বাল মানে চুল

বাল মানে চুল
আমার বউ এতই বেশী হিন্দি সিরিয়াল দেখে যে, বাসর রাতেও স্টার প্লাস লাগিয়ে দিয়েছে। হিন্দি সিরিয়ালে আমার প্রবলেম নেই, কিন্তু প্রবলেম হলো হিন্দি বলাতে। সে সব কিছু বাংলাতে বললেও, শুধু একটা শব্দ হিন্দি বলে। সেটা হলো চুল’কে বাল বলে। ওইদিন আম্মাজান বউকে বলল,” মা! চিরুনি’টা আনোতো!” বউ বলল,” বালের জন্য নি আনবো,মা!”
মা তো কথাটা শুনে মৃদু স্ট্রোক করলেন। শেষে কোনোরকম বুঝিয়ে দমানো গেলো। ওইদিন, আমার বিয়ের পর প্রথম, আমার বউকে দেখতে অফিসের বস্ আসলো। এসে সোফায় বসে বলল , “দেখি শাওন! তোমার বউ’কে আসতে বলোতো। তোমার বউটা কেমন? আমার আবার কাজ আছে।” বউ, নাস্তার ট্রে এনে সালাম দিয়ে বলল,” স্যার! কেমন আছেন? স্যার, আপনি তো অনেক স্মার্ট। স্যার খুশি হয়ে বললেন,” আলহামদুলিল্লাহ এবং ধন্যবাদ। তরী বলল: আপনার বাল থাকলে, আরো সুন্দর লাগত। লম্বা বাল, স্যার’দের কে মানায় ভালো। আমি তো শাওন’কে বালের জন্যই বিবাহ করিছি। না হলে কি করতাম?” স্যার,বুকে হাত দিয়ে রেখেছেন। মনে হয় হার্ট এটাক করেছেন। তিনি হার্ট এটাক করে, হাসপাতালে স্ব-ইচ্ছায় চলে গেলেন। কোনো কষ্ট করতে হলো না।
এই মেয়ের চুলকে হিন্দি বলা, আমাকে বিষিয়ে তুলেছে। মাঝে মাঝে আত্মহত্যা করতে মন চায়, কিন্তু মহাপাপের জন্য পারিনা। ওইদিন গ্রাম থেকে ফুঁপি এসেছেন বউ দেখতে। বউ এর চেহারা দেখে বললেন, মাশাল্লাহ! বউয়ের চেহারা তো জব্বর। চুলটা লম্বা করলে আরো সুন্দর লাগত। বউ বলে কিনা,” আপনি তো বালের কথা বলতেছেন। বাল বড় রাখতে, আপনাদের ভাতিজাই দে না!” ফুঁপি কথাটা শুনে অজ্ঞান হয়ে গেলেন। শেষে গ্রামে গিয়ে জ্ঞান ফিরলো। এই বালের শব্দের জন্য বাবার দুইবার হার্ট এটাক, মায়ের দুইবার স্টোক হয়ে গেছে অলরেডি। ডাক্তার বলেছে, আরেকবার হলে বাঁচানো যাবে না। এভাবে হলে তো সংসার শসান হয়ে যাবে। তাই চিন্তা করলাম “তরী” কে ডিভোর্স দিবো। ডিভোর্স দিতে বউকে নিয়ে গেলাম আদালতে, জজ সাহেব “তরী” কে জিজ্ঞাসা করল: মা! ডিভোর্স কেন দিচ্ছে তোমার হাজবেন্ড? প্রবলেম কিসে?”
বউ বলে,” আমার কোনো প্রবলেম নেই। প্রবলেম আমার বালে। বাল কে আমি বাল বলি, সেটাকি আমার দোষ। বাল বলা কি অপরাধ স্যার। আপনি কি বালের জজ, যে বালের রায় দিবেন?” জজ সাহেব দেখছি অজ্ঞান হয়ে উপুড় হয়ে টেবিলের ওপাশ থেকে নীচে পড়ে গেছেন। মনে হয় বেঁচে নেই। তারাতারি কেউ দেখার আগে কেটে পড়লাম। সে ঘটনার পর, বউ’কে বাংলা মাস্টার রাখলাম, যাতে শব্দটা চেঞ্জ করে। বাংলা মাস্টার পড়াচ্ছেন,” বাল মানে চুল, চুল মানে বাল নয়!” মুখে মুখে তরীও পড়ছে। “বাল মানে বাল, বাল মানে বাল নয়!” আমি মনে হিন্দি সিরিয়াল’কে বাল বলে গাল দিতে থাকলাম।
আমি একটা চুলের শ্যাম্পু কোম্পানিতে চাকরী করি। ঘরে বউ এর বাল শব্দটা শুনতে শুনতে কখন যে আমার মাঝে, বালের ভাইরাস’টা ঢুকে গেছে আমি বুঝতে পারিনি। ওইদিন আমাদের প্রোডাক্ট নিয়ে লাইভে মার্কেটিং করছিলাম। শ্যাম্পু’টা হাতে নিয়ে বললাম,”এই হলো বালের শ্যাম্পু। এই শ্যাম্পু দিলে,আপনার বাল হবে উজ্জ্বল ও রেশমি। আপনার বালকে চিল্কি করতে আজই সংগ্রহ করুন, এই শ্যাম্পু! শ্যাম্পু মাখুন বাল লম্বা করুন!” এই বালের চক্করে পুরা কোম্পানিই শেষ হয়ে গেল। বস্ও উপরে চলে গেলেন। শেষে, অনেক কষ্টে দুয়া-কলমার মাধ্যমে আমার বাল শব্দ থেকে চুল শব্দটা ফেরত পেলাম।। যতো চিন্তা রয়ে গেল তরীকে নিয়ে।। এদিকে, একবছর পরে, মাস্টার কান্না করে বললেন,” ইয়েস! আমি সাকসেস! আমি পেরেছি। আমি বাল চেঞ্জ করতে পেরেছি।
—মানে?(আমি বললাম)
—না, মানে… আপনার বউয়ের বাল চেঞ্জ করতে পেরেছি।
—কি?
–না! বাল শব্দটা চেঞ্জ হয়েছে।
আমি আনন্দে মাস্টারকে বুকে নিয়ে নিলাম। দুইহাজার টাকা আনন্দে বালের জন্য বাড়িয়ে দিলাম। না, এখন আর বাল নিয়ে প্রবলেম হচ্ছে না। তরী, একদম সুস্থ। ঘরে,সিরিয়ালও নিষিদ্ধ করে দিয়েছি। অফিসে বসে আছি। হঠাৎ হাসপাতাল থেকে চেনা কণ্ঠে ফোন,বলল: তোমার মা হাসপাতালে আছে। আইসিউতে। শেষ দেখা দেখতে চাইলে হাসপাতালে আসো। আমি তাড়াতাড়ি আসলাম হাসপাতালে। লুকিং গ্লাস দিয়ে আইসিউর রুমের ভিতর তাকিয়ে দেখি, মা জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। হাসপাতালের ওয়েটিং রুমে ঢুকতেই তরী আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল। আমি বললাম: কী হয়েছে? আমার মা আইসিউতে কেন?”
তরী,আমাকে বলল: মা বলেছিল, চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়িয়ে দিতে। আমি চিরুনি এনে মা’র চুল আঁচড়াতে লাগলাম। বললাম: মা, আপনার চুল উঠে যাচ্ছে। মা, এই প্রথম চুল শব্দ বাংলায় শুনে কেঁদে দিলেন। বললেন, মা! তুমি দেখছি চুল বাংলায় বলছো! এত খুশি রাখি কোথায়? আমার কপালে চুমু কাটলেন।” তরী কান্না করে বলতে থাকে,” আমি তারপর মাকে বললাম, মা! হোগা, হোগা,সব হোগা! একশ বার হোগা। আমার হোগা, মা!” আর মা তারপর আইসিউতে।।।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত