রূপা আন্টির শপিং

রূপা আন্টির শপিং
–জানেন তো ভাবি আমরা প্রতিবছরই আমেরিকা বা ইংল্যান্ড থেকে ঈদের শপিং করি।তবে গতবার রোজার ঈদে আপনার ভাই ব্যস্ত থাকায় ইংল্যান্ড,আমেরিকা যেতে পারিনি।বাংলাদেশ থেকে কি আর ঈদের শপিং করা যায় বলেন ভাবি।তাই আপনার ভাইকে রেখেই আবিশা আর আবিরকে নিয়ে ইন্ডিয়া চলে গেলাম শপিং করতে।মাত্র পাঁচলাখ টাকা বাজেট।শপিং করতে গিয়ে কি হলো জানেন?
–কি হলো ভাবি?
–মুম্বাইয়ের কোলাবা মার্কেটে বিরাট কোহলি আর আনুষ্কা শর্মার সাথে দেখা।
রূপা আন্টির কথাগুলো আম্মু মন দিয়ে শুনছিলো।যেন রূপকথা শুনছে।রূপা আন্টি আমাদের প্রতিবেশি।দেখতে তেমন সুন্দরী না।তবে সবসময় সেজেগুজে থাকে।বেশ প্রতিভাবান মহিলা।সারাদিন কাল্পনিক গল্প দিয়ে পাড়ার মহিলাদের মাতিয়ে রাখে।বিভিন্ন দেশ ভ্রমণের গল্প,শপিংয়ের গল্প,সেলিব্রিটিদের সাথে সেলফি তুলার গল্প ইত্যাদি।আমার আম্মুও রূপা আন্টির বিশাল বড় ভক্ত।আন্টির গল্পগুলো সহজেই বিশ্বাস করে।আম্মু সহজ সরল মানুষ।তাকে যে কেউই বোকা বানাতে পারবে। প্রতিবারের মতো এবারও রূপা আন্টি আম্মুর সাথে ঈদের শপিংয়ের গল্প করছে,
–কী আর বলবো আপনাকে ভাবি দুঃখের কথা।এবার তো করোনা ভাইরাসের কারণে বাইরের কোনো দেশে যেতেই পারলামনা।বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ থেকেই শপিং করতে হলো।
–কবে শপিং করলেন ভাবি?কোন মার্কেট থেকে করেছেন?
–আপনাকে বললাম না দুইদিনের জন্য ঢাকায় গিয়েছিলাম।তখন তো শপিং করতেই গিয়েছি।জানেন ভাবি?বসুন্ধরা সিটিতে নোবেলের সাথে দেখা।
–আলফ্রেড নোবেল?
–আহা আলফ্রেড নোবেল আসবে কোত্থেকে।সারেগামাপার নোবেল।সেলফি তুলার সময় কত যে তামাশা করলো আমাদের সাথে কি আর বলব আপনাকে।
–সেলফিটা দেখাবেন ভাবি?
–ইয়ে মানে।আপনার ভাই দেখাতে বারণ করেছে।
–আচ্ছা থাক।দেখাতে হবে না।তা কি শপিং করলেন ভাবি?
–দুই দিনে কি আর বেশিকিছু কেনা যায় বলেন।অল্পই কিনেছি এবার।আপনার ভাই এর জন্য ছয়টা পাঞ্জাবী,আটটা শার্ট,দশটা টি-শার্ট,আবিশার জন্য দশটা ফ্রক,সাতটা গাউন,বারোটা টপস,আবিরের জন্য পনেরোটা টি-শার্ট,ষোলটা পাঞ্জাবী,আমার জন্য বারোটা শাড়ি,তেরোটা সালোয়ার কামিজ,চৌদ্দটা গাউন,পাঁচটা জুয়েলারি সেট,ছয়টা পারফিউম আর,মেকআপের জন্য ফাউন্ডেশন,কন্সিলার,ফেস পাউডার,হাইলাইটার,ব্লাশন,প্রাইমার,লিপস্টিক, আইশ্যাডো,মাসকারা ইত্যাদি কিনলাম।
–তাই নাকি?এতোকিছু কিনেছেন?কত ভাগ্য আপনার।জানেন ভাবি আপনি যে দুইদিন ছিলেন না আমার যে কতটা কষ্ট হয়েছে আপনাকে ছাড়া থাকতে বলে বুঝাতে পারবনা। ঠিক এমন সময় রূপা আন্টির ছেলে আবির এসে বলে,
–আম্মু।তুমি দুইদিন আমাদের বাসা থেকে বের হতে দাওনি।দরজা,জানালা,লাইট সব বন্ধ করে বসেছিলে।আমার কত কষ্ট হয়েছে জানো?প্রতিবারই ঈদের আগে তুমি এমন করো যাতে সবাই ভাবে আমরা বাসায় নেই।আর কখনো এটা করবা না। আবিরের কথা শেষ না হতেই আন্টির মেয়ে আবিশা এসে বলে,
–আম্মু।তুমি কখনো ঈদে আমাদের কিছু কিনে দাওনা।কতোবার বললাম এবার একটা ফ্রক কিনে দাও।তাও দিলেনা।এতো কিপটে কেন তুমি? আমি আর আম্মু হা করে রূপা আন্টির ধূসর কালো মুখটার দিকে তাকিয়ে আছি।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত