স্বামী বাসর ঘরে ঢুকে হালকা কাশি দিলে না কি স্ত্রী বিছানা থেকে নেমে স্বামীর কাছে এসে পায়ে ধরে সালাম করে। আমায় এমটাই বলেছে পাশের বাসার ভাবী। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে হয়েছে অন্য রকম। আমি বাসর ঘরে ঢুকে হালকা কাশির শব্দ করলে আমার স্ত্রী শ্রাবণী ঘুমটা খুলে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
– কি বালের শাড়ি দিয়েছেন বিয়েতে! এত ওজন কেন? মনে হচ্ছে গা থেকে এখনি খুলে পরে যাবে আমি অবাক হয়ে বললো,
–৮০ হাজার টাকা দিয়ে বিয়ের শাড়িটা কিনেছি। এটা তোমার চোখে খারাপ হয়ে গেলো? শ্রাবণী আমার চেয়েও বেশি অবাক হয়ে বললো,
– আশ্চর্য্য! আমি খারাপ কখন বললাম? আমি নিচের দিকে তাকিয়ে বললাম,
— এই যে বললে বালের শাড়ি শ্রাবণী কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললো,
-ছিঃ! আমি কখন এই কথা বললাম? বিয়েতে গান বাজনার আওয়াজ শুনে মনে হয় আপনার কানটা গেছে। তাড়াতাড়ি কানের ভালো একজন ডাক্তার দেখান শ্রাবণী কাপড় পাল্টাতে ওয়াশরুমে গেলো আর আমি খাটে বসে মনে মনে ভাবলাম হয়তো আমি ভুল শুনেছি পরের দিন আমি আর শ্রাবণী বসে টিভি দেখছি। এমন সময় বাবা আমাদের কাছে আসলে শ্রাবণী টিভির রিমোটটা রেখে মাথায় ঘোমটা দিয়ে বললো,
– বাবা, আপনি চা খাবেন? আমি চা খুব ভালো বানাতে পারি বাবা মুচকি হেসে বললো,
~তাহলে তো পরীক্ষা করে দেখতে হয় শ্রাবণী বাবার জন্য চা বানাতে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর চা বানিয়ে নিয়ে আসলো। চায়ের কাপটা যখন বাবার হাতে দিবে বাবা তখন রিমোটটা রেখে শ্রাবণীকে বললো,
~ রিমোট দেখছি কাজ করে না শ্রাবণী তখন বললো,
– ঠিকিই বলেছেন বাবা; এই বালের রিমোট কাজ করে না কথাটা শুনার পর বাবা হা করে শ্রাবণীর দিকে তাকিয়ে রইলো আর শ্রাবণী মাথার গোমটা ঠিক করতে করতে বললো,
-বাবা, চায়ের সাথে বিস্কিট খাবেন? বাবা শ্রাবণী কথার কোন উত্তর দিলো না। আর আমি এমন একটা ভাব করলাম আমি কিছুই শুনি নি বিকালের দিকে আমি আর শ্রাবণী যখন রুমে বসে আছি তখন মা এসে বললো,
~বউমা, তোমায় উপরের ফ্ল্যাটের আপা দেখতে এসেছে। একটু তৈরি হয়ে আসো তো শ্রাবণী অবাক হয়ে বললো,
-কিছুক্ষণ আগে না দেখে গেলো মা মুচকি হেসে বললো,
~কিছুক্ষণ আগে নিচের ফ্ল্যাটের আপা এসেছিলো শ্রাবণী কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললো,
– বালের আন্টিরা একবারে আসতে পারে না। এখন আবার সাজতে হবে শ্রাবণীর কথা শুনে মা আমার দিকে তাকিয়ে রইলো আর আমি ফোন কানে নিয়ে এমন একটা ভাব ধরলাম যে আমি কিছুই শুনি নি আমি ফোনে কথা বলায় ব্যস্ত আমার একপাশে যদি গরুর গোবর রাখা হয় আর আরেক পাশে যদি ছোট খালার রান্না করা তরকারি রাখা হয় তাহলে আমি হাসি মুখে গরুর গোবর খাবো তবুও ছোট খালার হাতে রান্না করা খাবার খাবো না। আমার ছোট খালা নিজেকে অনেক বড় রাঁধুনি মনে করেন আর দুনিয়ের সব উদ্ভট খাবার আবিষ্কার করেন। তার সেই অখাদ্য গুলো নিজে না খেয়ে আমাদের সবাইকে খাওয়ান। আমাদের বাধ্য হয়ে হাসি মুখে সেই খাবার গুলো খেতে হয় আর উনার রান্নার প্রশংসা করতে হয় কারণ খালা খুব ইমোশনাল। যদি বলি রান্না ভালো হয় নি তাহলে উনি কান্নাকাটি করে প্রেসার বাড়িয়ে অবস্থা খারাপ করে ফেলবেন। আজ ছোটখালা শ্রাবণীর জন্য স্পেশাল তরকারি রান্না করে নিয়ে এসেছেন। গরুর গোশতের সাথে পুঁটি মাছের শুটকি। দুপুরে সবাই যখন একসাথে খেতে বসি তখন ছোট খালা আদর করে শ্রাবণীর প্লেটে তরকারিটা দিলেন। শ্রাবণী খাবারটা মুখে নিয়েই বললো,
– এই বালের তরকারি কে রান্না করছে? শ্রাবণীর কথা শুনে বাবা মা আমি যে যার মত খেতে লাগলাম। আমরা সবাই এমন একটা ভাব করলাম যেন আমরা কিছুই শুনি নি। ছোট খালা কাঁদতে কাঁদতে বললো ,
~ এত কষ্ট করে রান্না করে নিয়ে এসে শেষে কি না এই কথা শুনতে হলো। তোদের জন্য আর জীবনেও রান্না করে আনবো না ছোট খালা কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলো আর শ্রাবণী অবাক হয়ে আমায় বললো,
– কি এমন বললাম যে খালা এমন করলো, আমি তো শুধু বলেছি তরকারিটা কে রান্না করছে? আমি শ্রাবণীর সমস্যাটা বুঝতে পেরেছিলাম। আসলে এটা ওর মুদ্রাদোষ। ওর মনের বিরুদ্ধে এই শব্দটা বারবার ওর মুখ দিয়ে বের হয়ে আসছে। ও নিজেও জানে না ও কখন এই কথাটা বলছে। আমি চাইছিলাম শ্রাবণীর এই মুদ্রাদোষটা নিয়ে ওর সাথে সরাসরি কথা বলতে কিন্তু ওর সাথে কথা বলার আগে আমার শ্বশুর শ্বাশুড়ির সাথে একটু কথা বলা দরকার| শ্বশুর শ্বাশুড়ি আমায় দেখে অবাক হয়ে গেলো।তারপর শ্বশুর আমায় বললো,
~বাবা, তুমি হঠাৎ কোন খবর না দিয়ে৷ তা শ্রাবণী কোথায়? আমি বললাম,
— বাবা শ্রাবণী আসে নি। আপনাদের সাথে আমার কিছু কথা ছিলো তাই আমিই এসেছি শ্বশুর আবাক হয়ে বললো,
~ঠিক আছে বলো কি কথা আমি আমতা আমতা করে বললাম,
— বাবা, শ্রাবণী বাসা থাকা কালীন কথা বলার সময় এমন কিছু কি বলতো যেটা শুনে আপনাদের খারাপ লাগতো? শ্বশুর শ্বাশুড়ি অবাক হয়ে বললো,
~না তো, আমার মেয়ে এইসব কখনোই বলে নি। আমি আবারও বললাম,
— একটু মনে করে দেখেন কোন রকম অশ্লীল গালি দিতো কি না? আমার কথা শুনে শ্বশুর কিছুটা উত্তেজিত হয়ে বললো,
~ তুমি জামাই হয়ে আমার মেয়ের নামে কি সব বালের কথা বলছো? আমার মেয়ে কেন গালি দিবে? শ্বাশুড়ি তখন বললো,
— বাবাজি, আমার মেয়েটা একটু বেশি ঘুমায় এটা বাদে আমার মেয়ের আর কোন বাজে অভ্যাস নেই। নেক্সট টাইম এইসব বালের অপবাদ আমার মেয়ের নামে দিও না আমি যা বুঝার বুঝে গিয়েছিলাম। গাছ যেখানে খারাপ ফল সেটানে টক হবে এটাই তো স্বাভাবিক কলিংবেলের আওয়াজ শুনে শ্রাবণী দরজা খুললো। আমার বিষন্ন ভরা চেহারা দেখে বললো,
-কি হয়েছে তোমার ? আমি কপালে জমে থাকা ঘাম মুছতে মুছতে বললাম,
— বালের জীবন ভালো লাগে না
গল্পের বিষয়:
গল্প