উপকার

উপকার
দোকানদার মামা দুইটা কলা আর একটা পাউরুটি দিনতো। খুব বেশি ক্ষুধা লেগেছে। সেই সকালে বাসা থেকে রাগ করে বের হয়ে এসেছি না খেয়েই।এখন প্রায় বিকেল। রাগের কারণটা বেশ ছোটো। বাবার কাছে দশ হাজার টাকা চেয়েছিলাম। গার্লফ্রেন্ড এর সাথে রুমডেট করবো। সবসময় শুনেছি যে এই জিনিসটাতে নাকি খুব মজা।তাই আগ্রহটা একটু বেশি। বাবারা-তো টাকার গাছ।তাদের কাজই হলো সন্তানদের চাহিদা পূরণ করে যাওয়া। আর আমাদের সন্তানদের কাজ হলো কোনোকিছু না ভেবেই নিজের চাহিদা পূরণ করার জন্য, বাবাদের কে চাপ দিয়ে যাওয়া।
সেটা হোক খারাপ কিংবা ভালো চাহিদা। আমরা সন্তান রা বাবাদের রক্ত চুষে আমাদের চাহিদা পূরণ করতে চাই।
আমাদের কথা হলো বাবারা আমাদের জন্ম দিয়েছেন। আমাদের চাহিদা পূরণ করা তাদের বাধ্যতামূলক কাজ।
আমিও ব্যতিক্রম নই।টাকা দেয়নি বলে সকালে না খেয়ে রাগ করে চলে এসেছি। বসে বসে কলা আর পাউরুটি খাচ্ছিলাম। এমন সময় একটা আট-দশ বছরের ছেলে আমার খাওয়াতে ব্যাখাত ঘটালো। ভাই আমি খুব ক্ষুধার্ত। ছেলেটা এমন ভাবে বললো যে খুব মায়া হলো। নিজের দুইটা কলা ও পাউরুটি টা ছেলেটিকে দিয়েদিলাম। আমার মা সবসময় বলতেন। নিজের জন্য কিছু করলে যতোটুকু ভালো লাগবে।অন্য কারো জন্য যদি কোনো কিছু করো তাহলে তার থেকে হাজার গুণ বেশি ভালো লাগবে। মার কথাটা শুনে হাসতাম।আর ভাবতাম নিজের চেয়ে বড় কিছু আছে নাকি এ জগতে। কিন্তু আজ বুঝতে পারলাম।
অন্য কারো জন্য কিছু করতে পারলে কতোটুকু ভাগ লাগা কাজ করে। ছেলেটির ক্ষুধা নিবারণ করে বুঝতে পারলাম সৃষ্টিকর্তা আমার ক্ষুধা নিবারণ করে দিয়েছেন। খাবারগুলো খেয়ে ছেলেটা চলে গেলো। এখনো রাত হতে অনেক সময় বাকি। কাজও নেই কোনো।তাই ছেলেটাকে অনুসরণ করতে লাগলাম।সময়টা পার হয়ে যাবে এই ভেবে। এখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে প্রায়। ছেলেটা এই এইসময় টুকুতে মানুষের কাছে হাত পেতে কিছু টাকা সংগ্রহ করেছে।কারো কারো পা ধরেছে।যে পর্যন্ত টাকা দেয়নি সে পর্যন্ত ছেড়ে দেয়নি। দেখলাম ছেলেটা একটা গলির ভিতরে গেলো। ঘর নেই। একটা তাবু টাঙিয়ে সেটাকেই নিজেরদের বাসস্থান বানিয়ে নিয়েছে। ছেলেটার বাবা অসুস্থ। সেজন্যই সে রাস্তায় নেমেছে। নিজের বাবা মাকে বাঁচানোর জন্য। হয়তো বা টাকার পরিমাণ নগন্য।তবে তাদের রাতের খাবারটা হয়ে যাবে।
আমি এই বয়সেও বাবার ঘারে বসে বসে খাচ্ছি।আর ছেলেটা কিছু বুঝেনা।তবুও তার বাবা মাকে ভালো রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে।কিভাবে বাবা মাকে সুখে রাখতে হয় এই ছেলেটা ভালো করেই জানে। আমার বাসায় যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে। আমি আর কিছু না ভেবে বাসায় চলে আসি। বাবা মার মন খুব খারাপ। তাদের একমাত্র ছেলে আমি।আমাকে না দেখে থাকতে পারেনা। খাবার সময় বাবা টাকা হাতে দিয়ে বললো। তুই কিছু টাকা চেয়েছিলি। তখন ছিল না। নে,এখানে দশ হাজার টাকা আছে। আমি খুশি মনে টাকাগুলো নিয়ে রুমে চলে গেলাম। কালকে গার্লফ্রন্ডের সাথে রুমডেট করবো।আমার খুশি হওয়ার কথা। কিন্তু ওই ছেলেটার কথা মনে পড়ছে বার বার। ছেলেটার কথা ভূলার জন্য গার্লফ্রেন্ডকে ফোন দিলাম।তার সাথে অনেক কথা বললাম। কালকে তো হচ্ছে নাকি? হুম আমি খুব উত্তেজিত ওই মুহূর্তটার জন্য। আচ্ছা ঠিক আছে কাল দেখা যাবে কেমন উত্তেজিত তুুমি।
এই বলে ফোন রেখে দিলাম। সকালে গার্লফ্রেন্ড এর জন্য অপেক্ষা করতেছি।এমন সময় দেখি কালকের ওই ছেলেটা ও তার মা একটা ভ্যানে করে একটা লোককে নিয়ে যাচ্ছে। অতঃপর কিছুক্ষণ পর তাদেরকে অনুসরণ করতে করতে নিজেকে হাসপাতালে প্রতিস্থাপন করলাম। ছেলেটার বাবার অপারেশন করতে হবে।জরুরি দশহাজার টাকা লাগবে। যারা দু বেলা দুমুঠো খাবার পায়না।তাদের কাছে দশহাজার টাকা লাখ টাকা। ডাক্তারের কাছে আকুতি করছে।কিন্তু ডাক্তার সেটা শুনতে পাচ্ছে না।তার কথা টাকা ছাড়া কোনো অপারেশন হবেনা। আমি বললাম। অপারেশন করেন টাকার ব্যবস্থা হয়ে যাবে। গার্লফ্রেন্ড এর ফোনের ওপর ফোন আসছে।কিন্তু কেনো জানি ধরতে ইচ্ছে করছেনা।জানিনা ছেলেটার বাবার জন্য চিন্তা হচ্ছে কেনো? অপারেশন ভালোভাবেই হয়ে গেলো।
আমি বসে আছি আর ভাবছি। জীবনের সবচেয়ে আনন্দ টা পাওয়া হলোনা।কতো কিছু করতে চেয়েছিলাম গার্লফ্রেন্ড এর সাথে। কিছুই হলোনা। হঠাৎ দেখি ছেলেটা আর তার মা দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।তাদের চোখে আনন্দের কান্না। তারা আমাকে কিছু বলতে চাচ্ছিল। আনন্দের কারণে পারলোনা।ছেলেটার মা শুধু বলল অনেকদিন বাঁইচা থাকো বাবা। তারা লোকটার কাছে চলে গেলো। ততোক্ষণে গার্লফ্রেন্ড এর মেসেজ এসে গেছে। আমাদের সম্পর্ক শেষ।আর কখনো যোগাযোগ করার চেষ্টা করবেনা। আমি যাচ্ছি আর ভাবছি এতোদিনের সম্পর্ক টা শেষ হয়ে গেলো। রুমডেট করা হলোনা। তখন পেছন দিকে তাকালাম। দেখলাম ছেলেটা আমার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিলো। যেই হাসিটা দেখে গার্লফ্রেন্ড হারানোর দুঃখ টা ভূলে গেলাম।
আমি এখনো মনে প্রাণে বিশ্বাস করি। ওইদিন ছেলেটার হাসিটাতে যে আনন্দ পেয়েছিলাম,যে সুখ পেয়েছিলাম।হাজারবার শারীরিক সম্পর্ক করলেও হয়তো ততোটা আনন্দ পেতাম না। কিছু কিছু আনন্দের কাছে পৃথিবীর অন্য সব আনন্দ তুচ্ছ। কারো উপকার করলে নিজের কখনো ক্ষতি হয়না। অনেক সময় অন্য কারো উপকার করলে নিজের অজান্তেই নিজের উপকার হয়ে যায়। আমার কারণে ছেলেটা তার বাবাকে ফিরে পেয়েছে। তার কারণে আমিও অনেক বড় একটা পাপ থেকে বেঁচে গিয়েছি। আমরা দুজনই দুুজনের উপকার করেছি।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত