শাহেদের একদিনের গল্প

শাহেদের একদিনের গল্প
শাহেদ দেখল তার মা ভাজা মাছের বাটিটা নীরবের দিকে বাড়িয়ে দিলেন৷ বাটিতে দুই পিস মাছ ভাজা৷ নীরব এবং তার বউয়ের জন্যে৷ নীরব শাহেদের ছোট ভাই। ছোটদের জন্যে মায়ের আদর-ভালোবাসা সব সময় একটু বেশিই হয়। সাহেদ মনে মনে হাসলো৷ কিছু বলল না৷ মা তার প্লেটে তরকারি বেড়ে দিলেন৷ তরকারি তেমন আহামরি নয়৷ আলু দিয়ে বেগুন রান্না করা৷ ভাত মুখে দিতেই মা বললেন,
-নিরু উঠেনি? শাহেদ মাথা না তুলে বলল,
-আসছে। বাবুটা জেগে গিয়েছে৷ ওকে ঘুম পাড়িয়ে আসবে৷
-কতোক্ষণে আসবে?
সেহেরির সময় তো পেরিয়ে যাবে। ডাক ওকে! নিরুকে ডাকতে হলো না৷ ও ছয় মাসের ছোট্ট মিহিরকে কোলে নিয়ে খাবার ঘরে এলো৷ মিহির শাহেদের এক মাত্র ছেলে। বড্ড জ্বালায়। এই রমজানে ছোট্ট মিহিরকে নিয়ে দারুণ সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে ওদের। শাহেদ নিরুর দিকে তাকিয়ে বলল,
-বাবুর ঘুম আসেনি? নিরু বিরক্তি ভরা কণ্ঠে বলে,
-নাহ৷ ঘুমই আসছেই না৷ কী যে করি!
-ওকে এদিকে দাও। তুমি ফ্রেশ হয়ে খেতে এসো৷
শাহেদ মিহিরকে কোলে নিলো। এতো ছোট্ট একটা বাচ্চাকে নিয়ে ভাত খাওয়া কষ্টকর৷ বাবুটা নাড়াচাড়া করছে৷ স্থির থাকতে পারছে না৷ শাহেদের খেতে কষ্ট হচ্ছে৷ সে কষ্ট সয়ে খাওয়ার চেষ্টা করছে৷ সেই কষ্টকে আরেকটু বাড়িয়ে মিহির কান্না শুরু করে দিলো৷ তার বাবা তাকে নিয়ে বসে আছে, এই ব্যাপারটা মনে হয় তার সহ্য হচ্ছে না৷ হয়তো তার ইচ্ছে এই যে বাবা তাকে নিয়ে একটু হাঁটাহাঁটি করবে৷ সে বাবার কাঁধে আরাম করে মাথা রাখবে৷ কিন্তু বাবা তা না করে বসে বসে খাচ্ছেন৷ ব্যাপারটা হয়তো ছোট্ট মিহিরের জন্যে অত্যন্ত অসহ্যের৷ তাই সে কান্না করে দিল৷ কান্না যে সাধারণ কান্না নয়। কান ফাটা কান্না৷ শাহেদের মা পাশ থেকে আদুরে স্বরে বললেন,
-মিহির? দাদুভাই? কান্না করে না৷ চুপ থাকো! এই যে মিহির। মিহির৷ মিহির তার দাদীর কথা শুনলো না৷ সে নিজের মতো কাঁদতে থাকলো৷ শাহেদ খানিকটা গা ঝাঁকিয়ে বলল,
-ও ও! বাবাটা কান্না করে না৷ মিহির বাবা কান্না করে না। গা ঝাঁকুনিতে কিছুটা কাজ হলো৷ মিহিরের কান্নাটা কমে এলো৷ শাহেদ তাকে বুকের কাছে রাখল। মিহিরের চোখ ভর্তি জল৷ এক ফোটা জল টুপ করে পড়ল সাহেদের গেঞ্জিতে। অনেকক্ষণ চুপ থাকার পর নীরব এবার মুখ খুলল। মিহিরের দিকে তাকিয়ে খানিকটা হেসে বলল,
-বাব্বাহ! কাঁদতে কাঁদতে মহাশয়ের চোখের জল পর্যন্ত চলে এসেছে৷ উপস্থিত সকলেই মৃদু হাসলো৷ এমন সময় নিরু এলো। শাহেদ তাকে দেখে বলল,
-এতো দেরি হলো যে? সেহেরি খেয়ে কূল পাবে? নিরু কিছু বলল না৷ শাহেদের মা তাকে ভাত বেড়ে দিলেন। তরকারি দিলেন৷ নিরু তা নিয়ে চুপচাপ খেতে থাকলো৷ অল্প কিছু পরেই মিহির আবার কান্না শুরু করে দিলো৷ বসে থেকে হয়তো সে খুবই বিরক্ত হচ্ছে। শাহেদ চেহারায় বিরক্তি টেনে বলল,
-ছেলেটা একদম কোল পাগল হয়েছে। তাকে কোলে নিয়ে হাঁটতে হবে৷ তা না কান্না থামবেই না৷ নীরবের স্ত্রী যেন খানিকটা বিরক্ত হলো৷ খাওয়ার সময় এমন ভ্যাঁ ভ্যাঁ কান্না সে একদমই পছন্দ করে না৷ উপস্থিত কেউই যেন তা পছন্দ করছে না৷ না করাটা অস্বাভাবিকও নয়। সেহেরি হচ্ছে রাতের শেষ খাবার৷ এই খাবার খেয়ে রোজা রাখতে হয়। এখন এই খাবারটাই যদি আরামের সহিত খেতে না পারে তাহলে কি হয়? শাহেদের মা বললেন,
-বাবুকে আমার কাছে দে তো৷ দেখি কান্না থামে কী না। শাহেদ বলল,
-তোমার কাছেও থাকবে না মা৷ আমার আর অল্প খাওয়া বাকি আছে৷ এই বলে নিরুর দিকে তাকিয়ে বলল,
-নিরু ওকে ধরো তো একটু৷ আমি ভাত টুকু শেষ করে নেই৷ তোমার কোলে গেলে কান্না থামার সম্ভাবনা আছে।
নিরু ভাত মুখে নিয়ে মিহিরকে কোলে নিল৷ মায়ের কোলে আসতেই অদ্ভুত কোনো কারণে মিহির কান্না চেপে গেল। সে এখন আর কান্না করছে না৷ বাঁ হাতের বৃদ্ধা আঙ্গুলটা মুখে নিয়ে চুষছে। তাকে দেখে মনে হচ্ছে আঙ্গুলটা খেয়ে সে ভীষণ মজা পাচ্ছে৷ যেন এরচে মধুর খাবার এই পৃথিবীতে আর কিছুই হতে পারে না৷
শাহেদ জলদি করে খেয়ে নিলো। কোনোমতে উঠে বাবুকে কোলে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো। ঠিক সেই মূহুর্তে, খাবার ঘরে কেউ একজনের গলা দিয়ে একটা ভারী দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো৷ উপস্থিত সকলের কাছে দীর্ঘশ্বাসটি স্বাভাবিক হলেও যার গলা দিয়ে এটি বেরিয়ে এলো সে তা স্বাভাবিক ভাবে প্রকাশ করেনি। এতক্ষণ দম বন্ধ করে পড়ে থাকার পর হঠাৎ শান্তি মেলায় দীর্ঘশ্বাসটি বের হয় কেবল। শাহেদ মিহিরকে কোলে নিয়ে ঘরের এপাশ থেকে ওপাশ হাঁটতে থাকলো৷ মিহির শাহেদের কাঁধে মাথা ফেলে শুয়ে আছে। তাকে দেখে মনে হচ্ছে ভীষণ আনন্দে আছে সে৷ শাহেদ মিহিরের পিঠের উপর হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
-ঘুমাও বাবা৷ ঘুমাও। শাহেদ অনবরত মিহিরের পিঠে হাত বুলিয়ে গেল৷ কিছু সময় পরই সে খানিকটা আনমনা হয়ে এলো৷ চোখে মুখে চিন্তার ছাপ৷ কী যেন ভাবছে৷ ভাবনাটা গভীর৷ গাঢ় কোনো বিষয়৷ ঢাকায় তার ছোটখাটো দোকান আছে একটা। আপাতত দোকানটা বন্ধ৷ নতুন দোকান। সবে ব্যাবসাটা শুরু করেছিল। ভালোই চলছিল৷ ধার দেনা শোধ করছিল।
এমন সময় এই মসিবত। করোনা নামক মহামারীর তান্ডব। ঢাকা লকডাউনের হওয়ার আগেই সে বাড়িতে ফিরে এসেছে৷ বলতে গেলে সে খানিকটা ভয় পেয়ে গেছিল৷ গ্রাম থেকে তার মা এবং স্ত্রীও জোর দিলো বাড়িতে ফেরার৷ সে বাড়িতে ফিরে এসেছে৷ এখন দোকান বন্ধ। আয়-উপার্জনও বন্ধ। জমা টাকা যা ছিল তা প্রায় শেষ৷ সামনে কী হবে, কী করবে এসব ভাবনা তাকে যেন গিলে খাচ্ছে। জহির ভাইয়ের পাওনা টাকা না দিলে হয়তো আরো কিছুদিন চলা যেত। জহির তার চাচাতো ভাই৷ দোকান নেওয়ার সময় ধার নিয়েছিল শাহেদ। করোনা দেশে শুরু হবার কিছু দিন আগেই উনার পাওনা পঞ্চাশ হাজার টাকা শোধ করে সে৷ এখন যে এমন অবস্থা হবে জানলে সে কখনই ওই টাকাটা উনাকে দিতো না৷ সে নিজের রুমে গেল। ঠিক তখনই নিরু এলো রুমে। এসেই শাহেদ কে জিজ্ঞেস করলো,
-বাবু জেগে আছে? শাহেদের কাঁধে মিহিরের মাথা৷ সে দেখতে পারছে না যে মিহির ঘুমিয়েছে কী না। বলল,
-জানি না। দেখো তো? নিরু দেখলো৷ বাবু জেগে নেই৷ সে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন৷ দেখে মনে হচ্ছে বাবার কাঁধে বেশ আরাম করে ঘুমাচ্ছে। নিরু বলল,
-ঘুমিয়ে গিয়েছে৷ ছেলেটা দুধ খায়নি তখন৷ মুখেই নিচ্ছিল না৷ শাহেদ হাসলো৷ বলল,
-ছেলেটা দিনদিন দুষ্ট হচ্ছে।
-দুষ্টামি না ছাই৷ জ্বালিয়ে মারছে আমাদের৷ দেখি এদিকে দাও তো!
নিরু শাহেদের কাছ থেকে বাবুকে নিয়ে বিছানায় গেল। মিহির হঠাৎই কান্না করে উঠল৷ কান্নার আওয়াজে শাহেদের ঘুম ভেঙ্গে যায়৷ খুব পাতলা ঘুম তার৷ নিরু মাহিরের পাশে শুয়ে আছে। সে প্রথমে জাগল না৷ তার ঘুম গাঢ়৷ কিন্তু তাতেও কাজ হলো না৷ মাহিরের কান্নার আওয়াজে তার ঘুম ভেঙ্গে গেল৷ শাহেদ উঠে বসল৷ তার চোখে ঘুম৷ মাথা ভার ভার লাগছে৷ রাতে ঠিক মতো ঘুম হয় না৷ বাবুটার জন্যে ঠিক ভাবে ঘুমানো যাচ্ছে না৷ প্রায় মাঝ রাতেই হুটহাট কেঁদে উঠে বাবু৷ সেই কান্না কোলে না নেওয়া পর্যন্ত থামে না৷ শাহেদ ঘড়ি দেখলো। সাড়ে আটটা বাজে৷ সকাল হয়েছে। বাইরে পাখির ডাক শোনা যাচ্ছে৷ নিরু চোখ মেললো। তবে পুরোপুরি নয়৷ আংশিক। যাতে মিহিরের চেহারাটা দেখা যায়৷ তার চোখ ভর্তি ঘুম৷ চোখ মেলতে পারছে না যেন। কোনোমতে মাহিরকে কাছে টানলো৷ বাবুর খিদে লেগেছে হয়তো৷ তাকে এখন দুধ খাওয়ানো হবে৷
শাহেদ উঠে গিয়ে বাথরুমে গেল৷ বাথরুম এমন একটি জায়গা যেখানে চিন্তারা ভীড় করে৷ দুনিয়ার সকল চিন্তা নামাজে দাঁড়ালে আর বাথরুমে গিয়ে বসলে উদয় হয়৷ শাহেদেরও হয়েছে৷ নানান চিন্তা৷ পরিবারের ছোট ছেলে আর তার স্ত্রী মাছ ভাজা পাচ্ছে৷ বড় ছেলে কিংবা তার স্ত্রী পাচ্ছে না৷ এমন একটা চিন্তাও মাথায় এলো৷ তার একটি ছোট্ট বাচ্চা আছে। বাচ্চার মাকে ভালো মন্দ কিছু খেতে হয়৷ শাহেদ এতোদিন চেষ্টা করেছে৷ যা তার সাধ্যে ছিল দিয়েছে৷ ইদানিং দিতে পারছে না৷ টাকা পুরিয়ে আসছে৷ টাকা পুরিয়ে আসার সাথে নিজের মূল্য কমে যাওয়ার একটা সম্পর্ক আছে৷ এই কথাটা আগে জানতো না সাহেদ৷ ইদানীং জানতে পেরেছে৷ আজ প্রায় পনেরো দিনের মতো হবে৷ সে সংসারে টাকা দিচ্ছে না৷ বাজার করতে টাকা লাগে৷ সে তা দিচ্ছে না৷ দিচ্ছে তার ছোট ভাই নীরব৷ তাই হয়তো মাছ ভাজাটা তার ভাগে৷ শাহেদ অনেক চেষ্টা করলো এই ব্যাপারটা নিয়ে না ভাবতে। কিন্তু মন তা শুনে কই? নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতিই তো আমাদের যতো আগ্রহ। সেদিন ইফতারেও একই রকম হয়েছে৷ মাঠা বানানো হয়েছে৷ নীরবের স্ত্রী মাঠা বানিয়েছে৷ সেই মাঠা নীরব আর তার স্ত্রী খেল।
অল্প কিছু রয়ে গিয়েছে৷ সেটা খেয়েছে শাহেদের মা৷ শাহেদ আর তার স্ত্রী পেল না৷ সেই না পাওয়া নিয়ে কোনো প্রশ্নও উঠল না। শাহেদ এমন একটি ভাব করলো যেন সে মাঠার আইটেমটা দেখেইনি। না দেখার অভিনয় করতে হচ্ছে৷ কে জানে সামনে হয়তো আরো করতে হবে৷ মাঠার ব্যাপারে নিরু কিছুই বলল না৷ শাহেদ জানে, সে কিছুই বলবে না৷ তার কোনো অভিযোগ নেই৷ নিরস প্রকৃতির। না৷ সত্যি বলতে নিরস নয়৷ সে হয়তো শাহেদের মুখের দিকে তাকিয়েই কিছু বলে না৷ তবে তার মন খারাপ হয়৷ শাহেদ তা বেশ বুঝতে পারে৷ কিন্তু কিছুই বলে না৷ তারা সেদিন বেশ সাবলীল ভাবেই ইফতারি করে উঠে এলো৷ পরের দিন আবার মাঠা বানানো হলো৷ কেন বানানো হলো সেটা শাহেদ স্পষ্ট জানে না৷ তবে তার ধারণা নীরব হয়তো তার স্ত্রীকে এই নিয়ে কিছু বলেছে৷ হয়তো তাদের না দেওয়া নিয়ে৷ এ জন্যে পরের দিন তার স্ত্রী মাঠা বানায়৷ তবে মন থেকে নয়৷ সেদিন সারাবেলা মুখ কালো ছিল নীরবের স্ত্রীর৷ হয়তো এই কারণেই। শাহেদ কোনো মতে মাঠাটা গিলে নিলো৷ খেতে ইচ্ছে হলো না। তবুও খেল। খেয়েই এক গাল হেসে বলল,
-বাহ! বেশ দারুণ হয়েছে মাঠাটা৷ পেট ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে একদম৷ উপস্থিত সকলে হাসলো৷ অথচ এই হাসি গুলোর মাঝে কিছু আছে নকল। মনে থেকে নয়, জোর করে হাসা৷ কেউ হাসে ইচ্ছায়, কেউ অহংকারে। আবার কেউ প্রচণ্ড দুঃখ-কষ্ট লুকিয়ে রেখে৷ পৃথিবী অদ্ভুত। পৃথিবীর মানুষ গুলো তার চেয়ে বড় অদ্ভুত। ইদানীং নিরুও ঘরে তেমন কথা বলে না৷ চুপচাপ থাকে৷ কেন থাকে এই ব্যাপারটা শাহেদ স্পষ্ট না জানলেও ধারণা করে যে সংসারে তার স্বামীর আর্থিক কোনো ভূমিকা নেই বলে সে এমন করে। চুপচাপ থাকে৷ কে জানে কখন আবার টাকা না দেওয়ার খোঁটাটা শুনে বসে৷ এমন হলে সে একদমই থাকতে পারবে না এই ঘরে৷
নীরবের সদ্য বিয়ে হয়েছে৷ প্রথম প্রথম তার স্ত্রীকে ভালোই লাগল। কিন্তু দিন যেতে যেতে তার রূপ বদলালো। এখন সে যেন শাহেদের সহ্যই করতে পারছে না৷ জয়েন্ট ফ্যামিলি হয়তো তার পছন্দ নয়৷ সে ভিন্নে থাকতে চায়৷ তার চাওয়াটা অমূলক নয়৷ তবে যতোদিন এই ঘরে থাকবে ততোদিন শাহেদদের সহ্য করতে পারবে না সেটা আসলেই অমূলক। অন্যায়। এই ঘরে ছোট ছেলের যেমন অধিকার বড় ছেলেরও তেমন৷ শাহেদ এসব নিয়ে আগে মাথা ঘামাতো না৷ এখন তো মোটেও ঘামাচ্ছে না৷ অজানা কারণে কেন জানি গলার স্বরটা নিচু হয়ে থাকে৷ নিচু স্বর, অথচ মুখে স্পষ্ট তরুন হাসি নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। লোকজন দেখলে ভাবে, বেশ সুখেই আছে মানুষটা৷ অথচ মানুষটা আর তার মনই জানে কতোটুকু সুখে আছে সে। সুখ আসলেই টাকা দিয়ে কেনা যায়৷ যার টাকা আছে সে সুখি৷ যার নেই সে দুঃখি। পৃথিবীর সেরা দুঃখি। শাহেদ বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলো৷ মিহির কান্না করছে। ভীষণ কান্না৷ নিরু ঘুম জড়ানো স্বরে বলল,
-ওকে কোলে নাও না একটু!
