তোমার গুণধর পুত্র কি এখনো ঘুমাচ্ছে? মা মাথা নিচু করে বললো,
~ হ্যাঁ। বাবা রেগে গিয়ে মাকে বললো,
— কী সন্তান পেটে ধরলে যে সন্তান এত বড় হবার পরেও বাবার রক্তচুষে খাচ্ছে? ওর মত বয়সে আমি পুরো সংসার চালাতাম । ওর মত বাবার টাকায় ফুটানি দেখাতাম না। কত্তবড় সাহস, বলে কিনা মোটরসাইকেল কিনে না দিলে উনি ভার্সিটিতে যাবে না! তার নাকি সব বন্ধুদের মোটরসাইকেল আছে। উনার মোটরসাইকেল বাদে ভার্সিটিতে গেলে লজ্জা লাগে৷ কে বলেছে তোমার ছেলেকে এমন বড়লোক ছেলেদের সাথে মিশতে? আমরা যেমন মধ্যবিত্ত এমন মধ্যবিত্ত ছেলেদের সাথে কি মিশতে পারে না সে? বাবার কথা শুনে মা কাঁদতে কাঁদতে বললো,
~ আমার ছেলের এই অধ:পতনের জন্য তুমি দায়ী। আমরা তো মধ্যবিত্ত ছিলাম তাহলে ছেলেকে সরকারি স্কুলে ভর্তি না করিয়ে কেন তাহলে বড়লোকদের প্রাইভেট স্কুলে ভর্তি করিয়েছিলে? নিজের জন্য ফুটপাত থেকে কাপড় কিনতে আর ছেলেকে নিয়ে ঠিকিই দামী দামী শপিংমলে চলে যেতে। ছেলে এস.এস.সি. তে এ প্লাস পেয়ে তোমার কাছে আইফোন চাইলো ;আর তুমিও আইফোন কিনে দিলে। অথচ তুমি এই টাকাটা জমিয়ে ছিলে হার্টের বাইপাস করানোর জন্য। ছেলে ইন্টারে প্লাস পেয়ে ক্যামেরা চাইলো তুমি গ্রামের জমিটা বিক্রি করে দিয়ে ওকে ক্যামেরা কিনে দিলে। যখন ছেলে এইগুলো দাবি করতো তখন ছেলের গালে দুইটা থাপ্পড় মেরে বলতে আমরা মধ্যবিত্ত। আমাদের দামী ফোন, দামী ক্যামেরা এইসব মানায় না। তখন তো কিছুই বলো নি তাহলে আজ কেন বলছো? মা’র কথা শুনে বাবা মার কাছে হাতজোড় করে অনুরোধ করে বললো,
-তুমি থামো তো। এইসব কথা চিৎকার করে বলছো কেন? পিয়াস শুনতে পাবে। যদি এইসব কথা শুনে ছেলেটা কষ্ট পাবে। মা আর কিছু না বললো না। চোখের জল মুছতে মুছতে যখন বিছানা ঠিক করছিলো তখন খেয়াল করলো বালিশের নিচে অনেকগুলো টাকা। মা অবাক হয়ে বাবাকে বললো,
~এত টাকা কিসের? বাবা মুচকি হেসে বললো,
-পিয়াস ঘুম থেকে উঠলে টাকাগুলো ওর হাতে দিয়ে বলো ওর পছন্দমত মোটরসাইকেল কিনে নিতে। আর বলো মোটরসাইকেলর রঙটা যেন কড়া লাল হয়। কালো রঙের মোটরসাইকেল আমার ভালো লাগে না। মা বাবার দিকে তাকিয়ে বললো,
~ তুমি এত টাকা পেলে কোথায়? বাবা মাথা নিচু করে বললো,
– দোকানটা বন্ধক রেখেছি। তুমি চিন্তা করো না সামনের বছর ঠিকিই দোকানটা ছাড়িয়ে নিবো। আমার ছেলে আমায় কখনো হতাশ করে নি। দেখো ভার্সিটিতেও আমার ছেলে খুব ভালো রেজাল্ট করবে মা টাকা গুলো নিয়ে আমার রুমের ভিতর গেলেন। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে আমায় কয়েকবার ডাকলেন। আমি যখন সাড়া দিচ্ছি না। তখন মা বললো,
~তোর বাবার কথায় কিছু মনে করিস না। তোর বাবা এমনিই। তোর সামনে তোকে সব সময় বকাঝকা করলেও আড়ালে তোর বাবা তোকে ভীষণ ভালোবাসে। চোখ মেলে দেখ তোর বাবা তোকে টাকা দিয়েছে মোটরসাইকেল কেনার জন্য। এখন ঘুম থেকে উঠ তাড়াতাড়ি। আর শোন, তোর বাবা বলেছে একটা লাল রঙের মোটরসাইকেল কিনতে। ভূতেরা হয়তো কান্না করতে পারে না। কারণ আমি অনেকক্ষণ ধরে চেষ্টা করছি; চিৎকার করে কাঁদতে কিন্তু কাঁদতে পারছি না। আমার এখন বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়া উচিত। কারণ আমি বাবা মায়ের কান্না সহ্য করতে পারবো না। বাসা থেকে বের হওয়ার আগে বাবার পায়ে ধরে বললাম,
– বাবা, আমি তোমায় কখনো হতাশ করি নি। অথচ আজ তোমায় হতাশার সাগরে ডুবিয়ে দিয়ে গেলাম। আমি শুধু তোমার শাসনটা দেখেছি শাসনের আড়ালে থাকা ভালোবাসাটা দেখতে পাই নি। যদি পারো তোমার এই হতভাগা ছেলেটাকে মাফ করে দিও। তোমার এই ছেলেটা আবেগে পড়ে ভুল করে ফেলেছে। বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তায় হাঁটছি আর তখনি মার চিৎকার কানে আসলো,
– পিয়াস! এই পিয়াস, কথা বল বাবা! কথা বল!
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত