কাব্য ভাইয়া আমি প্রেগন্যান্ট। তুমি বাবা হতে চলেছো।” কথাটি শুনেই আমি রীতিমতো ডিপ্রেশনে চলে গেলাম। অফিস শেষে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছি। ঠিক এমন সময় পকেটে থাকা মুঠোফোন বেজে উঠলো। হাতে নিতেই দেখি ইভা কল দিয়েছে। কল রিসিভ করতেই,
-ভাইয়া বাসায় আসার সময় মনে করে লবণ নিয়ে আসবে। ভাইয়া ডাক শুনতেই কলটা কেটে দিয়ে ফোন সুইচড অফ করে রাখলাম৷ কারণ সে এখন একের পর এক কল দিয়ে যাবে। আসলে নিজ স্ত্রীর কাছ থেকে কোনো পুরুষই ভাইয়া ডাক সহ্য করতে পারেনা। ইভা আমার স্ত্রী। এখন সে অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী। আমাদের বিয়ে হয়েছে দু-বছর হতে চললো। এই দু-বছরে কমপক্ষে হাজার বার চেষ্টা করেছি ইভা যেন আমাকে নাম ধরে ডাকে।এইজন্য তাকে অনেক গিফট ও দিয়েছি। কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হয়নি। সেদিন পূর্ণিমা রাতে ইভার জন্য নীল শাড়ী আর খোঁপায় দেওয়ার জন্য বকুলের মালা কিনে এনেছি। নিজ হাতে ইভাকে শাড়ি পড়িয়ে দিলাম। তারপর দু’জনে ছাদে গেলাম। বেশ সুন্দর একটা পরিবেশ। হঠাৎ চাঁদ মেঘের আড়ালে ডুব দিতেই ইভা পাশ থেকে চিল্লাইয়া কেঁদে উঠলো,
-ভাইয়া দেখো চাঁদ মেঘের আড়ালে লুকিয়ে গেছে। ভাইয়া ডাক শুনতেই আমার এতো রাগ হলো যে, আমি ইভাকে রেখেই ছাদ থেকে নিচে নেমে এলাম। ঘটনা এখানেই শেষ না। ১৪ই ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে অফিস থেকে আমরা ট্যুরে গিয়েছি স্বপ্নপুরী। বাস থেকে নামতেই আমার বউ সবার সামনে আমাকে বললো,
-ভাইয়া ঐ দেখো ফুচকা। আমি ফুচকা খাবো। তখন অফিসের সব কলিগরা আমার দিকে এমন ভাবে তাকাচ্ছিলো। লজ্জায় অপমানে আমার প্রায় যায় যায় অবস্থা। অফিসের বস ভীষণ দুষ্টু। এখনো সে মাঝেমধ্যে মিটিং শেষে আমাকে জিজ্ঞাসা করে, “কি ব্যাপার কাব্য সাহেব, আপনার মিসেস কি এখনো আপনাকে ভাইয়া ডাকে।” কথাটা বলেই এমন বিচ্ছিরি ভাবে হো হো করে হেসে দেয়, আমার ইচ্ছে করে বসের ভূড়ি ফুটো করে সব বাতাস বের করে দেই। বউয়ের মুখে ভাইয়া ডাক শুনতে শুনতে আমি নিজেই বিরক্ত। তার মধ্যে আবার এই ব্যাটার উপদ্রব।
এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে ভাবলাম বাচ্চা নিবো। তাহলে তখন অন্ততপক্ষে আমাকে ভাইয়া বলবেনা৷ আমার একটা ফুটফুটে মেয়ে হবে। তার নাম রাখবো পারু। বাহ! পারু নামটা তো বড্ড মিষ্টি শোনায়৷ তখন ইভা আমাকে ডাকবে, এই পারুর আব্বু। অথবা এই পারুর বাবা শোনো আহ! শান্তি। বউয়ের কাছ থেকে ভাইয়া ডাক শোনা হতে পরিত্রাণ পাবো। এভাবে কেটে গেল বেশ কয়েক মাস। লাঞ্চের ব্রেকে সব কলিগরা বসে আছি অফিসের ক্যান্টিনে। এমন সময় ইভা কল দিলো। আমার পাশেই বসে ছিলো বস। ব্যাটা আমাদের সবার সাথে খুব ফ্রি। যেই না টের পেয়েছে আমার বউ কল দিয়েছে, অমনি সে আবদার করলো কল লাউডস্পিকারে দিয়ে কথা বলার জন্য। আর তারপর সব কলিগরাও সেইম আবদার করলো৷ উপয়ান্তর না পেয়ে আমি কল রিসিভ করে লাউডস্পিকার অন করতে অপর প্রান্ত থেকে ইভা বললো,
-ভাইয়া জানো কি হইছে?
-কি হইছে?
-কাব্য ভাইয়া আমি প্রেগন্যান্ট। তুমি বাবা হতে চলেছো।
সবাই আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।আমি কিছু না বলেই কল টা কেটে দিয়ে ক্যান্টিন থেকে বেরিয়ে এলাম।কয়েকমাস পর আমি একটা ফুটফুটে কন্যা সন্তানের বাবা হলাম। আমার পছন্দ অনুযায়ী তার নাম রাখলাম পারু। ধীরে ধীরে পারু বড় হতে লাগলো। আধো আধো কথা বলতে শিখেছে।ইভাকে মাম মাম বলে ডাকে। আর আমাকে? আমাকে এখনো কোনো নামেই সম্মোধন করেনা। আজ পারুর এক বছর পূর্ণ হলো। খুব ধুমধাম ভাবেই পারুর জন্মদিনের আয়োজন করলাম। কেক কাটার কিছুক্ষণ আগে আমি সবার সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। এমন সময় পারু তার মায়ের কোলে বসেই আমাকে জোরে ডাক দিলো। তার ডাক শুনে সেখানে উপস্থিত সকলেই থ হয়ে গেল। পারুর কথা গুলো ছিলো এমন,
-ভাইয়া তাড়াতাড়ি আসো। কেক কাটবো। রুমে অবস্থান করা কয়েক জোড়া চোখ তখন আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ঠিক সেই মুহূর্তে পারু আমাকে আবারো ডাক দিলো, কি হলো ভাইয়া আসো।এমন সময় পাশ থেকে আমার বস বলে উঠলো,
-ভাইয়া যাও কেক কেটে এসো।
গল্পের বিষয়:
গল্প