শুকনো পাতা

শুকনো পাতা
রাতে বউয়ের সাথে ঝগড়া করে সোফায় ঘুমিয়ে পরেছি সকালে ঘুম থেকে উঠে শুনি বউ বাপের বাড়ি চলে গেছে। ডিপ্রেশনে পড়তে একটুও সময় লাগলনা। আম্মা বলল…
–তোর জ্বালায় আর পারা গেলোনা। কেন বউমার সাথে এত গায়ে পরে ঝগড়া করিস?
-আমার কি দোষ? আমিতো কিছুই করিনি!
–চুপ কর, মেয়েটা না খেয়েই বাপের বাড়ির গেলো।
-বাপের বাড়ি গিয়ে ঠিকই খাবেনি। আমায় খেতে দাও।
–বউকে নিয়ে আয়, তারপর খাওয়া।
-মানে কি এসবের?
–মানে টানে কিছু না। বউকে বাসায় নিয়ে আসবি তারপর তোর খাওয়া। নইলে এ বাসায় তোর ভাত নেই।
-এ কেমন বিচার?
আম্মা আর কিছু না বলেই চলে গেলো। আমি আহাম্মক হয়ে গেলাম৷ কি আজব! বউয়ের সাথে আমার খাওয়ার সম্পর্ক কি? ভাবতে লাগলাম গতকাল রাতে কি নিয়ে ঝগড়া হলো। সামান্য কারণে ঝগড়া৷ নিশ্চয়ই বাপের যাওয়ার জন্য ঝগড়া একটা বাহানা। নইলে সিম্পল বিষয় নিয়ে কেউ রাগ করে?! কাহিনি হলো গিয়েঃ- “গতকাল রাতে বহুদিন পর একটা কবিতা পোস্ট করলাম। কবিতা পোস্ট করার সাথেসাথেই ড্রাইভার মোখলেস কমেন্ট করলো..’ভাই শুনলাম আপনার শ্বশুর নাকি লুচু। কমেন্ট থেকে বেছে বেছে মেয়েদের রিকুয়েষ্ট দেয়। কাহিনী কি সত্যি?’ পাবলিক প্লেসে মোখলেস বলছে কিরে! খাইছে, বউ দেখলে খবর আছে। আমি কমেন্ট ডিলিট করার আগেই বউ পাশ থেকে হুরমুড়িয়ে উঠলো। ছো মেরে মোবাইল নিয়ে বললো….
-ঐ মোখলেস এসব কি বললো?
–কই কিছুইনাতো।
-আমার বাবা লুচু? এত বড় কথা ও বললো? ও এসব বলল কেমনে?
–সেটা আমি কিভাবে বলব?
-তুমি নিশ্চয়ই শিখিয়ে দিয়েছো। নইলে ওর এত সাহস কি করে হয়!?
–বিশ্বাস করো জান্নাত আমি কিছুই বলিনি।
-চুপ একদম কথা বলবানা তুমি। তোমাকে হারে হারে চিনি আমি। তোমার গিড়ায় গিড়ায় কুটনামি, শয়তানি।
–এহহহ সব আমার দোষ? তোমার বাবা যে আমার গল্পের কমেন্ট থেকে মেয়েদের রিকুয়েষ্ট দেয় তার কি হবে?
তারপর জান্নাত আর কিছু বললনা। ধারাম ধারাম করে কিল ঘুষি শুরু করলো। এক পর্যায়ে বালিশ দিয়ে মারামারি। আমিও কোল বালিশ দিয়ে উড়াধুরা বারি শুরু করলাম। বারি খেয়ে জান্নাত ওর বালিশ সহ উপুত হয়ে পরে গেলো। সেই সুযোগে পিঠের মধ্যে গুম্মুত করে কিল দিয়ে এক দৌঁড়। তারপর বহুক্ষণ পরে রুমে এসে দেখি ও শুয়ে আছে। আমি সুযোগ বুঝে সোফায় ঘুমিয়ে পরলাম।”
তারপরের কাহিনী তো জানেনই। বউ এখন বাপের বাড়ি। আমি হতভাগা এখন বাসায়। এদিকে বউ ছাড়া ভালোও লাগেনা। উপায় না পেয়ে শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার জন্য রেডি হলাম। বউকে জানালাম না৷ ফেসবুকে একটা পোস্ট দিলাম, উদ্দেশ্য জান্নাত দেখুক আমি আসছি। আমি সাথে সাথে পোস্ট দিলাম ‘বহুদিন পর শ্বশুর বাড়ির যাচ্ছি। দোয়া করবেন বন্ধুরা। জীবনটা ত্যাজপাতা, পেট হয়েছে হাঁড়ি! বউ করেছে রাগ, গেছে বাপের বাড়ি।’ পাঁচ মিনিট পর সেই পোস্টে শ্বশুর আব্বা কমেন্ট করেছে..’আসার সময় একটা তরমুজ নিয়ে এসো জামাই।’ বউ কমেন্ট করেছে…’এত ছুঁচা কেন আপনি, পাবলিক কে জানাতে হয় যে আপনার শ্বশুর বাড়ি আছে?’ বউয়ের এমন বিটলামি কমেন্ট দেখে পোস্ট ডিলিট করলাম। মোখলেস কে ফোন করলাম….
–কইরে তুই?
-ভাই আমি বাজারে আছি, কিছু কইবেন?
–একটা তরমুজ কিনে নিয়ে আয়।
-ভাই কাহিনী কি? তরমুজ দিয়া কি করবেন?
–আরে শ্বশুর বাড়ি যাব।
-আমিও যাব নাকি ভাই?
–আগে তরমুজ নিয়া আয়।
-ভাই আপনি খাড়ান আমি ২ মিনিটে আইতাছি।
দুই মিনিটের কথা বলে মোখলেস আধা ঘণ্টা পর আসলো। ব্যাগে করে তরমুজ এনেছে। তরমুজ চকচকা কাগজ দিয়ে মোড়ানো। বললাম….
–কিরে এসব কি?
-আরে ভাই শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছেন একটা ইজ্জৎ আছে না? তাই এক্কেবারে প্যাকিং করে নিয়ে এসেছি।
–তরমুজ তো এইডা?
-জাপানি তরমুজ ভাই। ২৫০ টাকা দাম নিছে।
শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছি আমি আর খুশি মোখলেস। বাপরে বাপ! একটা তরমুজ কিনেই বেচারা হেব্বি খুশি। মোখলেস বলল….
–ভাই আমায় নিয়া যাইবেননা?
-তুই সন্ধ্যায় গাড়ি নিয়ে যাস। আমি একটু আগে যাই তোর ভাবি রাগ করেছে।
–আইচ্ছা।
মোখলেস কে রেখে আমি তরমুজ নিয়ে রওনা হলাম। শ্বশুর বাড়ির পাশের বাসায় একটা কুকুর আছে শ্লা আমায় দেখলেই ঘেউঘেউ শুরু করে। একদিন দৌঁড়ানি দিয়েছিলো। যারফলে উল্টা দৌঁড়ে বাসায় এসেছিলাম পরে আর যাওয়া হয়নি। আজকেও ভয়ে ভয়ে যাচ্ছি। বাসার কাছে আসতেই কোন ঘেউঘেউ শুনলাম না। মনে হয় নাই কুকুর টা৷ আমি ঐ বাসার গেটটা খুলে আশেপাশে তাকালাম। দেখলাম কুকুরটা শুয়ে আছে, হা হা হা হারামজাদা আজকে দৌঁড় দাও দেখি। আমি একটা ইট দিয়ে মারলাম ঢিল। ঢিল পাছায় লাগতেই ঘেউঘেউ শুরু করলো। আমি টুপ করে কেটে পরলাম। শ্বশুর বাসায় এসেই দরজায় কলিং বেল বাঁজালাম। শালি এসে দরজা খুললো। দরজা খুলেই সালাম দিয়ে বলল….
–কেমন আছেন দুলাভাই?
-এইতো ভালো, তোমার আপু কই?
–আপুর কাছে আগেই যায়েননা, রেগে আছে।
আমি ঘরের ভিতর ঢুকলাম। শ্বশুর আব্বা দৌঁড়ে আসলেন এক এক প্রকার। হাতের ব্যাগ দেখেই উনার চোখ চকচক করে উঠলো। শ্বশুর বলল….
–দাও বাবা তরমুজ আমার হাতে দাও।
-নিন…
–তরমুজ কাগজ দিয়ে বাঁধাই করা কেন?
-জাপানি তরমুজ বাবা। তাই বাঁধাই করে এনেছি৷
–বাহ, মাশাল্লা! এই না হলে আমার জামাই।
-আমি নিজে কিনেছি আব্বা। ভাবলাম সবাই মিলে একদিন বিদেশি তরমুজ খেয়ে দেখি।
ততক্ষণে জান্নাতও হাজির হয়েছে। একবার ফিরে দেখলনা আমার পানে। আহারে বউটাকে কতযুগ মনে হয় দেখিনা। শ্বশুর আব্বা খুশি মনে ব্যাগ থেকে তরমুজ বের করতে লাগলেন। সবার আগ্রহই ঐ দিকে। তরমুজের বাঁধাই খুলতেই আমি আকাশ থেকে পরলাম। শ্বশুর আব্বা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো। শালি খিলখিল করে হেসে দিলো। মোখলেস তরমুজের বদলে মিষ্টি কুমড়া দিয়ে দিছে। কাম সারছেরে, ইজ্জৎ শেষ! শালি বলল….
–হাহা দুলাভাই এই আপনার জাপানি তরমুজ? হা হা হা….
-এটা কি করলে জামাই!
–আসলে আব্বা! না মানে! হয়েছে কি…ঐ…
-এখন রসিকতা করার সময়? থাক কিছু বলতে হবেনা।
শ্বশুর আব্বা মুখ কালো করে চলে গেলো। শালিও চলে গেলো। জান্নাত একটু দূরেই দাঁড়িয়ে আছে। আমি অসহায় দৃষ্টিতে তাকালাম। কিছু বলতে যাব তার আগেই জান্নাত হনহন করে চলে গেলো। কেমনডা লাগে! মোখলেস এই আকামডা কেন করলো? মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। দিলাম ফোন, কল রিসিভ করতেই বললাম….
–হারামজাদা তুই তরমুজের বদলে কুমড়া দিয়েছিস কেন?
-কেন মনে নাই? আপনেরে কইছিলাম আমার গার্লফ্রেন্ডের জন্য গিফট আনতে। জন্মদিনে দিমু, আপনি বক্সের ভিতর ইন্দুর দিয়েছিলেন।
–তাই বলে তুই এমন করবি?
-ভাবিতো আর আপনেরে ছাইড়া যায়নাই, আর মর্জিনা আমায় ছেড়ে চলে গেছে।
–তারপরতো আরো ৩/৪ টা প্রেম করলি। সেই আগের কথা মনে রাখছিস?
-ভাই রাখি, নাইস টু মিট ইউ। লাপ্পিউউ ভাই…সন্ধ্যায় দেখা হবে। মোখলেস ফোন কেটে দিলো মোখলেস। স্পর্ধা দেখে শিহরিত এত সাহস পাইলো কই? নিশ্চই জান্নাত এর পিছে দায়ী৷ জান্নাতই ওকে সাহস দিয়েছে। আমি উপরে গেলাম। জান্নাতকে কিছু বলতে যাব তার আগেই বলল….
–আমি সব জানি মোখলেস এই কাজ করেছে।
-তুমি ওকে শিখিয়ে দিয়েছো?
–না ও ফোন করে বলেছে।
আমি আর কিছুই বললাম না৷ শ্বশুর আব্বা অভিমান করেছে। সন্ধ্যায় মোখলেস ৫ টা তরমুজ নিয়ে হাজির। আমি অবাক হয়ে গেলাম। সবার চোখে মোখলেস এখন হিরো। আর আমি দিলদার। শ্বশুর আব্বা সেই খুশি। মোখলেসকে ১ হাজার টাকা খুশিতে বকশিস দিলো। কিএক্টাবস্থা! যাইহোক আমি কিছু বললামনা। বউ বিরিয়ানি রান্না করেছে। সবাই আয়েশ করে খাচ্ছে। জান্নাত মুচকি মুচকি হাসছে। আমি খাওয়া বাদ দিয়ে রুমে এসে বসে রইলাম। একটু অভিমান করার ভং ধরতে হবে। কিছুক্ষণ পর জান্নাত প্লেট নিয়ে হাজির। বলল….
–হা করো।
-খাবনা আমি…!
–ভং ধরো কেন হা করো বলছি?
-পারবনা। তুমি খাও আমার খিদে নেই…!
–দেখো আমিও কিন্তু সকাল থেকে কিছু খাইনি তুমি আসবে বলে। আর বাবাকে তরমুজের ব্যাপারটা বলেছি।
বলেই জান্নাত হাসলো। আমার দিকে দিকে তাকিয়ে বলল….
–বাবাতো কাহিনী শুনে হেসেই খুন। তোমরা পারও বটে হা হা হা…!
-তুমি কেন হাসছো?
–বারে হাসতে পারবনা বুঝি।
-না পারবেনা।
–আচ্ছা হাসবনা হা কর তুমি।
আমি হা করতেই জান্নাত এক লোকমা বিরিয়ানি আমার মুখের সামনে এনেই নিজের মুখে নিয়ে খেল। খেয়েই হাসতে থাকলো। কেমনডা লাগে! হাসতেই আছে জান্নাত৷ আমি চুপচাপ রাগ করে আছি। সে আমার রাগ দেখে হাসির পরিমাণ বাড়িয়ে দিলো। সেতো জানেনা আমি রাগের ভং ধরে তার ঐ মিষ্টি হাসি উপভোগ করছি।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত