বেশ খানিক্ষন হল শ্বশুর বাড়ির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কলিংবেল বাজিয়ে চলেছি। কিন্তু কারো কোনো রকম দরজা খোলার নাম নেই। আমি কয়েকবার দরজার বাইরে পায়চারি করে নিয়ে আবার কলিংবেল চাপলাম। কয়েক সেকেন্ড পর খট করে দরজা খোলার শব্দ শুনে মনটা কেমন যেন লাফিয়ে উঠল। তাকিয়ে দেখি শ্বাশুড়ি মা দাঁড়িয়ে আছে।
– কেমন আছো, বাবা? আমি সালাম দিয়ে মুচকি হাসি দিলাম। তারপর ভালো মন্দ পর্ব শেষে ওনার হাতে চার কেজি রসগোল্লার প্যাকেট ধরিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। আড়চোখে ভিতরের দিকে তাকাচ্ছি। মৌলিকে দেখা যাচ্ছে নাকি। কিন্তু বউটাকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। শ্বাশুড়ি মা বললেন…
– তুমি এখনো বাইরে কেনো? ভিতরে আসো। উনি দরজা থেকে সরে গেলেন। আমি চট জলদি ঘরের ভিতরে প্রবেশ করলাম। করেই চারপাশটা ভালো করে চোখ বুলিয়ে নিলাম। মৌলিকে খোজার চেষ্টা করছি। কিন্তু কপাল খারাপ থাকলে যা হয়। কোথাও নেই ও। সোফাতো যেয়ে বসলাম। কয়েক মিনিট পরেই শ্বাশুড়ি মিষ্টি নিয়ে হাজির হয়ে বললেন…
– বিয়াই, বিয়াইন কেমন আছে? কতদিন হল তারাও আসেন না তুমিও আসো না। এবার কিন্তু কয়েকদিন না থেকে গেলে তোমার খবর আছে বলে দিলাম। আমি মুচকি হাসলাম। শ্বাশুড়ি মায়ের সাথে আপাতত কথা বলার কোনো ইচ্ছেই আমার করছে না। কিন্তু বসে থাকা ছাড়া আমার কিছুই করার নেই। কারন উনিও আমার সামনে থেকে উঠছেন না। আবার মৌলির কথা জিজ্ঞাসা করতেও লজ্জা করছে। ঠিক তখনি শুনতে পেলাম…
– আরে দুলাভাই যে। কেমন আছেন?
তাকিয়ে দেখি শালিকা মাহি এসে হাজির। শ্বাশুড়ি উঠে চলে গেলেন রান্নার কাজে। মাহি এসে আমার সামনে বসলো। আমার দিকে তাকিয়ো গম্ভীর গলাতে বলল…
– দুলা ভাই, আপুর সাথে ঝগড়া করেছেন তাই না?
– হুম।
– আপু কিন্তু রোজ রাতে আপনার জন্য কাঁন্না করে। না ঘুমিয়ে কাটিয়েছে। আপনি এমন কেনো?
আমি চুপ হয়ে বসে রইলাম। কি বলবো খুজে পাচ্ছি না। মৌলি হল আমার বউ। দুই দিন আগে ঈদ ছিল। মূলত ঈদের দিনই মৌলির সাথে একটু ঝগড়া লাগে আমার। তাও আবার লাচ্চি সেমাই রান্না নিয়ে। সাতটার দিকে ঈদের নামাজ ছিল। ঈদের দিন ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরি হয়ে যায় আমার। তাই তড়িঘড়ি করে গোসল করতে এবং গোছাতে বড্ড দেরি হয়ে যায়। মৌলি জানে আমি লাচ্চি সেমাই ছাড়া খাই না। যখন নামাজের আগে ওকে যেয়ে বললাম লাচ্চি সেমাই দিতে। সে বলে….
– এখনো লাচ্চি সেমাই রান্না করা হয়নি।
– কিহহ? তাহলে আমি কি খেয়ে যাবো?
– অন্য সেমাই হয়েছে ওটা খেয়ে যাও। তোমাকে পরে রান্না করে দেবো।
মৌলির দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকায়। সে তার কাজে ব্যস্ত। উপায় না দেখে সাধারন সেমাই দিল আমাকে ও। কিন্তু সেই সেমাতে নারকেল দেওয়া। যা আমার বিরক্তির কারন। নারকেল দেওয়া কোনো কিছুই আমি খেতে পারি না। এটা মৌলি ভালো করেই জানে। তবুও সে নারকেল দেওয়া সেমাই আমাকে দিয়েছে। রাগে দুঃখে সেমাই এর প্রিজ ওর সামনে হালকা আছাড় দিয়ে চলে আসি। এরপর যখন বাড়িতে আসি। তখনো লাচ্চি সেমাই রান্না হয়নি। বারবার লাচ্চি সেমাই চাওয়াতে মৌলি যায় ক্ষেপে…
– ঐ তুমি দেখো না কত কাজ করছি। বাড়ির সবাই সাধারন সেমাই খেয়ে আছে আর উনি আছে লাচ্চি সেমাই নিয়ে।
– দেখো মৌলি, লাচ্চি সেমাই নিয়ে কোনো কথা বলবা না। আমি লাচ্চি সেমাই ছাড়া খাই না। আমাকে এখনি লাচ্চি সেমাই রান্না করে দাও।
– পারবো না। আব্বু পাঁচকেজি মাংস আনছে তা আমি আর আম্মু মিলে সেটা নিয়ে বিজি আছি। তুমি পারলে রান্না করে নাও।
– তুমি এখনি রান্না করবে কি না বলো?
– নাহ।
– আম্মু তুমি রান্না করে দিবা?
– সরি বাবা, তোর লাচ্চি সেমাই রান্নার নিয়ম আমার অতিষ্ট করে দেয়। আমি পারবো না। আমি গেলাম। দেখ বউমা দেয় কিনা?
– মৌলি, রান্না করবা না তা হলে?
– জ্বি না।
ব্যস আর কি, এক কথায়, দু কথায় তুমুল ঝগড়া। শেষে রাগে পড়ে মৌলির গায়ের উপর কাঁচা লাচ্চি সেমাই এর প্যাকেট খুলে ছড়িয়ে দিয়েছিলাম। মৌলিও আমার মাথার উপর মাংসের টুকরো দিয়ে ঝগড়াটা আরো বড় করে। শেষে রাগ করে ঈদের দিন বিকেলেই তার বাপের বাড়ি চলে আসে। আমি আটকায়নি এবং কোনো কথাও বলিনি। কারন আমার বউয়ের থেকে লাচ্চি সেমাইটাই তখন খৃব বেশি দরকার ছিল। অবশ্য ওর চলে আসার পিছনে আমার শেষ কথাটা দায়ি ছিল। ঝগড়ার এক পর্যায়ে বলেছিলাম “বউ চলে গেলে বউ পাবো কিন্তু লাচ্চি না খেলে সারাদিন খারাপ যাবে, তাই বউ বাদে আমার লাচ্চি সেমাই দরকার।” তারপর আরকি। সেও কোনো কথা না বলে চলে আসে এখানে। “দুলা ভাই, বসে বসে ঘুমাচ্ছেন নাকি?” মাহির কথা শুনে চমকে উঠি। দেখি আমার সামনে শ্বাশুড়ির দেওয়া মিষ্টি বসে বসে খাচ্ছে ও। আমি মাহির দিকে তাকিয়ে বললাম…
– তোমার আপু কই?
– আপনাকে তার কথা বলতে নিষেধ করেছে। আপনি তো লাচ্চি সেমাই চান আমার আপুকে চান না।
– বেশি কথা বলো না তো, বিয়ে হোক তখন বুঝতে পারবা।
– হু, আপনারে কইছে। যান যান উপরের ঘরে আছে।
আমি সোফা থেকে দাঁড়িয়ে কোনোদিক না তাকিয়ে সোজা উপরের ঘরের দিকে যেতে লাগলাম। আজ দুই দিন পর শ্বশুর বাড়িতে এসেছি। মৌলিকে নিয়ে যেতে হবে। ঈদের দিন ঝামেলাতে লাচ্চি সেমাই খাওয়া কঠিন হয়ে গিয়েছিল। রাগে দুঃখে চুল ছিড়তে ইচ্ছে করছিল আমার। শেষে পাশের বাড়ির ভাবির হাতের রান্না লাচ্চি সেমাই খেয়ে ঠান্ডা হয়ে ছিলাম। তারপর থেকেই মৌলিকে নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। দরজায় হাত লাগাতেই দরজা খুলে গেল। বুঝলাম মৌলি জেনে গিয়েছে আমি এসেছি। দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করেই চোখ বুলিয়ে নিলাম ডানে বামে। কিন্তু মৌলিকে পাওয়া গেল বেলকনির দিকে। আমি দৌড়ে ওর দিকে গেলাম। কিছু বলবো তার আগেই মৌলি বলল…
– কি করতে আসছেন এখানে?
– এই কি হল, আমাকে আপনি করে বলছো কেনো? (আমি)
– চলে যান আপনি। আমি আপনার কেউ না।
মৌলির কথা শুনে দীর্ঘ এক নিঃশ্বাস ফেললাম। মেয়েটা যে এতটা অভিমানি তা আগেই জানতাম। কিন্তু কি করবো? আমার যে লাচ্চি সেমাই দরকার। আমি বাইরের দিকে তাকালাম। মৌলি আমার দিকে তাকিয়ে আছে অভিমানি চোখে তা আড়চোখে একবা তাকিয়ে বুঝেছিলাম। মুচকি হাসলাম ওর অভিমান দেখে। এই অভিমানের জন্যই ওকে পাওয়া।
মৌলিকে আমি আগে থেকে চিনতাম না। মাঝে মাঝে রাস্তায় বের হলেই দেখতাম ওকে। মানে মৌলিরা চার বান্ধবি মিলে দিনের একটা সময় আমাদের এলাকার রাস্তা দিয়ে কসিং করে ফিরতো। আর আমরা চার বন্ধু মিলে ওদের পিছু নিতাম। বন্ধুগুলো একেকটা হারামি। ওরা সবাই নিজের নিজের ইচ্ছেমত মৌলির বান্ধবিদের পছন্দ করে রেখেছিল। তাই রোজ ওদের পিছু নিতে আমরা আসতাম। একটা সময় খেয়াল করি মৌলি আর আমি বাদে সবাই চোখাচোখিতে ব্যস্ত। মানে মেয়েগুলোও বন্ধুদের রেড সিগন্যালে সাড়া দিয়ে সবুজ বাতি জ্বালিয়ে দিয়েছে। কিন্তু সমস্যা হল বন্ধুগুলো কাউকেই সাহসের অভাবে প্রপোজ করতে পারছে না। বন্ধুদের মধ্যে আমিই ছিলাম একটু বেশিই লাফাঙ্গা আর ফটকা টাইপ। সবাই এসে বলে…
– দোস্ত, তুই তো সিংগেল, আর ওদের মধ্যে একটা মেয়ে আছে সেও সিংগেল। তোরাও লাইন মারা শুরু করে দে। আর তাকে আগে তুই প্রপোজ করবি পরে আমরা ওর বান্ধবিদের করবো। প্লীজ…
– হুট মাথা খারাপ, পারবো না।
– প্লীজ দোস্ত…..
ব্যস বন্ধুদের চিপায় পড়ে রাজি হয়ে গেলাম। একদিন সবাই একসাথে ফিরছিল। আর আমরাও যাচ্ছিলাম। হুট করেই মেয়েগুলোকে দাঁড় করালাম। হিরো একখান লুক নিয়ে মৌলির দিকে তাকালাম। মৌলি আমার দিকে রাগি চোখে চেয়ে আছে। আমি বললাম…
– এই মেয়ে শোনো, তোমার বান্ধবিদের আমার বন্ধুরা ভালোবাসে। ওরা ওদের মত করেই তোমার সুন্দরী বান্ধবিদের নিয়ে নিয়েছে। খালি আমি তুমি বাদ ছিলাম। দেখো, তোমাকে আমি এখন বুক করছি, অন্য কেউ থাকলে তাকে সরিয়ে দিও। বাই মৌলি আমার দিকে হা হয়ে তাকিয়ে থাকে। আমি চলে আসি। পরে জেনেছিলাম আমার কথার জোরে বন্ধুগুলোও নাকি মৌলির বান্ধবিদের ভালোবাসি বলে ফেলেছিল। তারপর মেয়েগুলোও ঢ্যাং ঢ্যাং করে হ্যা বলে দিয়ে সিংগেল জীবনটাকে শহীদ করে ডাবল হয়ে ঘুরতে থাকে। কেবল মৌলি রোজ একা একা কসিং করে ফিরতো। কখনো ওর দিকে ঠিক ভালোবাসি দৃষ্টিতে তাকায়নি। কেবল বন্ধুদের জন্যই ওর পিছনে ঘুরতাম। একদিন ঘুরতে ঘুরতে ওদের বাড়ির দিকে চলে আসি।
সেদিন ছিল পহেলা বৈশাখ। ওদের বাড়ির সামনে আসতেই দেখি কে যেন ব্যালকনিতে হলুদ ও সাদা পাঁড়ের শাড়ি, হাতে এক গাদা চুরি পরে দাঁড়িয়ে আছে। আমি কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বুঝেছিলাম ওটা মৌলিই। চুলগুলো অনেকখানি লম্বা। গুছিয়ে সামনে পিছনে করে রেখেছে। কানে গোজা ছিল একটি লাল গোলাপ, চোখো ছিল কাজল। পায়ে আলতা লাগানো ছিল যখন পা বেলকনির গ্রীলে দিয়ে রেখেছিল সেটা চোখে পড়ে। আমি হা হয়ে সে দিকে তাকিয়ে ছিলাম অনেক্ষন। মৌলি হুট করেই আমার দিকে তাকায়। কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে দৌড়ে ভিতরে চলে যায়। আমি সারা বিকেল থেকে শুরু করে সন্ধ্যা অবদি ওদের বাড়ির সামনে বসে থাকি, ঘুর ঘুর করি তাকে এক নজর দেখবো বলে। কিন্তু মৌলি আর বাইরে আসেনি। রাতের দিকে আমি বাড়িতে চলে আসি। তারপর থেকেই মন খালি মৌলিকে নিয়ে কল্পনা সাজাতে ব্যস্ত হয়ে যায়।
সারাক্ষন মৌলির চিন্তা আমাকে ঘিরে ধরতো। একটা সময় মৌলিকে ভালোবেসে ফেলি। সবসময় ওদের বাড়ির সামনে যেয়ে ঘৃরঘুর করতাম। ওর কসিং শেষে পিছু নিতাম। কিন্তু সত্যি কধা বলতে তখন ওর সামনে যেয়ে কথা বলার সাহস পেতাম না। সেদিনিই বুঝেছিলাম, যারা সত্যিকার ভালোবাসে তারা তার প্রেমিকার সামনে যেয়ে কিছুই বলতে পারে না সাহসের অভাবে। এভাবে কয়েক মাস কেটে যায়। বন্ধুদের জোরাজুরিতে একদিন মৌলির সামনে যেয়ে দাঁড়ায়। হাতে ছিল লাল গোলাপ। বন্ধুরা ছিল আমার পিছনে। সাথে ওর বান্ধবিরাও ছিল। মৌলি আমাকে দেখে মাথা নিচু করে চলে যেতে চাইল। আমি হাত লম্বা করে আটকে দাঁড় করায়। মৌলি মাথা না তুলেই বলে…
– দেখুন, আমাকে যেতে দিন। এসব আমার একদমই ভালো লাগে না।
– মৌলি, হয়ত তুমি বুঝতেই পারছো আমি আজ কেনো তোমার সামনে এসেছি। তোমাকে ভালোবাসি বলতে এসেছি। কারন তোমাকে ভালোবাসি না বললে নিজের মনের উত্তেজনা কমাতে পারবো না। তোমাকে খুব ভালোবাসি মৌলি। এই নাও ফুল মৌলি নিচ্ছিল না দেখে জোর করে ওর হাত ধরে ফুৃলগুলো গুজে দিই। ও তা ফেলে দিয়ে সবার সামনে আমাকে কষে চড় মারে। তারপর বলে…
– আপনাদের মত ছেলেদের আমার চেনা আছে। আপনারা যে বখাটে এতে কোনো সন্দেহ নেই। কি করে যে বান্ধবিগুলো আপনাদের সাপোর্ট করে বুঝি না। দেখুন মি, আবির সাহেব আপনি হচ্ছেন বখাটে নাম্বার ওয়ান। আপনার কাছে ভালোবাসা মানে মজা, আমাকে তো বন্ধুদের কথাতে ভালোবাসতে এসেছেন। আমার সামনে থেকে যান আর কখনই আসবেন না। মৌলি পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চাই। আমি আবারো ওর হাত ধরি। জোরে টেনে আমার সামনে আনি। তারপর ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বলি…
– তোমাকে ভালোবাসি, আমার কাছে ভালোবাসা মানে, কয়েকদিন পর ভালো লাগলো না, ছেড়ে চলে গেলাম, এটা না। আমার কোনো ইচ্ছেই নেই ভালোবাসার নামে তোমার শরীরে কামনার দন্ত বসাতে। তোমাকে আমি ভালোবাসি,তোমাকে আমার পেতেই হবে সেটা তো কোথাও লেখা নেই। তোমাকে আমার ভালোবাসতেই হবে সেটা আমি বলিনি। আমাকে ভালোবাসার কোনো দরকার নেই। আমি তোমাকে ভালোবাসি এটাই জানালাম। আর কখনই তোমার সামনে আসবো না। আবার এটা ভাববে না তোমার প্রতি ভালোবাসা কমে যাবে বলে তাই আসবো না, আমি আসবো না তোমার দেওয়া কথা রাখতে,তুমি আসতে মানা করেছো বলে। আসি “আমার সাথে কথা বলবেন না তো এখানে কেনো আসছেন?” মৌলির কথা শুনে বাস্তবে ফিরলাম। এতক্ষন ওকে নিয়ে কল্পনা করছিলাম বুঝতেই পারিনি। আমি মৌলির দিকে তাকালাম। চোখ দুটো ফোলা ফোলা। বুঝলাম এ দু দিন অনেক কান্না করেছে। আমি মৌলিকে বললাম…
– সরি বউ, প্লীজ রাগ করো না। চলো না বাড়িতে ফিরে যায়।
– কিসের বাড়ি? যেখানে আমাকে ছাড়া লাচ্চি সেমাই বেশি প্রাধান্য পাই, আমি সেখানে যাবো না।
– আরে রাগ করো কেনো? ওটা তো রাগের মাথায় বলেছিলাম।
– তাই না? তাহলে কেনো তুমি পাশের বাড়ির ভাবির হাতের লাচ্চি সেমাই খেতে গিয়েছিলে?
– তুমি জানো এটা?
– কেনো গিয়েছিলে? (মৌলি)
– কি করবো বলো, জানোই তো লাচ্চি সেমাই আমার কতটা প্রিয়। আর ভাবিও যা রান্না করে না, উফফ যাষ্ট অস্থির।
– সামনে থেকে যাও আমার।
মৌলি রাগ করে অন্যদিকে সরে যায়। আমি মৌলিকে জড়িয়ে ধরি। সেদিন মৌলিকে প্রপোজ করার পর আর মৌলির সামনে যায়নি। প্রায় এক মাস পর এক বন্ধু এসে বলে.. “দোস্ত, মৌলি মেয়েটা তোকে খুজছিল।” পরে একদিন বাড়িতে এসে দেখি ওরা চার বান্ধবি আমাদের বাড়িতে বসে আছে। পরে ওদের কথা শুনে বুঝেছিলাম মৌলি আমাকে এতদিনে একটু একটু মিস করেছিল। এরপর থেকে টুকটাক কথা হতে থাকে আমাদের। একসময় প্রেম, তারপর বহু ঝামেলা পেরিয়ে শেষমেশ বিয়ে করে ফেলি দুজন। মৌলিকে জড়িয়ে ধরতেই ও ছাড়িয়ে নিল। আমি বললাম…
– প্লীজ চলো না গো বাড়িতে। আমি আর কখনই তোমাকে আর লাচ্চি সেমাই নিয়ে কিছু বলবো না।
– এতদিন আসো নি কেনো? জানো কত কষ্ট হয়েছে?
– সরি গো,আসলে ভাবি বলেছিল আরো একদিন লাচ্চি সেমাই রান্না করবে তাই খাওয়ার জন্য আসিনি। আমি কথাটা বলে দৌড় দিলাম। মৌলি আমার পিছনে দৌড়াচ্ছে আর বলছে..
– কিহ…. ঐ তোমার ভাবির কাছে যাও। এখানে কি?
– এখানে আমার বউ থাকে।
– কেউ থাকে না। হুহ আমি দাঁড়ালাম। মৌলি আমার পাশে এসে দাঁড়াল। প্রায় কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল…
– জানো তুমি আসবে জেনে বাবাকে বলে কতগুলো লাচ্চি সেমাই প্যাকেট কিনে এনেছি?
– আহারে….
মৌলিকে জড়িয়ে ধরলাম। লাচ্চি সেমাইয়ের কথা শুনে আর ওকে না জড়িয়ে ধরে থাকতে পারিনি। যাক মৌলির রাগ তবে ভাংলো। অবশেষে লাচ্চি সেমাই খেতে যাচ্ছি। তাও শ্বশুর বাড়িতে। যাক তাহলে শ্বশুর বাড়ি বেশ কয়েকদিন থেকেই যাই। আহা…
গল্পের বিষয়:
গল্প