শাহেদ ওকে কোলে নিলো৷ ঘর থেকে বেরিয়ে এলো৷ ওদের বাড়ির সামনেই মসজিদ৷ মসজিদের পাশে পুকুর৷ পুকুরে ঘাট পাকা করা৷ বসার ব্যবস্থা আছে৷ সে সেখানে বসলো৷ মাথার উপর তরতাজা কৃষ্ণচূড়া গাছ৷ গাছ ভর্তি লাল ফুল৷ সাথে সোনালু গাছটাও ফুলে ফুলে হলুদ হয়ে আছে৷ শাহেদ বাবুকে নিয়ে বসে থাকলো৷ মিহির বাবু বেশ চুপচাপ। এখানে এসে যেন বেশ আনন্দ পাচ্ছে৷ এতো আনন্দ যেন আর কখনই হয়নি৷ সে হাত বাড়িয়ে দেয়। কিছু ধরতে চায়৷ পাশ দিয়ে কেউ গেলে মাথা কাত করে তাকে দেখে। শাহেদ বাবুর কপালে চুমু খায়৷ তার কেমন জানি ভালো লাগে। ছেলের মুখ দেখলেই বুকের ভেতরে অদ্ভুত এক প্রশান্তি জাগে তার৷ এই শান্তির উৎপত্তি কোথায় তার জানা নেই৷ তবে সে ভীষণ প্রশান্তি অনুভব করে৷ মাথা থেকে ভারী চিন্তা গুলো চলে যায় মূহুর্তে। শাহেদ ইফতারি করতে বসলো৷ নিরু আসেনি৷ বাবু কান্না করছে৷ তাকে কাঁধে নিয়ে হাঁটছে নিরু৷ শাহেদ বসতেই তার মা বলল,
-নিরুকে ডাক। সে কি ইফতারি করবে না? মায়ের কণ্ঠটাও ইদানীং বেশ রূঢ় শোনায়৷ পৃথিবীর মমতাময়ী মা টাও যেন আজকাল কেমন হয়ে গিয়েছে৷ কেমন কঠোর হয়ে গিয়েছে৷ শাহেদ নিরুকে ডাকলো। নিরু শাহেদের পাশে বসলো৷ কোলে মিহির। বসার অল্প কিছু পরেই মিহির আবার কান্না শুরু করে দিলো৷ প্রথমবার একটু একটু কান্না করলো৷ এরপর ধীরে ধীরে তার কান্না বাড়তে থাকলো৷ সকলেই স্পষ্ট বিরক্ত হচ্ছে৷ শাহেদ নিজেও৷ কেবল নিরুর মাঝে বিরক্তি নেই৷ সে মা৷ মায়েদের বিরক্ত হতে নেই৷ নীরবের স্ত্রী যেন মাত্রাহীন ভাবে বিরক্ত হলো। সে মুখ ফসকে বলেই ফেলল,
-ভাবি ওর কান্না থামান তো! না থামাতে পারলে এখান থেকে উঠে যান৷ বিরক্ত লাগছে আমার। আশ্চর্য! ইফতারিটাও কি সুন্দর করে করতে পারবো না নাকি? শাহেদও পাশ থেকে নিরুর দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,
-যাও তো৷ ভালো লাগছে না এই কচু আর৷ নিরু তার আগে উঠে গেল। শাহেদ চুপচাপ বসে থাকলো৷ কেউই কিছু বলল না আর৷ আযান দিলো৷ ইফতারি শুরু হয়৷ সবাই খাওয়া খায়৷ শাহেদও৷ তবে যেন জোর করে খাচ্ছে৷ খেতে মন চাচ্ছে না। গলা দিয়ে খাবার নামছে না যেন৷ কেমন অশান্তি কষ্ট তাকে আঁকড়ে ধরে আছে৷ এতো কষ্ট নিয়ে খাওয়া যায় না৷ তবুও সে সহজ সরল মুখে কিছু খেয়ে নিলো৷ নিরুর প্লেটটা নিয়ে রুমে গেল। রুমে নিরু নেই৷ সে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে৷ শাহেদ প্লেটটা বিছানার কাছে রেখে বারান্দায় গেল। গিয়ে দেখল নিরু দাঁড়িয়ে আছে৷ কোলে মিহির৷ সে যেন কান্না করছে৷ শাহেদ ডাকলো,
-নিরু? নিরু জবাব দিলো না৷
-নিরু? ইফতারিটা খেয়ে নাও। নিরুর ভেজা স্বর শোনা যায়,
-আমি খাবো না৷ তুমি যাও তো এখান থেকে। সাহেদ কিছু সময় দাঁড়িয়ে থাকে৷ নিরুকে নিজের দিকে ফেরায়৷ মেয়েটার চোখ ভর্তি জল। কেমন চাপা ভাবে কান্না করছে৷ শাহেদের কলিজাটা ছ্যাঁৎ করে উঠল যেন৷ বলল,
-একে তো রোজা রেখেছো। তারউপর বাবুকেও খাওয়াতে হয়৷ তুমি না খেলে তো ও দুধ পাবে না৷ প্লীজ! যা হয়েছে বাদ দাও৷ এসব নিয়ে মন খারাপ করে থেকো না৷ নিরু কিছু বলল না৷ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলো। শাহেদ কিছু সময় সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে চলে এলো। নামাজ পড়ে এসে দেখলো প্লেটটা খালি। নিরু খেয়ে নিয়েছে হয়তো৷ কতোটা কষ্ট নিয়ে খেয়েছে মেয়েটা? নিজেকে কতোটা দমিয়ে নিয়ে ইফতারি করেছে? কার জন্যে করেছে? মিহিরের জন্যে? আচ্ছা, মিহির কি বড় হলে এসব মনে রাখবে? কিংবা তাকে যদি বলা হয়, তোর মা নিজের রাগ মেরে কেবল তোর জন্যে খেয়েছে সেদিন তখন কি তার চোখে জল জমবে? নাকি বলবে এসব সস্তা আবেগ? শাহেদ বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে৷ তার চেহারায় কেমন কষ্ট কষ্ট ভাব৷ কে জানি হয়তো খানিকটা কাঁদছিলও৷ রাত হয়েছে৷
অন্ধকার বলে হয়তো তার চোখের জল দেখা গেল না৷ নিরু এসে পাশে দাঁড়ালো৷ শাহেদের ডান হাতটা শক্ত করে ধরল কেবল৷ তারপর সাহেদের কাঁধে মাথা রাখলো৷ শাহেদ কেমন জানি, অদ্ভুত ধরনের একটা সুখ অনুভব করলো৷ মেয়েটা প্রচণ্ড আস্থা নিয়ে ওর কাঁধে মাথা রাখছে, কেমন আশ্বাস যোগাচ্ছে, তাকে সাপোর্ট করছে, সর্বোপরি তাকে বিশ্বাস করে তার পাশে আছে ভাবতেই কেমন জানি সুখ অনুভব হয়৷ অদ্ভুত আনন্দঘন এক সুখ। এই ধরনের সুখ গুলো কি টাকা দিয়ে কেনা যায়? আসলেই যায়? উহু। মোটেও না। পৃথিবীর সব সুখ টাকা দিয়ে কেনা যায় না৷ হাজার চাইলেও না। স্রষ্টা মানুষের মাঝে মন খারাপের বিষয়টা দেন৷ তারপর সেই খারাপ মন ভালোর জন্যে মাঝে মাঝে কিছু উপাদান তৈরী করে পাঠান৷ সেই উপাদান গুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে নিজের সন্তান, অন্যটি হলো স্ত্রী। নিরু বলল,
-মন খারাপ করো না৷ একদিন এই করোনা চলে যাবে৷ পৃথিবী সুস্থ হবে৷ সেদিন আমরা আবার মাথা তুলে হাঁটবো৷ প্রয়োজনে মাথা নামিয়ে নিতে হয়৷ আবার তুলতে হয়৷ তুমি মন খারাপ করো না৷ শাহেদ মুখ খুললো৷ বলল,
-ইচ্ছে করছে ঢাকা চলে যাই৷ দোকানটা খুলে বসে৷ ভাইরাস ধরলে ধরুক৷ তবুও অন্তত কিছুদিন বাঁচার মতো বাঁচতে পারবো। এভাবে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না নিরু৷ নিরু কী বলবে ভেবে পেল না৷ সে কেবল শাহেদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকলো৷ অন্ধকারে বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকলো দু’জন মানব মানবী৷ তাদের দু’জনের চোখেই জল৷ অথচ সেই জল এই পৃথিবীর কেউ দেখল না৷ কেউই না। ঠিক তখনই পেছন থেকে আওয়াজ এলো,
-অন্ধকারে কী করছিস তোরা?
সাহেদ দেখলো তার মা দাঁড়িয়ে আছে৷ কারেন্ট নেই৷ ঘরে মোম জ্বলছে৷ সেই মোমের আলোয় মাকে দেখা যাচ্ছে৷ শাহেদ বলল,
-এমনি দাঁড়িয়ে আছি মা৷
-এদিকে আয়৷ তোর সাথে একটু কথা বলি।
শাহেদ যেন চমকে উঠলো৷ মা হঠাৎ কী নিয়ে কথা বলবে? আলাদা হয়ে যাওয়া নিয়ে নয়তো? শাহেদের মনের ভেতর কেমন কু ডাক দিয়ে উঠল৷ মনে হলো খুব খারাপ কিছু হতে যাচ্ছে৷ খুব খারাপ৷ হয়তো নীরব বলে দিয়েছে। সে আর এভাবে থাকতে পারবে না৷ ভীন্ন হয়ে যাওয়াই ভালো। শাহেদ যেন বরফ হয়ে গিয়েছে৷ মা আবার ডাকলেন,
-কই? এদিকে আয়?
কী কঠিন কণ্ঠ মায়ের। মায়ের কণ্ঠ আসলেই কি কঠিন? নাকি আমি এসব ভাবছি বলে কঠিন লাগে? কোনো বিষয় নিয়ে যদি মানুষের দূর্বলতা থাকে তবে তার সর্বক্ষণ মনে হয় তাকে সেই ব্যাপারেই খোঁচানো হচ্ছে৷ উল্টাপাল্টা ভাবনা এসে ভীড় করে৷ অথচ বাস্তবে দেখা গেলো এসব কিছুই না৷ শাহেদ রুমে এলো৷ তার মা বিছানায় পাঁ তুলে বসলেন। শাহেদ চেয়ারে বসেছে৷ তার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে নিরু৷ মাহির বিছানায় ঘুমাচ্ছে৷ মা বললেন,
-তোর বাপ মরে গিয়ে আমায় বেশ ঝামেলায় ফেলে গেছেন। তিনি কাজটা মোটেও ঠিক করেননি। তিনি থাকলে হয়তো আজ তোকে এমন অবস্থায় থাকতে হতো না৷ এতো অপদস্ত হতে হতো না৷ মাথা নিচু করতে হতো না৷ কথাটা সত্য৷ বাবা বেঁচে থাকলে এমনটা মোটেও হতো না৷ অন্তত মাথা তুলে চলা যেত। বাবা নামক ছায়াটা যার পড়ে যায় সেই-ই বুঝে ওই ছায়াটার মূল্য কতো। মা আবার বললেন,
-আমায় ক্ষমা করে দিস রে বাবা৷ আর কতোদিন বাঁচবো জানি না৷ কিন্তু এভাবে আমি আর বাঁচতে পারছি না৷ পারবো না৷ শাহেদ বলল,
-কেন? কী হয়েছে মা? মা খানিকটা চুপ থাকলেন৷ বললেন,
-এই যে একজনকে খুশি করে চলতে হচ্ছে! এখন আমার মনে হচ্ছে ওদের খুশি করে না চললে হয়তো আমি নিজেও খেতে পারবো না! আমাকে খাওবে না ওরা। বুড়ো বয়সে আমি যাবো কই বল? মায়ের স্বরটা যেন ভিজে আসে৷ শাহেদ কী বলবে ভেবে পেলো না৷ তার মায়ের জন্যে কেমন মায়া হলো। কে জানি! একদিন হয়তো ওদেরও এই অবস্থা হবে৷ সন্তানের কাছে পিতামাতা কিছু চাইতেও আজকাল ভয় পায়৷ অথচ এই মাতাপিতাই কী কঠিন পরিশ্রম করে তাদের বড় করে তুলেন৷ ঠিক এমন মূহুর্তে ঘরে এলো নীরব৷ পেছনে তার স্ত্রী৷ এসেই সে শাহেদের সামনে দাঁড়ালো৷ কিছু বলল না৷ কেবল দাঁড়িয়ে থাকল। শাহেদ বলল,
-কিরে? হঠাৎ এখানে?
-ভাইয়া আমাকে মাপ করে দাও প্লীজ?
-কেন? কী হয়েছে?
-এই যে অরু আজ এমন ব্যবহার করলো! তাই। অরু তার স্ত্রীর নাম। নামটা সুন্দর। অথচ মানুষ কেমন যেন৷ শাহেদ কিছুটা হতভম্ব হয়ে গেল৷ কিছু বলতে পারলো না। চুপ করে থাকলো৷ নীরব মায়ের কাছে এলো৷ পাঁয়ের কাছে বসে বলল,
-এমনটা কেন ভাবছো মা? আমি কি তোমাদের পর করে দিয়েছি? নাকি কখনও তোমাকে, ভাইয়া-ভাবিকে টাকা পয়সার জন্যে কিছু বলেছি? বলো বলেছি? মা অন্যদিকে তাকিয়ে বললেন,
-না।
-তাহলে তোমরা কেন এমন ভাবছো? কেন তোমাদের আমাকে, আমার স্ত্রীকে খুশি করে চলতে হবে?
মা কিছু বললেন না৷ চুপ থাকলেন। নীরব জানে আসলে উত্তরটা কী হবে৷ তাই সে উত্তরের অপেক্ষা করলো না৷ বলল,
-মা, আমার জীবনের সবচে বড় ভুল হচ্ছে অরু৷ বিশ্বাস করো মা, বিয়ে পূর্বে মেয়েটা এমন ছিল না। এতো অহংকারী ছিল না৷ বিয়ের পর যে ও এমন বদলে যাবে সেটা জানলে আমি ওকে মোটেও বিয়ে করতাম না৷ কথাটা বলার পরই অরু যেন ফুঁপিয়ে উঠলো৷ মেয়েটা কান্না করছে৷ শাহেদ আড় চোখে দেখলো একবার৷ নীরব বলল,
-আমি ওকে প্রথম থেকেই বলে এসেছি, আমরা একত্রে থাকবো৷ আমি আমার পরিবারের সাথে থাকতে পছন্দ করি৷ সে তখন এসব মেনেই আমার সঙ্গ দিয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ ও কেন সেসব ভুলে গিয়ে এমন পরিবর্তন হয়ে গেল আমি সেটা বুঝতে পারছি না মা৷ এখন আমি এও বুঝতে পারছি না আমি কী করবো? আমার মাথায় ধরছে না মা। আমি পাগল হয়ে যাবো! ভাইয়া ভাবি কেমন পর পর বিহেভ করছে৷ আমার এসব একদম সহ্য হয় না। আমি আমার পরিবারকে হাসিখুশি দেখতে চাই৷ আগের মতো দেখতে চাই৷ ব্যস৷ এই বলে নীরব উঠে গিয়ে শাহেদের কাছে গেল৷ শাহেদের পাঁয়ের কাছে বসে বলল,
-প্লীজ ভাইয়া৷ মন খারাপ করে থেকো না আর৷ আমার কাছ টাকা আছে৷ তোমার কাছে নেই৷ ব্যাপারটা ভিন্নও হতে পারতো৷ আমার কাছে নেই তোমার কাছে আছে৷ এমন হতে পারতো। তখন আমি কি করতাম? এসব স্রষ্টা প্রদত্ত একটা পরীক্ষা ভাইয়া৷ আমি এই পরীক্ষায় পাশ করতে চাই। আমি আমার পরিবারের সাথে হাসি খুশি থাকতে চাই৷ এখনকার যে সময়টা এই সময়ে আমাদের একত্রিত থাকতে হবে৷ সমস্যা গুলো ফেস করতে হবে৷ তুমি আমার বড়৷ তোমাকে ছাড়া আমি এই সমস্যা গুলো ফেস করতে পারবো না ভাইয়া৷ নিজের মতো করে থাকো প্লীজ। মাথা নিচু করে নয়৷ মাথা উঁচিয়ে হাঁটো৷ তোমাকে মাথা নিচু করায় না৷ শাহেদ কিছু বলল না৷ বরফের মতো বসে থাকলো৷ হঠাৎই সবাইকে চমকে দিয়ে অরু নিরুর পাঁয়ের কাছে বসে পড়লো৷ কাঁদো কাঁদো স্বরে বলল,
-ভাবি? আমায় ক্ষমা করে দিন প্লীজ৷ আজ বিকেলের জন্যে আমি খুবই দুঃখিত। আমার আসলে মেজাজ খারাপ ছিল৷ মেজাজ খারাপ থাকলে আমি কী না কি বলি আমার কিচ্ছু খেয়াল থাকে না৷ আমি আসলে হঠাৎই কেমন হয়ে যাই৷ কেমন রগচটা টাইপ। কিছুটা অহংকার ভর করে আমার মাঝে৷ তাই হয়তো পরিবর্তন হই৷ আমি এতোদিন যা করেছি, আপনাদের সকলের মনে যত কষ্ট দিয়েছি, আমি তার জন্যে ক্ষমা চাচ্ছি। প্লীজ ভাবি,ভাইয়া, মা, আমায় ক্ষমা করে দিন৷ প্লীজ৷ আমাকে একবার সুযোগ দিন। আসলে মা ছাড়া বড় হয়েছি তো৷ তাই অনেক কিছুই শেখা হয়নি৷ আপনারা আমাকে শিখিয়ে দিবেন প্লীজ। আমাকে নিজের মতো গড়ে নিবেন৷ মেয়েটা কেঁদে দিলো৷ নিরুর কেমন জানি মায়া হলো৷ পাঁয়ের কাছে এই মেয়েটাকে মানায় না। সে তাকে উঠিয়ে বলল,
 -তুমি আমার ছোট বোনের মতো৷ ছোট বোন ভুল করলে ক্ষমা করে দিতে হয়। আমিও তাই করলাম। অরু চট করেই নিরুকে জড়িয়ে ধরলো৷ কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো সে। যেন মহা কোনো অন্যায় করেছে, তার থেকে রেহাই পেয়ে আনন্দে কাঁদছে৷ নীরব দাঁড়িয়ে বলল,
-ভাইয়া, আমায় জড়িয়ে ধরবে না? শাহেদের চোখে জল জমতে চাইলো। সে খুব কষ্টে সেটা আঁটকালো। উঠে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলো৷ বিছানায় বসে থেকে এসব দেখলে রেহানা পারভিন৷ তাঁর চোখে জল জমে গেল৷ আচমকা এমন কিছু হবে তিনি ভাবতে পারেন নি৷ সন্তানদের এমন আনন্দিত অবস্থায় দেখে বেশ ভালো লাগল উনার। উনি জল ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলে সেদিক৷ ঠিক এমন সময় মিহিরের ঘুম ভেঙ্গে গেল। ঘুম ভেঙ্গে সে কি কান্না তার৷ অরু দৌড়ে গেল৷ আজ বাবুকে কোলে নিবে সে। কান্না থামাবে। খুব আদর করবে৷
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত