কথা নেই বার্তা নেই অপরিচিত একটা মেয়ে আমার পাছায় ঠাস করে চড় মারলো। সেই মেয়েটির সাথে থাকা মেয়ে গুলো উচ্চসরে হেসে উঠলো। নিশ্চই এরা চড় মারা মেয়ের বান্দবী, মেয়েটি আমায় বলল…
–কিরে নরেণ কি অবস্থা? এমন বোকার মতন তাকিয়ে আছিস কেন? মেয়ে দেখার খুব সখ? মেয়েটার এমন কথা শুনে আমি ভ্যাবাচেকা খেয়ে বললাম….
-মানে?
–হাহা বোকা ছেলে বলে কি।
-আপনাদের তো চিন্তে পারছিনা আপু।
–হারামজাদা বলে কি! এই আমাদের কি আপু আপু লাগেরে? আমি আছি একটা মিশনে তাই কিছু বলছিনা। চুপচাপ সহ্য করছি। মিশন না থাকলে তোর পাছার সাথে এডজাস্ট করে ইন্দুর বেঁধে দিতামরে খাচ্চুন্নি। আমি আমতা আমতা করে বললাম….
–সরি…!
-হা হা তুইতো টিউবলাইটরে পুরাই আবাল একটা।
–টিউবলাইট কি?
-বুঝবিনা। যাক অবশেষে তোর মতন বোকা একটা ছেলে খুঁজে পেলাম।
–আমায় দিয়ে কি করবেন আপু?
-শ্লা এখনি টাকা বের কর, নইলে চেঁচিয়ে লোকজন জড়ো করব।
–কেন…? আমি কি করছি আপু?
-কিছু করিসনিরে টিউবলাইট, আমরা ঈদ মার্কেট করব টাকা লাগবে।
–আপনাদের বাবারা বুঝি ফকিন্নি? ঘরে টাকা পয়সা নেই তাইনা?
আমার এমন কথা শুনে মেয়েটা রেগে গেলো৷ ওর সাথে থাকা মেয়েগুলো ওকে থামিয়ে বোঝালো..’আরে বোকা ছেলে যা ইচ্ছে বলে।’ মেয়েটা বলল…
–তাড়াতাড়ি টাকা বের কর, নইলে চিৎকার করে পুলিশ ডাকব।
-আমার কাছেতো টাকা নেই..!
এই কথা বলতেই মেয়েটা রেগে গেল। আমার পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করল। দেখলো সেখানে মোট ১ হাজার ২০০ টাকা। মেয়েটা হুংকার দিয়ে বলল….
-ঐ হারামজাদা তুই চিনিস আমায়? তুই আমায় মিথ্যা বলিস? তুই না বললি টাকা নেই।
–এটা আমার টাকা না, আমার বাবার টাকা৷ আমায় দিছে মার্কেট করতে।
-আহারে কি বোকা ছেলে, তোকেই তো খুঁজছিলাম আমি। ইসসস আগে যে কেন এলিনা।
–আপু আমার বাবার টাকাগুলো দিন।
-দিবনা কি করবিরে? আমি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললাম….
–না দিলে বাবা বকবে।
-আর আমি চিৎকার করব।
–আমার বাবার টাকা দিন, ঐ পাশের দোকানটা আমার ওখানে আমার টাকা আছে। মেয়েগুলো মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো। তারা কিছুই বুঝলনা। আমাকে ধমক দিয়ে বলল….
–কি বললি?
-ঐ গলির ভিতর আমার দোকান আছে৷ ওখানে আমার টাকা আপনি আমার টাকা নেন বাবার টেকা ফেরত দেন।
–তুই আমাদের বোকা পেয়েছিস? আমি কিছু না ভেবেই চোখ মুছলাম। মেয়েটি এতে বুঝে গেলো সত্যি সত্যি কাঁদছি। মেয়েটি বলল….
–তোর দোকানে কত টাকা আছে?
-জানিনা, আমি টাকা গুনতে পারিনা অনেকগুলো বান্ডিল আছে।
–বলিস কি তাহলে তোর দোকান কে চালায়?
-আমি থাকি কাজ করি হিসাব করে আমার ছোট ভাইয়া, ও দোকানে নেই।
-তাহলে চল দোকানে। আমি আবারো চোখ মুছলাম। মেয়েটি বিরক্ত হয়ে বলল….
–তুই চল তোর দোকানে যাব, নইলে আমি চিৎকার করব।
-সবাই যাওয়া যাবেনা, আমার ভয় করে৷ আমার মেলা টেকা হু ..!
–উলে সোনা বাবু, চল আমি একাই যাব। এই তোরা এখানে থাক।
তারপর আমি মেয়েটাকে নিয়ে গলির দিকে যাচ্ছি। মাঝেমধ্যে মেয়ের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকাচ্ছি। মেয়েটি মুচকি মুচকি হাসছে। আমি একটা ঘরে নিয়ে গেলাম, মেয়েটা বলল…
–কিরে ঘরে আনলি কেন? দোকান কই?
-দোকান ঐ পাশে, টাকা এই ঘরে।
–ইসসস কি লক্ষ্মী ছেলে তুই। তাড়াতাড়ি টাকা বের কর।
-আব্বা বকবে।
–টাকা বের কর বলতেছি, নইলে কিন্তু বুঝিস।
-তাহলে চোখ বন্ধ করেন, আমার টাকার ড্রয়ার দেখামুনা।
–ওরে গুলুমুলু লে, আচ্ছা বন্ধ করলাম…
বলেই মেয়েটি চোখ বন্ধ করে ফেললো। আমি অমনি খপ করে মেয়েটির মুখ টেপ দিয়ে আটকে দিলাম। দরজার চিপায় ড্রাইভার মোখলেস লুকিয়ে ছিল ও দৌড়ে এসে মেয়েটাকে চেয়ারের সাথে বেঁধে ফেললো। ঘটনার আকস্মিকতায় মেয়েটি হকচকিয়ে গেলো। সে ভয়ার্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মুখের টেপ খুলে দিলাম। আমায় বোকা পেয়েছিলে…হা হা….
-কেমন লাগছে ম্যাডাম?
–কে কে আপনি আমার কাছে কি চান?
-ঐ যে টাকা, যে টাকার জন্য তুৃ্মি এমন করলে সুন্দরী।
–কিসের টাকা?
-ঈদ মার্কেট করব টাকা নেই, ভাবছিলাম কোন মেয়ের ভ্যানিটি ব্যাগ নিয়ে দৌঁড় দিব তখনই তোমরা হাজির আহা!
–দেখুন ভালো হচ্ছেনা কিন্তু, আমি কিন্তু চিৎকার করব।
আমি মোখলেসকে চোখ ইশারা করলাম। সাথেসাথে মোখলেস দরজার চিপায় থাকা বাঁশ নিয়ে হাজির। মোখলেস
নিজ থেকেই বলল…
–ভাইজান কোথায় বারি দিব?
-তোর কোথায় বারি দেওয়ার ইচ্ছে?
–ভাই আপু সুন্দরী, উনার কপালে চুমু খেতে ইচ্ছে করছে।
-হারামজাদা এসব বলতে নেই।
আমার কথা মোখলেস শুনলনা। আমাকে অবাক করে দিয়ে মোখলেস বাঁশের এক অংশে চুমু খেলো তারপর সেই অংশ দিয়ে মেয়ের কপাল ছোয়ালো। আমি ভ্রু-কুঁচকে তাকালাম মোখলেস মুচকি হেসে বলল….
–ভাই আমি মানুষটা হারামি হলেও মন ভালো!
-তুই এটা কি করলি?
–ভাইটা এটাকে, ‘Flying Bamboo Kiss’ বলে। উড়ন্ত বাঁশ চুমু হা হা হা জোস না?
-কি চিজরে তুই এত বুদ্ধি পাস কই?
–পরে কমুনে, শপিং করমু টাকা নিন আগে। আমি মেয়েটার দিকে তাকালাম। বললাম
-ছকিনার ছাউ, আমায় বোকা পেয়েছিলে? দেখি দে তোর ভ্যানিটি ব্যাগ।
–মুখ সামলে কথা বলুন৷ আপনি আমায় চিনেননা।
-আপু চুমু দিব নাকি বারি দিব? এভাবে রাগ করলে এক বারিতে মাথা ফাটাবো। (মোখলেস) মেয়েটা ভয়ে চুপসে গেলো। আজ মোখলেসের উপর বেশ ভালোবাসা জন্মালো। হারামির বুদ্ধি আছে। আমি মেয়েটির ভ্যানিটি ব্যাগ নিলাম, সবমিলিয়ে ৬০ টাকা পেলাম। বললাম…
–বইন আপনি কোনদেশি ফইন্নি?
-দেখুন একদম ভালো হবেনা বলে দিচ্ছি।
–বারি না খেতে চাইলে সত্যি বলুন।
মেয়েটি আবার চুপসে গেলো। আমার হাত থেকে মোখলেস ব্যাগ নিলো। সে চিপা চাপায় টাকা খোঁজা শুরু করলো। ব্যাগে ছোট একটা মেকাপ বক্স ওটার ভিতর টাকা পাওয়া গেলো কচকচা ১ হাজার টাকার নোট। আরও কিছু পাওয়া গেলো। মোখলেস আমার হাত থেকে ছো মেরে ৬০ টাকা নিয়ে বাকি টাকা আমায় দিয়ে বলল…
–৬০ টাকা টিপস আমার। আমি লাড্ডু খাব। মোখলেসের টাকা বের করার বুদ্ধি দেখে আমি হতভম্ব। এরপর কোন মিশনে গেলে তোমায় নিতে হবে। আমি টাকা গুনে দেখলাম ৩৫০০। বাহহ বাহহ… মার্কেট জমবে ভালো। মোখলেসকে বললাম….
–এখন কি করব?
-আপনার কিছু করতে হবেনা, আমি করছি।
বলেই মোখলেস মেয়েটির দুই পা চেয়ারের পায়ার সাথে অসংখ্য গিট্টু দিয়ে বাঁধল। আমায় বলল যাতে খু্লতে সময় লাগে। ডান হাত বাঁধল উড়াধুরা গিট্টু দিয়ে। সবশেয়ে মোখলেস আমায় আরেকদফা অবাক করে দিয়ে একটা পেপারে নিজে চুমু খেলো। তারপর সেই চুমু খাওয়া পেপার মেটির কপালে টেপ মেরে বলল..’ইটস পেপার চুমু।’ মেয়েটির বাম হাত খোলা, গিট্টু খুলতে বহু সময় লাগবে। মুখে মাথা সহ বেঁধে টেপ মারা, সেই টেপ খুলে চিৎকার করতেও সময় লাগবে। মোখলেসেরতো দারুণ বুদ্ধি। মোখলেস আমায় বলল….
–ভাই সার্কাস দেখবেন?
-হপ ফাজলামো রাখ, চল শপিং করব।
–ওয়েট…!
বলেই মেয়েটির সামনে মোখলেস কয়েকবার ডিগবাজি দিলো। ওর দেখাদেখি আমিও ডিগবাজি দিয়ে চলে আসলাম। আসার সময় বোকা বোকা ভাব ধরে সেই মেয়ের বান্ধবীদের বললাম…
–ঐ আপু টাকা গুনতেছে, আমায় ২ হাজার টাকা দিতে বলল। এক আপু উৎসাহ নিয়ে আমায় টাকা দিয়ে সবাই মিলে হাসতে হাসতে চলে গেলো। মোখলেস অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। সে কিছুই বোঝেনি, আমি মোখলেসকে অবাক করে দিয়ে ডিগবাজি দিলাম।
গল্পের বিষয়:
গল্প