১.
রাত তখন প্রায় সাড়ে তিনটা। হঠাৎ তীব্র শব্দে টেলিফোনটা ঝনঝন করে বেজে উঠল। ছেলেটি ধড়মড় করে বিছানায় উঠে বসলো। অবশ্য তার কোন প্রয়োজন ছিলনা। অন্যান্য রাতের মতোই তার দু’চোখ নির্ঘুম। বাসার সবাই তখন গভীর ঘুমে অচেতন অথবা কোন সুখস্বপ্নে বিভোর। দ্রুত নিজের ঘরের দরজা একটানে খুলে পাশের ডাইনিং রুমে চলে এল ছেলেটি। ডাইনিং রুমের একপ্রান্তে ছোট একটি কাঠের টেবিল। তার ওপর লাল কাপড়ে ঢাকা ল্যান্ডফোনটি। ডাইনিং এর লাইট অন করল ছেলেটি। টেলিফোন অবিরাম বেজেই চলেছে। ডাইনিং টেবিলের উপরে দুটো শূন্য চায়ের কাপ আলগা হয়ে পড়ে আছে। কাপগুলোর চারপাশে গুটিকয়েক লাল পিঁপড়া ঘুরঘুর করছে। তিনটা কলার খোসা ইতস্তত এদিক সেদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে থেকে টেবিলটির করুণ অবস্থানকে পুনরায় জানান দিচ্ছে। লাইট জ্বলে ওঠা মাত্রই একটি লেজহীন টিকটিকি একলাফে টেবিল থেকে মেঝেতে ঝাপ দিল। যেন পালিয়ে বাঁচলো।
ছেলেটি ফোনের স্ক্রিনের দিকে অপলক চেয়ে থাকে। স্ক্রিনে ওঠা নাম্বারটি সে এক মুহূর্তেই চিনতে পারে। যেন এই ফোনটির জন্যই সে এতদিন অপেক্ষা করে ছিল। অবশেষে ফোনটি আসলো।যদিও দশ বছর পর,
তবুও।
‘হ্যালো’
অপর প্রান্তে সুনসান নিস্তব্ধতা।
যেমন নীরবতা দশ বছর আগেও ছিল।
ছেলেটি আবারও বলল, হ্যালো।
ওপ্রান্তে ভারী নিঃশ্বাসের উপস্থিতি ছেলেটিকে হতবিহবল করে তোলে।
যেমনভাবে দশবছর আগেও একবার করেছিল।
বেশ খানিকক্ষণ পরে নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে মেয়েটি কাঁপা কাঁপা গলায় বলে, ‘হ্যা-লো।’
মেয়েটির কন্ঠস্বর যেন ছেলেটির বুকে এই গভীর রাতে নির্মম ছুরি বসিয়ে দেয়।
ছেলেটির সমস্ত অস্তিত্ব কেঁপে ওঠে।
যেমন ভাবে দশ বছর আগেও একবার ঠিক এভাবেই কেঁপে উঠেছিল।
‘তুমি রাখো। আমি পাঁচ মিনিট পরে তোমাকে ফোন দিচ্ছি।’ ছেলেটি একনিঃশ্বাসে বলে গেল। ল্যান্ডফোনটা নিজের ঘরে নিয়ে আসলো ছেলেটি। মোবাইলের এই যুগে দুজনের মোবাইল থাকা স্বত্তেও টিএনটির ল্যান্ডফোন-ই হয় শেষ ভরসা। কারণ, তারা একে অন্যের মোবাইল নম্বর জানেনা। জানার চেষ্টাও করেনি কখনো।
রিসিভার হাতে তুলে নাম্বার ডায়াল করার সময় ছেলেটি অবাক হয়ে লক্ষ্য করে তার হাত-পা অনবরত কাঁপছে। যেমন করে কেঁপেছিল দীর্ঘ দশ বছর আগে কোনো এক পড়ন্ত বিকেলে মেয়েটির হাত দুটো ধরার সময়।
একই ঘটনার মোনোটোনাস পুনরাবৃত্তি। সময়ের ব্যবধান দশ বছর।
২.
‘তোমাদের সম্পর্ক কতদিনের ছিল?’ ড্রিংসের গ্লাসে তৃপ্তির চুমুক দিতে দিতে রোদেলা জিজ্ঞেস করে।
‘দশ বছর। আনঅফিসিয়ালি।’
‘মানে?’
‘অনেক দিন পরপর ফোনে কথা হত। কখনো একদিন, কখনো একমাস অথবা কখনো কখনো একবছর পরপর।’
‘শুধু ফোনে? সামনাসামনি দেখা করতানা?’
‘না’
রোদেলা অবাক হয়ে বলে, ‘তোমরা না একই ফ্ল্যাটে থাকতা?’
‘হ্যাঁ। আমি চারতলায় আর ও তিনতলায়।’- ছেলেটির নির্বিকার স্বীকারক্তি।’
‘তাহলে?’
‘মুখোমুখি দেখা না হলেও প্রতিদিন-ই অন্যভাবে দেখা হত।’
‘কিভাবে?’ – প্রশ্ন করে মজা পায় রোদেলা।
‘ফোনে আর বারান্দায়।’
‘মানে?’
‘বারান্দায় উপর থেকে আমি ওর চুল দেখতাম, হাত দেখতাম, হাতের লম্বা লম্বা নখ দেখতাম।আর ফোনে কথা বলার সময় চোখ বন্ধ করে ওকে অনুভব করতাম। মনে মনে নিজের মত করে কল্পনা করতাম।’ হড়হড় করে বলে যায় ছেলেটা।
রোদেলা অস্বস্তি বোধ করে। কিছুটা হিংসাও হয়। ‘তুমি যে আমাকে তোমার এক্স-গার্লফ্রেন্ডের এত গোপন কথা বলে দিচ্ছ, সব শুনে আমি যদি তোমাকে ছেড়ে রাগ করে চলে যাই?’
‘তবু সত্যটা তোমার জানা দরকার।’ – ছেলেটির নির্লিপ্ত জবাব।
আরেকদিন ফুচকা খেতে খেতে রোদেলা জিজ্ঞেস করে, ‘ওকে কখনো চুমু দাওনি?’
‘নাতো।’
‘ফিজিক্যাল ইনটিমেসি ছাড়া প্রেম কিভাবে হয়?’
‘ঐটা ছাড়াও প্রেম হয়।’
‘তাহলে আমাদের তেমনটা হলোনা কেন? তুমিতো আমাকে কিস না করে একদিনও থাকতে পারোনা।’
‘আরে এসব চিন্তা বাদ দাওতো। তখন ছোট ছিলাম। ভয় পেতাম এসবে। আর অনেক বোকাও ছিলাম।’
‘আমি বিশ্বাস করলামনা।’ – রোদেলা গম্ভীর মুখে জবাব দেয়।
‘না করলে কি আর করা। প্রমাণের তো কোন সুযোগ নাই।’ – ছেলেটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে জবাব দেয়।
‘কেন থাকবেনা? ওর ফোন নাম্বার দাও। ওকে আমি ফোন করব।’
‘সেটা সম্ভব না।’
সাইবার ক্যাফেটাতে ওরা বেশ ঘনিষ্ট হয়ে বসে। এখানে ব্যবস্থা বেশ ভালো। স্লাইড ডোরের সুবিধা আছে। ভেতর থেকে লকও করা যায়। তাই সারাদিনই স্কুল,কলেজ আর ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া যুগলদের ভীড় লেগেই থাকে। যেহেতু ঢাকা শহরে প্রকাশ্যে চুম্বন-মর্দন নিষিদ্ধ!
এই ক্যাফেটায় গোপন ক্যামেরারও কোনো রিস্কি ব্যাপার-স্যাপার নাই। ভালোমত খোঁজ-খবর নিয়েই এখানে আসা। তবে রোদেলাকে খাঁচায় পুড়তে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে ছেলেটাকে। এখনকার মেয়েরা সহজে ধরা দিতে চায়না।
ক্যাফের সময়টা বেশ ভালোই কাটলো। দুজনেরই একেবারে বিধ্বস্ত অবস্থা!
ফেরার পথে দুজনেই চুপচাপ। একসময় রোদেলা বলে, ‘তুমি এত কুল থাকলা কিভাবে? আমিতো এখনো নরমাল হতে পারছিনা।’
একটু থেমে ও আবার ক্লান্ত গলায় বলে, ‘ এটা তোমার প্রথম না, তাইনা? নাহলে সবচেয়ে গোপন আর আরাধ্য বস্তু নিজের হাতে পেয়েও এত নির্লিপ্ত থাকো কিভাবে?’
ছেলেটা অনেকক্ষণ চুপ থেকে আস্তে আস্তে বলে, ‘তুমিই প্রথম’
‘মিথ্যা কথা। তুমি একটা মিথ্যুক। আর সেটা সত্যি হবার অর্থ হল তুমি শুধু আমার শরীরটাই চেয়েছো, মনটা না। তোমাদের তিন তলার সেই মেয়ের সাথে তোমার ভালোবাসা রিয়েল ছিল, অনেক পবিত্র ছিল।’ – বিষণ্ণ কন্ঠে বলে রোদেলা।
৩.
এসএসসি পরীক্ষার আর মাত্র মাস দেড়েক বাকী। সবাই যখন আদাজল খেয়ে শেষ মুহূর্তের চূড়ান্ত প্রস্ততিতে ব্যস্ত, ছেলেটির মাথায় তখন সম্পাদ্য,উপপাদ্য, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি আর বায়োলজির বদলে কেবলই মেয়েটির ফর্সা দুই হাত, বেণী করা চুল আর নিটোল পা দুটো খেলা করে।
একদিন সরাসরি ফোনে প্রস্তাবটা দিয়েই ফেলে। গোল্লায় যাক পরীক্ষা।
মেয়েটি বলে, আমি যদি রাজী না হই?
ছেলেটি সরাসরি বলে, তাহলে ড্রপ করব। পরীক্ষা দিবোনা।
মেয়েটি ভড়কে যায়। রাজী হলে স্টার পাবা?
যা বলবা তাই হবে। তুমি শুধু একবার আমার হও।
মেয়েটি অনেকক্ষণ চুপ থাকার পর বলে, তাহলে কথা দাও আমাকে ছেড়ে কখনো চলে যাবানা।
কথা দিচ্ছি। কোনোদিনও না।
ফোনের রিসিভার রেখে ছেলেটির মনে হল যেন সে বিশ্ব জয় করেছে। মনে মনে ভাবল, ‘অবশেষে আমি তাহারে পাইলাম।’
মেয়েটাই বেশী ফোন করত। অনেক রাতে। তিনটা কি সাড়ে তিনটায়। ঐ সময় ফোনের রিং শুনেই ছেলেটি বুঝে ফেলতো মেয়েটি তাকে ডাকছে।
এরপর কত কথা, কত কল্পনা, কত মান-অভিমান।
রাতের বেলা মেয়েটি কিভাবে ফোন করত তাও এক রহস্য! কারণ ওদের ফোনটা ডাইনিং রুমে ছিল।
ওরা একই রুমে থাকতো। পার্থক্য বলতে শুধু এটুকু, মেয়েটা তিনতলায় আর ছেলেটা চারতলায়। অনেক রাতে ওরা ছায়া-ছায়া খেলতো! রুমের লাইটের ছায়া পড়তো পাশের বিল্ডিং এ। ছেলেটি কাশি দিলেই মেয়েটি জানালার পাশে এসে দাঁডাতো। তখন মেয়েটির ছায়া এসে পড়তো পাশের বাডির ওয়ালে।
সে সময় মেয়েটিকে মনে হত কোন বিমূর্ত রাজ্যের বিমূর্ত দেবী! যে রাজ্যে সূর্যের দেখা পাওয়া যায়না। সেখানে শুধু থাকে একরাশ অন্ধকার আর আলো-ছায়ার অদ্ভূত খেলা!
ছেলেটির সবসময় মনে হত মেয়েটি হয়তো ফোনের ভেতরেই বাস করে। বাস্তবে তার কোন অস্তিত্ব নেই। অথচ প্রতিদিনই তাকে নিজের চোখে আবিস্কার করছে বারান্দায়, স্কুল থেকে ফেরার সময় বাসার সামনের রাস্তায়, গভীর রাতে আলো-ছায়ার খেলায়!
জীবনে শুধু একবার মুখোমুখি হয়েছিল তারা। সেটা শেষবার। ছেলেটি যখন মেয়েটিকে তার লেখা সব চিঠিগুলো ফিরিয়ে দেয়। সম্পর্ক-ই যখন শেষ, তখন স্মৃতির আর কি মূল্য থাকতে পারে!
ভালোবাসার শেষ সম্বল মেয়েটির হাতে তুলে দেবার সময় প্রথম ও শেষবার ছেলেটি তার হাতের স্পর্শ পায়। ছেলেটির শুধু এতটুকুই মনে আছে তার হাত কাঁপছিল। আর মেয়েটির চোখের দু’ফোঁটা জলের ছোঁয়া।
৪.
-ঐ মেয়েটার সাথে তুমি কখন ফোনে কথা বলতে?
-সাধারণত রাতের বেলা।
-কেন?
-দিনে অনেক সমস্যা ছিল।
-কি সমস্যা?
-আরে বুঝোনা। ওর মা ছিল, বড়বোন ছিল। আমারও বাসায় সবাই আছেনা?
-এখনও তো আছে।
-আরে তখন ছোট ছিলাম। মনে এত সাহস ছিলনা। সবাইকে ভয় পেতাম।
-আচ্ছা, ফোনে কতক্ষণ কথা হত তোমাদের?
-অনেকক্ষণ। মাঝে মাঝে সারারাত।
-কি কথা হত?
-অনেক অনেক কথা। সুখ-দুঃখের কথা।
-প্রেম-ভালোবাসার কথা?
-না।
-মানে কি? তোমাদের না প্রেম ছিল।
-ছিল।
-তাহলে?
-ছোট ছিলাম না! আর বোকাও ছিলাম তো।
-তাহলে সেটা কেমন সম্পর্ক?
-সম্পর্কবিহীন সম্পর্ক, এরকম কিছু একটা ধরে নাও।
-তুমি কথা লুকাচ্ছো। সব ছেলেই লুকায়।
-আরে না।
-আচ্ছা, তোমরা কখনো ফোনসেক্স কোরনি?
-ছিঃছিঃ কি যে বল। প্রেম করলেই এইসব করতে হবে নাকি?
-তাহলে আমার সাথে যে প্রায় রাতেই করো?
-ছেলেটা থতমত খেয়ে যায়।
-আমতা আমতা করে বলে, না ইয়ে, মানে তখন তো ছোট ছিলাম।
-মোটেও না। এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে ফেলেছো আর বল ছোট ছিলা?
তুমি আসলে বলতে চাওনা। তোমাদের সম্পর্ক একেবারে ধোয়া তুলসি পাতা ছিল তা আমি বিশ্বাস করিনা।
-না করলে কি আর করা। প্রমাণের তো কোন সুযোগ নেই।
রোদেলা খট করে মোবাইল কেটে দিল।
৫.
রাতে ঘুমানোর আগে বিছানায় বেশ ঘনিষ্ট হয়ে রিমি ছেলেটিকে প্রশ্ন করে, ‘আমার সাথে বিয়ের আগে তোমার যে এতগুলো মেয়ের সাথে সম্পর্ক ছিল, তার একটাও শেষপর্যন্ত টিকলোনা কেন?’
‘তোমার সাথে ঘর বাঁধবো বলে।’ ছেলেটি রিমিকে আদর করতে করতে বলে।
‘আচ্ছা, তুমি তোমার অতীত আমার কাছে এভাবে অকপটে স্বীকার করলে কেন?’
‘সত্য কখনো চাপা থাকেনা বলে। তাছাড়া আমি সবসময় চাইতাম আমার সাথে যে সারাজীবন থাকবে সে সবকিছু জেনেই আসবে।’
‘ওদের সাথে তোমার রিলেশনের ডেপথ কেমন ছিল?’
‘সবার যতদূর থাকে। একেবারে বেসিক স্টেজ। চুমু, হাত ধরাধরি। খুব বেশী হলে বুক পর্যন্ত-ই। এর বেশী কিছুনা।’
‘আমার বিশ্বাস হয়না। গতরাতের কথা তোমার মনে আছে? ’ -রিমি আরও ঘনিষ্ট হয়ে আসে। ‘তুমি যেরকম অ্যাগ্রেসিভ তাতে বিশ্বাস হয়না। তুমি অনেক এক্সপার্ট। মেয়েদের স্টিমিউলেইট করার এত কায়দা তুমি জানলে কেমন করে?’
‘নেট থেকে।’
‘মিথ্যা কথা। ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা ছাড়া এতটা নিখুঁত হওয়া যায়না।’
‘তুমি জানো কিভাবে?’
‘মেয়েরা সবকিছু বুঝতে পারে।’
৬.
কোন এক মার্চ মাসের কোন এক শুক্রবার মেয়েটির বিয়ে হয়ে যায়। ছেলেটি আর মেয়েটির দু’পরিবারের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সুসম্পর্ক থাকায় খবরটি অনিচ্ছা স্বত্তেও ছেলেটার জানা হয়ে যায়। অবশ্য বিয়েতে সে যায়না এমনকি বিয়ের কার্ডও সে দেখেনা। সারাদিন চুপচাপ ছাদে একা একা বসে থাকে।
একসময় ছেলেটিরও বিয়ে হয়ে যায়।
দিন কেটে যায়। এখনো অনেক রাতে ল্যান্ডফোনে রিং বেজে ওঠে। ছেলেটিই ফোন রিসিভ করে। অপর প্রান্তে বরাবরের মতোই নিস্তব্ধতা। গাঢ় ভারী দীর্ঘশ্বাস। স্ক্রিনে ওঠা নাম্বার দেখে ছেলেটি নিশ্চিত হয় মেয়েটির শ্বশুরবাড়ি গুলশানে।
অনেক দিন পরে আবার মাঝে মাঝে ফোন আসে। ও’প্রান্তে নিশ্চুপ। বোঝা যায় দেশের বাইরের কল। মেয়েটি স্বামীর সাথে কানাডা চলে গেছে। মায়ের কাছ থেকে জেনেছে ছেলেটি। ছেলেটি রিসিভার ধরেই থাকে। নিজের হাত কাঁপা অনুভব করে। একসময় দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেয়েটি আস্তে করে ফোনটি নামিয়ে রাখে।
একদিন সকালে অফিসে যাওয়ার জন্য রেডী হচ্ছিল ছেলেটি। রিমিও তৈরি হচ্ছিল। ওর স্বামী ওকে যাবার পথে ওর অফিসে ড্রপ করে যাবে।
এমন সময় মা ওদের ঘরে এসে আস্তে করে বললেন, ‘বাবা আসিফ, একটা দুঃসংবাদ আছে। একটু আগে রাত্রির ছোট ভাই ফোন করে জানালো, রাত্রি গতকাল বাচ্চা জন্ম দেওয়ার সময় কানাডায় হাসপাতালে মারা গেছে। বাচ্চাটাও বাঁচেনি।’ – মা চোখ মুছতে মুছতে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।
আসিফ ধপ করে বিছানায় বসে পড়ল। ওর মাথাটা কেমন কেন ঘুরতে লাগলো। রিমি এসে ওকে ধরে ফেললো। ওর চোখেও জল। ঠিক রাত্রির মত।
এরপর থেকে গভীর রাতে সেই ফোনটি আর আসেনা।