ফ্রিজের মধ্যে বসে আছি। বাসায় কারেন্ট নাই। গোসল করবো সে উপায়ও নাই। ট্যাংকির পানি এতই গরম যে এই পানি দিয়ে আম্মু ৪ টা ডিম সিদ্ধ করলো কিছুক্ষণ আগে ।
ফ্রিজের জায়গাটা আরেকটু বেশি হলে ভালো হতো। নড়াচড়া করতে কষ্ট হচ্ছে। ভিতরে অন্ধকার। কিন্তু ঠান্ডা ঠান্ডা কুল কুল লাগছে। বাসায় অবশ্য কেউ জানে না আমি ফ্রিজের মধ্যে। জানলে কি হবে আল্লাহ্ মালুম। ৫ মিনিট থাকার পর এখন নিজেকে মরা মানুষ মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে আমি মর্গে আছি। একটু ভয় ভয় লাগলো এই কথা ভেবে। নিশ্বাস নিতেও যেন একটু কষ্ট হচ্ছে। নাকের ভেতর ঠান্ডা ঢুকছে। বের হতে যাবো ঠিক তখনই ঘটলো বিপত্তি। হুড়মুড় করে পাশের বাসার ২টা আন্টি রুমে ঢুকে পরলো। আতঙ্কে আমি অস্থির। এখন না পারছি বের হতে, না পারছি ভিতরে থাকতে।
এদের যাওয়ার নাম নেই। অন্যের দুর্নামে আর নিজেদের সুনামে জমে উঠেছে আড্ডা। নাসরিন আন্টি হঠাৎ আম্মুকে বলে উঠলেন,”ভাবী, আপনার মেয়েকে যে দেখছি না!” বুকের ভেতর ছ্যাঁত করে উঠলো। ফ্রিজের ভিতরে থেকেও কুলকুল করে ঘামছি। আল্লাহ্ আল্লাহ্ করছি আর যাই করুক, আম্মু যেন ফ্রিজের দরজাটা না খুলে। আল্লাহ্ বাঁচাইছে এদেরকে নাশতা দেওয়ার মতো আজকে ফ্রিজে কিছু নাই। রান্নাঘর থেকেই দিতে পারবেন। আমি যে ঘরে নাই এটা আম্মু খেয়াল করলেন মাত্র। তিনি বললেন,”ছাদে গেছে হয়তো। ভাবী বসেন নাশতা করেন।”
আরেক দফা গল্প শুরু হয়েছে। সকালে কে কি রান্না করছে এগুলা নিয়ে গল্প হচ্ছে এখন। শিখা আন্টিরা নাকি ৫ রকমের রান্না ছাড়া ভাতই খেতে পারেন না। একেক জন একেক বাহাদুরির কেরামতি দেখাচ্ছেন। এদিকে আমি আছি যন্ত্রণায়। পা লেগে গেছে। হা করে নিঃশ্বাস নিচ্ছি। আল্লাহ্কে স্মরণ করে চোখ বন্ধ করে কাঁদছি। জীবনে যত পাপ কাজ করছি সব একে একে মনে পড়ছে। মৃত্যুর কথা স্মরণ হলো। মরার আগে নাকি মানুষের এইসব মনে হয়। এই কষ্টের পরিস্থিতিতেও আমার মনে মনে গান বাজছে,”আমি বন্দী কারাগারে!!!”
হঠাৎ শুনলাম রুমে কোনো আওয়াজ নেই। এরা চলে গেছে তারমানে। বের হবো কি-না বুঝতে পারছিলাম না। সাড়া শব্দ নেই দেখে শিওর হলাম কেউ নেই রুমে। ফ্রিজটা রুমের পশ্চিম দিকে রাখা। আল্লাহর নাম নিয়ে ফ্রিজ খুলার সাথে সাথেই রুম থেকে কে যেন “ও বাবা গো” বলে চিৎকার দিলো!” হালকার উপর ঝাপসা ভাবে দেখলাম নাসরিন আন্টি রুমে নামাজ পড়ছেন। নামাজের ভিতরেই উনি চিৎকার দিয়েছিলেন। আন্টির ভয় পাওয়ার সিস্টেমটা জাস্ট দেখার মতো ছিলো। আমি কি করবো বুঝতে না পেরে আবার ফ্রিজের ভেতর ঢুকে ফ্রিজের দরজা লাগিয়ে দিলাম। আন্টির ভয়ার্ত চেহারাটা চোখের সামনে ভেসে উঠলো বারবার। আমি ফ্রিজের ভেতর থেকেই জোরে জোরে হেসে দিলাম। নাহ্ হাসি কিছুতেই কন্ট্রোল হচ্ছে না।
আমি আবারও টেনশনে। এখন কি হবে! আবার ভয় পেতে লাগলাম। আন্টির নামাজ শেষ বুঝতে পারলাম। আমি কোনো কিছু না ভেবে হঠাৎ ফ্রিজ খুলে অজ্ঞান হওয়ার ভান ধরে শুয়ে পড়লাম। এখন সবাই উপুড় হয়ে আমার মাথায় ঠান্ডা পানি ঢালতেছে, বাতাস করতেছে। চিন্তায় অস্থির সবাই। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানালাম মনে মনে। আলহামদুলিল্লাহ এখন আর গরম লাগতেছে না। কিন্তু আন্টির ওই ভয়ার্ত ফেসটার কথা মনে হতেই হঠাৎ করেই জোরে জোরে হেসে দিলাম। আচমকা আমার ভয়ানক অদ্ভুত হাসি দেখে এরা তিনজনই জ্ঞান হারালেন। হার্ট অ্যাটাকও করতে পারেন সম্ভবত। গরম এখন কুব ট্যাশ লাগছে আমার কাছে।
আল্লাহর রহমতে উনাদের জ্ঞান ফিরেছিলো। কিন্তু সেই বাসায় আমরা আর বেশিদিন থাকতে পারি নি। এক মাসের মধ্যে আম্মু বাসা চেঞ্জ করে। এখন এলাকার সবাই জানেন বাসাটায় ভূতের উপদ্রব আছে। শুনলাম বাসাটা নাকি এখনো ভাড়া হয় নি। এলাকার লোকজন নাকি ওই বাসা থেকে ভৌতিক আওয়াজ পায় মাঝে মাঝে! আমাকেও ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো। সেদিনই ভূত ছাড়ানো হয়। একদিনে ভূত ছাড়াতে পারেন এই খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ায় ওঝাটাও রিতীমত সেলিব্রিটি হয়ে গেছে এখন। আমি অবশ্য এরপর থেকে আর কোনোদিন ফ্রিজে ঢুকি নাই
গল্পের বিষয়:
গল্প